প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ২৬

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ২৬
Drm Shohag

“কোথায় তুই? গ্রামে আসলাম। দেখা কর।”
শুদ্ধ ওপাশ থেকে বলে,
“আমি তো গ্রামে নেই। তুই হঠাৎ গ্রামে?”
“কাজিনের বিয়ে। সাথে আমার বিয়েও পাকা করতে আসলাম। তুই নাই ক্যান? শুক্র, শনি তো গ্রামে থাকিস।”
“এই উইকে কাজ ছিল। গিয়েছিলাম। আবার কালকেই ব্যাক করেছি। নেক্সট উইকে যাব। কতদিন থাকবি?”
নাছিম হেসে বলে,
“আছি সপ্তাহখানেক। আয় তাহলে। নেক্সট উইক দেখা হচ্ছে। ইরফানকে সাথে আনিস।”
শুদ্ধ হেসে বলে,
“অলরেডি ও রওয়ানা দিয়েছে গ্রামে। এখন ওর গ্রামে ছুটতেই দিন যায়।”
নাছিম অবাক হয়ে বলে,
“হঠাৎ? ও তো গ্রামে আসতে চাইতো না। এখন তুই নেই তবুও আসছে। স্ট্রেঞ্জ!”
শুদ্ধ হেসে বলে,

“বাচ্চা বউয়ের টানে চলে যায় রে। এখানে মন টিকে না।”
“ও তো বউকে মানে না।”
“উপরে উপরে মানে না, কতবার ডিভোর্স দিয়ে দিল। কিন্তুু ভেতরে ভেতরে পুরাই আশিক।”
নাছিম শব্দ করে হাসলো। বেশ কিছুক্ষণ হেসে নিজেকে সামলে বলে,
“নাইস জোক্স! ফান করার জায়গা পাও না! লাথি খাইলে ঠিক হবি তুই। ইরফানের নামে যে মিথ্যা ছড়াচ্ছিস লাথি এমনিই খাবি, নো টেনশন।”
শুদ্ধ ভোতা মুখ করে রাখলো। তার অবস্থা ওই রাখাল আর বাঘের মতো হলো। একটু মজা করে বলে তাকে এখন মিথ্যাবাদী রাখাল বানিয়ে দিচ্ছে। রেগে বলে,
“এক চটকানা খাবি। আমি ফান করিনি।”
নাছিম মাছি তাড়ানোর ভঙ্গি করে বলে,
“খুব বিশ্বাস করলাম যা। দ্রুত গ্রামে আয়। একা একা ভালো লাগে না।”
শুদ্ধ হেসে বলল,
“তোর বিয়ে ভাঙ্গার জন্য হলেও লাফ দিয়ে যাব।”
“সব বিষয়ে ফান করবি না।” বলেই নাছিম কল কেটে দেয়।
ওপাশ থেকে শুদ্ধ হাসলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ইরফান কোথায়?”
মাইরা দরজায় দাঁড়িয়ে মুখটা একটুখানি করে বলে,
“একাই এসেছি।”
ইরফানের ফুপি অবাক হয়ে বলেন,
“মানে? একা এসেছিস কেন? তুই পা’গল? যদি রাস্তাঘাটে কোনো বিপদ হতো?”
মাইরা মন খা’রা’প করে বলে,
“হবে না গো আম্মাজান। এতো টেনশন করো কেন? আমাকে একটু বড় হতে দাও।”
তৃণা বেগম রেগে বলে,
“এইসব ছেলেমানুষী একদম করবি না। এতো বড় হতে হবে না তোকে। যেমন আছিস এই ভালো।”
মাইরা মুখ ফসকে বলে,
“বড় না হলে তোমার ভাতিজা মানবে না তো।”
কথাটা বলে থতমত খেয়ে যায়। তৃণা বেগম রাগের মাঝেও হেসে ফেলে। এদের মধ্যে কি চলে? ভ্রু কুঁচকে বলে,
“আমার ভাতিজার জন্য বড় হতে চাইছিস?”
মাইরা লজ্জা পেয়ে যায়। আমতা আমতা করে বলে,
“আমার বয়েই গেছে। তোমার ভাতিজা ভালো না। তার সাথে আসবো না, তাই একাই চলে এসেছি। উনাকে আর কষ্ট করে আসতে হবে না।”
“খেয়েছিস কিছু?”
মাইরা পেটে হাত বুলিয়ে বলে,

