প্রণয় পর্ব ৪২

প্রণয় পর্ব ৪২
তানিশা সুলতানা

কি একটা অবস্থা। কারো কাছে দুঃখের কথা বলে শান্তি নেই। কেউ বোঝে না মনের দুঃখ। সবাই খালি পাগল ভাবে।
গাল ফুলিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় তানহা। সূচক কাবাড থেকে জামা কাপড় নিয়ে ফ্রেশ হতে যায়। কি একটা কপাল?
কোথায় বাসায় ফেরার পর বউ জামাকাপড় এগিয়ে দেবে। পানি এনে দেবে। তা না বউ পড়ে আছে বাচ্চাকাচ্চার বিয়ে নিয়ে। সেই জন্যই অল্প বয়সের বাচ্চাদের সাথে প্রেম করতে নেই। এরা বোঝে কম চিল্লাই বেশি।

খাবার টেবিলে সবার ডাক পড়েছে। তমাল জরুরি কিছু কথা বলবে। তানহা তোহা পাশাপাশি বসেছে ঠিকই কিন্তু কেউ কারো সাথে কথা বলছে না। আর বলবেও না। তানহা মুখ ঘুরিয়ে আসে আছে।
এখানে সবাই উপস্থিত থাকলেও সূচক উপস্থিত না। সে তার কাজ করছে। সাদিয়া বেগম অবশ্য ডাকতে গেছে তাকে কিন্তু আশার নাম গন্ধ নেই। তমা বেগম সবার প্লেটেই সাবার বেরে দিচ্ছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“কি রে তমু? কি কইবি?
দাদিমা লাঠি ভর দিয়ে এসে তমালের পাশের চেয়ারটা টেনে বসে বলে।
” আপনার বড় নাতিকে বলতে চাই না। কিন্তু তার তো আশার নাম গন্ধই নেই।
বেয়াদব হয়েছে একটা।
ভাতে ডাল দিতে দিতে বলে তমাল।
“আহহা ভাই। হয়ত কাজ করছে।
তাহের বলে।

তখনই সূচক আসে। সাহেবি একটা ভাব ভাব নিয়ে হাতা গুটাতে গুটাতে। তানহার পাশের চেয়ারটা টেনে বসে পড়ে। তানহা এক পলক তাকিয়ে চোখ ঘুরিয়ে নেয়। ভাব দেখে বাঁচি না। মুখ বাঁকিয়ে মনে মনে বলে তানহা।
তমা বেগম ওর জন্য খাবার বারে।
” কি বলবে?
বাবার দিকে সরাসরি তাকিয়ে বলে সূচক।
তমাল হালকা কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে নেয়।
“তোমাদের বিয়ে হয়ে গেছে তার কোনো প্রমাণ নেই আমাদের কাছে।

তানহা ভাবে ভাবেই খাচ্ছিলো। তমালের কথা শুনে খাওয়া থামিয়ে দেয়। কিন্তু সূচকের কোনো থামা থামি নেই। সে এক মনে খেয়েই যাচ্ছে।
” বিয়ে তো হয়েছে
তাহের বলতে যায় হাত উঁচু করে থামিয়ে দেয় তমাল।
“আমি বলছি তোমরা আলাদা থাকবে। আলাদা মানে আলাদা
“আলাদাই তো থাকি সারাদিন।

সূচক মুখে খাবার পুরে সোজাসাপ্টা বলে দেয়। বিষম খায় তাহের। তমাল কটমট চোখে তাকায় ছেলের দিকে। নুন্যতম লজ্জা কি এই ছেলের নাই। সাদিয়া বেগম আচল দিয়ে মুখ ঢাকে। মমতা বেগম নাতির উওরে মুচকি হাসছে। তমা বেগম তাকিয়ে আছে সূচকের মুখের দিকে। তানহা মাথা নিচু করে আছে। তোহা ঠোঁট টিপে হাসছে।
” রাতেও আলাদা থাকবে।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে তমাল।

“তাহলে তুমিও মায়ের থেকে আলাদা থাকো। একটা কাজ করি চলো তুমি আর আমি থাকি। তানহা আর মা থাকুক।
এক গ্লাস পানি ঢকঢক করে খেয়ে বলে সূচক। তমাল চোখ বন্ধ করে কপালে হাত দেয়। সাদিয়া বেগম তরিঘরি করে এখান থেকে চলে যায়। তানহা পারছে না মাটি ফাঁক করে ঢুকে পড়তে।
” বেয়াদবির একটা সীমা থাকে।
তমাল দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
“তুমি মা কে বিয়ে করেছো এখন এক সাথে থাকছো। আমিও তানহাকে বিয়ে করেছি। ক সাথে থাকবো। এখানে যদি তুমি ধর্মঘট শুরু করে দাও। আমি প্রতিবাদ করতে যাই। তখনই আমি বেয়াদব হয়ে গেলাম। এ কেমন বিচার?
এটা মানা যাবে না।

সূচক ইনোসেন্ট ফেস করে বলে।
তমাল লজ্জা পেয়ে যায়। এরকম নিলজ্জ ছেলে তার?
” এক সাথেই থাকিস তোরা। চুপ চাপ খা এখন।
তাহের শুকনো ঢোক গিলে বলে। সূচক কাকার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।
অতঃপর আর কেউ কোনো কথা বলে না। সাহস আছে না কি কারোর?

