অবাধ্য প্রেম দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ১৫

অবাধ্য প্রেম দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ১৫
নন্দিনী নীলা

সকালে খুব দ্রুত রাত্রি এসে হাজির। মেয়েটার মধ্যে মিশুক ভাব আছে। এসেই সবার সাথে মিশে গেছে। আমার সাথে রুমে এসে গল্প জুড়ে দিয়েছে। সাথে কপালের আঘাত দেখে জিজ্ঞেস করেছে কি হয়েছে।
কালের ঘটনা বলেছি।ও ত এখন গোয়েন্দা গিরি শুরু করেছে কে ধাক্কা দিয়েছে খোঁজার জন্য। ধাক্কার ব্যাপার টা আমি নিবিড়ের থেকে লুকিয়ে গেছিলাম। ও জানে না রাত্রি কে ও বললাম না জানাতে।

” জানো ছোঁয়া আমি কিন্তু তোমার বরের উপর ক্রাশ খেয়েছিলাম।”
” তাই কবে?”
” ট্রেনে থাকতে।”
” আমার হাজব্যান্ড এর উপর ক্রাশ খেয়ে এখন সেটা আবার আমাকে বলতেছো ভয় করছে না আমাকে।”
” আরে শোন আমি কিন্তু দুইবার ক্রাশ খেয়েছিলাম।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আমি চোখ কপালে তুলে বললাম,” এই মেয়ে আমার স্বামীর দিকে বাজে নজর দিলে কিন্তু চোখ তুলে নিব।”
” আরে শোন না। প্রথম বার তোমার হ্যান্ডসাম বরের রুপ থেকে ক্রাশ খেয়েছি। আর দ্বিতীয় বার তোমার আর নিবিড়ের ভালোবাসা দেখে ক্রাশ খেয়েছি। কতো কেয়ার করে নিবিড় ভাইয়া তোমার। ইশ চোখে হারায় এমন একজন আমার ও চাই। যে আমাকে চোখে হারাবে।”

” তাই আমাদের তৌহিদ ভাইয়া আছে ত।”
” ধ্যাত কি বলছ।”
” রাত্রি তৌহিদ ভাইয়া কিন্তু তোমাকে সেই মাপের পছন্দ করে।”
” ক‌ই উনি তো কখনো বলেনি।”
” বলেনি ত কি হয়েছে। বলতে কতোক্ষণ?”

এবার রাত্রি কিছুই লজ্জা পেল বোধহয়। আমি আর ওকে লজ্জা দিলাম না।
নিবিড় আজকে সকালেও কোথায় জানি চলে গেছে হন্তদন্ত হয়ে। নিবিড় আজ গেছে থানায় অটো ড্রাইভার কে খোঁজে পেয়েছে তার নাম হানিফ‌। সেই খুনের পর তিনি ভয়ে শহর ছেড়ে পালিয়ে ছিল। এদিকে জসিম এর সাথে থাকা চারজন কে এরেস্ট করা হয়েছে। সাথে হানিফ কেও। হানিফ ভয়ে সব সত্য বলে দিয়েছে।

সব শুনে শায়ের বুঝতে পেরেছে এখানে ছোঁয়ার কোন দোষ নাই। আর তাছাড়া গুলি লাগার আগেই এক্সিডেন্ট হয়েছিল এমনটা বলেছে হানিফ‌। অযথাই ছোঁয়া কে পেরেশানিতে রাখা হয়েছে এসব তথ্য প্রমাণ কোর্টে পেশ করা হয়েছে। ছোঁয়া নির্দোষ প্রমাণ হয়।

নিবিড় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে থানা থেকে বেরিয়ে এসেছে। সোজা ছোঁয়ার মামির ফ্লাটে গিয়ে হাজির। ছোঁয়ার মামি নিবিড়কে দেখেই ভয়ে পা জরিয়ে ধরে বসেছে‌। নিবিড় রনিকে নিয়ে বাসায় ফিরে আসে। ছোঁয়া মামিকে আনেনি। তিনি আসতে চেয়েছিল কিন্তু নিবিড় বলেছে,” আমাদের শুভ কাছে আপনার অশুভ ছায়া রাখতে চাইনা।”

আসার আসে মামার সাথে কথা বলে এসেছে।
এতো দিন পর রনিকে পেয়ে ছোঁয়া খুব খুশি হলো।
খুশিতে রনি চিৎকার করে আপা বলেছে। লিলি আর দীপা চলে এসেছে এতো ঝামেলায় দীপার সাথে আর দেখা করতে যেতে পারিনি আমি।

দীপা আসতেই ওর মেয়েকে কোলে থেকে নামায় নি।
পার্লারের লোক আমাকে হলুদ শাড়ি পরিয়ে রেডি রে দিয়েছে। মাহি লেহেঙ্গা পরতে বলেছিলা আমি না করেছি।ওরা সবাই সেম লেহেঙ্গা পড়েছে আমি একাই শাড়ি পড়েছি। রাত্রি ও লেহেঙ্গা পরেছে। তৌহিদ ভাইয়া আসার পর থেকে রাত্রি-কে জ্বালিয়ে মারছে। আঠার মতো পেছনে লেগে আছে।

