অবাধ্য প্রেম দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ১৪

অবাধ্য প্রেম দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ১৪
নন্দিনী নীলা

” তুমি কি গুলি করেছিলে?” প্রশ্ন করল নিবিড়।
আমি মাথা নেড়ে স্বীকার করলাম।
নিবিড় আমার গালে স্পর্শ করে অশ্রু মুছে দিয়ে বলল,” তোমার দ্বারা ও যদি এই খুন হয়ে থাকে তবুও তুমি নির্দোষ। কারণ তুমি নিজেকে রক্ষা করতে এসব করেছো। এখানে তোমার কোন দোষ নেই।”

” খুন ত করেছি। এই সত্যিটা মিথ্যে হয়ে যাবে না।”
বলেই ডুকরে উঠলাম। নিবিড় উঠে দাঁড়াল। ছোঁয়ার কপালে ওষ্ঠ স্পর্শ করে বলল,” ঘুমাও অনেক রাত হয়েছে।”
নিবিড়ের মুখটা যথেষ্ট গম্ভীর হয়ে আছে।
” আপনি ও যান ঘুমিয়ে পড়ুন।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নিবিড় গেস্ট রুম থেকে বেরিয়ে এলো।
আমি শুয়ে পরলাম ক্লান্ত লাগছে। শুতেই ঘুমিয়ে পরেছিলাম।
ঘুম ভাঙে চিৎকার চেঁচামেচিতে। আর মোড় ভেঙে বাইরে আসতেই নজর যায় নিবিড় সোফার উপর বসে আছে পায়ের উপর পা তুলে। ওনার পাশে বসে আছে নিলাশা বেগম। তিনি কি যেন বলছে নিবিড়ের ঠোঁটে হাসি। আমি দূরে থেকে তাদের দিকে তাকিয়ে আছি। নিবিড় আমাকে দেখেই বললো,,” ছোঁয়া আমাদের জন্য চা নিয়ে আসো তো।”

আমি রান্নাঘরে চলে এলাম। কি কথা বলছিল দু’জন? আমাকে দেখেই নিলাশা বেগম কথা থামিয়ে দিয়েছিল। আমি চা নিয়ে সামনে এলাম নিবিড় আগে কাপ নিল।
আমি ভেবেছিলাম নিলাশা বেগম নিবেন না‌ কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে চা নিয়েছে।
নিবিড় আমার হাত ধরে টেনে নিজের পাশে বসিয়ে দিল। তারপর নিলাশা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল,” মম দেখো ত আমাদের কেমন মানিয়েছে!”

আমি চোখ কপালে তুলে তাকিয়ে আছি।
তিনি কটমট চোখে তাকিয়ে ছিল আমার দিকে কিন্তু তবুও মুখে হাসি আনার চেষ্টা করে বলল,” ব‌উদের রঙ এতো চাপা থাকলে কেমন আর লাগবে। কিন্তু তোর পছন্দ আমি আর কি বলব।”
বলেই উনি দাঁত কিড়মিড় করে চলে গেল।
আমি খুব বেশি চমকালাম।

” আন্টির কি হয়েছে? এতো স্বাভাবিক আচরন কেন?”
” এসব এখন ভেবো না ত। দুইদিন বাদে আমাদের বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে একটু পর সবাই শপিং মলে যাব তৈরি থেকো।”
” মানে?”

” মানে হলো আমার রেজিস্ট্রি করা ব‌উ কে এবার কবুল বলে নিজের রুমে নিয়ে যাব। তার জন্য আয়োজন করা হচ্ছে।”
” এসব কখন করলেন? আমি এতো বড় একটা কান্ড ঘটিয়ে বসে আছি আর আপনি বিয়ে নিয়ে মেতে আছেন। দুদিন পর যখন আবার পুলিশ নিতে আসবে তখন বুঝবেন।”

” কার এতো সাহস আছে আমার ব‌উকে নিতে আসবে। তুমি ওইসব নিয়ে প্যারা নিও না। সব আমি সামলে নিব।”
খাবার টেবিলে বসেছে সবাই সাফ করছে তাহমিনা আপু। আমি পাশে দাঁড়িয়ে আছি কি করব বুঝতে পারছি না। নিবিড় আমাকে টেনে এনেছে। বসতে বলেছে কিন্তু বসছি না। এবার জোর করে বসিয়ে দিল নিজের পাশে। তাহমিনা আপু সবাইকে বেড়ে দিচ্ছে নিবিড়ের কাছে আসতেই নিবিড় বসে উঠল,,” আমার ব‌উ আছে। সেই আমাকে বেড়ে খাওয়াবে।”

