পূর্ণিমাতিথি পর্ব ১২

পূর্ণিমাতিথি পর্ব ১২
লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া

কোচিং থেকে এসে দেখি রিদি আপু আসছে। রিদি আপুর সাথে নিয়াম ভাইয়া (রিদি আপুর হাজবেন্ড) আর নিধি ও (রিদি আপুর মেয়ে)
আসছে। নিধি আমাকে দেখেই দৌড়ে এসে কোলে ওঠে। আমি নিধিকে কোলে নিয়েই নিয়াম ভাইয়া আর রিধি আপুর কাছে যাই।
কেমন আছো তোমরা?

আপু কিছু বলার আগেই নিয়াম ভাইয়া ফট করে বলে ওঠে,
আমরা তো অলটাইম ফাস্ট ক্লাস থাকি। আমার ভালো থাকার ঔষধ তো আমার সাথেই আছে। তাহলে খারাপ কী করে থাকি শালিকা? তুমি তো এখন রুদ্র মানে আমার একমাত্র শালার বউ। তোমাকে এখন আমি কী ডাকবো?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রিদি আপু নিয়াম ভাইয়াকে থামিয়ে দিয়ে বলে, আহ তুমি চুপ করবে। মেয়েটা মাত্রই বাসায় আসছে আর তুমি তোমার প্রশ্নের ঝুরি খুলে বসেছো। রিয়া তুই আগে ফ্রেশ হয়ে নে, তারপর তোর সাথে আড্ডা দিব।
জিজু আপনি যেদিকেই যান না কেনো? সব দিক দিয়েই কিন্তু আপনি আমার জিজুই থাকবেন। তাই যদি পকেট বাঁচানোর চিন্তা ভাবনা করেন তাহলে ভুলে যান। আপনি কিন্তু এখনো আমাকে বিয়ের গিফট দেন নাই।

রাত প্রায় ৯টা বাঁজে। আমি, রুদ্র, রিদি আপু আর নিয়াম ভাইয়া ডিনার করতে বসেছি। মামুনি আর আংকেল অনেক আগেই ডিনার সেরে ফেলছে। আমরা এতক্ষণ রুদ্রর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। নিয়াম ভাইয়া মিষ্টি খেতে খেতে হঠাৎ বলে ওঠলেন,

শালাবাবু শুধু বিয়ে করলেই তো হবে না। কিছু দায় দায়িত্বও তো পালন করতে হবে। সারাদিন শুধু হসপিটাল আর রোগী নিয়ে পড়ে থাকলেই হবে? ঘরের বউয়ের দিকেও তো নজর দিতে হবে। আমি তোমাদের হানিমুন ট্রিট দিচ্ছি। তোমাদের হানিমুনের সব খরচ আমার। এখন বলো কবে যাবে আর কোথায় যাবে?
উনি যাবেন আমার সাথে হানিমুনে হাস্যকর। জিজু আপনি প্রথম কথাগুলোই ঠিক বলেছে। উনি শুধু দায়িত্বই পালন করে। আর কিছু না উনি উনার দায়িত্বের বাইরে এক চুল কাজও করেন নাহ কারোও জন্যই না। সেখানে আমার সাথে হানিমুন যাবেন? সেটা স্বপ্নেই সম্ভব।

মনের কথাগুলো মনেই থেকে গেলো। আর প্রকাশ করা হলো না। উনি গম্ভীর গলায় বললেন,
এখন কোথাও যাওয়াটা পসিবল।হসপিটালের অনেক কাজ আছে। রিয়া আজকেই প্রথম কোচিংয়ে গেছে। এখন কোচিং মিস দেওয়া যাবে না। তাই তুমি এসব চিন্তা ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দেও।
কাজ আর পড়াশোনা তো সারাজীবনই করতে পারবে। হানিমুনে যাওয়ার সময় তো সারাজীবন পাবে না। তোমরা নিউলি ম্যারিড কাপল এখনি ঘুরাঘুরির সময়। রিয়া তুমি কোথায় যাবে?

জিজু এসব বিষয় এখন থাক। সময় হলে আমিই তোমাকে বলবো। ওর মাথায় এখন এসব ঢুকিয়ো না। এমনিই পড়াশোনা করে না। পরে দেখা যাবে এসব নিয়েই শুধু লাফালাফি করছে। আমার খাওয়া শেষ। আমি আসছি।
উনি ওঠে চলে গেলেন। আমি গাল ফুলিয়ে বসে রইলাম। উনি আবারও আমাকে সবার সামনে অপমান করলেন। আমি পড়াশোনা করি না।

কেমন দম বন্ধ লাগছে। নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ আমার গলা চেপে ধরেছে। আমি ধপ করে চোখ খুলে ফেলি। চোখ খুলে সামনে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই দেখছে পাচ্ছি না। নিশ্বাস নেওয়া কষ্টকর হয়ে
যাচ্ছে। হাত পা নাড়াতে পারছি না। হাত পা অবশ হয়ে যাচ্ছে। আমি কী মারা যাচ্ছি?এমন দম বন্ধকর অবস্থায় আমার চোখ উল্টে আসছে। চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে আসছে।

আর কী প্রিয় মুখগুলো দেখা হবে না? ভাইয়ার সাথে দুষ্টুমি করা হবে না। উনার বকা কী আর খাওয়া হবে না? আমি মারা গেলে কী ডাক্তারবাবু কাঁদবেন? উনার কী আমার জন্য খারাপ লাগবে?
নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। এক ঝলক দেখতে পেলাম প্রীলিয়া আপু আমার গলা চেপে ধরে আছে।
হেই ওপেন ইউর আইস। তুমি এমন ছটফট করছো কেনো?

