ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৫৫

ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৫৫
মাহিরা ইসলাম মাহী

মাহরিসার আতঙ্ক দ্বিগুণ বাড়াতে আদ্রিত উঠে দাঁড়ায়।
অর্ধ উলঙ্গ গায়ে এগিয়ে দরজার সিটকিনি খুলে দেয় সে।
এক মুহূর্তে মাহরিসার নিঃশ্বাস বন্ধ হবার জোগাড়।
দৌঁড়ে গিয়ে সে আদ্রিতের কোমর জরিয়ে ধরে।
মাহরিসা নাক টেনে আর্তনাদ করে বলল,
“ আদ্রিত ভাই আপনি পাগল হয়ে গিয়েছেন।”
“ হ্যাঁ পাগল হয়ে গিয়েছি।ছাড় আমায় মারু! “
“ নাআআ।আপনার পায়ের পড়ি আদ্রিত ভাই একাজ করবেন না। সব শেষ হয়ে যাবে।”
“ ঠিকআছে পড় পায়ে।কোথায় তুই তো আমার কোমর জরিয়ে ধরে আছিস।লজ্জা করে না তোর একটা ছেলে মানুষের কোমর এভাবে জাপ্টে ধরতে।”
মাহরিসা কান্না ভুলো ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে।কি বলছে অসভ্য লোকটা এসব।নির্ঘাত লোকটার মাথার সব নিউরন গুলো ছিড়েছে।ওওও গডড

“ বুঝতে পেরেছি অন্য বেটাছেলের কোমর কি করে ধরবি তার প্রাকটিস করছিস।রাইট।ছাড় মারু।”
“ নাআআ।”
“ ফর গড সেইক মারু, আমার যদি তোকে ছাড়াতে হয় , বেলকনি দিয়ে নিচে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বসবো।”
মাহরিসা তো ছাড়লোই না বরং আরো ভয়ংকর কাজ করে বসলো।
শুধু কোমর বয় এবারে সে নিজের দু’পা কেচকি দিয়ে আদ্রিতের পায়ে সমস্ত ভর ছেড়ে দিলো।
ভর সামলাতে না পেরে পরে যেতে নিতে নিতে কোনো রমকে সিটকিনি তুলে দরজার হাতল ধরে দাঁড়ালো আদ্রিত। আর একটু হলেই দুজনে ছিটকে ফ্লোরে পড়তো।
আদ্রিত কটমট চোখে চাইতেই মাহরিসা বোকা হাসলো।
“আমি বুঝতে পারলাম না তুই সবসময় আমার থেকে পালাতে চেষ্টা করিস এখন এভাবে জোঁকের মতন জাপ্টে ধরে আছিস কেন। আশ্চর্য মেয়ে মানুষ।”
মাহরিসা ফিসফিস করে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ এখন বুঝবেন কেন আপনি। এখন তো আপনি বুঝেও না বোঝার ভান করবেন আমি তা ঠিক জানি।সাধে তো আর আপনাকে ধরি নি।”
আদ্রিত কোনো রকমে মাহরিসা কে নিয়ে বিছানায় বসাতেই ওপাশ থেকে বাসন্তীর হাক ডাক ভেসে আসে।
মাহরিসা আঁতকে উঠে।
বাসন্তীর মেয়েকে নিয়ে হয়েছে আরেক বিপদ। রাত ভরে জাগবে আর ঘুমাবে বেলা এগারোটা পর্যন্ত।
আরে আজকেও কি একই কাজ করলে মানায়।একটা শুভ দিন আজ।দেখ কোন আক্কেল জ্ঞান আছে নাকি মেয়ের।
মাহরিসা কোনো রকমে আদ্রিতকে বুঝিয়ে শুনিয়ে রেখে বের হয়। রুমের বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে দেয় যেন আদ্রিত বের হতে না পারে।
মাহরিসা বাইরে বেরিয়ে দেখলো শুধুমাত্র পাত্র দেখতে আসা নয় যেন রীতিমতো তাদের বাড়িতে একটা উৎসব লেগে গেছে।