“না গো আম্মাজান। খাবার দাও তো। অনেক খিদে পেয়েছে।”
“কাপড় ছেড়ে হাতমুখ ধুয়ে আয়। আমি খাবার দিচ্ছি।”
মাইরা কথা না বাড়িয়ে তার ঘরে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে টেবিলে বসে খাবার খেয়ে নেয় আর টুকটাক কথা বলে তৃণা বেগমের সঙ্গে। খাবার শেষে মাইরা চেয়ারে পা তুলে বসে বলে,
“আম্মাজান মা এসেছিলো আমার খোঁজ নিতে?”
তৃণা বেগমের মুখ মলিন হয়ে যায় মাইরার মুখের দিকে চেয়ে। মাইরা উৎফুল্ল নিয়ে প্রশ্নটা করেছে। তৃণা বেগম মাইরার পাশের চেয়ারে বসে বলে,
“আমি তোর মা হতে পেরেছি?”
মাইরা অবাক হয়ে তাকায় তৃণা বেগমের দিকে। হেসে তৃণা বেগমকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“একদম পার্ফেক্ট।”
কথাটা বললেও চোখের কোণে পানির কণা চিকচিক করছে। সে বুঝেছে তার মা তার খোঁজ নিতে আসেনি।

মাইরা মিম এর সাথে দেখা করতে বেরিয়েছ। ভালো লাগছিল না বলে তৃণা বেগমকে বলে বাসা থেকে বেরিয়েছে।
“কই যাচ্ছিস?”
মিম মাইরার কথায় হেসে বলল,
“বিয়ে দেখতে, চল।”
“ধ্যাত আমি যাবো না। মানুষের বিয়ে, আমি গিয়ে কি করব?”
মিম মাইরার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলে,
“তোর বিয়ে হইছে, আমার তো হয়নি। চল আমি দেখব বিয়ে।”
মাইরা হা করে চাইলো। কি আবাল! ওর বিয়ে হয়নি বলে মানুষের বিয়ে দেখবে। মাইরা কিছু বললো না। গ্রামের বিয়ে, যাওয়াই যায়।
“এক্সাম কেমন হয়েছে?”
মিম হেসে বলে,
“ভালোই। তোর?”
মাইরা মন খারাপ করে বলে,
“আজ আমি মিমের মতো ভালো স্টুডেন্ট নই বলে ভালো বলতে পারছি না।”
মিম মাইরার পিঠে থা’প্প’ড় দিয়ে বলল,
“একদম ঢং করবি না। ভালো স্টুডেন্ট দের ঢং বেশি হয়। এটা তোকে দেখলে হারে হারে বুঝি।”
মাইরা হাসল। মিম এর পাশে একটা ছেলে এসে দাঁড়ায়। বয়স ২২-২র বছর হবে। ছেলেটাকে দেখে বলে,
“আরে ভাইয়া আপনি?”

“এদিকে এসেছিলাম। কোথায় যাচ্ছো তোমরা?”
মিম আমতা আমতা করছে। মাইরা পাশ থেকে বলল,
“কার যেন বিয়ে। সেটাই দেখতে যাচ্ছি।”
ছেলেটা হেসে বলল,
“আমার খালাতো বোনের বিয়ে। চলো তোমাদের নিয়ে যাই।”
মাইরা আর মিম গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যায় ছেলেটার সাথে।
গ্রামের বিয়ে, আহামরি সাজানো না হলেও মোটামুটি সাজিয়েছে বাড়িটা। মাইরা চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে। ভালোই লাগছ। তার বিয়ের কথা মনে পড়ে হাসি পায়। শব্দ করে হেসেও ফেলে। তার ওটা বিয়ে ছিল না-কি শোক পালনের দিন ছিল! পিছন থেকে কেউ একজন বলে,
“একা একা হাসছো কেন?”
মাইরা হাসি থামিয়ে পিছন ফিরে তাকালে বাসের সেই ছেলেটাকে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকায়। এই ছেলে এখানে কেন? আশেপাশে মিম কে খুঁজল। নেই তো! তাকে রেখে কোথায় গিয়েছে এই মেয়ে? ছেলেটা এগিয়ে এসে বলে,
“কেমন আছো বার্বি ডল?”

