অবাধ্য প্রেম দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ১৩

অবাধ্য প্রেম দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ১৩
নন্দিনী নীলা

সময়টা ছিল বৃহস্পতিবার আমি খুব ভোরে উঠে ছিলাম। অন্ধকার থাকতে আমি বের হয়েছি। না হলে লিলি আমাকে আটকে দিতে। একবার যে কথা দিয়েছি সে কথাটা আমার রাখতে হবে। আজকে নিবিড়ের রিলিজ হয়ে যাবে। জানি না আবার কবে আপন মানুষগুলোর সাথে দেখা হবে বন্ধু নামে শত্রুর সাথে দেখা হবে নাকি আর কোনদিনই দেখা হবে না। জানি না আমার ভাগ্যে কি লেখা আছে।

অনেকগুলো দিন চলে গেছে মামার সাথে দেখা হয় না একবার যদি দেখা করতে পারতাম। চলে যাওয়ার আগে একবার মানুষটাকে দেখে যেতাম। অশান্ত মন নিয়ে ছুটে গিয়েছিলাম মামিদের এলাকায় সেটা আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।
আমি ভুলেই গিয়েছিলাম জসিমের কথা। আমি জানতাম মামি বেলা করে ওঠে এদিকে রনি তাড়াতাড়ি উঠে যায়। এজন্য আমি কলিং বেল চাপতেই দরজা খুলে রনি হামি দিতে থাকে। আমাকে এতো দিন পর দেখে জরিয়ে ধরে। আমি ওকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে ফিসফিস করে বলি,” মামি কোথায়?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” মা তো ঘুমায়।”
” আমি যে এসেছিলাম মামি কে বলিস না। এই নে চকলেট। মামার খেয়াল রাখবি। নিজেও ভালো থাকবি।”
” তুমি কি এখনি চলে যাবে।”
” হ্যা। জানালা খোল একটু। রুমে গিয়ে আমি দূর থেকে মামা কে একটু দেখব।”
” চলে কেন যাবে আপা থাকো না।”
” নারে থাকা যাবে না।”

মামার সাথে কথা বলার ইচ্ছা থাকলেও বলতে পারলাম না। কিভাবে বলব? মামাকে জাগাতে গেলে মামি উঠে যাবে। আমি জানালা থেকেই মামাকে দেখতে পাই। চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। তারপর রনি কে কয়েকটা কথা বলে বেরিয়ে আসি বাসা থেকে।

মামিদের বাসা থেকে বেরিয়ে কিছুদূর হেঁটে আমি একটা অটো নেয়। বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার জন্য। কিন্তু সমস্যা বাদে একটুখানি যেতেই গাড়িটা ফট করে শব্দ করে থেমে যায়। গাড়িওয়ালা বেরিয়ে পড়ে তার টায়ার পাংচার হয়ে গেছে। এমন একটা জায়গায় এনে থামিয়েছে দোকানপাট কিছুই নাই। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম এখন বাজে সাড়ে ছয়টা। বাসা থেকে বেরিয়ে ছিলাম পাঁচটার দিকে। আলো ফুটতে শুরু করেছে। ড্রাইভার দিকে কিছুক্ষণ রাগি চোখে তাকিয়ে রইলাম। আরেকটা গাড়ি আসার জন্য ওয়েট না করে হাঁটা ধরলাম।

কয়েক কদম আসতেই নষ্ট গাড়িটা ঠিক হয়ে আমার সামনে এসে থামল। আমি ভয় পেয়ে দুই কদম পিছিয়ে গেলাম। ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বললাম,” এসব কি আপনার গাড়ি না নষ্ট হয়েছে। এখন চলছে কি করে?”