মনে হচ্ছে বর পক্ষ সানাই বাজিয়ে হাজির হবে বলে কনে পক্ষের সকলে আটঘাট বেঁধে নেমেছে।
সৃজন আঙ্কেল, জাওয়াদ, অদিতি থেকে শুরু করে তৃপ্তি আন্টি, রহিমা খালা পর্যন্ত এসে হাজির হয়েছে।
ওসমান ভিলার সকলে হাজির হয়েছে।আশা আন্টি,সুজন, আঙ্কেল সকলে,সাদাফ ভাইয়া সকলে।
সকলের চোখে মুখে হাসি।
মাহরিসা এই প্রথম উপলব্ধি করলো তাদের আত্মীয়ের সংখ্যা যেমন বিশাল, তেমনি তাদের মাঝে বন্ধন ওও ভীষণ মজবুত। ভীষণ মানে ভীষণ।
তা তো তাদের দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
এই যেমন কাজ করে ক্লান্ত হবার ভয়ে কেউ বসে নেই।
বাসন্তীর হাতে হাতে তাসফি আর আশা কিচেনে হেসেল সামলাচ্ছে।
তাসফি বলল,

“ আপা চিকেন টা তবে এবারে কষিয়েই নেই কি বলো।”
আশা বলল,
“ আমি তবে বেগুনির জন্য ওগুলো পিচ পিচকরে কেটে ফেলি বুঝলে আপা।”
বাসন্তী বলল,
“ এই তোদের ওই বান্ধবী সর্নিধি কে বলেছিলি তো?”
তাসফি বলল,
“ না গো আপা।ওর শরীরটা বেশি ভালো যাচ্ছে না ইদানীং। “
আচ্ছা। তবে রিসিপশনে তুই নিজে গিয়ে নিয়ে আসবি কিন্তু ।কোনো ছাড় নেই।তখন ওসব দোহায় দিলে চলবে না মোটেও।
তাসফি আপা কে জড়িয়ে ধরে হাসলো।

“ আর আরাধ্য?”
তাসফি রহস্যময় হেসে বলল,
“ ওও ওর সময় হলেই আসবে আপা। তোমার কাছেই আসবে।”
তৃপ্তি, রহিমা খালা আর নিস্তব্ধতা কে নিয়ে ডায়নিংয়ে প্লেট বাটি সাজিয়ে রাখছে।
রহিমা খালা চিন্তিত মুখে বলল,
“ আপাজান গো।এই কয়ডা প্লেট বাডিতে কি হইবো? আমার তো মনে হইতাছে না হইবো।পাত্র বাড়ি থেকে আরো মানুষ আইবো তো।কম পইড়া যাবো তো সব।”
তৃপ্তি হেসে বলল,

“ কিচ্ছু হবে না খালা, আপনি দিন গ্লাস গুলো আমার হাতে হাতে এগিয়ে দিন।
এই নীরু মা যা তো তুই গিয়ে ওখানে একটু বস তো।আর কিছু করতে হবে না তোর। অনেক করেছিস। দেখ সাদাফ কেমন হাভাতের মত তোর দিকে চেয়ে আছে।যা ওর কাছে গিয়ে বস একটু। যা তো। একটু স্বামী ভক্তি কর যা। “
নিস্তব্ধতা অপলক চোখে দেখে গিন্নিবনা তৃপ্তির হাসি খুশি মুখশ্রী।
কে বলবে এই সুন্দরী রমনী যৌবনে কত পাগলামি করেছে।
কত পুরুষের হৃদয় ভেঙেছে।আবার নিজেও অন্যকে মন দিয়ে ব্যথায় জর্জরিত হয়েছে।
অথচ দেখ সেই মানুষটাই এখন এক হাতে সব কিছু সামলাচ্ছে। কোনো ক্লান্তি নেই তার মাঝে।
রুপ চর্চা করা মেয়েটা।এখন রুপ যৌবন ক্ষয়ে যাওয়ার ভয় করে না মোটেও।
আহাঃ মানুষ এভাবেও বুঝি পরিবর্তন হতে পারে।
এই জন্যই বলে উপর ওয়ালা যা করেন সকলের মঙ্গলের জন্যই করেন।জীবনে মাঝ পথে হোঁচট খেতে দোষের নেই। বরং সেখান থেকে উঠে আসতে পারকেই জীবন সুন্দর। ভীষণ সুন্দর।
নিস্তব্ধতা পেছন থেকে তৃপ্তি কে আলতো জড়িয়ে ধরে বলল,