মাইরা খুবই বিব্রতবোধ করে। এই ছেলে এমন অদ্ভুদ নামে ডাকে কেন। কোনো কথা না বলে দ্রুত জায়গাটা প্রস্থান করতে চায় তার আগেই ছেলেটা মাইরার সামনে দাঁড়িয়ে যায়। মাইরা রেগে বলে,
“সামনে থেকে সরুন। আপনি আমাকে ডিস্টার্ব করছেন কেন?”
ছেলেটা দু’হাত আড়াআড়িভাবে গুঁজে হেসে বলে,
“তুমি তো আসলেই অনেক বড় হয়ে গিয়েছ বার্বি ডল।”
মাইরা চোখ পাকিয়ে বলে,
“একদম উল্টাপাল্টা নামে ডাকবেন না আমাকে।”
মাইরার পিছনে বেশ কয়েকজন মেয়ে এসে দাঁড়ায়। ছেলেটার উদ্দেশ্যে বলে,
“কার সাথে কথা বলো ভাইয়া?”
ছেলেটা মাইরার দিকে তাকিয়েই মৃদু হেসে বলে,
“তোদের ভাবি। আপ্যায়ণ কর। নিয়ে যা।”
মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। কি বলছে এই লোক। ছেলেটার কথা শুনে তার সব কাজিন সুর তোলে, “ওহোওওওওওও। অবশেষে আমাদের সিঙ্গেল ভাই মিঙ্গেল হতে যাচ্ছে।”
মাইরা রেগে বলে,

“কি বলছেন আপনি। আমি বিবাহিত।”
ছেলেটা শব্দ করে হাসে। অতঃপর বলে,
“তুমি আসলেই অনেক বড় হয়ে গিয়েছ। এই ট্রিকস ইউস করছ কেন? লাভ নেই। পিছু ছাড়ছি না বারর্বি ডল।”
মাইরা অদ্ভুদভাবে তাকালো। পা’গল নাকি এই লোক। সে কোন দুঃখে মিথ্যা বলতে যাবে। বিরক্ত লাগলো। এই মিমটা তাকে রেখে কোথায় গেল কে জানে! মাইরার পাশে দু’জন মেয়ে এসে বলে,
“ভাইয়া তোমার বউ আসলেই একটা পুতুল। হাউ কিউট!”
মাইরা মেয়েগুলোর কথায় বিব্রতবোধ করে ভীষণ। এরা সবগুলো পা’গল। একজন বলে ওঠে,
“ভাবি ভেতরে আসো।”
মাইরা আরও অদ্ভুদভাবে তাকায়। ভাবি মানে? এই বদ লোকের বউ হবে কেন সে? তার তো স্বামী আছে। ইরফানের মুখটা ভেসে উঠল। মনে মনে ডাকল তাকে। এখানে এসে যেন বলে সে তার বউ। কত সুন্দর তার স্বামী। শুধু একটু মারে। ভাবতেই আবার মন খা’রা’প হলো। তবে মানুষ তো ভালো। তার যত্ন করে খুব। সে তো বাচ্চা না। সব বোঝে। কিন্তুু এখন এটা কোথায় ফেসে গেল! মাইরার হাত ধরে টানলে মাইরা আমতা আমতা করে মুখ ফসকে বলে,
“আমি বাড়ি যাব। আমার খিদে পেয়েছে।”

কথাটা শুনে সামনে দণ্ডায়মান ছেলেটা শব্দ করে হেসে দেয়। মাইরা থতমত খেয়ে যায়। সে কি পা’গল নাকি? বিয়ে বাড়িতে এসে খিদের কথা বলছে। নিজের কপালে নিজেরই একটা বারি মারতে ইচ্ছে করল। ছেলেটা হেসে বলে,
“তোমার জন্য স্পেশাল খাবার রেডি করব, এসো বার্বি ডল।”
মাইরার এতো বিরক্ত লাগলো। পরপুরুষ তাকে কিসব নামে ডাকছে। ইচ্ছে করল ঠাটিয়ে একটা চড় মারতে। বদ ছেলে। অন্যের বউকে নিজের বউ বানাতে চায়। ছেলেটা মাইরার হাত ধরতে চায়। মাইরা রেগে যায়। দু’হাত পিছনে গুটিয়ে নিয়ে রেগে বলে,
“একদম অসভ্যতামি করবেন না। বলেছি না আমি বিবাহিত!”
ছেলেটা মাইরার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। এইটুকু মেয়ের কী ঝাঁঝ! হাত গুটিয়ে নিল। মৃদু হেসে বলে,
“ইট’স ওকে। ওয়েটিং…”
মাইরা পাশ কাটিয়ে চলে যায়। ছেলেটা গম্ভীর মুখে মাইরার প্রস্থান দেখল। চোখেমুখে চিন্তার ছাপ! মেয়েটা আসলেই ম্যারিড? এইটুকু মেয়েকে কে বিয়ে করবে? মিথ্যাই হয়তো বলেছে। তার কাজিনদের জিজ্ঞেস করলে বলে, ‘তারা জানে না।’
এদিকে মাইরা মিম কে খুঁজতে থাকে। একসময় পেয়েও যায়। হাত ধরে টেনে এনে বাইরের দিকে নিয়ে যায়। মিম মাইরার হাত টেনে বলে,

