প্রণয়ের দহন পর্ব ৩ || তাসনিম জাহান রিয়া || SA Alhaj

প্রণয়ের দহন পর্ব ৩
তাসনিম জাহান রিয়া

যখনি কফিটা হতে নিতে যাব। আমার ফোনের মেসেজ টোন বেজে ওঠে। মেসেজ ওপেন করে তো আমার চোখ ছানাবড়া।
স্বামী নিয়ে সুখে শান্তিতে সংসার করছো। কিন্তু আমি তো ভালো নেই। প্রতি মুহুর্তে তোমার #প্রণয়ের_দহন এ পুড়ছি আমি।
মেসেজটা কে দিয়েছে বুঝতে পারছি না। কারণ মেসেজটা আননোন নাম্বার থেকে আসছে। আমি মেসেজের রিপলাই না দিয়ে নাম্বারটা ব্লক করে দিলাম। আরিয়ান দেখলে হয়তো আমাকে আরো খারাপ মেয়ে ভাববে। যেটা আমি চায় না। এমনিতে আমি সবার চোখে চরিত্রহীন। নিজের জীবনে আমি আর জামেলা চায় না। এখন একটু ভালো ভাবে বাঁচতে চায়।

আন্টির হাত থেকে কফিটা নিয়ে নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালাম। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি। আরিয়ান ভাইয়াকে খুব তাড়াতাড়ি ডিভোর্স দিয়ে দিব। আমার জন্য দুটো ভালোবাসার মানুষ আলাদা হয়ে গেলো। তাদের এক করার দায়িত্ব আমার। আমি মাঝখান থেকে সরে গিয়ে আরিয়ান ভাইয়া আর আয়না আপুকে এক করে দিব।
এই নিন আপনার কফি।

আরিয়ান ভাইয়া সোফায় বসে ফোন স্ক্রল করছিল। আমি উনার সামনে দাঁড়িয়ে কথাটা বললাম। উনি আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছেন। উনার দৃষ্টি আমার বোধগম্য হচ্ছে না।
একদম বউ সাঁজার চেষ্টা করবি না। তোর প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। তাই এমন কোমড় বের করে শাড়ি পড়ে রাখলেও লাভ নেই। তোকে আমার সহ্য হয় না। তোকে দেখলে আমার শরীর জ্বলে।
ভাইয়া আমার হাত থেকে কফিটা নিতে নিতে কথাটা বললো। আমি তাড়াতাড়ি শাড়ি দিয়ে কোমড় ঢেকে নিলাম।
আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দাও। তাহলে আর আমাকে সহ্য করতে হবে না।

আমার কথাটা শুনেই ভাইয়ার চোখের রঙ পরিবর্তন হয়ে গেলো। রাগে শরীর কাঁপছে ভাইয়ার। উনি হাতের কফিটা আমার দিকে ছুঁড়ে মারেন। কিছুটা কফিটা এসে আমার হাতের ওপর পড়ে। আমি আতকে ওঠে একটু দূরে সরে যায়। কফিটা এতোটাও গরম ছিল না। তবু হাত জ্বলে যাচ্ছে। সোফা থেকে ওঠে এসে আমার গাল চেপে ধরে। আমার চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে। সেদিকে উনার কোনো খেয়াল নেই। উনি চিৎকার দিয়ে বলে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তোকে ডিভোর্স দিয়ে দিব। তুই আমার হারানো মান সম্মান ফিরিয়ে দিতে পারবি। যদি পারিস তাহলে ডিভোর্সের কথা বলিস। জানি পারবি না। আরেক দিন যদি ডিভোর্সের কথা বলিস। তাহলে তোর এই মুখটা আমি ভেঙে দিব। তোকে আমি কোনো দিনও ডিভোর্স দিব না। তোকে কাছেও টেনে নিব না আবার দূরেও যেতে দিব না।
কথাগুলো বলে উনি আমার গাল ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যান। আমি ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়ি। চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। আমি আর এসব নিতে পারছি না।

কেনো নিহান তুমি এমন করলে? কেনো আমার জীবনটা নরক বানিয়ে দিলে? একটা থাপ্পড়ের প্রতিশোধ এভাবে না নিয়ে। আমাকে কলেজের সবার সামনে ৫ টা থাপ্পড় মারতে। তুমি যদি আমাকে না ঠকাতে। তাহলে আজকের দিনটাই অন্যরকম হতো। আমার ঘুম ভাঙতো তোমার মুখটা দেখে। ঘুম ভেঙে আমি নিজেকে তোমার বুকে আবিষ্কার করতাম। কিন্তু আজ যে সেই বুকে অন্য কেউ। নিহান তুমি তো একদিন বলেছিলে, তোমার বুকে মাথা রাখার অধিকার শুধু আমার সেই কথা কী তোমার মনে আছে?

