প্রণয় শেষ পর্ব 

প্রণয় শেষ পর্ব 
তানিশা সুলতানা

এসএসসি পরীক্ষা চলে আসায় পিছাতে হয়েছে তোহা আর ইমনের বিয়ে। এটা নিয়ে মন খচখচ করছে ইমনের। যেই না পড়া পড়ে তাতে বিয়ে কেনো পিছিয়ে যাবে?
কিন্তু সূচকের এক কথা পরিহ্মার মধ্যে বিয়ে নেওয়া যাবে না। এক্সাম শেষ হোক তারপর বিয়ে হবে।
একদম মন প্রাণ দিয়ে বই পড়তে হচ্ছে তানহা তোহাকে। কাল থেকে এক্সাম শুরু।

এরই মধ্যে চলে গেছে চারটা মাস। উন্নতি হয়েছে সূচকের। ব্যাংকের চাকরিটা হয়ে গেছে তার। কোচিং বাদ দিয়ে দিয়েছে। দোকানেও ভালো উন্নতি হয়েছে। আরও একটা দোকান নিয়েছে তমাল তাহের। দোতালায় যে কাজ চলছিলো সেটাও মোটামুটি শেষ। এখন শুধু বাড়ির সামনে একটা গেইট দিতে হবে।
প্রতিদিন সন্ধায় তানহা তোহাকে পড়ায় সূচক।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ইরার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। বিয়েটা ঠিক করে দিয়েছে সূচক বিজয় স্যারের সাথে।
তমাল বসে আছে ছেলের টাকায় কিনে আনা সোফায়। সেখানে বসে ছেলের টাকায় কিনা আনা চা খাচ্ছে আর মনে মনে হাসছে।
সেদিন ছেলেকে দরজা বন্ধ করে বলেছিলো “যেদিন নিজের টাকায় বাবা মা আর তানহাকে খাওয়াতে পারবি সেদিন ই এই বিয়েটা মানা হবে। ”

সূচক সেদিন থেকেই নিজেকে নিজের মতো করে গুছিয়ে নিয়েছে। একদম গুছিয়ে নিয়েছিলো। তাই তো আজ এত বড় হতে পারছে। এতো সাফল্য অর্জন করতে পেরেছে।

তিনটের সময় সূচক তানহা আর তোহাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে। দুজনই আজকে আর কোনো বায়না করে না। চুপচাপ উঠে পড়তে বসে। কম্বলের মধ্যে পা ঢুকিয়ে দুজন পড়ছে। কালকে থেকে তানহাকে তোহার রুমে সিফট করেছে সূচক। এই রুমেই থাকবে এক্সাম শেষ না হওয়া ওবদি। সূচকের সাথে থাকলে কখনোই সকাল সকাল টেনে তুলতে পারতো না।
সূচক হাই তুলতে তুলতে কিচেনে চলে যায়। দুজনের জন্য দুই কাপ কড়া করে চা করে আনে। যাতে ক্লান্ত না লাগে।
তানহা কখনোই এরকম চা খেতে চায় না। এসব মানুষ খায় না কি?

তানহা সূচকের হাতে চায়ের কাপ দেখে মুখ বাঁ কায়। মানে সে খাবে না।
সূচক তোহার হাত দেশ এক কাপ চা। তোহা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বইয়ের দিকে নজর দেয়।
সূচক তানহার পাশে বসে তানহার মুখের সামনে ধরে চায়ের কাপ। তানহা কপাল কুঁচকে তাকায় সূচকের দিকে। সূচক চোখের ইশারায় খেতে বলে৷ তানহা মুখ বাঁকিয়ে চুমুক দেয়।
ফজরের আজান দিলে সূচক আবার আসে ওদের রুমে। দুজনকে নামাজ পড়তে বলে চলে যায় মসজিদের উদ্দেশ্য।

খুব ভালো ভাবেই এক্সাম শেষ হয় দুজনের। খুব ভালো রেজাল্ট আশা না করলেও মোটামুটি আশা করা যায়।
কালকে তোহার গায়ে হলুদ। খুব বড় করে অনুষ্ঠান করে বিয়ে হবে না। ঘরোয়া ভাবেই হবে। এটা তোহার ইচ্ছে। বিয়েটা এতো জাঁকজমক করে মানুষ দেখানোর কি আছে?

