পূর্ণতা নাকি শূন্যতা পর্ব ৭

পূর্ণতা নাকি শূন্যতা পর্ব ৭
রেজওয়ানা রমা

কান্না পাচ্ছে খুব। বাড়ির সবাই শপিং এ চলে গিয়েছে আমাকে রেখে। রাক্ষস রাজাও চলে গেলো?
– না রাক্ষস রাজা যায় নি। রাক্ষস রাজা তার রাক্ষসী রানী কে নেওয়ার জন্য থেকে গেলো
পেছনে তাকিয়ে দেখি রাক্ষস টা। দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম।

– ভয়ে পেয়ে গিয়েছিলাম। উফফ কলিজায় পানি এলো যেন।
-কলিজার পানি চলে গিয়েছিলো নাকি
– শুকিয়ে গিয়েছিলো আর কি
-ওহ। কলিজার পানি শুকিয়েও যায় আবার ফিরেও আসে। জানা ছিলো না
– উফফ। তোমাকে জানতে হবে না
– আচ্ছা ঠিক আছে এখন যাবি নাকি
– আরে যাবো না মানে। চলো চলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সিদ্ধাত ভাইয়া এবার নিজের গাড়িটা বের করলো।আসলে বাড়ির দুটো গাড়িই নিয়ে গিয়েছে। একটা গাড়ি তে কখনই এতো মানুষের জায়গা হতো না। কিন্তু আমাদের দুজনকেই রেখে গেলো? নিজে নিজে বিড়বিড় করতে করতে গাড়ি উঠে পড়লাম। ভাইয়া ড্রাইভ করছে। আমি পাশে বসে আছি। জিজ্ঞাসা করলাম,

– সবাই আমাদেরকে রেখে গেল কেন?
– রেখে যায় নি। আমি চলে যেতে বলেছি
– কেন!!!
– যেন তুই আর আমি আলাদা যেতে পারি
– ধ্যাত। ওখানে সবাই মজা করতে করতে যাচ্ছে আর আমি একা একা বোরিং ফিল করছি।
– আমার সাথে থাকতে তোর বোরিং লাগছে?

– তুমি তো একটা রাক্ষস।
– কিহ!
– না মানে মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে
– ঈশা
– হুম
– পূর্ণতা পাবে?
– কি?
– ভালোবাসা
– হঠাৎ এ কথা কেন?
– এমনি

– বিয়ে তো হয়েই গেছে পূর্ণতা ও পেয়ে গেছে
– হুম। বাট….
– এই এই এই গাড়ি থামাও গাড়ি থামাও
আমার কথায় জোরে ব্রেক কষে সিদ্ধাত ভাইয়া।

– কি হয়েছে
– ওই দেখো ফুসকা
– ঈশা!!
– প্লিজ সিদ্ধাত ভাইয়া বকো না। আমি ফুসকা খাবো। প্লিজ
-বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে না
– প্লিজজজ। এনে দাও না প্লিজ
– না বলেছি কিন্তু

– মানুষ কখন বাচে মরে বলা যায় না। এই ধরো, আমি কাল মরে গেলাম তখন তোমার মনে হবে ঈশা আমার কাছে ফুসকা খেতে চেয়েছিলো। তখন তো…
আমার বাকি কথা শেষ হওয়ার আগেই আমার মুখ চেপে ধরে রাক্ষস টা বলে,
– চুপ একদম চুপ। মুখে যা আসছে তাই বলে যাচ্ছিস। এই সব কথা একদম বলবি না। নেক্সট টাইম যদি শুনি খবর করে দেবো।

বলেই গাড়ি থেকে নেমে ফুসকা আনতে চলে যায় রাক্ষস রাজা। হিহিহি আমার প্লান কাজে দিয়েছে। আমি জানতাম এভাবে বললে আমাকে ঠিক ফুসকা এনে দেবে হিহি। একটু পরে মহাশয় ফুসকা আর এক বোতল পানি নিয়ে হাজির।
– নিন মহারানি। খেয়ে আমাকে উদ্ধার করুন।

– এভাবে বলছো কেন? ফুসকা ই তো খেতে চেয়েছি তোমার মাথা টা তো আর চাই নি
– ফুসকার জন্য আমার মাথা টাও খেয়েছিস। এই সব খা আর অসুস্থ হ।
– ফুসকা খেতে চেয়েছি। বকা নয়। মুখ টা বন্ধ করো আর ফুসকা টা দাও
ফুসকা টা নিয়ে আমি খাওয়া শুরু করে দিলাম। উফফ কি মজা। সব টা একাই খেয়েছি। রাক্ষস টা কে অফার ও করি নি। খাওয়া শেষ করে পানি খেয়ে পাজি বাদর টা কে বললাম,