ইশ সত্যিই আমি অনেক বোকা। যে আমার সাথে থাকবে না বলে আমাকে চরিত্রহীন প্রমাণ করলা। সে এসব কথা মনে রাখবে। চোখের সামনে এখনো ভাসছে গায়ে হলুদের দিন ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো। ছোট একটা ভুল বুঝাবুঝিতে পাল্টে গেল সবার জীবন। ঐটা কী সত্যিই এক্সিডেন্ট ছিল নাকি কেউ ইচ্ছে করে করেছে?

আমার আর নিহানের ইচ্ছেতেই আমাদের দুজনের গাঁয়ে হলুদের অনুষ্ঠান একসাথে করা হয়। অনুষ্ঠানটা অবশ্য আমাদের বাসায় করা হয়েছিল। সবাই আমাদের গায়ে হলুদ ছুঁইয়ে দিচ্ছে। হলুদ অনুষ্ঠানের প্রায় শেষের দিকে নিহান আমাকে কানে কানে বলে,
সবাই আমাকে হলুদ লাগিয়েছে সেও লাগাতে চায়।
সবার সামনে তো আর বর কনের গায়ে হলুদ লাগাতে পারে না। তাই নিহান আমাকে সিঁড়ির ডান পাশের রুমটাতে যেতে বলে। আমি ও নিহানের কথা অনুযায়ী সিঁড়ির ডানপাশের রুমটাতে চলে যায়। হলুদ অনুষ্ঠান গার্ডেনে করা হয়েছে। তাই বাসা একদম ফাঁকা। সবাই গার্ডেনেই আনন্দ করছে।

সিঁড়ির ডানপাশের রুমটাতে দেখি নিহান উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি নিহানকে পিছন থেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরি। কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে থাকার পর আমি নিহানের গালে হলুদ ছুঁইয়ে দেই। আমি আগে থেকে প্লেন করে হাতে করে হলুদ নিয়ে এসেছিলাম।
নিহানের গালে স্পর্শ করে বুঝতে পারি এটা নিহান না। কারণ নিহান ভেবে যার গালে হাত দিয়েছি তার গালে ট্রিম করা দাড়ি। নিহানের গালে কোনো দাঁড়ি নেই। কারণ নিহান সব সময় ক্লিন সেইভ করে। আমি তড়িৎ গতিতে লোকটিকে ছেঁড়ে দেই। লোকটিও এবার পিছন ঘুরে তাকায়। লোকটার ফেইস দেখে আমি আতকে ওঠি। কারণ আমার সামনে আর কেউ নয় বরং আরিয়ান ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে।

আরিয়ান ভাইয়াকে দেখেই আমার কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে যায়। উনার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনি অনেক রেগে আছেন। সব ছেলেরা এক রঙের পাঞ্জাবি পড়েছে। আর নিহান এবং আরিয়ান ভাইয়ার হাইট সেইম হওয়ায়। আমি আরিয়ান ভাইয়া আর নিহানের মাঝে পার্থক্য করতে পারিনি। আমি একবার আরিয়ান ভাইয়ার মুখের দিকে তো আরেকবার দরজায় দিকে তাকিয়ে দিলাম ভৌঁ দৌড়। আরিয়ান ভাইয়া আমার ধরতে পারলে কাঁচা চিবিয়ে খাবে।
আনহার ডাকে আমার ভাবনায় ছেদ পড়ে।
ঐ ভাবি।