“ তুমি খুব খুব ভালো আন্টি।”
“ হয়েছে হয়েছে। তোমার বাবা আবার আমার সঙ্গে তোমাকে এভাবে মিশতে দেখলে রাগে ফুলে যাবে। নাহয় আবার বলে বসলো আমার সঙ্গে মিশলে তোমরা খারাপ হয়ে যাবে। যাও সাদাফের কাছে যাও।”
“ ছাড়ো তো বাবার কথা। ওসব অনেক পুরোনো কথা।আর শুনো তোমার মেয়ে জামাইয়ের কাছে আমি আপাতত যাচ্ছি না। তার শাস্তি শেষ হয়নি। ভীতুর ডিমটার ভীতুগিরি আমি হারে হারে টের পাইয়ে তবেই ছাড়বো।”
তৃপ্তি অবাক হয়ে চাইলো।সে নিজেও কখনো ভাবেনি সকলের সঙ্গে আবারো এভাবে মিশতে পারবে।
একটা নয় আরো কতগুলো মেয়ে, ছেলে, বউ, জামাই আপনা আপনি তৈরি হয়ে যাবে তার।
একাকিত্বের আর কোনো বালাই-ই থাকবে না তার জীবনে।
সাদাফ অসহায় মুখ করে সোফার এক কোণায় বসে।অথচ বউয়ের কাছে ভেড়ার চান্স-ই পাচ্ছে না সে।অথচ মেয়েটা তাকে পাগল করতে আজও গায়ে খয়েরী পাড়ের আকাশী রঙা শাড়ি জরিয়েছে।
মেয়েটা বোধহয় এবারে তাকে পাগল বানিয়ে তবেই ক্ষান্ত হবে।উফফ!
এখন তার আবার যেতে হবে বাজারে।
মাহীন আঙ্কেল বাজার থেকে কিশমিশ আনতে ভুলে গিয়েছে।
কিশমিশ ছাড়া পায়েশ সকলের সামনে দেবে কেমন করে।

জাওয়াদ মাত্র আসায় অদিতি তাকে একটা রুমে নিয়ে গিয়েছে ফ্রেস হবার জন্য।
ফ্রেস হতেও আলাদা মানুষ লাগে এই লোকের। অদিতি ঠিক বোঝে সব এই লোকের বাহানা।
কাশফি কার কি লাগবে বসে বসে তার তদারকি করছে।কারো দরকার পড়লেই সে ছুটে যাচ্ছে।

অপর দিকে মাহীনের মুখে জঙ্গল হয়ে আছে।সে কিছুতেই সেভ করবে না।
কিন্তু নিস্তব্ধ, সৃজন আর সুজন তো ছাড়ার পাত্র নয়।
চার জনের বয়স যেমন হুট করেই এক যুগ নেমে গিয়েছে।চার কিশোরের মতো আচরণ করছে সকলে।
সুজন মাহীনের দুহাত পেঁচিয়ে জাপ্টে বসে আছে যেন ছুটতে না পারে।
সৃজন তার কোমর জড়িয়ে বসে।
আর নিস্তব্ধ রেজার দিয়ে তার মুখের জঙ্গল ছেঁটে দিচ্ছে।
মাহীন বিরক্ত হয়ে বলল,
“ আশ্চর্য তোরা এভাবে বাচ্চামো শুরু করলি কেন বলতো।মেয়ে মানুষের মতো সবগুলো আমায় এভাবে জাপ্টে ধরে আছিস কেন।ছাড়!
কেউ ছাড়লো তো নাই-ই বরং নিস্তব্ধ মাহীনের পিঠে ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।
“ এভাবে হনুমানের মত নড়ছিস কেন।দেখতে পাচ্ছিস না কাজ করছি।তারপর তোর ঠোঁট কাটলে বলবি আমার দোষ।”

মাহীন মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো।
সুজন দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,
“ মাইর খেতে কেমন লাগে বন্ধু? দারুণ তাইনা? “
মাহীন রাগী চোখে চাইলো।
সৃজন ফিসফিস করে বলল,
“ ওভাবে তাকাবিনা তের ওসব চোখ গরমে আমরা মোটেও কেউ ভয় পাইনা। মেয়ে বিয়ে দিবি কয়দিন পর নাতনীর মুখ দেখবি অথচ এভাবে পাগল সেজে ঘুরছিস। তোর মেয়েকে তো কেউ নিবেই না। তোর ছেলেকে তো কেউ মেয়েই দিবে না।
বিয়াইনের যদি বেয়াই না পছন্দ হয় তবে তো মান ইজ্জ্বতের ব্যাপার।বাপরেএ।”
নিস্তব্ধ সব কটাকে ধমক দিলো।