– চলো খাওয়া শেষ
রাক্ষস টা গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলল,
– তুই কি এভাবেই আমাকে জ্বালাবি?
– না তো! যখন আমি থাকবো না তখন তো তোমাকে কেউ জ্বালাবে না।
– কোথায় যাবি?
– অনেক দূরে হিহিহি
– ঈশা ( দাতে দাত চেপে)

– রাগছো কেন। তুমিও তো বলেছিলে।
– কিন্তু তুই বলবি না
– কেন বলবো না
– আমি বলেছি বলবি না সো আর বলবি না
– আচ্ছা ঠিক আছে যাও আর বলবো না

আমি আর কোনো কথা বললাম না। একটু পরে আমরা চলে আসলাম শপিংমলে। ভাইয়া গাড়ি পার্ক করে নিলো। এরপর আমরা দুইজন এক সাথে ভিতরে প্রবেশ করলাম। এতোক্ষনে মনে হয় সবার শপিং শেষের দিকে। সোজা দোতলায় চলে গেলাম। খুজে খুজে পেয়েও গেলাম সবাই কে। সবার ই কেনা কাটা হাফ হয়ে গেছে। বড় মা বলল,

– এতক্ষণে আসার সময় হলো?
সিদ্ধাত ভাইয়া: ম্যাডাম ফুসকা খাওয়ার বায়না ধরেছিলেন
আমি: তো কি হইছে। কোনো ইচ্ছা অপূর্ণ রাখতে নেই।
সিদ্ধাত ভাইয়া : হুম তাই না?

আম্মু: আর কথা না বাড়িয়ে যাও কি কি পছন্দ হয় নাও। গায়ে হলুদ, বিয়ে, রিসিপশন, মেহেন্দি, সংগীত কোথায় কি পরবে নিজেই পছন্দ করে নাও। সিদ্ধাত বাবা তুমিও যাও।
সিদ্ধাত : জ্বী আন্টি

আবারও চলে এলাম ড্রেস চুজ করতে। কি নিবো। কোন টা নিবো এইসব ই ভাবছি। আমার সাথে রাক্ষস মহাশয় চলে আসছে। এসে একটা বানী শুনিয়ে দিলো। তাহার বানী হলো,

– আমার বউ এর জিনিস আমি চুজ করবো। তুই একটা কথাও বলবি না
আমি আর কি। হয়ে গেলাম বোবা। মিস্টার আমার জন্য দুটো লেহেঙ্গা চুজ করেছেন। একটা মেরুন কালার আর একটা গোল্ডেন ও রেডের মিশ্রণ। রেড কম। বেশ সুন্দর দুটিই। আমার পছন্দ হয়েছে তাই আর কোনো কথা বললাম না। সাথে কয়েকটা শাড়ি। শাড়ি গুলো এতো সুন্দর কি বলবো। হঠাৎই আমার চোখ যায় একটা ব্রাইডাল গাউনের ওপর। জাস্ট ওয়াও দেখতে। আমি গাউন টার কাছে গিয়ে ভালো ভাবে দেখছি। তখন মিস্টার বাদর জিজ্ঞাসা করে,

– পছন্দ?
আমি টর্ণেডোর বেগে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলাম।
– ঠিক আছে। এটাও নে।

আরে আমি তো খুশী হয়ে গেলাম। গায়ে হলুদের একটা শাড়ি নিলাম এটাও রাক্ষসের পছন্দের। এর পর মহাশয় নিজের জন্য কি কি যেন কিনলেন। আমাকে বলেছিলো চুজ করতে কিন্তু ছেলেদের জিনিসের কোনো ধারনা আমার নেই। তাই কিছুই পছন্দ করতে পারি নাই। ফলস্বরুপ উনি সিফাত ভাইয়া কে নিয়ে নিজের শপিং শেষ করলেন।

এবার জুয়েলারির জন্য গেলাম বড় মা, আম্মু, আমি, আর রাক্ষস রাজা। বাকি সবার শপিং শেষ। সবাই ক্লান্ত তাই বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। আমার গহনা পছন্দ করছে সবাই মিলে। আমাকে সং এর মতো দাঁড়িয়ে রেখে একবার এটা তো একবার ওটা সব গুলো পরিয়ে পরিয়ে দেখছে। আমি একরাস বিরক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। অবশেষে কতগুলো গলার হাতের কানে আরও কি কি নিয়েছে আমি নিজেও জানি না। সেগুলি নেওয়া হয়েছে যেগুলো সিদ্ধান্ত ভাইয়া সিলেক্ট করেছেন। আমাদের সবার সব শপিং শেষ। বেলা ৩ টা নাগাত বাড়ি ফিরবো। তখন সিদ্ধাত ভাইয়া বলেন,

– তোমরা যাও আমি আর ঈশা পরে আসছি
সিদ্ধাত ভাইয়ার একথায় বড় মা বললেন,
বড় মা: কেনাকাটা তো শেষ তাহলে পরে আসবি কেন?
সিদ্ধাত ভাইয়া: দরকার আছে।

