পূর্ণতা নাকি শূন্যতা পর্ব ৮

পূর্ণতা নাকি শূন্যতা পর্ব ৮
রেজওয়ানা রমা

ধীর পায়ে হাটছি আমরা। মাটির রাস্তা, দুপাশে ঘাস, একটা অন্য রকম পরিবেশ। আমার একটু প্রকৃতর মধ্যে আসতে মন চাইছিলো। আর এসেও গিয়েছি। খুব ভালো লাগছে। আরও বেশি ভালো লাগছে ভাইয়ার হাত জড়িয়ে ধরে হাটতে। মনে হচ্ছে এভাবেই হেটে যাই। এই পথ যেন শেষ না হয়। কিন্তু আমার মন চাইলেই কি আর পথ বড় হয়ে যাবে। পথ মিলে গেলো একটা খরোস্রোত নদীর তীরে। সামনে নদী দেখে আমি লাফিয়ে বলে উঠলাম,

– ওয়াও আমার খুব ইচ্ছে করছিলো এমন একটা জায়গায় আসতে।
-তাই নাকি
-হুম। জানো তখন গাড়ি আমি কেন চুপ ছিলাম?
– কেন?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– আমি তখন ভাবছিলাম যে এমন একটা পরিবেশ হবে যেখানে একটা নদী থাকবে নদীতে অনেক স্রোত থাকবে, পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ থাকবে, থাকবে মৃদু বাতাস, প্রকৃতির খুব কাছে থাকবো। আর সাথে…..
– সাথে কি?
– আর সাথে থাকবে তুমি। শুধু তুমি আর আমি। আর কেউ না
– আচ্ছা?

– হুম। কিন্তু তুমি কি করে বুঝলে এমন জায়গায় আসতে আমার মন চাইছে?
– আমারও ইচ্ছে হলো আমার পাগলিটার সাথে সময় কাটাতে।

– ইয়াহু তোমার সাথে আমার বেশ মিল আছে হিহি
সিদ্ধাত ভাইয়া মুচকি হেসে ঘাসের ওপর বসে পড়ে। আমিও ভাইয়ার পাশে বসে ভাইয়ার কাধা মাথা রেখেছি।আর নদীর স্রোতের দিকে তাকিয়ে আছি। চারিদিকে পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজ। হালকা বাতাস বয়ছে। সিদ্ধাত ভাইয়া এবার আমাকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে নিলেন। আমার এবার আরও ভালো লাগছে সিদ্ধান্ত ভাইয়া আমার আশে পাশে থাকলে আমার খুব খুব ভালো লাগে। আমি চাই এই ভাবেই সিদ্ধাত ভাইয়া আমার কাছাকাছি থাকুক। নীরবতা ভেঙে সিদ্ধাত ভাইয়া বলে,

– ঈশুপাখি
– হুম
– তুই খুশি হয়েছিস?
– ভীষন
– সত্যি?
– হুম। আমি এভাবেই তোমার সাথে যুগ যুগ থাকতে চাই সিদ্ধাত ভাইয়া
– তাই!!
– হুম। তুমি থেকে যেও প্লিজ। মেঘের মতো হয়ো না
– হবো না।

– জানো সিদ্ধাত ভাইয়া তুমি আসার পরে আমি আবারও হাসতে শিখেছি। আমার বাচ্চামি গুলো ফিরে এসেছে। আমি আবার আগের মত হতে পেরেছি।
– হুম
– সিদ্ধাত ভাইয়া
– হুম
– কিছু বলছো না কেন?
– তুই বল আমি শুনছি
– কি বলব?
– যা মনে আসে।

– উম্মম্মম। আচ্ছা চলো আমাদের বিয়ে পরে আমরা কিভাবে থাকবো সেটার প্লান করি
– ওকে ( মুচকি হেসে)
– আচ্ছা তার আগে বলো আমরা বিয়ের পরে কোথায় থাকবো?
– তোকে আমার সাথে নিয়ে যাবো।
– আব্বু আম্মু?

– তোর আম্মু যেমন আম্মুর বিয়ের পর তোর আব্বুর সাথে আছে। তুইও বিয়ের পর তোর বরের সাথে থাকবি
– আম্মু কে ছাড়া তো আমি থাকতে পারি না। আচ্ছা ঠিক আছে সমস্যা নাই। তুমি থাকলেই হবে হিহিহি
– তাই নাকি!!!
– হুম। চলো প্লান করি
– হুম। বল শুনছি

– সকাল ঘুম থেকে উঠে তুমি আমার কপালে একটা হামি দিবা।
– ঠিক আছে দেবো (হেসে)
– তারপর দুজন ফ্রেস হয়ে এক সাথে নাস্তা বানাবো
– ওই সকালে আমার পিটি আছে।
– ওহ তাহলে তুমি আমার সাথে নাস্তা বানাবে না? ঠিক আছে আমি একাই বানাবো। আচ্ছা সিদ্ধাত ভাইয়া তুমি পিটি তে কখন যাও?