কথা বললেই দেখা যাবে এক বালতি লজ্জা চাপিয়ে দেবে। তানহা কোনো রকমে নিজের খাবার শেষ করে চলে যায়। তমালও তাই। শুধু সূচক আরাম করে খাচ্ছে। যেনো খাওয়া ছাড়া আর কোনো কাজ নেই।
তানহা তোহার রুমে চলে আসে। এসে দেখে তোহার ফোন বাজছে। তানহা এগিয়ে গিয়ে ফোনটা তুলে দেখে ইমন কল দিছে। তানহার খুশি আর দেখে কে? এবার ইমনের কাছেই বিচার দেবে তোহার নামে।

“হ্যালো ভাইয়া জানো তোহা কি করছে?
কল রিসিভ করে কানে দিয়েই বলে তানহ।
” কি করছে?
ইমন বলে।
“আমার মুখের ওপর বলে দিছে আমার ছেলের সাথে ওর মেয়ের বিয়ে দেবে না।
” কিহহহ এটা বলছে ও? মেয়ে কি ওর একার না কি? আমারও মেয়ে। আমি কথা দিচ্ছি আমার মেয়ের সাথেই তোমার ছেলের বিয়ে হবে।

তানহা খুশিতে লাফিয়ে ওঠে। আরাম করে বিছানায় গোল হয়ে বসে।
“এই জন্যই তোমাকে আমি এতো ভালোবাসি। তুমি ছাড়া কেউ বোঝেই না আমায়।
তোমার বন্ধু কি বলছে জানো ” আমরা থাকতে পাবনার ছিট খালি থাকে কিভাবে ”
“ঠিকই তো বলছে।
” কিহহহ বললা?
ইমন দাঁত দিয়ে জীভ কাটে।

“কিহহহ সূচকের এতো বড় সাহস। আবার এই কথা বললে তুমি বলবা ” রতনে রতন চিনে”
তানহা কপালে তিনটে ভাজ ফেলে ইমনের কথার মানেটা বোঝার চেষ্টা করে। কিন্তু মাথায় ঢোকে না।
“বাই এনি চান্স আমি কি রতন?
তানহা বলে।
” নাহ না
তুমি রতন হবে কেনো? তুমি তো রতনী।
“আমিও কি বোকা দেখেছো? আরে রতন তো ছেলেরা হয়।
” একদম।

তানহা আর ইমন কথা বলতেই আছে। তোহা বিরক্ত হয় এসব দেখে। চোখ মুখ কুঁচকে পড়ার টেবিলে বই নিয়ে বসে।
সূচক রুমে গিয়ে তানহাকে না পেয়ে তোহার রুমে এসে দেখে তানহা লুটোপুটি খেয়ে কথা বলছে।
“এই পাগল তুই এখানে কেনো?
সূচক বলে। তানহা চোখ মুখ কুঁচকে সূচকের দিকে তাকায়।
” ভাইয়া তোহার সাথে কথা বলে।
তোহার কাছে ফোনটা দিয়ে সূচকের সামনে গিয়ে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ায়।

“কি বললেন আমায়?
তানহা জিজ্ঞেস করে।
” বললাম পাগল।
“হুমম রতনে রতন চিনে।
মুখ বাঁকিয়ে বলে হেলেদুলে চলে যায় তানহা। সূচক ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে। রতনে রতন চিনে মানে হলো? “তানহাএক পাগল আর তাকে বিয়ে করেছে আরেক পাগল”
সূচক দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তানহার পেছন পেছন যায়।
তানহা রুমে ঢুকে চুপচাপ শুয়ে পড়ে। সূচক নিজের বই এনে খাটে বসে তানহার পাশে।

“বই নিয়ে আয়।
সূচক চোখে চশমা পড়তে পড়তে বলে।
” একটা জিনিস ভাবলাম বুঝলেন?
আপনি কষ্ট করে এতোগুলো বছর পড়ালেখা করেছেন। এখনও করছেন।

এখন আমিও কেনো পাড়ালেখা করবো? দুজনই কষ্ট কেনো করবো? আমি আর আপনি তো একই। আমাদের এক আত্মা এক মন। এক সব। তাহলে এক পড়লেই আরেকজনের পড়া হয়ে কেনো যাবে না? অবশ্যই যাবে।
আমার পড়ালেখা বন্ধ। পড়ালেখা করে কে কি করেছে?
বিয়ে করা ফরজ। আর আমার ফরজ কাজ শেষ এখন পড়াপড়ি৷ অনলি বাচ্চা কাচ্চা পালা পালি।
তানহা গলা ওবদি কম্বল টেনে নিয়ে বসে। সূচক হা করে তাকিয়ে আছে তানহার দিকে।

“চাপকে গাল লাল করে দেবো তোর। ফালতু বকা বাদ দে। আর তাড়াতাড়ি উঠে বই নিয়ে আয়।
ধমক দিয়ে বলে সূচক।
” মুখে মধু নাই আপনার? একদম খ্যাট খ্যাট করবেন না বলে দিলাম। কালকেই আমি এক বোতল মধু কিনে এনে আপনাকে গেলাবো। এরকম রসকষহীন মানুষের সাথে আমি সংসার করতে পারবো না বাবা।

প্রণয় পর্ব ৪১

শেষে যদি আমার বাচ্চাকাচ্চা এরকম খ্যাট খ্যাট হয়। তখন পুরা কপাল আরও পুরে যাবে আমার।
এক বোতল না দুই বোতল মধু খাওয়াবো আপনাকে আমি।
তানহা একদমে কথা গুলো শেষ করে।

প্রণয় পর্ব ৪৩