” টায়ার চেঞ্জ ক‌ইরা আইলাম আহো।”
” এতো তাড়াতাড়িই?”
” সময় লাগে না ওতো। কতো সময় এমন হয়। যাত্রী দাঁড় করিয়া ঠিক ক‌‌ইরা তাগো আবার তাগো জায়গায় পৌঁছে দেই।”
“তাহলে আপনি আমাকে এত দূর হাঁটালেন কেন? প্রথমে বললেই হতো আমাকে ওয়েট করতে !”
“আমি তো ভাবছিলাম দাঁড়িয়ে থাকবা তা তুমি তো চইলা আইছ।”

বড় একটা শ্বাস ফেলে আবার উনার অটোতে উঠে বসলাম। রাগ লাগলেও আমি পাত্তা দিতে পারছি না। বুক জ্বালা করছে। নিবিড় কে ছেড়ে চলে যাচ্ছি ভাবতেই অন্তর পুড়ছে। অটোতে বসেই চোখে জল ফেলছি। এদিকে অটো ওয়ালা আরেকবার গাড়ি থামিয়ে কাকে জানি গাড়িতে তুলছে।

আমি এক কোনায় চিপকে বসে বাইরে দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলছি‌। আমার পাশে দূরত্ব রেখে আরেকজন লোক বসে আছে। কেন যেন আমার মনে হচ্ছে লোকটা আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। হাত বাড়িয়ে চোখের জল মুছে পাশে তাকাতেই চিৎকার করে উঠলাম।

জসিমকে আমি এখানে মোটেই আশা করিনি। আমি ওর দিকে তাকাতে ও দাঁত কেলিয়ে হাসলো। হাসিটা এত জঘন্য ছিল আর ভয়ানক ছিল যে আমি ওর হাসি দেখে জ্ঞান হারানোর অবস্থা। ভয়ে আমি বুকে থু থু দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,”আপনি এখানে কি করছেন?”

“ব্যাকপ্যাক নিয়া, ভোরবেলা কই যাও আমার দিলকা রাণী?”
“যেখানে খুশি সেখানে যায় আপনাকে বলতে হবে?”
“আমারে না বইলা তো অনেক জায়গায় গেলা। অনেক ছোটা ছুটি করলা। আজকে যে সাত সকালে তোমার দেখা পামু ভাবতেই পারিনাই‌। আমি যে কি পরিমান খুশি তোমারে বুঝাইতে পারুম না। মন চাইতেছে তোমারে জড়িয়ে ধরি খুশির ঠেলায়।”

“সাবধান! একদম আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না। নাহলে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দেব।”
কথাটা বলে আমি ড্রাইভার দিকে তাকিয়ে বললাম,,” গাড়ি থামান।”
“আপনি না বললেন বাসস্ট্যান্ডে যাবেন!”
“হ্যাঁ যাইতে চাইছিলাম। কিন্তু এখন আমার চির শত্রু আপনার গাড়িতে অবস্থান করছে। তার সাথে আমি একগাড়িতে থাকতে চাই না। তাড়াতাড়ি গাড়ি থামান আমি নামবো।”
অদ্ভুত লোকটা গাড়ি থামাচ্ছে না!

এবার আমি চিৎকার করে উঠলাম,”কথা কানে যাচ্ছেনা? আর আপনি এটা কোথায় যাচ্ছেন। এটাতো বাস স্ট্যান্ড এর রাস্তা না। আপনি রাস্তা চেঞ্জ করেছেন কেন? কি মতলব আপনার?”
লোকটা আর আমার কথার জবাব দিল না। জসিম ফট করে আমার হাত চেপে ধরলো। রাগে আমার শরীর জ্বলে উঠলো। আমি ধস্তাধস্তি করে হাত ছাড়িয়ে নিলাম।

আর ঠাস করে জসিমের গালে চর মেরে বললাম,” একদম আমাকে টাচ করতে আসবি না। খুন করে ফেলব। না হলে তোরে শয়তান। এই গাড়ির ড্রাইভারকে ও তুই টাকা খাইয়ে রেখেছিস তাই না?”

” হ্যা রেখেছি দেখি আজ তোরে কেডা বাঁচায় আজ তোরে বিয়ে আমি করমুই।”
” কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস আমাকে?”
” কাজী অফিসে।”
” তোর মতো গুন্ডা কে আমি বিয়ে করব ভাবলি কি করে।”
” ভাবা ভাবির কাজ নাই। যা হবে এখন সামনাসামনি।”