– ওই তো সাড়ে পাঁচ টা
-আর আসবা?
– সাড়ে সাত টা
– তাহলে আমি সাড়ে সাত টার আগে নাস্তা রেডি করে রাখবো।
– তাই!!
-হুম। তারপর দুপুরের খাবার একসঙ্গে বানাবো।
– অফিস টা তাহলে তুই করিস

আমি সিদ্ধাত ভাইয়ার কাধ থেকে মাথা তুলে অসহায় দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছি সিদ্ধাত ভাইয়ার দিকে। আমার এমন তাকিয়ে থাকা দেখে সিদ্ধাত ভাইয়া বলে,
-ওভাবে তাকিয়ে লাভ নাই
-তুমি সকালের নাস্তাও বানাবে না, আবার দুপুরের রান্নাও করবে না। ( মন খারাপ করে)
– আচ্ছা শুক্র, শনি দুইদিন আমি রান্না করে খাওয়াবো। হ্যাপি?
মহাশয়ের এমন কথায় আমি ফিক করে হেসে দিলাম। অতঃপর আবারও সিদ্ধাত ভাইয়ার কাধে মাথা রেখে বললাম,

– হুম খুব
-পাগলি একটা
– আচ্ছা তার পর শোনো, তুমি আবার যখন অফিসে যাবা তখন আমি তোমার সবকিছু গুছিয়ে দেবো আর যাওয়ার আগে আমাকে অনেকগুলো আদর করে যাবা।
– আদর করাই লাগবে?
-লাগবে না মানে?? আদর না করে খালি ঘরের বাইরে পা রেখো পা কেটে হাতে ধরিয়ে দেবো হুহ

– থ্রেড দিচ্ছিস
– সাবধান করছি
– ওকে তারপর
– তারপর আমি তোমার জন্য রান্না করবো। তুমি আসবা দুপুরে এক সাথে খাবো। তুমি আমাকে খাইয়ে দেবে। দেবে তো?
-হুম দেবো
-তার পর পুরো বিকেল টা আমার
– জ্বী না। বিকেলটা সরকারের। গেম আছে

-?
-জ্বী ম্যাডাম
আমি আবারও ভাইয়ার কাধ থেকে মাথা তুলে নিয়ে আমার কাধের ওপর থেকে ভাইয়ার হাত এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে বললাম,
– সারাদিন অফিস করবে তাহলে আমার জন্য সময় কই তোমার?
– আছে তো সপ্তাহে দুইদিন
– আমার প্রতিদিন সময় চাই
– রাত ১০ থেকে ভোর ৫ টা পযর্ন্ত সবটা সময় তোর

-ধ্যাত। তখন কি ঘুরতে যাবে? গল্প করবে? সেই তো বিছানায় পড়ে পড়ে ঘুমাবে
-তুই থাকতে বিছানায় ঘুমাবো কেন?
কথা টা বলেই সিদ্ধাত ভাইয়া আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার এমন কান্ডে। আমার তাকিয়ে থাকা দেখে ভাইয়া বলল,
– তুই ই আমার বালিশ, কোল বালিশ, বিছানা সব ই তুই
-?

– এভাবে না তাকিয়ে মাথা টা টিপে দে
– ওই বরের মত হুকুম করবে?
-আবদার করবো। নে দে এবার
ভাইয়া কথায় ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে। আর মাথা টিপছি। উফফ রাক্ষসগিরি শুরু হয়ে গেছে। হটাৎ আবার বলে উঠলাম,

– সিদ্ধাত ভাইয়া
-হুম
– তুমি রাত করে বাসায় আসবে না কিন্তু। আমার ভয় লাগে একা থাকতে
– ঠিক আছে আসবো না
– আর রাতে এক সাথে খাবো। রাতে আমি তোমাকে খাইয়ে দেবো হিহি
– ঠিক আছে ( মুচকি হেসে)
– তার পর আমরা এক সাথে ঘুমাবো

– না
-না মানে?
– এই যে এখন যেভাবে আছি তখন এভাবে ঘুমাবো তোর কোলে।
– না।
-তাহলে?
– কাল যেভাবে ঘুমিয়েছিলাম আমরা ওভাবেই ঘুমাবো ( লাজুক স্বরে)
আমার এ কথায় সিদ্ধাত ভাইয়া লাফিয়ে উঠে বসলো আমার পাশে। অতঃপর আমার কাছে মুখ এনে বলে,
– তোর ভালো লেগেছিলো?