পিটপিট করে চোখ খুলেই দেখতে পেলাম উনি আমার দিকে ঝুঁকে আমাকে ডেকে চলেছেন। তার মানে আমি এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম। হঠাৎ আমি উনাকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে দিলাম। উনি তাল সামলাতে না পেরে আমার উপরেই পড়ে গেলেন। ভয়ে আমার শরীর এখনো থরথর করে কাঁপছে। যদি এটা স্বপ্ন না হয়ে সত্যি হতো তাহলে? ভাবতেই ভয়ঙ্কর অনুভূতি আমাকে গ্রাস করছে।

উনি অস্থির হয়ে বললেন, কী হয়েছে?
আমি উনাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই যাচ্ছি। উনি আমাকে নিয়েই সোজা হয়ে বসলেন। আমাকে শান্ত করার জন্য মাথায় বুলিয়ে বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন, এমন করছো কেনো? কী হয়েছে? কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখেছ?
কান্নার জন্য কথা বলতে পারছি না। কথাগুলো কেমন জড়িয়ে আসছিল।

প্রীলিয়া আপু আমাকে মেরে ফেলতে চায়। একটু আগে আমার গলা চেপে ধরেছিল। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। অসহ্যকর অনুভূতি হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল হয়তো আপনাদের সাথে আর দেখা হবে না।
রিল্যাক্স কিচ্ছু হয়নি। তুমি একদম ঠিক আছো আর আমার সামনেই বসে আছো। এখন কান্নাকাটি অফ করো আর শুয়ে পড়ো।

না আমি ঘুমাবো না। আমি যদি ঘুমিয়ে যায় তাহলে প্রীলিয়া আপু এসে আমাকে মেরে ফেলবে।
তোমাকে কেউ মারতে পারবে না। এই আরাফ আয়মান রুদ্র বেঁচে থাকতে কেউ তোমার গায়ে একটা ফুলের টোকাও দিতে পারবে না।
তুমি ঘুমাও আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।

উনি আরো অনেক কথা বলে আমাকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন। এতক্ষণ আমি একটা ঘোরের মাঝে ছিলাম। ঘোর কেটে যেতেই নিজেকে উনার এতো কাছে দেখে লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। আমি এতক্ষণ ধরে উনার বুকে মাথা দিয়ে বসে ছিলাম ছিঃ ছিঃ।
আমি নিজে থেকে উনার কাছে গিয়েছিলাম। নিজেকে কেমন বেহায়া মনে হচ্ছে। আমি ছিটকে উনার থেকে দূরে সরে গেলাম। সরি বলে উল্টো ঘুরে শুয়ে পড়লাম। কাথা দিয়ে মাথা ঢেকে ফেললাম। লজ্জায় আর উনার চোখের সাথে চোখ মেলাতে পারব না।

সকালে ঘুম থেকে ওঠতে অনেকটা লেইট হয়ে গেলো। চোখ ঢলে শুয়া থেকে ওঠে বসলাম। উনি ড্রেসিংটেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছেন। উনি গায়ে একটা কালো রঙের শার্ট জড়িয়েছেন। উনার গায়ের রঙের মাঝে যেনো কালো রঙটা ফুটে ওঠেছে। আজকে উনি সব কালো রঙের পড়েছেন। কালো রঙে উনাকে অপূর্ব লাগছে। উনি এতোটা সুন্দর না হলেও পারতেন। ইচ্ছে করছে নজর ফোটা দিয়ে দেই। যেনো কারো নজর না লাগে। আজকে উনি কতো মেয়ের হার্ট এ্যাটাক করাবেন আল্লাহই জানেন।

উনার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলেন, কী? আমি চোখ সরিয়ে নিলাম।
আজকে তোমাকে আর কোচিংয়ে যেতে হবে না। বাসায় থেকে রেস্ট নাও। আজকের কোচিংয়ের সব নোট আমি নিয়ে আসব।

আমার জন্য আপনার আর সময় নষ্ট করতে হবে না। এতো কেয়ার করার দরকার নেই। পরে বেড হেবিট হয়ে যাবে। আপনার ওপর নির্ভরশীল হয়ে যাবে। আমি কারো ওপর নির্ভরশীল হয়ে বাঁচতে চাই না। এমনিতেই কিছুদিন পরে চলে যাব। এখন আর কোনো খারাপ অভ্যাস করতে চাই না। আমি নিজের যত্ন নিজেই নিতে পারবো। আপনাকে টেনশন করতে হবে না।

উনি আমার হাত চেপে ধরে বলেন, তুমি কিছুদিন পরে চলে যাবে মানে কী?
আপনি হয়তো ভুলে গেছেন আমার এখানে কিছুদিন থাকারই কথা।
উনার কাছ থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে ওয়াশরুমে চলে এলাম।

পূর্ণিমাতিথি পর্ব ১১

সবার সাথে দেখা হয়ে এখন অনেক ভালো লাগছে। আমার ফ্রেন্ডরা সবাই ভর্তি হয়েছে এখন আর একলা একলা লাগে না। কোচিং থেকে বের হতেই বিহানকে দেখতে পাই। বিহানকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যেতে নিলেই বিহান আমাকে ঢেকে ওঠো।
রিয়া একটু দাঁড়াও। তোমার সাথে আমার কথা আছে।

পূর্ণিমাতিথি পর্ব ১৩