“গাড়ি থামাতে বল। না হলে এই গাড়ি থেকে ঝাঁপ দিয়ে নিজের জান দেবো। তাও তোকে বিয়ে করব না।”
জসিম কি শয়তান কম। ও আমার হাত ধরে রেখেছে। আমি যতই চেষ্টা করছি ছাড়াতে পারছি না। এবার আমি মুখ নিচু করে কামড়ে ধরলাম আর ব্যাথায় সাথে সাথে আমার হাত ছেড়ে দিলো। যে না আমি গাড়ি থেকে লাফ দিতে যাব তখন গাড়িটা শব্দ করে থেমে গেল। আমি চমকে উঠলাম।

গাড়ি থেমে গেছে খুশিতে আমি তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে গেলাম
এদিক দিয়ে জসিম ও নেমে গেছে। কিন্তু গাড়ি থেকে নেমে সামনে তাকাতেই আমি চমকালাম কাজী অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। কাজী অফিসের সামনে জসিমের গুন্ডাবাহিনী দাঁড়িয়ে আছে।

আমাকে দেখে হাসিমুখে ভাবি ভাবি করে ডাকছে। জসিম তাদের হাত থেকে ব্যাগের ভেতর থেকে আমার মাথায় একটা লাল দোপাট্টা আর নিজের মাথায় পাগড়ি পরল‌। সবগুলো আমাকে জরো করে দাঁড়িয়ে আছে এখান থেকে পালাবো কিভাবে বুঝতে পারছি না। চিৎকার চেঁচামেচি করেই যাচ্ছি জসিম আমার হাত ধরে টেনে হেঁচড়ে কাজী অফিসের ভিতরে নিয়ে গেল।
এত সকালে কাজী অফিস খোলা থাকে না জসিমের লোক বন্দুক হাতে কাজীর মাথায় ধরে দাঁড়িয়ে আছে। কাজী বাসায় যে লুঙ্গি গেঞ্জি পড়েছিল সেগুলো পড়ে বসে আছে। ভয়ে তিনি থরথর করে কাঁপছে।

বিয়ের সব রেডি করে এবার আমাকে কবুল বলতে বলা হচ্ছে।‌ আমি কিছু বলছি না বলে। জসিম কাজী দিকে তাকিয়ে বলল,”কবুল আগে আমি কমু। আমার পরে আমার বউ ক‌ইব।”

কিভাবে এখান থেকে পালানো যায় আমি ভাবতেছি! জসিম একদমে কবুল বলে দিল তিনবার। এবার আমার পালা। এবারো আমি কিছু বলছি না। জসিম এই প্রথম আমার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পর দিল।
“তাড়াতাড়ি কবুল বল না হলে তোর আদরের রনি কে কিন্তু খুন করে ফেলব। আমার লোকরা রনিকে পাহারা দিচ্ছে।”
“তোর মত জানোয়ার জীবনে দেখি নাই!”
“কবুল বল।”

জসিম তুই তুকানি শুরু করে দিয়েছে।
হঠাৎ করে আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম। কি করব ভেবে পাচ্ছি না। কিভাবে কি করব? হঠাৎ করে কাজীর দিকে যে বন্দুক ধরে রেখেছে। সেটার দিকে তাকালাম‌। কোনভাবে যদি এই বন্দুকটা আমি নিজের হাতে নিতে পারতাম। অনায়াসে এখান থেকে বের হতে পারতাম। কিন্তু কিভাবে সেটা নেব।

“কি হলো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি ভাবতাছিস? তুই পালাইতে পারবি না। তাড়াতাড়ি কবুল ক।”
আমি হঠাৎ করে পেট ব্যথার এক্টিং শুরু করে দিলাম!” ব্যথায় মরেই যাচ্ছি এমন একটা অবস্থা করে। আমি দাঁড়ানো থেকে ঠাস করে পড়ে গেলাম। আর এমনভাবে পরলাম যার হাতে বন্দুক ছিল তার হাতের সাথে বারি খেয়ে নিচে বসে পড়লাম। আর তার হাত থেকে বন্দুকটা ছিটকে পড়ে গেল আমার ধাক্কায়।

জসিম বসা থেকে আমাকে ধরতে আসবে তখনই আমি বন্দুক টার দিকে তাকিয়ে বসে থেকে উঠে ছুটে নিজের হাতে নিলাম।
চমকে উঠল জসিম।
আমি বন্দুক সোজা জসিমের দিকে তাক করে রেখেছি।
“একদম আমার দিকে এগানো চেষ্টা করবি না শয়তান। নাহলে তোর বন্দুকের গুলিতে তোকে আজকে আমি শেষ করে দেবো।”