আমার এবার বেশ লজ্জা লাগলো। কিছু বললাম না। মাথা নিচু করে চুপ করে আছি। আমার চুপ থাকা দেখে সিদ্ধাত ভাইয়া আমার কোমর জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলল,
– বল!

আমি এখনো নিশ্চুপ আছি। সিদ্ধাত ভাইয়ার এতো কাছে নিজেকে পেয়ে কেমন জানি লাগছে। একটু খানি ভয় আর অনেক খানি ভালো লাগা বিরাজ করছে নিজের ভিতর। সিদ্ধাত ভাইয়া এবার আরো কাছে এসে বলল,
– কিছু জিজ্ঞাসা করেছি তো। উত্তর দে
– না আসলে
– কি না আসলে?
– কি-কিছু না

আচমকা সিদ্ধাত ভাইয়া মুখ ডুবিয়ে দেয় আমার গলায়। আমি সাথে সাথে চোখ খিচ ধরে বন্ধ করে নেই। উফফ কেমন জানি এই অনুভূতি টা। সিদ্ধাত ভাইয়ার এমন আচরণ গুলো বড্ড কাছে টানে। সিদ্ধাত ভাইয়ার প্রতিটা স্পর্শ আমার ভালো লাগে। একটু পড়ে সিদ্ধাত ভাইয়া আবেগ জড়ানো কন্ঠে বলে,
– আই লাভ ইউ ঈশা

এই প্রথম সিদ্ধাত ভাইয়া আমাকে প্রপোজ করছে। আমার এতো বেশি ভালো লেগেছে, এতো টাই খুশি আজ কি বলব। যাকে নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছি তার মুখ থেকে এই তিনটি ওয়ার্ড শোনার মত আনন্দ আর কি হতে পারে। আমার ভাবনার মধ্যেই সিদ্ধাত ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিয়ে আবারও বলে,

– চুপ করেই থাকবি?
– কি বলবো ( নিচু স্বরে)
– আমি উত্তর শোনার অপেক্ষা করছি যে
– সময় হোক জানতে পারবে সিদ্ধাত ভাইয়া
– সিদ্ধাত ভাইয়া সিদ্ধাত ভাইয়া করবি না তো। শুধু সিদ্ধত
– এ‍্যাহ

– হুম। আর ভাইয়া বললে খবর আছে
-কি করবে কি করবে? বলো বলো কি করবে
– আমাকে ভাইয়া বলবি তো তোর একটা ভাবি এনে দেবো
-রাক্ষসের বাচ্চা। একটা বউ দিয়ে হয় না? কয় টা লাগে?
– শুধু সিদ্ধাত বললে একটা বউ দিয়েই চলবে আর সিদ্ধাত ভাইয়া বললে কয় টা যে লাগে ঠিক বলতে পারছি না ( মাথা চুলকিয়ে)
– খুন করে ফেলবো তোরে আজকে

বলেই সিদ্ধাত ভাইয়ার ওপর ঝাপিয়ে পড়লাম। সিদ্ধান্ত ভাইয়া আমার হাত থেকে বাচতে গিয়ে শুয়ে পড়লো ঘাসের ওপর আমি তবুও মারছি তো মারছি ই। একটা পর্যায়ে আমিও সিদ্ধাত ভাইয়ার বুকের ওপর উঠে পড়লাম। আর সাথে সাথেই সিদ্ধাত ভাইয়া আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি মূহুর্ত্তেই শান্ত হয়ে গেলাম।

পূর্ণতা নাকি শূন্যতা পর্ব ৭

শান্তির একটা জায়গা এই বুক। ভীষন নিরাপদ লাগে। হয়তো প্রতি টি মেয়েই তার প্রিয়জনের কাছে নিরাপদ মনে করে। সিদ্ধাত ভাইয়ার কাছাকাছি থাকা টা ভীষন প্রিয়। আমার জীবন টা কে সুন্দর আর রঙিন করার জন্য হয়তো সিদ্ধাত ভাইয়া আমার জীবন এসেছে। আমি মৃত্যুর আগ মূহুর্ত পযর্ন্ত সিদ্ধাত ভাইয়ার সাথে থাকতে চাই। এবার আমিও ভাইয়ার বুকে মুখ গুজে নিলাম।

পূর্ণতা নাকি শূন্যতা পর্ব ৯