প্রণয়ের দহন পর্ব ১২ || তাসনিম জাহান রিয়া || SA Alhaj

প্রণয়ের দহন পর্ব ১২
তাসনিম জাহান রিয়া

কথাগুলো বলেই উনি কাবার্ড থেকে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলেন।যাওয়ার আগে অবশ্য একটা ধমক দিয়ে গেছেন। এদিকে আমি উনার এক ধমকে ভয়ে চুপসে গেছি। অগ্যতা পড়তে বসলাম। উনি ফ্রেশ হয়ে এসে আমার সামনে বসে ঠিক ১২ টা পর্যন্ত পড়ালেন। ১২টা বাঁজতেই উনি আমাকে ডিনার করার জন্য নিয়ে গেলেন। খাব কী করে? ঘুমের জন্য চোখ খুলে রাখা দায় হয়ে গেছে।

উনি আমার সামনে খাবার রাখলেন। উনি নিজেও খাবার নিলেন। আমার তো এখন খাওয়ার মুড নাই। আমার তো এখন ঘুমুতে ইচ্ছে করছে। উনি চেয়ার থেকে ওঠে আবার কিচেনে চলে গেলেন।
উনি যেতেই খাবারের প্লেটটা সরিয়ে টেবিলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লাম। যখনি চোখ দুটো লেগে আসছিল তখনি উনি চিৎকার শুরু করে দিলেন। চিৎকার করছেন নাহ তবে আমার কাছে চিৎকারি মনে হচ্ছে। রাতে কেউ আস্তে কথা বললেও জুড়ে শোনা যায়। কারণ রাতের পরিবেশ থাকে নিস্তব্ধ।

তুই খাবার সরিয়ে রেখে টেবিলে মাথা রেখে শুয়ে আছিস কেনো?
আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। এখন খেতে ইচ্ছে করছে না। আপনি গিলতে থাকেন আমি ঘুমুতে যায়।
তোকে একদিন না করছি না এসব ভাষা ইউজ করবি না। আরেকদিন যদি বলিস এমন থাপ্পড় দিব যে এইসব ভাষা তো ভুলবিও সাথে তোর বাপের নামও ভুলে যাবি। ( ধমক দিয়ে)
আপনি সব সময় আমাকে শুধু ধমকান কেনো? আমার একটুও ভালো লাগে না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তুই আমার কথা শুনলেই তো আর ধমক দিতে হয় না। তুই তো আবার বিশ্ব বিখ্যাত ঘাড় ত্যাড়া। জন্মের পর থেকেই ঠিক করে রেখেছিস আরিয়ান নামক এই ব্যক্তিটার কথা জীবনেও শুনবি না। এখন কথা না বলে চুপচাপ খা।
খেতে আলসেমি লাগছে। আপনি খাইয়ে দিন নাহ। প্লিজ প্লিজ।
উনি বিরক্ত হয়ে আমাকে খাইয়ে দিতে লাগলেন। নিজেও খেতে লাগলেন। আমার খাওয়া শেষ হতেই আমি রুমে চলে আসলাম। উনি সবকিছু গুছিয়ে রাখতে গেলেন। খাওয়া কম্পলিট পর পরই ঘুম চলে গেছে।

আমি বেলকনিতে চলে গেলাম। শো শো শো করে বাতাস বইছে। তার সাথে তাল মিলিয়ে উড়ছে আমার চুল। বাতাসের গতি বাড়ছে। হয়তো বৃষ্টি অথবা ঝড় আসার পূর্ব লক্ষণ। হঠাৎ করে দুইটা হাত আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। জানি এটা আরিয়ান। উনার শ্বাস আমার ঘাড়ে আঁচড়ে পড়ছে। উনি আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে বললেন,

প্রমাণ দিবি না তোর ভালোবাসার। তুই তো আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছিস তাহলে ভালোবাসার প্রমাণ দে। আমিও দেখতে চাই আমার আয়না আমাকে কতটুকু ভালোবাসে।
উনার কথা শুনে আমার ভিতরে শীতল হাওয়া বয়ে গেলো। উনার ছোঁয়ায় আমি ফ্রিজড হয়ে গেছি। নড়াচড়া করার শক্তিটুকুও পাচ্ছি না। উনি আমার কানের লতিতে কামড় দিলেন।
কীরে দিবি না তোর ভালোবাসার পক্ষে প্রমাণ?
কককী প্রমাণ দিব?