“আরে বর আসেনি তো। বর আসলে দেখে যাব।”
মাইরা রেগে বলে,
“তাহলে আমি গেলাম।”
“আরে রাগ করছিস কেন? আচ্ছা চল যাই।”
পিছন থেকে তখনকার সেই ছেলেটা এসে বলে,
“তোমরা চলে যাচ্ছ কেন?”
মাইরা উত্তর দিল না। মেজাজ খা’রা’প হয়ে গিয়েছে তার এখানে এসে। মিম মৃদু হেসে বলে,
“আমাদের এক্সাম। আসি ভাইয়া।”
“আচ্ছা চলো তোমাদের এগিয়ে দিই।”
এই বাসা গ্রামের একদম শেষ মাথায় বলা যায়। মোটামুটি অনেকটা দূরে। তাই মাইরা বা মিম কেউ নিষেধ করল না। ছেলেটাকে তারা মোটামুটি ভালোভাবেই চেনে। খারাপ না।
মাইরা মিম আর সেই ছেলের সাথে টুকটাক কথা বলছিল। আর সামনে হাঁটছিল। বেখেয়ালে সামলে চোখ পড়লে পা থেমে যায়। মিম মাইরাকে থেমে যেতে দেখে পাশ থেকে বলে,
“কি হলো থামলি কেন?”
কথাটা বলে মাইরার দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকায়। চেনা চেনা লাগলো লোকটাকে। মাথায় চাপ দিতেই মনে পড়লো, এটা তো মাইরার সেই দূরসম্পর্কের দুলাভাই।
ইরফান শক্ত চোখে মাইরার দিকে চেয়ে আছে। মাইরা ভয় পায় ইরফানের দৃষ্টিতে। ইরফান গটগট পায়ে এগিয়ে এসে দৃঢ় কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,

“কোথায় ছিলে?”
মাইরা ভীত চোখে তাকায় ইরফানের দিকে। ঢোক গিলে নেয়। লোকটা গ্রামে চলে এসেছে? কখন? মাইরা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে কিছু বলতে চায়, তার আগেই ইরফান মাইরার গাল চেপে ধরে। দাঁতে দাঁত চেপে শক্ত কণ্ঠে বলে,
“আসতে নিষেধ করেছিলাম না? স্পিক আপ!”
পাশ থেকে ছেলেটা এগিয়ে এসে মাইরার হাত টেনে ইরফানের সামনে থেকে সরিয়ে আনতে চায়।ইরফানের দিকে চেয়ে বলে,
“কে ভাই আপনি? মাইরার সাথে এমন করছেন কেন?”
ইরফান জ্বলন্ত চোখে মাইরার ধরে রাখা ছেলেটার হাতের দিকে চেয়ে আছে। মাইরার গাল ছেড়ে ডান হাতে ছেলেটার গলা চেপে চিৎকার করে বলে,
“ওর হাত ছাড় বাস্টার্ড।”
ছেলেটা ছাড়ে না। কে রে এই লোক। অসভ্যের মতো আচরণ করছে। সে মাইরা আর মিম কে এগিয়ে দিচ্ছিলো যাতে কোনো বাজে ছেলে তাদের সাথে খারাপ কিছু করতে না পারে। ইরফানকে দেখে ভালো ঠেকলো না, এজন্যই মাইরাকে প্রটেক্ট করার ট্রাই করছে। যদিও মাইরা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।
ইরফান ডান হাতের সব শক্তি প্রয়োগ করে ছেলেটার গলা চেপে ধরে। ছেলেটার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। ইরফান বা হাতে মাইরার পেট জড়িয়ে টান মেরে তার বা পাশে দাঁড় করিয়ে দেয়। ছেলেটা মাইরার হাত ছাড়েনি এখনো। ইরফানের মাথায় আগুণ চড়ল যেন।

