প্রণয়ের দহন পর্ব ১১ || তাসনিম জাহান রিয়া || SA Alhaj

প্রণয়ের দহন পর্ব ১১
তাসনিম জাহান রিয়া

একজন ডক্টরের কর্তব্য অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করা। সুস্থ মানুষকে অসুস্থ করা না। তাই বলছি বোরকাটা পড়ে নে। আমি চাই তোর এই পেত্নী মার্কা চেহারা দেখে মানুষ হার্ট এ্যাটাক করুক। যুব সমাজ ধ্বংস করার জন্য তোদের মতো পেত্নী মার্কা চেহারার মেয়েরাই যথেষ্ট।
আপনি কী মিন করছেন?

আমি তো জানতাম তুই শুধু মেনার্সলেস। এখন দেখি তুই গাধীও। তোর এই চেহারা দেখে যেকোনো ছেলে ভয়ে হার্ট এ্যাটাক করবে। আমি একজন দায়িত্ববান ডক্টর হয়ে কিছুতেই এই রিস্কটা নিতে পারি না।
আপনি তো ছেলে তাই না?
অবশ্যই। তোর কোনো সন্দেহ আছে?
আগে সন্দেহ ছিল না। কিন্তু এখন সন্দেহ হচ্ছে। আপনি যদি ছেলে হতেন অবশ্যই আমাকে দেখে হার্ট এ্যাটাক করতেন তাই নয় কী? আপনি আমাকে দিন রাত ২৪ ঘন্টা নিজের চোখের সামনে দেখছেন। কিন্তু আপনি একদম সুস্থ। কোনো এ্যাটার ফ্যাটাক হয়নি।

আমার হার্ট অন্য সব ছেলেদের হার্টের মতো দুর্বল না। আমার হার্ট অনেক স্ট্রং আর ছোটবেলা থেকে এই পেত্নী মার্কা চেহারা দেখে আসছি। এখন আর ভয় করে না।
আপনি সোজা কথা সোজা ভাবে বলতে পারেন নাহ?
আমি বাঁকা করে কখন কথা বললাম?
আমি এক পা এক পা করে উনার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম। ঠিক উনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। হাত দিয়ে উনার শার্টের বোতাম নড়াচড়া করতে করতে বললাম,
আপনি জেলাসির জন্য এসব করছেন তাই না?
কীসের জেলাসি?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমি জানি আজকে আমাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। আমার পেত্নী মার্কা চেহারা দেখে নয় আমার রূপের আগুনে ছেলেরা হার্ট এ্যাটাক করবে। যেটা আপনি সহ্য করতে পারবেন নাহ। আপনি চান নাহ আমার সৌন্দর্য আপনি ব্যতীত অন্য কেউ দেখুক। আমি ঠিক বলছি না?
না ভুল বলছিস। এখন তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে। আমি নিচে গাড়িতে তোর জন্য অপেক্ষা করছি।
কথাটা বলেই উনি এলোমেলো পায়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। আমি উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আলতো হাসলাম। আর সময় নষ্ট না করে বোরকাটা পড়ে নিলাম। হিজাব পড়ে সুন্দর করে মুখ ঢেকে নিলাম। তারপর ব্যাগটা নিয়ে এক দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। আম্মু কিচেনে ছিল।

আম্মু আমি আসছি।
আচ্ছা। সাবধানে যাস।
আরিয়ান ভাইয়া ড্রাইভিং সিটে বসে আছে। আমি দৌড়ে গিয়ে উনার পাসে সিটে বসে পড়লাম। সিটবেল্ট লাগাতেই উনি গাড়ি স্টার্ট করে দেন। আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই উনার ফোন বেঁজে ওঠে। উনি ফোনটা রিসিভ করলেন। এক হাতে ড্রাইভ করছেন অন্য হাতে ফোন কানে ধরে রেখেছেন। উনি কথা বলায় ব্যস্ত। আমার বোরিং লাগছে। আমি গাড়ির কাচ নামিয়ে ব্যস্ত নগরি দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।

কেউ অফিসে যাচ্ছে, কেউ বাজার করে নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে, কেউ পরিবারের মুখে দু-মুঠো অন্ন তুলে দেওয়ার জন্য ছুটে চলেছে এই ব্যস্ত নগরীতে, কেউ মা-বাবার সাথে স্কুলে যাচ্ছে, কেউ বন্ধুদের সাথে হৈ হুল্লোড় করে রাস্তা মাতিয়ে স্কুল/কলেজে যাচ্ছে, কেউ বা নিজের ভালোবাসার মানুষের হাত ধরে হেঁটে যাচ্ছে। সবাই সবার মতো ব্যস্ত। কারো দিকে কারো তাকানোর সময় নেই।

হঠাৎ আমার চোখ যায় রাস্তার পাশের ফুচকার দোকানে। আমার চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে। একটা মানুষ এতো নিখোঁত ভাবে কীভাবে অভিনয় করতে পারে? কারো মন, ফিলিংস, ভালোবাসা নিয়ে খেলতে এদের বুক কাঁপে না? নিহানকে একটা মেয়ে ফুচকা খাইয়ে দিচ্ছে। মেয়েটার মুখ অবশ্য দেখা যাচ্ছে না। হয়তো তার সুন্দরী, স্মার্ট বউ। নতুন ভালোবাসাকে নিয়ে সুখেই আছে। কাউকে ঠকিয়ে কেউ কখনো সুখী হতে পারে না। আমি অভিশাপ দিচ্ছি না। রিভেঞ্জ অফ নেচার বলতেও একটা কথা আছে। প্রকৃতি ঠিক প্রকৃতির নিয়মে প্রতিশোধ নিয়ে নেয়।