তুই কী বাচ্চা? এটাও জানিস না ভালোবাসার প্রমাণ কী করে দিতে হয়? চল আজকে তোকে আমি শিখাই ভালোবাসার প্রমাণ কি করে দিতে হয়।
হুট করেই উনি আমাকে কোলে তুলে নেন। আমি পড়ে যাওয়ার বয়ে উনার গলা জড়িয়ে ধরি। আমি অবাক চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। উনি আমাকে নিয়ে রুমে চলে আসলেন। আমাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজেও আমার ওপর শুয়ে পড়লেন। তারপর স্লো ভয়েজে বললেন,

আবার যদি বৃষ্টি নামে — আমিই তোমার প্রথম হবো…লেপ্টে যাওয়া শাড়ির মতো — অঙ্গে তোমার জড়িয়ে রবো …
উনার কথাগুলো বলার পর পরই বৃষ্টি নামে ঝুম বৃষ্টি। উনার চোখে আমি নেশা দেখছি। আমাকে কাছে পাবার নেশা। কিন্তু আমার যে কিছু সময় চাই। হঠাৎ খুব জুরে বিদ্যুৎ চমকায়। আমি ভয়ে উনাকে জড়িয়ে ধরি। পর পর কয়েক বার বিদ্যুৎ চমকায়। কারেন্ট চলে গেলো। রুম জুড়ে অন্ধকার। উনি শক্ত করে আমাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলেন।
বাইরের প্রবল বেগে বৃষ্ট হচ্ছে। জানালা খোলা থাকাই বাতাসে জানালার পর্দাগুলো উড়ছে। উনি আমাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন। তারপর তারপর উনি উপহার দিলেন আমাকে একটা ভালোবাসার রাত।

মনো মুগ্ধকর আজানের ধ্বনি কানে আসতেই ঘুম ভেঙে যায়। নিজেকে আবিষ্কার করি আরিয়ানের বুকের ওপর। উনার হৃদস্পন্দন অনুভব করতে পারছি। কেমন যেনো একটা ধক ধক শব্দ করছে। শুনতে ভালোই লাগছে। মনে হচ্ছে উনার প্রত্যেকটা হৃদস্পন্দন যেনো আমারই নাম নিচ্ছে।
আর বেশি সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি ওঠে পড়লাম। ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ারটা নিয়ে নিলাম। তারপর উনাকে ডেকে দিলাম। উনিও শাওয়ার নিয়ে নামাজ পড়ার জন্য মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হলেন। আমিও নামাজটা পড়ে নিলাম। প্রচুর ঘুম পাচ্ছে। গতকাল রাতে দেরিতে ঘুমানোর জন্য। আর কিছু না ভেবে আবার শুয়ে পড়লাম। অল্প কিছুক্ষণের মাঝেই ঘুমিয়ে পড়লাম।

ঘুম ভাঙলো ৭ টা বেঁজে ৩০ মিনিট। রুমে আরিয়ানকে দেখতে পেলাম না। ওয়াশরুমেও নেই বেলকনিতেও নেই। আমি তাড়াতাড়ি রুমের বাইরে গেলাম। কিন্তু ড্রয়িংরুমে কেউ নেই। আব্বু -আম্মুর রুমে গিয়ে দেখলাম আম্মু ঘুমুচ্ছে। আনহা হয়তো প্রাইভেটে গেছে। আনহার প্রাইভেট সকাল সাড়ে ৬ টা থেকে। আমি আবার রুমে আসলাম। আব্বু আর আরিয়ান কী এখনো মসজিদ থেকে আসেনি?