গলা ছেড়ে চোখের পলকে ছেলেটার হাত মাইরার হাত থেকে টান মেরে ছাড়িয়ে ছেলেটাকে ল্যাং মেরে ফেলে দেয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছেলেটি যে হাতে মাইরার হাত ধরেছিল সেই হাত ঘুরিয়ে শক্তি খাঁটিয়ে উল্টোদিকে চারা দেয়। ছেলেটা চিৎকার করে ওঠে। মিম ভয়ে ঢোক গিলছে। মাইরা নিজেও ভয় পেয়ে যায়। ইরফানের পেট জড়িয়ে বলে,
“উনাকে ছাড়ুন প্লিজ! হাত ভেঙে যাবে তো!”
ইরফান ছেলেটার হাত ছেড়ে মাইরার গাল শক্ত হাতে চেপে শক্ত গলায় বলে,
“ওই ছেলেটার জন্য চিন্তা করছ কেন তুমি?”
মাইরা অবাক হয়ে তাকায় ইরফানের দিকে। কি বলছে এই লোক। চোখ ঘুরিয়ে ছেলেটার দিকে তাকালে দেখল ছেলেটি মাটিতে শুয়ে কাতরাচ্ছে। মিম একবার ইরফানকে দেখছে, একবার মাইরাকে তো একবার মাটিতে পড়ে কাতরানো ছেলেটার দিকে। সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। মাইরা ছেলেটার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলতে নেয়,
“ভাইয়া…”

তার আগেই পিছন থেকে ইরফান মাইরার পেট জড়িয়ে মাইরাকে কোলে তুলে নেয়। মাইরা চোখ বড় বড় করে বলে,
“কি করছেন? উনার হাত ভেঙে গিয়েছে মনে হয়।”
ইরফান গটগট পায়ে তার গাড়ির দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে,
“ভেঙে দিয়েছি, তাই ভেঙেছে।
মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। এই লোকটা আসলেই পা’ষা’ণ। কিভাবে বলছে ভেঙে দিয়েছি! মোচড়ামুচড়ি করে। ইরফানের বুকে দু’হাতে ঠেলে বলে,
“নামান আমায়। উনাকে হসপিটাল নিতে হবে তো!”
পিছন থেকে মিম বলে,
“আরে আপনি তো মাইরার দুলাভাই। বউ রেখে শালীর সাথে এসব কি করছেন?”
কথাটা শুনে ইরফান পিছু ফিরে তাকায়। শক্ত কণ্ঠে বলে,
“সাট আপ। সি ইজ মাই ওয়াইফ!”
মিম বোকা বনে যায়। মাইরার দিকে তাকালে দেখে মাইরা অসহায় চোখে মিমের দিকেই চেয়ে আছে। মিম বোধয় বুঝল। কটমট চোখে মাইরার দিকে তাকালো। বেয়া’দব তাকে মিথ্যে বলেছিল।
ইরফানের চোয়াল শক্ত। উল্টো ঘুরে পায়ের গতি বাড়িয়ে তার গাড়িতে উঠে বসে। কোলের উপর মাইরাকে বসিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়। বা হাতে মাইরাকে নিজের সাথে চেপে ডান হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং ঘোরায়। মাইরা মোচড়ামুচড়ি করতে করতে বলে,

“ছাড়ুন আমায়। ওই ভাইয়ার হাত ভেঙে গিয়েছে। এখন কি হবে?”
ইরফান গাড়ির ব্রেক কষে। দু’হাতে মাইরাকে নিজের সাথে চেপে রাগান্বিত স্বরে বলে,
“আর একবার ওই ছেলের চিন্তা করলে ওর মাথা কেটে ফেলব।”
মাইরা ঢোক গিলে। ইরফান ফোঁস করে শ্বাস ফেলে। মাইরাকে নিয়ে গাড়ি থেকে নামলো। এরপর মাইরার হাত ধরে একটা দোকানের দিকে নিয়ে যায়। মাইরা বোকার মতো চেয়ে ইরফানের পিছু পিছু যায়। কি করছে এই লোক? ইরফান দু’টো সাবান কিনলো। আশেপাশে কিছু খুঁজলো। কাঙ্ক্ষিত জায়গা চোখে পড়লে মাইরার হাত টেনে সেদিকে নিয়ে যায়। মাইরা হা করে চেয়ে আছে। মনে প্রশ্ন জাগে, ‘সাবান কিনলো কেন?’
ভাবনার মাঝেই রাস্তার পাশে একটা পানির লাইনের পাশে দাঁড় করিয়ে দেয় ইরফান মাইরাকে। এরপর একটা সাবান এর প্যাকেট পকেটে রেখে অপরটি ছিঁড়ে ফেলে। মাইরাকে ঘুরিয়ে মাইরার পিঠ তার বুকে লাগিয়ে পিছন থেকে মাইরার বোরখার বাম হাতা গুটিয়ে দেয়। ট্যাপ ছেড়ে মাইরাকে সহ নিচু হয়ে সাবান ভিজিয়ে মাইরার হাত ডলতে থাকে। মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। চেঁচিয়ে বলে,
“আরে কি করছেন? আমার হাত পরিষ্কার তো।”
ইরফান পাত্তা দিল না। গম্ভীর গলায় ধমকে বলে,

