প্রণয়ের দহন পর্ব ২ || তাসনিম জাহান রিয়া || SA Alhaj

প্রণয়ের দহন পর্ব ২
তাসনিম জাহান রিয়া

ধরাম করে দরজার খোলার শব্দে আমি কেঁপে ওঠি। জানি আরিয়ান ভাইয়া এসেছে। ভয়ে জড়সড় হয়ে বসে পড়ি বিছানার এক কোণে। এখন আমার সাথে কী হতে পারে এটা ভেবেই আমার আত্না কেঁপে ওঠছে। কিছু ভাঙার শব্দে আমি চমকে ওঠি। ঘোমটা একটু উপরে তুলে রুমে চোখ বুলাতেই আমার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। রুমের অবস্থা বেহাল। ফুলদানির ভাঙা অংশগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে ফ্লোরে। সোফার কুশনগুলো নিচে পড়ে আছে। ভাঙা সো পিচ পড়ে আছে নিচে।

হঠাৎ আরিয়ান ভাই আমার দিকে তাকাতেই ভয় পেয়ে যায়। উনার চোখগুলো দেখে আমার কলিজার পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। উনার চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনি অনেক রেগে আছেন। রেগে থাকারই কথা। আমার জন্যই উনার লাইফটা শেষ হয়ে গেলো। কিছুটা হাত উনারও আছে।
আচমকা আরিয়ান ভাই আমার গলা চেপে ধরে। এতো জুড়ে গলা চেপে ধরেছে যে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে আমার জানটা এখনি বেরিয়ে যাবে। চোখ উল্টে আসছে। উনি আমার গলা ছেড়ে দিলেন। আমি গলা ধরে কাশতে শুরু করলাম। উনি হুংকার ছেড়ে বলেন,

খুব সখ না আমার বউ হওয়ার। আমার বউ হওয়ার সখ তোকে দুই দিনের মাঝেই মিটিয়ে দিব। নিহান ঠিক বলেছিল তুই আসলেই চরিত্রহীনা। এক ছেলে দিয়ে তোর হয় না। তাই তো তুই প্লেন করে ফাসিয়ে আমাকে বিয়ে করে নিলি। আমার লাইফটা তুই শেষ করে দিলি। আমার মান-সম্মান সব ধুলোয় মিশিয়ে দিলি। সবার চোখে আমাকে নিচে নামিয়ে দিলি। এর জন্য কোনোদিন আমি তোকে ক্ষমা করবো না। কোনদিন নাহ। তুই এখানে থেকে ধুকে ধুকে মরবি। এই আরিয়ান আব্রাহাম তোর জীবন নরক করে দিবে। যাস্ট ওয়েট এন্ড সি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কথাগুলো বলেই আরিয়ান ভাইয়া আমার হাত ধরে জোড়ে টান দেয়। আমি টাল সামলাতে না পেরে উনার বুকের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ি। উনি ধাক্কা মেরে আমাকে উনার কাছ থেকে সরিয়ে দেন। ধাক্কাটা এতো জুড়ে দিয়েছিলেন যে আমি টাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পড়ে যায়। ফ্লোরে আগে থেকে পড়ে থাকা ফুলদানির ভাঙা অংশে কপাল লেগে। কপালের এক সাইডে অনেকটা কেটে যায়।

উনি আমার ফিরে তাকালেন নাহ। ধুপধাপ পা ফেলে রুম থেকে বের হয়ে যান। আমি কপালে হাত দিয়ে দেখি অনেকটা কেটে গেছে। কপাল থেকে চুঁইয়ে চুঁইয়ে রক্ত পড়ছে। আমি রক্ত বরাবরই ভয় পায়। রক্ত দেখলে আমার মাথা ঘুরায়। আমার রক্তে ভয়ঙ্কর ফোবিয়া আছে। মাথা ঘুরছে, চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসছে। ঙ্গান হারিয়ে ধপাস করে ফ্লোরে পড়ে গেলাম।

হঠাৎ মুখের ওপর টুপ টুপ করে পানি পড়ায় আমি পিট পিট করে চোখ খুলি। নিজের মুখের কাছে আরেকটা মুখ দেখে ভয় পেয়ে যায়। মুখের ওপর পানি পড়ায় আমি চমকে ওঠি। চমকে গিয়ে ভালো করে চোখ খোলার চেষ্টা করি কিন্তু পারি না। চোখ জ্বালা পোড়া করছে। মাথা বাড় বাড় লাগছে। হয়তো জ্বর এসেছে। কিছুতেই চোখ খোলে রাখতে পারছি না। চোখ জোড়া বার বার বন্ধ হয়ে আসছে।

আদো আদো চোখ খুলে দেখি আরিয়ান ভাইয়া কাঁদছে। কিন্তু আরিয়ান ভাইয়া কেনো কাঁদছে? আমার মুখ উনার দুই হাতের মাঝে। উনি কিছু একটা বলছেন কিন্তু স্পষ্ট বুঝতে পারছি না। অস্পষ্ট এতোটুকু শুনতে পেলাম।
আই’ম সরি আয়না। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি। আমাকে ক্ষমা করে দাও। প্লিজ ফর……

উনার আর কোনো কথা আমার কানে এলো না। উনি আমার ওপর ঢলে পড়লেন। উনার মুখ থেকে বিশ্রী গন্ধ আসছে। উনি কী ড্রিংক করেছেন? আর কিছু ভাবতে পারলাম নাহ। চোখ বুজে এলো। শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক হয়ে গেছে।