“ চুপ করবি তোরা।আগেকার বকবকানি অভ্যাস গেল না তোরে এখনো। অদ্ভুত!”
সুজন মুখ কালো করে ফিসফিস করে বলল,
“ তোর নিজেরও তো ধমকানোর স্বভাব গেল না রে।”
নিস্তব্ধ চোখ গরম করে চাইতেই সুজন চুপসে গেল।মনে মনে ভেঙচি কাটলো।
তার এই ভেঙচি কাটার স্বভাব হয়েছে তার ছেলে মেয়ের একমাত্র মা আশার থেকে।
দুষ্টু মেয়েটা সর্বক্ষণ তাকে ভেঙচি কাটে।

অনিমা বেগম একপাশে নিলয় সাহেব কে সমানে ঔষুধ সাধছেন।অথচ তিনি তার তোয়াক্কাই করছে না।বরং ছেলে দের এই বয়সে নয়া কান্ড দেখে মুখ ভেঙাচ্ছেন।
অনিমা বেগম বিরক্ত হয়ে বললেন,
“ওদের দিকে ওভাবে তাকিয়ে লাভ কি। নিজে তো কোনো বন্ধু জোটাতে পারো নি।
এক ঘৌরে লোক একটা।শুধু মাত্র আমি বলে তোমার সঙ্গে সংসার করছি।

নীবিড় আর নাওমী ফুল দিয়ে পুরো বাড়ি সাজানোর কাজ ধরেছে।
নীবিড় চেয়ারের উপর দাঁড়িয়ে আর নাওমী নিচে থেকে তাকে ফুল ধরিয়ে দিচ্ছে।
“ কি করছো তুমি বলোতো নাউডুবা চশমিশ। ঠিকঠাক একটা ফুলও তো ধরিয়ে দিতে পারছো না। কি ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে দিচ্ছো।এভাবে করলে তো সাড়া দিন লেগে যাবে।”
“ তো আপনাকে কি এখন মেশিন এনে দিতে হবে? আশ্চর্য ছেলে। আমার হাত এটা কোনো মেশিন নিশ্চয়ই নয়। “
নীবিড় আঁড়চোখে নাওমীর রাগান্বিত মুখশ্রী পরোখ করলো।
ইদানীং মেয়েটাকে রাগিয়ে দিয়ে ওই রাগান্বিত মিষ্টি মুখশ্রীটা দেখতে তার ভীষণ ভালো লাগে।
কি যে হলো তার কে জানে।

না না নীবিড় কাম ডাউন, কাম ডাউন।এভাবে হ্যাংলামো করলে চশমিশ তোকে হ্যাংলা ভাববে যে।
“কি হলো এভানে হাভাতের মতো তাকিয়ে দেখছেন কি? আমার মুখে কি দাঁড়িয়ে গজিয়েছে।
খুব তো বলছিলেন আমি দেরী করছি।এবারে নিজে দাঁড়িয়ে কি করছেন শুনি।”
নাওমীর ধমকে নীবিড়ের হুশ ফেরে।
উফস তার এই হাঁটুর বয়সী মেয়েও আজকাল তাকে ধমকাতে ছাড়ে না।
সব কিছু নিজ চক্ষু মেলে দেখে মাহরিসার কান্নারা দলা পাকিয়ে আসে।এই এত কিছুকে তুচ্ছ করে মাহরিসা কি করে তাদের বিয়ের মত ভয়ংকর কথাগুলো বলতে পারে।
আদৌও সম্ভব তো? কিন্ত কি করে?
মাহরিসা দৌড়ে আবার নিজের রুমে চলে আসে।
আদ্রিত ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে উলঙ্গ গায়ে বিছানায় বসে ফোন ঘাটছে।
আশ্চর্য লোকটার মাঝে কোনো চিন্তা-ই কাজ করছে না।
এই লোকের থেকে কিছু সেও বা আশা করছে কি করে।