“সাট আপ।”
মাইরা ঢোক গিলে। সে বোধয় বুঝেছে এই লোক কেন এমন করছে। ছোট মাথায় এই ব্যাপারটা তার কাছে ভীষণ ভারি লাগলো। ইরফানের মুখাবয়বে স্বভাবসুলব গাম্ভীর্যের ছাপ। নিচু হওয়ায় ইরফানের বাম গাল মাইরা ডান গাল বরাবর। মাইরা আড়চোখে তাকালো ইরফানের দিকে। ঢোক গিলে নিজের হাতের দিকে তাকালো। ধীরে ধীরে ইরফানের হাতের গতি বাড়ে। মাইরা ব্য’থা পায় হাতে। হাত ছাড়াতে চাইলে ইরফান বা হাতে শক্ত করে মাইরার হাতের কব্জি চেপে ধরে। ডান হাতে হাত ডলতে থাকে। মাইরা ঘাড় বাঁকিয়ে ইরফানের দিকে চেয়ে বলে,
“হাত ছাড়ুন প্লিজ! আমি ব্য’থা পাচ্ছি।”
ইরফানের হাত থেমে যায়। ঘাড় বাঁকিয়ে মাইরার দিকে তাকালে দেখল মাইরার চোখের কোণে চিকচিক পানি। হাতের সাবান ফেলে দেয় দ্রুত। ডান হাতে মাইরার হাত উঠিয়ে ফেনাযুক্ত হাতেই ঠোঁট ছোঁয়ায়। মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। অদ্ভুদ ভাবে বলে,
“আপনি কি পা’গল? সাবান খাচ্ছেন কেন?”
ইরফান থতমত খেয়ে দ্রুত মাইরার হাত ছেড়ে দেয়। মুখ কুঁচকে নেয়। সাবানের ফেনা মুখে গিয়েছে। পাশেই থুতু ফেলে। মাইরার কেন যেন হাসি পায়, কিছুটা শব্দ করেই হেসে ফেলে। ঠোঁট চেপে হাসি আটকানোর চেষ্টা করে বলে,
“ওই ভাইয়া আমার হাত ধরেছিল বলে আপনি আমার হাতে সাবান লাগাচ্ছেন তাই না?”
ইরফান তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে গম্ভীর গলায় বলে,

“নো। তোমার হাত ডাস্টে ভরে গিয়েছে।”
মাইরা মুখ বাঁকায়। ডান হাত এগিয়ে দিয়ে বলে,
“তবে এই হাতও ধুইয়ে দিন। একসাথেই ছিল দুইহাত।”
ইরফান ধমকে বলে,
“সাট আপ। স্টুপিট গার্ল।”
মাইরা বিরক্ত হয়। সারাদিন শুধু ইংলিশ ঝাড়বে কানের কাছে। ইরফান মাইরার ঘাড় বরাবরা মুখ নামিয়ে হিজাবের অংশ দিয়ে ঠোঁটে লেগে থাকা ফেনা মুছে। মাইরা কেঁপে ওঠে। শুকনো ঢোক গিলে নিজের হাতের দিকে তাকায়।
ইরফান ট্যাপের নিচে হাত রেখে মাইরার হাত ধুইয়ে দেয়। মাইরার ফর্সা হাত লাল হয়ে গিয়েছে। এটা দেখে পকেটের সাবান বের করে ছুঁড়ে ফেলল। এরপর মাইরার হাত ধরে দ্রুতপায়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়।
গাড়িতে বসে মাইরার দিকে চেয়ে রেগে বলে,
“একা একা কেন এসেছ?”