“ওটা কিন্তু খেলনা বন্দুক না। গুলি আছে বের হয়ে যাবে। দে ওটা আমাকে। ভালো হবে না কিন্তু।
এতদিন তোকে বিয়ে করতে চাইছি না হলে কিন্তু আজকে তোকে আমি খুন করে ফেলব। আমার দিকে তুই বন্দুক তুলিস।এতো সাহস তোর?”

“আমার সাহসের এখনো কিছুই দেখিস নি। এগিয়ে দেখ গুলি একটা মাটিতে পড়বে না। জীবন এটা না চালালেও আজকে আমি এটা চালাবো। তোর মত শয়তানের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে যদি খুন করতে হয় আমি খুনি হব!”
আমাকে ঘিরে ওর লোকেরা দাঁড়িয়ে ছিল আমি এগিয়ে এসে জসিমের মাথায় বন্দুক ধরলাম।

জসিম ভয়ে কাঁপতে লাগলো আমি ওকে নিয়ে কাজী অফিসের বাইরে এলাম। তখনো ওই অটোওয়ালা দাঁড়িয়েছিল। এখনো জসিম টাকা দেয়নি। সে যে এতো বড় রিক্সের কাজ করল টাকা না নিয়ে যাবে কেন? এ জন্য ওয়েট করছিলে! এসব দেখে সেও এখন ভয়ে আতকে উঠল। আমার আর জসিমের দিকে তাকিয়ে আছে ।

জসিম হুট করে আমাকে ধাক্কা দিল আমি তাল সামলাতে না পেরে মাটিতে পড়ে গেলাম। কিন্তু বন্দুক নিজের হাত থেকে ছাড়িনি। হাতে এমন শক্ত করে ধরেছিলাম পড়ে গিয়েও আমার হাতে বন্দুক আছে দেখে জসিম ভয় পেয়ে গেল।
মাথা গিয়ে পড়েছে আমার পাকা রাস্তায় এজন্য কপালে আর গালের পাশে ব্যথা পেয়েছি সারা শরীর ছিড়ে যাচ্ছে।

ওইভাবে আমি অনেক কষ্টে উঠে বসলাম জসিমের দিকে আবার বন্দুক ধরতে জসিম ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে। ও পেছনে যেতে যেতে রাস্তার মাঝখানে চলে গেছিলো। আমি চোখ বন্ধ করে গুলি ছুড়লাম। গুলির শব্দের সাথে আরেকটা বিকট শব্দ ও আত্মচিৎকার ভেসে আসলাম।

আমি সাথে সাথে চোখ খুলে দেখলাম একটা গাড়ি জসিমকে উল্টিয়ে দিয়ে গেছে
রাস্তার এক কোনায় রক্তাক্ত দেহে পড়ে আছে জসিমের। আমার হাত থেকে বন্দুক টা ঠাস করে পড়ে গেল আমার কোলের উপর। আমি মুখে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছি জসিমের ছিন্ন ভিন্ন দেহটার দিকে।
জসিমের চ্যালা প্যালা রা এসব দেখে ভয়ে ছুটে পালিয়েছে। অটো ড্রাইভার স্তব্ধ হয়ে একবার জসিমের দিকে তাকাচ্ছে ত একবার ছোঁয়ার দিকে।

অবাধ্য প্রেম দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ১২

উনি কি ভেবে যেন দৌড়ে আসল আর ছোঁয়া কে ধরে উঠালো। আর বন্দুক টা পলি দিয়ে আটকে গাড়িতে টেনে উঠিয়ে বসালো।
আমি পাথরের ন্যায় লোকটা যা করল তাতে সায় দিলাম। ড্রাইভার হানিফ কপালের ঘাম মুছে তাড়াতাড়ি জায়গা ত্যাগ করল।এই মেয়ে ফাসলে
উনি ও ফাসবেন তাই ছোঁয়া কে বাঁচানোর চেষ্টা করছে।

অবাধ্য প্রেম দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ১৪