ঘুম থেকে ওঠে নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করে চমকে উঠলাম। আমি তো ফ্লোরে শুয়ে ছিলাম। তাহলে বিছানায় আসলাম কী করে? কপালে হাত দিয়ে দেখি ব্যান্ডেজ করা। তখন রাতের কথা মনে পড়ে যায়। আরিয়ান ভাইয়া নিয়ে এসেছেন বিছানায় আর ব্যান্ডেজও উনিই করে দিয়েছেন হয়তো। উনি তো তখন কাঁদছিলেন। কিন্তু কেনো? উনি একটা মেয়ের নাম বলেছিলেন। মেয়েটার নাম যেনো কী? ও হ্যাঁ আয়না। তাহলে কী আয়না উনার গার্লফ্রেন্ডের নাম? আমার জন্য আয়না আপু কষ্ট পাচ্ছে। আমি উনাদের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে ঢুকে পড়লাম।

আর কিছু ভাবতে পারছি না। মাথা যন্ত্রণায় ছিড়ে যাচ্ছে। শরীরে জ্বর না থাকলেও প্রচণ্ড মাথা ব্যথা করছে। এখন একটা লম্বা শাওয়ার নিয়ে এক কাপ চা খেলেই মাখা যন্ত্রণাটা ছেড়ে দিতো।
ঘড়ির তাকাতেই আমার চোখ ছানাবড়া। ৮ টা বেজে গেছে। আর আমি এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছি। লোকে কী ভাববে? নতুন বউ সকাল ৮ টা পর্যন্ত পড়ে পড়ে ঘুমুচ্ছে। আমি রুমের চারপাশে চোখ বুলালাম। নাহ আরিয়ান ভাইয়া রুমে নেই। সারা রুম গোছানো। কোনো জিনিসের ভাঙা অংশ পড়ে নেই।

আমি আর কিছু না ভেবে বিছানা থেকে নেমে শাওয়ার নিতে চলে যায়। দ্রুত শাওয়ার নিয়ে একটা কালো রঙের শাড়ি পড়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়। রুমে কেউ নেই। হয়তো উনি এখনো আসেননি। আমি ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে একটু পরিপাটি হয়ে নিলাম।
ভয়ে ভয়ে রুম থেকে বের হলাম। আন্টি কিচেনে রান্না করছেন।আমি গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেলাম কিচেনের দিকে। আন্টির পাশে গিয়ে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ি। আন্টি আমার সাথে একটাও কথা বললেন নাহ। ইনফ্যাক্ট আমার দিকে ফিরেও তাকালেন নাহ। গোমড়া মুখ করে একমনে কাজ করে যাচ্ছেন। হয়তো আমার ওপর রেগে আছেন। রেগে থাকারই কথা।

আমার জন্য উনাদের একমাত্র ছেলের বিয়ে এভাবে হলো। হয়তো আরিয়ান ভাইয়া এতক্ষণে সত্যিটা বলেও দিয়েছে যে, আমার একটু ভুলের জন্যই সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেলো। সবার সামনে উনাদের মাথা নিচু হয়ে গেলো। আমি আচমকা আন্টির পা জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেই। কাঁদতে থাকা অবস্থায় বলতে শুরু করি।
আন্টি বিশ্বাস কর আমার আর আরিয়ান ভাইয়ার মাঝে কোনো সম্পর্ক ছিল না। সবকিছু একটা ভুল বুঝাবুঝি। কেউ ইচ্ছে করে এমনটা করেছে আমাদের নামে বদনাম ছড়ানো জন্য। এসবের মাঝে আমাদের কোনো দোষ ছিল না। তোমরা আমাদের কথা না শুনেই আমাদের বিয়ে দিয়ে দিলে। আমার সাথে আরিয়ান ভাইয়ার বিয়ে দিয়ে তোমরা নিজের ছেলের জীবন নষ্ট করে দিলে। যদিও দোষটা আমার ছিল একটু। আন্টি আমাকে ক্ষমা করে দেও। প্লিজ আমার ওপর রাগ করে থেকো মা। তুমি রাগ করে থাকলে আমার একটুও ভালো লাগে না।

প্রণয়ের দহন পর্ব ১

এই কী করছিস কি? পা ধরছিস কেনো?
আন্টি আমার কাধ ধরে দাঁড় করায়। চোখের পানিটা মুছে দিয়ে বলে,
মায়েরা কী কখনো সন্তানের ওপর রাগ করে থাকতে পারে? আমি একটুও রেগে নেই। বরং তোর আর আরিয়ানের বিয়ে হওয়ায় খুশি হয়েছি। আমি জানি তোদের মাঝে কোনো সম্পর্ক নেই। ঐ বদমাইস ছেলেটা প্লেন করে সবকিছু করেছে। এক মেয়েতে এদের মন ভরে। নতুন একটা মেয়ে পেয়েছে তাই। তোকে রাস্তা থেকে সরানোর জন্য আরিয়ানের সাথে তোকে জড়িয়ে এমন বাঁজে একটা প্লেন করেছে।

আন্টি সত্যিই তুমি আমার ওপর রেগে নেই?
একটুও না। যা এবার এই কফিটা আরিয়ানকে দিয়ে আয়।
উনিতে রুমে নেই।
তুই গিয়ে দেখ রুমেই আছে। এই সময় আরিয়ান রুম থেকে বের হয় না। বেলকনিতে ছিল তাই হয়তো তুই খেয়াল করিসনি।
ও।
যখনি কফিটা হতে নিতে যাব। আমার ফোনের মেসেজ টোন বেজে ওঠে। মেসেজ ওপেন করে তো আমার চোখ ছানাবড়া।
স্বামী নিয়ে সুখে শান্তিতে সংসার করছো। কিন্তু আমি তো ভালো নেই। প্রতি মুহুর্তে তোমার #প্রণয়ের_দহন এ পুড়ছি আমি।

প্রণয়ের দহন পর্ব ৩