মাইরা মাথা নিচু করে নেয়। মিনমিন করে বলে,
“আমি আসতে পারি।”
ইরফান ঠাণ্ডা গলায় বলে,
“ইউ নো, আমার এখন তোমাকে খু’ন করতে ইচ্ছে করছে?”
মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায় ইরফানের দিকে। ইরফান গম্ভীর চোখে মাইরার দিকে চেয়ে আছে। মাইরা তার কোমড় থেকে ইরফানের হাত সরাতে চায়। ইরফানের কপালে বিরক্তির ভাঁজ ফুটে ওঠে। এই মেয়েকে কি করা যায় সেটাই ভাবছে। মাথাই কাজ করে না। বাসে একা একা পুরো রাস্তা এসেছে। ভাবতেই ইচ্ছে তো করছে একে আগে ফটাফট থাপড়ে গাল লাল করে দিতে। কিছু একটা ভেবে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে প্রশ্ন করে,
“পাশের সিট কার ছিল? ছেলে না মেয়ে?”
মাইরা আমতা আমতা করে। ইরফান ধমকে বলে,
“অ্যান্সার মি!”
“ছেলে।”

ইরফান চিল্লিয়ে বলে ওঠে, “হোয়াট?”
কথাটা বলেই রাগের চোটে ঠাস করে মাইরার বাম গালে থা’প্প’ড় মেরে দেয়।
মাইরা কেঁপে ওঠে। চোখ খিঁচে নেয়। শক্ত হাতের থাপ্পড় খেয়ে গালটা টনটন করে উঠল। মাথা নিচু করে নিল। চোখজোড়ায় পানি জমেছে। ইরফান মাইরা চোয়াল ধরে রাগান্বিত স্বরে বলে,
“তোকে বেরোতে নিষেধ করেছিলাম না? এ্যাই পুচকি মেয়ে আমার কথা তোর কানে যায় না? জানে মেরে ফেলব একদম।”
মাইরা মাথা নিচু করেই থাকে। চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে। এখন কেন যেন ইরফানের মার খেয়ে অভিমানে, কষ্টে চোখের পানি ঝরে। মাইরা বুঝে পায় না কারণ।
ইরফান মাইরার গাল ছেড়ে সিটে মাথা এলিয়ে চোখ বুঝল। ফোঁস করে শ্বাস ফেলে। বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে চোখ মেলে তাকায় মাইরার দিকে। ঠাণ্ডা গলায় নরম স্বরে আবদার করে,
“আমার রাগ কমিয়ে দিবে প্লিজ!”

মাইরা ভেজা চোখজোড়া খুলে পিটপিট করে তাকায় ইরফানের দিকে। অদ্ভুদ চোখে ইরফানের দিকে চেয়ে থাকে। সে কীভাবে রাগ কমাবে? পা’ষা’ণ লোক। শুধু ছুঁতো খুঁজবে তাকে মারার। মাথা নিচু করে ইরফানের কোল থেকে নেমে পাশের সিটে বসতে চায়। ইরফান দু’হাতে মাইরার কোমড় জড়িয়ে বলে,
“হোয়াট হ্যাপেন্ড? রাগ কমিয়ে দিতে বললাম, উল্টে রাগাচ্ছ! ভালো হবানা তুমি?”
মাইরা এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে। কি করবে সে? রাগ কিভাবে কমাবে? তাকে শুধু ধুপধাপ মেরে দেয়। চোখ তুলে ইরফানের দিকে তাকায়। ইরফান শান্ত চোখে মাইরার দিকে চেয়ে আছে। রেগেছে তো সে একা এসেছে এজন্য। সেই ভাবনা থেকে মাইরা ঢোক গিলে বাচ্চাদের মতো করে বলে,
“আর কখনো একা একা বাইরে বের হবো না।”
ইরফান ডান হাতে মাইরার গালে গড়িয়ে পড়া পানি মুছে দিয়ে বলে,
“কাঁদছো কেন?”

মাইরা কাঁদতে কাঁদতে রেগে বলে,
“মেরে বলছেন কাঁদছি কেন? কাঁদবো না তো হাসবো?”
ইরফান মাইরার গালে ডান হাত দিয়ে নরম গলায় বলে,
“স্যরি! অনেক ব্য’থা পেয়েছ?”
মাইরা অবাক হয়ে তাকায় ইরফানের ভয়েস টোনে। ত্যাড়ামি করে কান্নাভেজা গলায় বলে,
“না, আরাম পেয়েছি।”
ইরফান বিরক্ত হয় মাইরার ত্যাড়া কথায়। কটমট দৃষ্টিতে তাকায় মাইরার দিকে। এই স্টুপিট তাকে না রাগিয়ে শান্তিতে নিঃশ্বাস নিতে পারে না। মাইরার চোখের পানি দেখে দমলো একটু।
বা হাত মাইরার ডান গালে হাত রাখে। হঠাৎ-ই মুখ এগিয়ে নিয়ে মাইরার বাম গালে ঠোঁট চেপে ধরে। মাইরা স্তম্ভিত হয়ে যায়। শরীর শিরশির করে।
ইরফান ডান হাতে মাইরার কোমড় জড়িয়ে কাছে টেনে নেয়। ওভাবেই ফিসফিসিয়ে বলে,
“ইউ নো, আমিও ব্য’থা পেয়েছি।”