“ আদ্রিত ভাই আপনি এভাবে উলঙ্গ হয়ে না বসে থেকে অন্তত একটা জামা গায়ে দিন।”
আদ্রিত উঠে আসে।
“ কেন তোর বুঝি ডিস্টার্ব হচ্ছে? “
মাহরিসা চোখ ঘুরিয়ে নিলো।
আস্ত বদমাশ লোক।
“ আমার জন্য আজকের দিনটা তুই সারাদিন রুমেই থাকতে পারবি না মেরিগোল্ড? ”
আদ্রিত মাহরিসা কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ গুজলো।
মাহরিসা চোখ বন্ধ করে নিলো।
“ ক..কি করে সম্ভব বলুন।”
“ তুই বুঝতে পারছিস না কেন মারু । তোর ভাগ আমি কাউকে দিতে পারবো না। কাউকে নয়।”
“ ভালোবাসেন আমায় আদ্রিত ভাই?”
“ তোর মাথায় ঘিলু বলতে আদৌও কিছু আছে মারু? ব্রেইনলেস মহিলা।”
অপমানে মাহরিসার মুখখানি থমথমে হয়ে যায়।
সে তো বুঝতে পারে তার আদু ভাই তাকে ভালোবাসে।কাউকে ভালো না বেসে এত সব করা তো সম্ভব নয়।তবে মুখে বলতে কি সমস্যা লোকটার।

খাটাশ ডাক্তার। হুহ।
নাওমী দরজায় থাপ্পড় লাগায়।
“মারু আপু তোমায় না মাত্র দেখলাম আবার দরজা লাগিয়েছ।প্লিজ খোলো।তোমায় রেডি করতে হবে তো।সকাল থেকে কিচ্ছু খাওনি। অসুস্থ হয়ে যাবে তো।”
নাওমীর কন্ঠস্বর শ্রবণগোচর হতেই মাহরিসা আদ্রিত কে ছাড়িয়ে নিয়ে দরজা খুলে দেয়
“মারু আপু এসো তো আগে খেয়ে নি….”
সামনে তাকিয়ে নাওমীর কথা থেমে যায়।
তার চোখ দুটো কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম।
চোখের চশমা খুলে ফু দিয়ে মুছে পুনরায় চোখে পরে।ভুল দেখছে না তো সে?
এ কি করে সম্ভব।

“ আদ্রিত ভাইয়া আপনি?এখানে এই সময়ে?”
নাওমী কথা বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না।
তার ওপর তাকে এভাবে অর্ধ উলঙ্গ দেখে লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয়।
আদ্রিত চট করে ফেলে রাখা টিশার্ট খানা গায়ে জড়িয়ে নেয়।
নাওমীর পিছু পিছু নীবিড় ওও রুমে ঢুকে।
বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে আদ্রিতের পানে চায়।
মাহরিসা অপ্রস্তুত হয়।
আর কেউ আসার আগেই সে দরজার সিটকিনি তুলে দেয়।
“ ব্রোওওও আর ইউ ওকে? আমি ঠিক দেখছি তো? চশমিশ আমায় একটা চিমটি কাটো প্লিজ।আমি তো পাগল হয়ে যাবো।”

নাওমী চিমটি নয় হাত দিয়ে নীবিড়ের মাথায় বারি মারলো।
ফিসফিস করে বলল,
“নাটক কম করুন মহিষের বাচ্চা। “
“ তুমি ভেতরে ঢুকলে কেমন করে সদর দরজা তো বন্ধ। “
“ তুই আমায় বল বিয়ের খবর আমায় জানাস নি কেন?”
নীবিড় তালুমালু চোখ করে বলল,
“ এই নাউডুবা চশমিশের জানানোর কথা ছিল সত্যি বলছি ব্রো।”
“ না ভাইয়া।”
নাওমী স্ববেগে মাথা নাড়ায়।
নাওমী আর নীবিড় দুজন দুজনকে দোষারোপ করতে লেগে যায়।
আদ্রিত ধমক দিয়ে দুজনকে থামায়।

“ স্টপ গাইস।কি শুরু করলি তোরা।থাপড়ে এক একটা দাঁত ফেলে দেওয়া উচিত।”
নাওমী সঙ্গে সঙ্গে মুখে হাত দেয়।সর্বনাশ।অকালে নিজের দাঁত খোয়াতে রাজি নয় সে কিছুতেই।
নীবিড় কৌতুহলী ভঙ্গিতে সুধায়,
“ এখন কি করবে ভেবেছ ব্রোওও? পালাবে আমার বোনকে নিয়ে?”
“ তোর কি আমাকে ভিতু মনে হয়?”
নীবিড় মাথা নাড়ায়,” একদমই না।”
নাওমী চুপিচুপি গিয়ে নিস্তব্ধতাকে ডাকে।
“ এই নীরু আপু শুনো না এখানে তো একটা কেলেংকারী ঘটে গেছে এদিকে একটু এসো।”
নিস্তব্ধতা ভ্রু কুচকে এগিয়ে যায়।
ভাইকে রুমের ভেতরে দেখে তার চোখও কপালে।