তাহমিনা আপু ভাত দিতে গিয়েও চমকে উঠে হাত সরিয়ে নিলো।
এইভাবে কথাটা বলবে কেউ আশা করেনি‌।
নিবিড় এইভাবে কথা বলেছে দেখে সবাই চমকে তাকিয়েছিল। আমি নিবিড়ের গম্ভীর মুখটার দিকে তাকিয়ে বসা থেকে দাঁড়িয়ে ভাত, মাছ ভাজা, দিলাম প্লেটে।
সবাই আবার খেতে বসেছে। আমি ফিসফিস করে বললাম নিবিড়কে,” ওভাবে কথা বললেন কেন? কি ভাবছে সবাই?”

” কে কি ভাবলো আই ডোন্ট কেয়ার!”
কাল রাতে সব বলায় যে নিবিড় তাহমিনা আপুকে সহ্য করতে পারছে না সেটা আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু এইভাবে সবার সামনে সেটা প্রকাশ করবে ভাবিনি।
আপু আর এদিকে আসেনি। আমার প্লেটে নিবিড় একটু পর পর গোস্ত তুলে দিচ্ছে লজ্জা আমি কারো দিকে তাকাতে পারছি না।

আবির হঠাৎ বলে উঠল,” ভাইয়া তোমার প্রিয় রানের পিস ভাবিকে দিয়ে দিছো।”
” আমি আর আমার ব‌উ কি আলাদা নাকি। একজন খেলেই হয়।”
” তুমি নিজের ভাগ ছাড়লেও আমি কিন্তু ছেড়ে ব‌উকে দিতে পারব না।”

সবাই মিটিমিটি হাসছে। ছোট চাচি বলল,” আদ্যিখেতা যতসব। এই মেয়ে খুন করছে তারে পুলিশ পর্যন্ত থানায় নিয়েছিল তারে নিয়ে এত আদিখ্যেতা।”
নিবিড় রাগী গলায় বলল,” ছোট কাকি তোমার যদি আদ্যিখেতা দেখতে অসহ্য লাগে। নিজের রুমে বসেই খেতে পারো। ”

” আমি তোমার কাকি হ‌ই নিবিড়। ব‌উয়ের জন্য আমাকে অপমান করছো?”
” যেচে অপমানিত হতে চা‌ইলে না করে কি উপায় আছে?”
” আমি যেচে অপমানিত হতে আসছি? সত্যি কথা ও বলতে আজকাল ভাবতে হবে?”

” আজ যদি ছোঁয়া খুনি হয়ে থাকে। তার জন্য এই বাসার লোকজন দায়ী।”
” তোমার মা তোমার জীবন থেকে যেতে বলেছিল খুনি হতে বলেনি।”
” যেতে না বললে আজ খুন করার প্রয়োজন পরত না।”

তিনি আর কথা বলল না। রাগে গজগজ করে চলে গেল খাবারের প্লেট নিয়ে। এদিকে ছোঁয়া ও খাবার রেখে চলে গেছে। ওর জন্য এতো ঝামেলা ও সহ্য করতে পারছে না। ছোঁয়া কে নিজের পাশে না পেয়ে নিবিড় ও খাবারের টেবিলে ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছে।
আশার দিকে তাকিয়ে বলল,” নতুন করে খাবার নিয়ে আয়।”

বলেই চলে গেল গেস্ট রুমের দিকে।
বিকেলে মাইশা আর ওর মা এসে হাজির। নিবিড় রা তখন শপিং মলে যাবার জন্য বের হচ্ছিল। মাইশা এসেই তা দেখে যাওয়ার বায়না ধরল অগত্যা ওকে নিয়ে যেতে হলো।
এদিকে নিবিড় বন্ধু মহলের সবাই এসেছে। তৌহিদ এসেই জানালো ওর সাথে নাকি রাত্রির কথা হয়। রাত্রি ওদের কথা জিজ্ঞেস করছিল।

ছোঁয়া ফোন নিয়ে নিজেও কথা বলল রাত্রির সাথে আর বিয়েতে আসতে বলল।
রাত্রি আসবে জানাল।
মাইশা শুধু নিবিড় আর ছোঁয়া কে নজরে রাখছে। ভেতর টা পুড়ে যাচ্ছে ওর।
কিন্তু কিছুই করতে পারছে না। মন চাচ্ছে ছোঁয়া কে মেরে ফেলতে।