আনহার কথায় আমি চমকে যায়। ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকিয়ে বলি,
আনহা তুই আমাকে ভাবি ডাকছিস কেনো?
আনহা আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে বলে, জীবনে শুনছো কোনোদিন ভাইয়ের বউকে কেউ আপু ডাকে? তুমি আমার ভাইয়ের একমাত্র বউ তোমাকে ভাবি ডাকব না তো কাকে ভাবি ডাকব হুম?
কেনো ডাকতে এসেছিস? কিছু বলবি তুই?
ও হ্যাঁ। আম্মু তোমাকে ব্রেকফাস্ট করার জন্য ডাকতে পাঠিয়েছিল আমাকে। আর আমি এসে বক বক শুরু করে দিয়েছি। চল তাড়াতাড়ি।
হুম চল।

আমি ডাইনিং রুমে গিয়ে দেখি ডাইনিং টেবিলে আংকেল আর আরিয়ান ভাইয়া বসে আছে। আমার আংকেলকে দেখে ভীষণ ভয় করছে। আংকেল ভীষণ রাগী। সবার সাথেই গম্ভীর ভাবে কথা বলতেন শুধু আমার আর আনহার সাথেই একটু হাসি মুখে কথা বলতেন। সেই কারণটা আমার অজানা।

আনহা আমাকে আরিয়ান ভাইয়ার পাশের চেয়ারটাতে বসিয়ে দেয়। আনহাও আরেকটা চেয়ার টেনে বসে পড়ে। আন্টি সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে। কেউ কোনো কথা না বলে চুপচাপ খাবার খেয়ে যাচ্ছে। আমিও ভয়ে কোনো কথা বলছি না। আংকেল এতো সহজে বিষয়টা হজম করে নিল আমার মানতে কষ্ট হচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে এই বুঝি আংকেল চিৎকার করে বলে ওঠল, আরশির মতো একটা চরিত্রহীন মেয়ের সাথে এক টেবিলে বসে খাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। নাহ তেমন কিছু হলো না। সবাই চুপচাপ খেয়েই চলেছে। নিরবতা ভেঙে আন্টি বলে,
আরিয়ান তুই আরশিকে নিয়ে আগামীকালকে আরশিদের বাসায় যাবি। নিয়ম অনুযায়ী আজকে যাওয়ার কথা ছিল। এতোসব ঝামেলার মাঝে ভুলেই গিয়েছিলাম। উ……

প্রণয়ের দহন পর্ব ২

আন্টিকে সম্পূর্ণ কথাটা শেষ করতে না দিয়ে আরিয়ান ভাইয়া বলে,
আমি আরশিকে নিয়ে কোথাও যেতে পারবো না। আর ঐ বাড়িতে তো কিছুতেই না। আমার……..
আরিয়ানকে ভাইয়াকেও সম্পূর্ণ কথা শেষ করতে না দিয়ে আংকেল ধমকের সাথে বলে,
দিন দিন চূড়ান্ত লেভেলের বেয়াদব হয়ে যাচ্ছ। বড়দের মুখে মুখে তর্ক করতে শিখে গেছো। তুমি কালকে আরশিকে নিয়ে ঐ বাড়িতে যাবে দিস ইজ ফাইনাল।
আরিয়ান ভাইয়া আর কিছু বলছে না। তবে কাচুমাচু মুখ করে বসে আছে। উনার মুখটা দেখে আমার হাসি পাচ্ছে। আমি মুখ টিপে হাসছি।

ঐ তুই এভাবে দাঁত কেলাচ্ছিস কেনো?
আরিয়ান ভাইয়ার কথাটা বলতে দেরি হলো কিন্তু আংকেলের ধমক দিতে দেরি হলো না।
আরিয়ান এসব কোন ধরনের বিহেইভিয়ার? নিজের স্ত্রীকে কেউ তুই করে ডাকে? আমাকে কোনোদিন তোমার আম্মুকে তুই ডাকতে শুনেছ? আগে তোমাদের মাঝে যা ছিল সব ভুলে যাও। এখন থেকে তোমরা স্বামী-স্ত্রী। তাই স্বামী-স্ত্রীর মতো বিহেভ করবে। নেক্সট টাইম যেনো এসব তুই তোকারি না শুনি।
আরিয়ান ভাইয়া মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। আমি মুখ টিপে হাসছি। আরিয়ান ভাইয়া আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে। আমি উনার এই দৃষ্টির মানে খুব ভালো করেই জানি।

প্রণয়ের দহন পর্ব ৪