বড় মা: এখন এভাবে ঘুরাঘুরি করা ভালো দেখায় না। চলো বাড়ি চলো
সিদ্ধাত ভাইয়া এবার আমার হাত টা শক্ত করে ধরে বললেন,
– এই দিন টার জন্য আমাকে অনেক টা সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। কে ভালো ভাবে দেখলো আর কে দেখলো না তাতে আমার কিছু যায় আসে না।

বড় মা কিছু বলতে যাবেন কিন্তু তার আর সুযোগ না দিয়েই সিদ্ধাত ভাইয়া আমার হাত ধরে হাটা শুরু করলো। আমি পিছনে তাকিয়ে বেখেয়ালে হেটে চলেছি। আর মনে অনেক প্রশ্ন ঘুরছে। কত প্রশ্ন মনের মধ্যে। কোনো উত্তর পাচ্ছি না। আমার প্রশ্ন গুলোর উত্তর সিদ্ধাত ভাইয়া যে কবে দেবে। আমার ভাবনার সমাপ্তি ঘটিয়ে সিদ্ধাত ভাইয়া বলেন,

– তুই এখানে দাড়া। আমি গাড়ি নিয়ে আসছি
আমি দাঁড়িয়ে রইলাম। একটু পর সিদ্ধাত ভাইয়া চলে এলো। আমি গাড়িতে উঠে পড়লাম। গাড়ি চলছে আপন গতিতে। আমি কোনো কথা বলছি না। চুপচাপ বাইরে তাকিয়ে আছি। আর ভাবছি এই শহরের কোলাহল পরিবেশ ছেড়ে যদি একটু বাইরে যাতে পারতাম।

যেখানে পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ, নদীর স্রোতের শব্দ, মৃদু বাতাস। আর সেখানে সিদ্ধাত ভাইয়া আর আমি আর কেউ থাকবে না। শুধু মাত্র আমরা। উফফ খুব মজা হবে। এমন টা ভাবতেই আমার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। হঠাৎ সিদ্ধাত ভাইয়া বলে,

– তুই কি নিরব থাকার পণ করেছিস?
ভাইয়ার এমন কথায় আমি ভাবনার জগত থেকে বাইরে এলাম। মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলাম,
– না
– কি হয়েছে ঈশু
– কই
– চুপচাপ কেন
– এমনি
– ঈশা এমনি এমনি চুপচাপ এটা কি মানা যায়?
– কেন? তুমি তো চাও আমি চুপ থাকি। তাহলে
– তোর চুপ হয়ে যাওয়া টা আমি মেনে নিতে পারি না

– ধং। নিজেই একটু পরে বকবে কথা বলার জন্য। আমি জানি তুমি কেন কথা বলার জন্য বলছো। আমি কথা বলি, আর তুমি বকার অজুহাত পাও। আমি যে চুপ করে আছি তুমি তো বকতে পারছো না। তাই না।
– এতো বেশি কথা বলিস কেন
– এই যে দেখলে তো। শুরু হলো না তোমার বকা ঝকা। চুপ করে ছিলাম তোমার ভালো লাগছিলো না। কথা বললাম তোমার সেটাও ভালো লাগছে না।

– এক লাইন বেশি বুঝিস
– হ্যাঁ তুমি তো কম বোঝো তাই না
হটাৎ করেই গাড়ি থামিয়ে বলে,
– নাম
– মানে?
– নামতে বলেছি

– আমি আর কথা বলবো না। চুপ করে থাকবো। আমি এখানে কিছু চিনি না কিভাবে বাড়ি যাবো বলো। আর দুষ্টুমি করবো না। একদম লক্ষী মেয়ে হয়ে থাকবো। চুপ থাকবো। না না এক বারেই চুপ থাকবো না। একটু একটু কথা বলবো। এক দম ই বেশি কথা বলবো না। প্লিজ সিদ্ধাত ভাইয়া আমাকে রেখে যেও না। প্লিজ

– ঈশা!!! তুই আসলেই একটু বেশিই কথা বলিস। নাহ একটু না অনেক বেশি কথা বলিস। আমরা এখানেই নামবো তাই তোকে নামতে বলেছি তোকে রেখে যাওয়ার জন্য নয়
সিদ্ধাত ভাইয়া নেমে পড়লো। আমি বোকার মতো বসে আছি। একটু পরে আমিও নেমে আস্তে আস্তে সিদ্ধাত ভাইয়ার কাছে গিয়ে ফিক করে হেসে দিলাম। আমার হাসি দেখে সিদ্ধাত ভাইয়াও মুচকি হেসে বলল,

পূর্ণতা নাকি শূন্যতা পর্ব ৬

– চলেন এবার
আমি ভাইয়ার হাত জড়িয়ে ধরে হেঁটে চলেছি,

পূর্ণতা নাকি শূন্যতা পর্ব ৮