নিবিড় হলুদ পাঞ্জাবী গায়ে এগিয়ে এলো। আমি হা করে তাকিয়ে ছিলাম। নিবিড় সবার আগে আমার গালে হলো লাগিয়ে বলল,” আমার ব‌উয়ের আমি সবার আগে হলুদ লাগাব‌”
তারপর সরে গেল। সবাই মিটিমিটি হাসছিল। নিবিড়ের মা পর্যন্ত এসে আমাকে হলুদ দিয়েছে আমি চোখ কপালে তুলে তাকিয়ে ছিলাম।

উনাকে মোটেও আসা করিনি। উনার স্বাভাবিক আচরণের কারণ বুঝতেছি না। আর তাহমিনা আপুর মন খারাপের কারণ ও বুঝতেছি না। সব কিছু আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। নিবিড় কে যে জিজ্ঞেস করব তার সুযোগ ও পাচ্ছি না। মানুষটার এতো ব্যস্ততা কোথা থেকে এলো সারাদিন তার নাগাল পাওয়া যায় না।
রাত্রি আমার সাথে ঘুমালো। সারারাত তৌহিদ ভাইয়ের সাথে কলে কথা বলেছে। দুজনের মধ্যে প্রেম আছে কিনা চেপে ধরলাম রাত্রি কে।

” এই মেয়ে তৌহিদ ভাইয়া তোমায় প্রপোজ করেছে তাইনা।”
” কি বলছ নাহ তেমন কিছু না।”
” তাহলে রাত জেগে কথা বললে যে।”
” ওই আসলে উনি একটা গল্প বলছিল তাই লেট হয়ে গেল।”
” প্রতিদিন কথা বলো?”
” হুম কিন্তু এতো সময় বলি না। তুমি নিবিড় ভাইয়ার সাথে কলে কথা বলো না?”
” আমার তো ফোন‌ই নাই কথা বলব কি করে?”
” বলো কি? ”

” হুম যখন চলে গেছিলাম তখন হারিয়ে গেছিল। আর পরে কিনতে চেয়েছিলাম আর কেনা হয়ে উঠেনি।”
রাত্রি গালে হাত দিয়ে বললো,,” তোমাদের প্রেম কাহিনী টা বলো না। খুব শোনতে ইচ্ছে করছে।”

” আমাদের ত প্রেম‌ই হয়নি। আমাদের প্রেম ছিল দু’জনের মনে লুকানো। আমাদের প্রেমটা ছিল অবাধ্য মনের প্রেম। যে প্রেমটা আমরা দু’জনেই লুকিয়ে রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু অবাধ্য মন কি লুকিয়ে রাখা যায়। শিকল ভেঙে বেরিয়ে আসে হুট করেই। অতঃপর প্রেম হ‌ওয়ার আগেই বিচ্ছেদ ঘটে।”
অতঃপর রাত্রির জোরাজুরি তে আমাকে সব বলতে হয়। রাত্রি গালে হাত দিয়ে সব শুনলো।

” সো সুইট। জানো তৌহিদ বলেছে আজ আমাকে সারপ্রাইজ দিবে।”
” মনে হচ্ছে মনে কথা আজকেই জানবে”
সারে পাঁচটা আমি রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। নিবিড়ের রুমে একটা চক্র দেওয়ার জন্য।

গুটিসুটি পায়ে নিবিড় রুমে চলে এলাম। নিবিড় দরজা আটকে ঘুমায় কিন্তু এখন এটা করে না‌ হয়তো আমি আসবে ভাবে। আমি দরজা আসতে করে খুলে ভেতরে তাকাতেই আমার পায়ের তলার মাটি সরে যায়। চোখ বন্ধ করে ফেলি। এটা আমি কি দেখলাম। মাইশা নিবিড় কে জরিয়ে ধরে শুয়ে আছে‌।

শুধু তাই নয় নিবিড় কে চুমু দেওয়ার চেষ্টা করছে ঠোঁটে। নিবিড় ওকে নিজের থেকে সরাতে ব্যস্ত। আমি যে এখানে এসেছি এটা ওরা দুজনের কেউ লক্ষ্য করেনি। নিবিড় দরজার দিকে পিঠ করে আছে। তাই ও দেখবে না কিন্তু মাইশা চট করেই আমাকে দেখে ফেলল আমার দেখতেই বলতে লাগল,” ব্রো এসব কি করছো ছাড় আমাকে। আজ তোমার বিয়ে আর তুমি আমাকে। আমি জানি ছোঁয়া আমার মতো সুন্দরী না তাই বলে ওকে তুমি ঠকাতে পারো না। তোমাদের তো বিয়েও হয়ে গেছে।”