তানহা তোহাকে নিয়ে ইমন শপিং এ যায়। দুজনের পছন্দ মতো শাড়ি চুড়ি প্রয়োজনীয় যা যা লাগবে সব কিনে দেয়। সূচকের সময় হয়ে ওঠে না বলে ইমনই শপিং ঘোরাঘুরি সব কিছুতেই পাশে থাকে ওদের।
তোহা আর ইমনের ভাব হয় নি এখনো। ইমন ভাব জমাতে গেলে তোহা মুখ বাঁকিয়ে নেয়।

খুব ভালো ভাবেই বিয়েটা সম্পূর্ণ হয় তোহা আর ইমনের। লাল টুকটুকে লেহেঙ্গার পড়েছে তোহা। গা ভর্তি গহনা। সব গুলো শশুড় বাড়ি থেকে দেওয়া।
কান্না কাটির পর্ব শেষ হলে নিয়ে যাওয়া হয় তোহাকে শশুড় বাড়িতে।
ইমনের রুমটা খুব সুন্দর করে গোলাপ আর গাঁধা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।
তোহাকে কিছুখন আগে এই রুমে এনে বসিয়ে দিয়ে গেছে ইমনের কাজিনরা।
তোহা ঘুরে ঘুরে রুমটা দেখছে। ভালোই খারাপ না।

ওড়নাটা ফেলে দেয় তোহা। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঘুরে ঘুরে নিজেকে দেখতে থাকে।
একদম হিন্দি মুভির নায়িকাদের মতো লাগছে। চুল গুলো ছাড়া থাকলে আরও কিউট লাগবে। ঠাস করে খোপা খুলে দেয় তোহা। কিছু চুল সামনে আনে। এখন পারফেক্ট।
“মামিমা

হঠাৎ একটা বাচ্চার আওয়াজ আসে। তোহা পেছন ঘুরে দেখে একটা পিচ্চি বাচ্চা দাঁড়িয়ে আছে। বয়স চার পাঁচ হবে।
তোহার মনে পড়ে যায় এটা ইরিনের জা য়ের মেয়ে।
” বাবু কিছু বলবে?
তোহা বাচ্চাটার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে।

“তোমার সাথে থাকবো আজ আমি।মাম্মা বকেছে।
পিচ্চিটা এক লাফে খাটে উঠে বসে বলে। তোহা এক গাল হাসে। এটাই তো চাই ছিলো।
” থাকবেই তো সোনা। তুমি আজ এখানেই থাকবা। আমার সাথে। ঠিক আছে?
বাচ্চাটা মাথা নারায়।
“তুমি বসো। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

তোহা লাগেজ খুলে কালো একটা শাড়ি নিয়ে বাঁকা হেসে ওয়াশরুমে ঢুকে।
একটু পরেই ইমন রুমে আসে।
” তুই এখানে কেনো?
বাচ্চাটাকে বলে ইমন।
“আজকে আমি এখানেই থাকবো।
বাচ্চাটা শুয়ে পড়ে বলে।
” তুই এখানে থাকবি মানে?
ইমন কপাল কুঁচকে বলে।

“এখানে থাকবো মানে এখানেই থাকবো।
গলা ওবদি কম্বল টেনে নিয়ে বলে বাচ্চাটা। ইমন দাঁত কটমট করে বাচ্চাটার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। টেনে হিঁচড়েই বের করে দেবে একে।
” আহহা বাচ্চা মানুষ থাকতে চাইছে থাকুক না।

তোয়ালে দিয়ে হাত মুখ মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বলে তোহা। ইমন তোহার দিকে তাকিয়ে হা হয়ে যায়।
পাতলা ফিলফিলে কালো শাড়ি হাতা কাটা ব্লাউজ। এতোদম মাতাল করা সুন্দরী লাগছে।
ইমনকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মিষ্টি করে হাসে তোহা। ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
“ফিতাটা বেঁধে দিন তো।

পিঠ থেকে চুল সরিয়ে আয়নায় ইমনের দিকে তাকিয়ে বলে তোহা। ইমন এখনো একই ভাবে তাকিয়ে আছে। এই মেয়েটা পাগল করার ধান্দা এটেছে না কি?
” জলদি আসেন। ঘুমবো আমি।
তোহা তাড়া দিয়ে বলে। ইমন দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বাচ্চাটার দিকে তাকায়। এক গাল হেসে ইমনের দিকে তাকিয়ে ছিলো। ইমন ইশারায় বেরিয়ে যেতে বলে। বাচ্চাটাও ইশারায় না করে দেয়।