“ ভাই তুই..”
“ মানে বুঝলাম না তোরা কি ভেবেছিস আমার বউকে অন্য বেটাছেলের কাছে বেঁচে দিবি আর আমি হাতপা গুটিয়ে বসে থাকবো।তা কি করে হয়।”
নিস্তব্ধতা তুতলাতে শুরু করলো।
“ ভাই দেখ আজ শুধু মাহরিসা কে দেখতে আসবে আর কিছু না।”
“ তোরা সবাই আমার সঙ্গে ফাজলামো শুরু করেছিস নাকি আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। প্লিজ বোঝা আমায়।”
“ আসতে, ব্রো সবাই বুঝতে পেরে যাবে।কেলেংকারী হয়ে যাবে।”
“ কেলেংকারী ঘটাতে তোরা আর বাকি রেখেছিস কি।”
“ শ্বশুর-শ্বাশুড়ি, বাপ মা সকলে উঠে পরে লেগেছ আমার থেকে আমার বউকে কেড়ে নিতে।”
“ভাই…”

“ বের হ, সব কটা বের হ রুম থেকে।মারু কোথায়ও যাবে না আজ ওও রুমেই থাকবে।আউট।”
নীবিড় ফিসফিস করে বলল,
“ ব্রো এভাবো আমাদের মত পিচ্চি বাচ্চাদের সামনে অন্তত লজ্জা পাও।বোন হয় ওও আমার।”
“ তোর তোর বোন কি আমার বউ নয়?”
“ সময় আমাদের ওও আসবে ব্রো। দেখেনিও।”
তিনজন বেরিয়ে গেল।
মাহরিসা নিজের সকল জড়তা পাশ কাটিয়ে চোখ বন্ধ করে তার সামনে দাঁড়ানো রাগান্বিত মানুষটাকে ওরফে তার একমাত্র অর্ধাঙ্গ কে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বুকে মাথা রাখলো।
পুরুষ মানুষ যত রাগ দেখাক, ভাঙচুর করুক, অভিমান করুক সে কোথায় যেন শুনেছে নারীর একটুখানি আদর সোহাগে পুরুষ মানুষ ততক্ষনাৎ গলে জল হতে বাধ্য।
অবাধ্য পুরুষকে একমাত্র নারীর ভালোবাসা-ই পারে বাধ্য করতে।
মাহরিসার হঠাৎ এমন কার্যে আদ্রিত স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।শান্ত হয়ে গেল সে হুট করেই।

“ মেরিগোল্ড? “
“ আপনি আমায় কথা দিন আদ্রিত ভাই। আমি যাওয়ার পর প্লিজ বাইরে বেরিয়ে হাঙ্গামা করবেন না। আমার তো বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না।শুধু দেখতে আসবে পাত্রপক্ষ।”
“ আমার বউকে অন্য বেটাছেলে তোকে দেখবে কোন সাহসে।প্রশ্নই উঠে না। তুই বুঝিস না আমার অনুভুতি?”
“ আজকে তো বিয়ে হচ্ছে না।বাড়ি ভর্তি এত মানুষ। সকলে যাওয়ার পর আপনি নাহয় সবাইকে সবটা বলবেন আমি একফোঁটা ও বাঁধা দেব না প্রমিস।”
“ তোর তো দেখছি বিয়ের জন্য রীতিমতো গাল নেয়ে নাল পড়তে শুরু করেছে।”
আদ্রিত মাহরিসার চোয়াল চেপে ধরলো।
মাহরিসা ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলো।
মাহরিসা লোকটার এই হিংস্র আচরণ নিতে পারছে না। এত কিছু সহ্য করার ক্ষমতা কি তার আদৌও আছে।আর পারছে না সে।

ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৫৪

“ ছাড়ুন লাগছে।”
“ একটা শর্তে।”
মাহরিসা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,
“ কি শর্ত আদ্রিত ভাই?”

ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৫৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here