মাইরা জমে বসে আছে। ইরফানের কথা তো শুনতেই পেল না। ইরফানের কাজেই মাইরা বারবার শুকনো ঢোক গিলে।
ইরফানের বুকে দু’হাত রেখে ঠেলে সরাতে চায়। তার মনে হয় হাঁপানি চাপ দিচ্ছে। ভারি নিঃশ্বাস ফেলে কাঁপা গলায় বলে,
“সরুন।”
ইরফান বোধয় বিরক্ত হলো। তবে নিজেকে দমালো। গাল থেকে মুখ উঠিয়ে মাইরার দিকে তাকায়। মাইরা এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে।
ইরফান মাইরার হিজাব টান মেরে খুলে দেয়। এরপর বোরখার গলার মাঝে হাত দিয়ে টেনে বোরখা খুলতে চায়। মাইরার চোখ বড় বড় করে ইরফানের হাত ধরে বলে,
“কি করছেন?”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“তোমাকে ক্লিন করছি। ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।”
মাইরা অদ্ভুদ চোখে তাকায়। সে কি ড্রেনে পড়েছিল যে তাকে ক্লিন করতে হবে? রেগে বলে,
“আমি ক্লিন-ই আছি। কোনো ড্রেনে পড়িনি।”
ইরফান রেগে বলে,

“তার চেয়েও নোংরা কিছু তোমার বডিতে লেগেছে।” কথাটা বলে শক্তি খাটিয়ে মাইরার বোরখা টান মেরে ছিঁড়ে ফেলে। মাইরা চেঁচিয়ে ওঠে। ঘাড়ে চিড়ে গিয়েছে বোধয়। চিনচিন করে উঠল জায়গাটা। ইরফান মাইরার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে গাড়ির গ্লাস নামিয়ে মাইরার বোরখা বাইরে ছুড়ে ফেলে। এরপর গাড়ির গ্লাস আবারও উঠিয়ে দেয়।
ইরফান তীক্ষ্ণ চোখে মাইরার মাথা থেকে কোমড় পর্যন্ত দৃষ্টি বোলায়। মাইরার পরনে জর্জেট এর ব্রাউন কালারের একটা ফিটিং কামিজ। জামার হাতা কনুইয়ের নিচ পর্যন্ত।
ফর্সা গলার ডানদিকে ছোট্ট একটা বাদামি তিল। ইরফান ঢোক গিলল। ডান হাত উঠিয়ে বুড়ো আঙুল দিয়ে তিলের উপর আলতো করে স্পর্শ করে, অবুঝ গলায় প্রশ্ন করে,
“এটা কি? I want to eat this.”
মাইরা ইরফানের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকায়। খেতে চায় মানে? দ্রুত তার দু’হাতে ইরফানের মুখ চেপে ধরে।

ইরফান বিরক্তি সাথে অদ্ভুদভাবে মাইরার মুখের দিকে তাকায়।
মাইরা ইরফানের দৃষ্টি দেখে ঢোক গিলে। ইরফানের দিকেই সিটিয়ে নিজেকে ঢাকতে চায়। মাথা নিচু করে মিনমিন করে বলে,
“বাড়ি নিয়ে চলুন প্লিজ!”
ইরফান স্থির চোখে তাকিয়ে রয় মাইরার মুখপানে। মাইরার মাথা নিচু। তার শরীর কাঁপছে মৃদু। ইরফান তীক্ষ্ণ চোখে মাইরাকে অবলোকন করে। মাইরা এলোমেলো দৃষ্টি নিচু করে রাখে। খুব ভালোই বুঝলো ইরফান তার দিকেই চেয়ে আছে। ইরফানের মুখ থেকে হাত সরায় না। ওভাবেই মাথা নিচু করে মিনমিনে গলায় কাঁপা কণ্ঠে বলে,
“আমি গোসল করব। বাড়ি চলুন।”

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ২৫

ইরফান তার মুখ থেকে মাইরার হাত সরিয়ে বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
“হোয়াট হ্যাপেন্ড? কিছু করেছি আমি? কাঁপছো কেন?”
মাইরা মাথা নিচু করে ঢোক গিলে। ইরফান বিড়বিড় করে,
“স্টুপিট গার্ল।”

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ২৭