“আসবেন? না কি আমি অন্য কাউকে ডাকবো?
তোহা চোখ পাকিয়ে বলে।
” মামি খুব সুন্দর লাগছে তোমায়।
বাচ্চাটা এক গাল হেসে বলে। তোহাও প্রতিওরে একটু হাসে।
“সুন্দর লাগাবো এখন আমি।

ইমন বাচ্চাটাকে পাজা করে কোলে তুলে রুমের বাইরে নিয়ে যায়। তোহা কিছু বলার সুযোগ ও পায় না। মনে মনে শুকনো ঢোক গিলে। কি হওয়ার ছিলো? আর কি হয়ে গেলো?
ইমন বাচ্চাটাকে বাইরে নামিয়ে ধাস করে দরজা বন্ধ করে দেয়। তোহা কেঁপে ওঠে। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়।
” এটা করা একদম উচিত হয় নি”
মনে মনে ভাবে তানহা।
ইমন ঠোঁট প্রসস্থ করে একটু হেসে এগিয়ে যায় তোহার দিকে।

“এতোটাও আশা করি নি আমি।
পেছন থেকে তোহাকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে ইমন। জমে যায় তোহা। শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
“দারুণ লাগছপ তোমায়। একদম তামাক পাতার মতো।
তোহার ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে বলে ইমন।
তোহা ফাঁকা গলায় ঢোক গিলে।

” ঘুমবো আমি।
রিনরিনিয়ে বলে তোহা।
“হুমম আমিও
তোহাকে কোলে তুলে নেয় ইমন।

তানহাও কালো শাড়ি পড়েছে। নিজেদের রুমটাও সুন্দর করে গোলাপ আর গাঁধা ফুল দিয়ে সাজিয়েছে। ওদের তো এভাবে ফুল সাজানো খাটে ঘুমানো হয় নি।
কালো শাড়ি পড়ে সুন্দর করে সাজুগুজু করে অপেক্ষা করছে সূচকের। কিন্তু লোকটা আসছেই না। তানহার খুব বিরক্ত লাগছে এখন। কি এমন করছে যে আসতে এতোখন লাগছে?

খাট থেকে নেমে পায়চারি করতে থাকে তানহা। তখনই খট করে দরজা খোলার শব্দ আসে। মুখে হাসি ফুটে ওঠে তানহা। তাকায় সূচকের দিকে। লোকটাও আজ কালো শার্ট পড়েছে।
সূচক মুচকি হাসে তানহার দিকে তাকিয়ে।
” এতো দেরি কেনো করলেন?
ঠোঁট উল্টে বলে তানহা।
“সরি জান

হয়ে গেলো
এক কানে হাত দিয়ে বলে সূচক। তানহা ফিক করে হেসে ফেলে। সূচকও হাসে।
সূচক খাটে গিয়ে বসে। তানহাও গিয়ে সূচকের পাশে বসে।
সূচক পকেট থেকে একটা লকেট ওয়ালা চেইন বের করে।
” কেমন হয়েছে?
তানহার হাতে দিয়ে বলে।
“দারুণ

তানহা উল্টে পাল্টে দেখে বলে।
” এটা অনেক আগেই গড়িয়েছিলাম। কিন্তু দেই নি। ভেবে রেখেছিলাম মায়ের টা হয়ে গেলে দুজনকে এক সাথে দেবো। টাকার জন্য পারি নি। আজকে মায়ের টা নিয়ে এসেছি। আর দুজনকেই দিলাম।
“খুব ভালো করেছেন। এবার পরিয়ে দিন আমায়।
সূচক তানহার হাত থেকে চেইনটা নিয়ে পরিয়ে দেয় তানহাকে।

প্রণয় পর্ব ৪৩

” তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি তানহা। সেই ছোট্ট বেলা থেকে। তুমি আমার জীবনের এমন একটা পাওয়া যা আমার গোটা জীবনটাকেই পাল্টে দিয়েছে।
তানহা জড়িয়ে ধরে সূচকে।
“আমিও আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি৷ আমার প্রণয়ের সূচনা আপনাকে দিয়ে হয়েছে। আর প্রণয়ের শেষটা আপনাকে দিয়েই হবে।
সূচক মুচকি হেসে চুমু খায় তানহার মাথায়।

____সমাপ্ত_____