ড্রেসিংটেবিলের আয়নার সামনে একটা সাদা কাগজ ঝুলছে। কাগজে মেবি কিছু লেখা আছে। কিন্তু এটা কে এখানে রাখল। আমি তো রাখিনি। আরিয়ানকেও রাখতে দেখি নাই। নামাজ পড়ার আগেও তো আয়নায় এমন কিছু দেখেনি। আমি যখন ঘুমিয়ে ছিলাম আরিয়ানের অবর্তমানে কেউ কী আমাদের রুমে আসছিল?
আমি তাড়াতাড়ি ড্রেসিংটেবিলের সামনে গেলাম। কাগজটা হাতে নিলাম। এটাতো আরিয়ানের লেখা। উনার ডায়েরী পড়তে পড়তে উনার লেখা খুব ভালো করে চিনে গেছি। উনি তাহলে বাসায় এসেছিলেন।
আয়না

আজকে আমি ভীষণ খুশি। তুইও আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছিস এটা বুঝতে পারছি। আমি কালকে রাতের কথা জীবনেও ভুলবো না। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ রাত ছিল। আজকে নিজেকে পরিপূর্ণ মনে হচ্ছে। অবশেষে আমার এক তরফা ভালোবাসা সফল হলো। এইগুলো তোকে লিখে নয় মুখেই বলতাম। কিন্তু আমার হাতে একদমি সময় ছিল না। হসপিটাল থেকে একটা ইমার্জেন্সি কল আসছিল তাই চলে যেতে হলো। তোকে জাগায়নি কারণ তোর ঘুমন্ত নিষ্পাপ মুখটা দেখে আর জাগাতে ইচ্ছে করেনি। আমি আর আব্বু চলে গেলাম। তুই খাওয়া দাওয়া করে ভার্সিটি চলে যাস। আম্মুকে ডাকিস না। আম্মুর মাথা ব্যথা করছিল তাই ঘুমিয়েছে। ভার্সিটিতে বোরকা পড়ে যাবি। সাবধানে ভার্সিটি যাবি আর ভার্সিটিতে পৌছে আমাকে একটা ফোন দিবি। মনে থাকে যেনো।
ইতি
বুঝলে বুঝ পাতা না বুঝলে তেজপাতা

শেষ লাইনটা পড়ে আমি ফিক করে হেসে দিলাম। উনিও মজা করতে পারেন আমার কল্পনার বাইরে ছিল। আমি উনাকে ছোটবেলা থেকেই ভাইয়াকে ছাড়া আর অন্য কারো সাথে মজা করতে দেখেনি। উনি নিজেকে বাইরে থেকে সব সময় কঠিন মানুষ প্রমাণ করতে চান। সব সময় বাইরের মানুষের কাছে নিজেকে গম্ভীর প্রমাণ করতে চান। একটা মানুষের কতো রকম রূপ হতে পারে তা আরিয়ানকে না দেখলে বুঝতে পারতাম নাহ।
আমি ওয়াশরুমে গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে নিলাম। ব্রেকফাস্ট করে বোরকাটা পড়ে বেরিয়ে পড়লাম বাসা থেকে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি রিকশার জন্য। তখনি আমার সামনে এসে একটা গাড়ি থামে। গাড়িটা ভালো করে লক্ষ্য করে বুঝতে পারলাম এটা আরিয়ানের গাড়ি। আংকেল আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

প্রণয়ের দহন পর্ব ১১

মামুনি গাড়িতে ওঠো। আরিয়ান বাবা আমাকে পাঠিয়েছে তোমাকে ভার্সিটি পৌছে দেওয়ার জন্য।
আমি কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে ওঠে পড়লাম। কিছুক্ষণের মাঝেই আমি পৌছে যাই ভার্সিটির সামনে। আমি গাড়ি থেকে নেমেই আরিয়ানকে ছোট করে টেক্সট করে দিলাম।
আমি সাবধানে পৌছে গেছি।
সাথে সাথেই আরিয়ান ফোন দেয়।
আমি তোকে টেক্সট করতে বলছি? আমি তোকে ফোন দিতে বলছিলাম।
একই তো হলো।

না হলো না। এখনি ভিডিও কল দে।
এখন ভিডিও কলে কেনো দিব।
আমি দিতে বলছি দিবি।
আমি ভিডিও কল দিলাম। উনি আশেপাশে কিছু একটা খুঁজলেন। তারপর আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন।
যা এখন ক্লাসে যা।
কথাটা বলেই উনি কল কেটে দিলেন। আমি জানি উনি কেনো ভিডিও কল দিতে বলছিলেন। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ক্লাসে ঢুকলাম। একা একাই ক্লাস করলাম। আমার একটা ফ্রেন্ডও আসেনি। ক্লাস শেষ যখন ক্যাম্পাস দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম তখন একটা পরিচিত কন্ঠসর শুনে থেমে যায়।

প্রণয়ের দহন পর্ব ১৩