হুট করে আরিয়ানের গাড়ি ঘুরিয়ে নেওয়ার আমার ভাবনায় ছেদ ঘটে। গাড়ি বাসার দিকে যাচ্ছে। হঠাৎ করে উনি ভার্সিটির দিকে না গিয়ে বাসার দিকে যাচ্ছেন। উনাকে প্রশ্ন করতে গিয়েও থেমে যায় উনার মুখ দেখে। উনার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনি ভীষণ রাগ করে আছে। আমি মনের মাঝে এক রাশ সাহস যুগিয়ে কিছু বলতে যাব তার আগেই উনি হাত দিয়ে আমাকে থামিয়ে দিলেন।

কোনো প্রশ্ন নয় চুপচাপ বসে থাক। ( দাঁতে দাঁত চেপে বললেন)
আমিও আর কথা বাড়ালাম না। গাড়ি এসে থামে বাসার সামনে। উনি গাড়ির দরজাটা খুলে দেন।
আপনি বাসায় যাবেন না?
না। আমার কিছু কাজ আছে। তুই বাসায় যা।আজকে সারাদিন রুম থেকে বের হবি না। কেউ ডাকলেও না। এখনি প্রশ্ন করা শুরু করবি জানি। তার আগেই আমি চলে যাই।

আমি গাড়ি থেকে নামতেই উনি আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে একটানে গাড়ি নিয়ে চলে যায়। আমি বেক্কলের মতো কিছুক্ষণ উনার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলাম। এতক্ষণ ধরে কী হলো কিছুই মাথায় ঢুকছে না। উনি নিজেই ভার্সিটির যাওয়া কথা বললেন। আবার উনি নিজেই ভার্সিটি নিয়ে গেলেন নাহ। আজব।
উনি হঠাৎ এভাবে রেগে গেলেন কেনো সকাল থেকে সব কিছু তো ঠিকই ছিল। আমি আর এখানে দাঁড়ালাম না। বাসার ভিতরে চলে এলাম।

কীরে আরশি চলে এলি কেনো? মাত্রই তো ভার্সিটি গেলি। এখনি ফিরে এলি।
ভার্সিটি যাওয়ার মতো সৌভাগ্য আমার হয়নি। তোমার হিটলাম ছেলে অর্ধেক রাস্তা থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে বাসার সামনে আমাকে নামিয়ে দিয়ে গেছেন।
কেনো রে? কিছু হয়েছে? আরিয়ান কোথায়।
কিছুই হয়নি। তোমার ছেলে কাউকে কিছু বলে করে। নিজের মর্জি মতো চলে। ঘাড় ত্যারা লোক একটা। যাওয়ার আগে শুধু বলে গেছে কাজ আছে?
আরিয়ান কারণ ছাড়া কিছু করে না। এটা করার পিছনেও নিশ্চয়ই কোনো বড় কারণ আছে। তাই এমন করছে।
তুমি আর তোমার ঐ ঘাড় ত্যারা ছেলের হয়ে সাফাই গাইতে এসো না। অনেক ঘাড় ত্যারা দেখছি কিন্তু তোমার ছেলের মতো আরে একটা ঘাড় ত্যারা আমি জীবনেও দেখি নাই।

বিকাল বেলা বিছানায় আধ শোয়া হয়ে কাজি নজরুল ইসলামের উপন্যাস পড়ছিলাম। উপন্যাসটির নাম মৃত্যু ক্ষুধা। মাত্রই পড়ার জন্য বইটা হাতে নিয়েছি। মাত্র দুই থেকে তিনটা লাইন পড়ছি। হুট করে কেউ আমার হাত থেকে বই কেঁড়ে নেয়। আমি বিরক্ত হয়ে চোখ তুলে তাকাই। আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আরিয়ান।
সারাদিন শুধু উপন্যাস পড়া তাই না? আজকে এই উপন্যাসের বই তো কালকে আরেক উপন্যাসের বই। পড়াশোনাটা কে করবি শুনি?
পড়াশোনা করি তো।
।আমি তো দেখি না। যখনি তোকে বই হাতে দেখি। তখনি তোর হাতে শুধু উপন্যাসের বই দেখতে পাই। যতটা মনোযোগ দিয়ে উপন্যাসের বই পড়িস ততোটা মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করলে। আমি শিউর তুই ভার্সিটি টপার থাকতি।

প্রণয়ের দহন পর্ব ১০

এসব ভাষণ আপনি আপনার পেসেন্টকে গিয়ে দিন। একদম আমার কানের কাছে এসে টেপ রেকর্ডার চালু করবেন নাহ। আমার বইটা আমাকে দিন।
চুপ বেয়াদপ। এখন তুই কোনো উপন্যাসের বই পাবি না। চুপ চাপ গিয়ে পড়তে বস। আমি ফ্রেশ হয়ে এসে যেনো তোকে পড়ার টেবিলে পায়।

কথাগুলো বলেই উনি কাবার্ড থেকে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলেন।যাওয়ার আগে অবশ্য একটা ধমক দিয়ে গেছেন। এদিকে আমি উনার এক ধমকে ভয়ে চুপসে গেছি। অগ্যতা পড়তে বসলাম। উনি ফ্রেশ হয়ে এসে আমার সামনে বসে ঠিক ১২ টা পর্যন্ত পড়ালেন। ১২টা বাঁজতেই উনি আমাকে ডিনার করার জন্য নিয়ে গেলেন। খাব কী করে? ঘুমের জন্য চোখ খুলে রাখা দায় হয়ে গেছে।

প্রমাণ দিবি না তোর ভালোবাসার। তুই তো আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছিস তাহলে ভালোবাসার প্রমাণ দে। আমিও দেখতে চাই আমার আয়না আমাকে কতটুকু ভালোবাসে।

প্রণয়ের দহন পর্ব ১২

1 COMMENT

Comments are closed.