নিবিড় একটা লেহেঙ্গা পছন্দ করেছিল ছোঁয়ার জন্য তখনি দৌড়ে এসে মাইশা সেটা হাতে নিয়ে বলে,” ব্রো কি সুন্দর এটা আমি নিব প্লিজ।”
বলেই টেনে হাতে নেয়। বেগুনি কালারের লেহেঙ্গা। নিবিড় কিছু বলতে চাইছিল ছোঁয়া ওকে টেনে এনেছে।
“ওখানে আর কথা বলে ঝামেলা চাই না‌। আপনি এ নিয়ে আর কথা বলিয়েন না।”

অন্য দোকানে এসে শাড়ি দেখছে ওরা। রিসা একটা কাতান শাড়ি আনল মেজেন্ডা কালারের। নিবিড় উল্টে পাল্টে রেখে দিল সেটা। শাড়ি বের করতে করতে পাহাড় করে ফেলেছে দোকানদার কিন্তু নিবিড়ের পছন্দ হচ্ছে না।
আমি ক্লান্ত চোখে গালে হাত দিয়ে বসে আছি। নিবিড় একটা মিষ্টি কালারের বেনারসী হাতে তুলে নেয়। সোনালী কাজ, সুন্দর পাথর বসানো দারুন শাড়িটা। নিবিড় সেটায় আঁচল তুমি দিল আমার কাঁধে তারপর সেটা সিলেক্ট করল সেটা। এরপর এলো লেহেঙ্গা হাউজ এ।

পিন কালারের একটা লেহেঙ্গা চয়েজ করল তার ওরনা আমার মাথা দিল ঘোমটা টেনে।
” আপনি দেখি মেয়েদের থেকে ও বেশি সময় নেন। চলেন তো বিরক্ত লাগছে।”
” চুপচাপ আমার পিছনে আসো নো টক‌।”
নীল লেহেঙ্গা নিল আরেকটা।

” আমাকে নীলে ভালো দেখায় না। কালো মেয়েদের নীলে খারাপ লাগে।”
নিবিড় ধমক দিয়ে বলল,,” চুপ বেয়াদব আমি যা খুশি নেব। একদম আমার ব‌উকে কালো বলবে না। মেরে ফেলব।”
গহনার দোকানে এসে আমাকে গহনা পরিয়ে জোকার বানালো নিবিড়। গলায়, কানে, মাথায় হাতে কোমরে পরিয়ে সিলেক্ট করল।

আমার দিকে তাকিয়ে বলল,” রানীর মতো লাগছে। এটা তো নিবিড়ের পাঠরাণী‌।”
আমি কটমট করে চেয়ে আছি‌।
” এভাবে তাকিও না এইখানে লাগে।”
বুকের বাম পাশে ইশারা করে বলল।

সবাই ডিনার করল। আমি আইসক্রিম খেলাম শুধু। বাসায় এসে দেখি আরেক সার্কাস। মাইশা পরে
ও আমার জন্য চয়েজ করা জিনিস নিতে চাইছিল তাই নিবিড় ধমক দিয়েছিল এজন্য রাগ করে চলে এসেছিল। এখন সে দেখি ড্রয়িংরুমে বসে কাঁদছে।

মাইশার মা বলল,” আমার মেয়েকে তুমি কাঁদিয়ে বাড়ি পাঠালি? ব‌উ পেয়েই বোনদের প্রতি অবিচার শুরু করে দিছিস?”
” ফুপি তোমার মেয়েকে মার্কেট করিয়ে দিতে পারব একবার ও বলিনি। আমি এখনো কামাই করিনা। এসব আমি বাপের টাকায় কিনছি। আর তোমার মেয়েকে যে কে কি শিখিয়ে দিয়েছিল আমি ভালোই বুঝতে পারছি তাই তাকে বলো এই নাটক বাদ দিতে না হলে কিন্তু…

অবাধ্য প্রেম দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ১৩

মাইশার কান্না অফ ও চোখ মুছে নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,,” আম্মু বাদ দাও তো।”
বলেই চলে গেল মাহির রুমে। মাহি নিজের ব্যাগ নিয়ে নিজেও এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে র‌ইল।

অবাধ্য প্রেম দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ১৪ শেষ অংশ