নিবিড় নিজেও অবাক মাইশার কথা শুনে। আজ সকালে মাইশার এমন নির্লজ্জ পানা দেখে ও বুঝে গেছে কালকের সেই মেয়েটাও ওই ছিল‌। ভাবতেই ওর লজ্জা লাগছে এই মেয়েটা ওর সম্পর্কে বোন। ছিহ তার থেকে এমন কাজ ওকে থমকে দিয়েছে।

মানুষ এতো খারাপ হতে পারে। একটা মেয়ে কীভাবে এমন বেহায়া হতে পারে।‌
তখনি ছোঁয়া ছুটে এসে মাইশার চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে এলোপাথাড়ি পারতে লাগে। নিবিড়ের থেকে সরিয়ে এনেছে। নিবিড় ছোঁয়াকে দেখে যতটা আ চমকেছে তার থেকে বেশি হতবাক হয়েছে ছোঁয়ার রুপ দেখে।
এদিকে নিবিড় এর রুমে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে জাগ্রত হ ওয়া অনেকে ছুটে এসেছে। সবাই এসেছে ছোঁয়ার হাতে মাইশা কে মার খেতে দেখে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে।

মাইশার মা ছুটে এসে মাইশা কে ছাড়িয়ে জরিয়ে ধরেছে। নিবিড় কি করবে বুঝতে পারছে না। ও ছোঁয়ার রুপ দেখে স্তম্ভিত।
ছোঁয়া নিজেকে সামলাতে পারছে না। আবার ছুটে মাইশা কে ধরতে চাইলে নিবিড় ওকে জাপ্টে ধরে।
মাইশার মা চিৎকার করছে,” আমার মেয়েকে মারল কেন তোর ব‌উ নিবিড়। এর একটা বিচার না করলে আমি কিন্তু আর কোনদিন তোদের বাড়ি আসব না।”

নিবিড় ছোঁয়া কে শান্ত হতে বলে বলল,,” নিজের মেয়েকে জিজ্ঞেস কর। আর তোমার মেয়ের মুখ ও আমি কোনদিন দেখতে চাইনা ইভেন বিয়েতে ও না থাকলে আমি খুশি হবো।”
অপমানে চিৎকার করতে লাগল।

নিবিড় এর বাবা ধমক দিল নিবিড় কে। নিবিড় চুপ করে গেল।
মাইশা আর মাইশার মা সেই মুহূর্তে রাগে চিৎকার করতে করতে চলে গেল।
নিবিড় সবাইকে নিজের রুমে থেকে বের করে দরজা আটকে দিল। ছোঁয়া কে বিছানায় বসিয়ে গ্লাস করে পানি এনে দিল। ছোঁয়া ঢকঢক করে পানি খেয়ে মাথা নিচু করে বসে র‌ইল।

” ছোঁয়া।”
আমি ছলছল চোখে নিবিড়ের দিকে তাকালাম।
” কাঁদছ কেন? বিশ্বাস কর ও জোর করে এসব করেছে আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।” নিবিড় আমার দিকে অসহায় মুখ করে বলল।

আমি বললাম,” ও আপনাকে চুমু খেল আমার চোখের সামনে। আপনাকে জরিয়ে ও ধরেছিল।”
” আমি ঘুমে ছিলাম ও কখন এসেছি আমি টের পায়নি। কিন্তু জাগ্রত হতেই আমি ওকে সরিয়ে দিয়েছি‌।”
” গত দিন ও ওই কিছু করেছিল তাই না।”
” অন্ধকার ছিল তাই মুখ দেখিনি। কিন্তু এখন সিউর ওই ছিল।”
আমি কান্না গলায় বললাম,,” কোথায় কোথায় স্পর্শ করেছিল সত্যি করে বলুন।”

” শুধু গালে আর জরিয়ে ধরেছিল।”
আমি আবার ডুকরে কেঁদে উঠলাম।
” আমার স্বামী কে অন্য মেয়ে স্পর্শ করেছে আমার কেমন লাগছে জানেন? এখন আমাকে যদি কেউ এইভাবে টাচ করত আপনার কেমন লাগত বলেন।”

” খুন করে ফেলতাম।” চোখ লাল করে বলল নিবিড়।
” নিজেকে রক্ষা করতে আমি দুজনের সাথে লড়াই করেছি। শুধু আপনার জন্য নিজেকে পবিত্র রেখেছি।”
” জানি তো। আজ স্বামী কে ও তো বাঁচালে। আমার ব‌উ যে খুব সাহসী আমি জানি।”
” আমাকে একদম ভীতু ভাববেন না। নরম হলেও নিজের স্বামীর ভাগ কাউকে একটু ও দেব না‌। কেউ নিতে চাইলে খুন করে দেব।”

অবাধ্য প্রেম দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ১৪ শেষ অংশ

” একটা ত করেছ। আরো করবে নাকি?”
” একটা করার সাহস পেলে একশটা করার সাহস রাখা যায়।”
নিবিড় ছোঁয়া কে শান্ত করে নিল।

অবাধ্য প্রেম দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ শেষ পর্ব