প্রণয় প্রহেলিকা পর্ব ৩৩

প্রণয় প্রহেলিকা পর্ব ৩৩
মুশফিকা রহমান মৈথি

এশা যখন খুব নিপুন ভাবে শেষ তেলাপোকাটি ফাঁক দিয়ে ভেতরে ঢোকাচ্ছিলো। তখন ই কানে এলো,
“তোমরা এখানে কি করছো?”
রাশভারী কন্ঠটি কানে আসতেই কেঁপে উঠলো আশা এবং এশা। হাতের তেলাপোকাটা সেখানেই ছেড়ে দিলো তারা তারপর শুকনো ঢোক গিলে পেছনে ফিরলো। বেশ নিপুনদক্ষ চোর দক্ষতা দেখিয়েও যখন ধরা খায় তখন তাদের অবস্থা যেমন হয় আজ তাদের অবস্থাটি তেমন। পেছনে ফিরতেই আরোও ভয় পেলো তারা। কারণ পেছনে সেলিম সাহেব এবং দীপ্ত দাঁড়িয়ে আছে। সেলিম সাহেব তাদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।

যতই নির্ভীক বলে নিজেদের আখ্যা করুক না কেনো জমজেরাও ভয় পায়। এবং বড্ড বাজে ভাবে ভয় পায়। উপরন্তু সেলিম সাহেবের দৃষ্টি যে কেউ ভয় পাবে। তারা তো তার হাটুর থেকেও ছোট দুটো মেয়ে। তাদের প্রাণ ও খাঁচা ছাড়া হচ্ছে। বুক টিপটিপ করছে। কেনো করছে জানা নেই! সেলিম সাহেব তাদের ধমক দিবে সেই ভয় নাকি বাড়ির লোক জানাজানি হবে সেই ভয়! জানা নেই। তবে মা জানলে আবার মূর্তির জন্য কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখবেন! অপমানিত হতে হবে মহল্লায়! ভেবেই নিকষকালো ভয়টা আরোও গাঢ় হলো। সেলিম সাহেব পুনরায় শুধালেন,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“হাটু গেড়ে কি করছিলে? হাতে কি তোমাদের?”
এশা শুকনো ঢোক গিলে বললো,
“কিছু না”
“তাহলে হাটু গেড়ে ছিলে কেনো?”
“খুঁ…খুঁজছিলাম”
“কি?”

এশা চুপ করে গেলো। এতো বুদ্ধিমান মস্তিষ্কটাও যেনো ফাঁকা ফাঁকা হয়ে গেছে। হবে নাই বা কেনো! কঠিন জেরার মুখোমুখি তারা। জেরা আগেও হয়েছে! কিন্তু সেটা রুবি বা অনল বা ধারার কাছে। এদের কাছে জেরা হওয়াটা ডালভাত। কিন্তু সেলিম সাহেবের মতো মানুষের কাছে জেরা হওয়াটা যেনো প্রচন্ড ভয়ংকর একটা দুঃস্বপ্ন। সেলিম সাহেব এশা এবং আশার কাছে সেই দৈত্যটি যিনি জোর করে তাদের ধারাপুকে নিজের কাছে নিয়ে যেতে এসেছেন। তাই তো অস্ট্রেলিয়ান ফুফাকে তাড়াতে নিজেদের ছোট মস্তিষ্কে যা বুদ্ধি আসছে তাই প্রয়োগ করছে তারা। দৈত্যের কাছে ধরা খাওয়া কতোটা ভয়ংকর সেটা তাদের অকল্পনীয়। সেলিম সাহেব নিপুন দৃষ্টিতে দেখলেন মেয়েদুটোর দিকে। সাদা স্কুল ড্রেস পরহিতা জমজেরা ঈষৎ কাঁপছে। তারা ভীত সন্তস্ত্র চাহনীতে তার দিকে তাকিয়ে আছে যেনো তিনি কোনো ছেলেধরা। তাদের কপালে ঘাম জমেছে। তারা একটা পর পর নিজেদের গলায় ঝুলোনো স্কার্ফটি টানছে। সেলিম সাহেব বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে কপাল ঘষলেন। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,

“কি খুঁজছিলে তোমরা মা? বলো, দীপ্ত খুঁজে দিবে! আর তোমরা কারা? এখানে কেনো! এবাড়ি তে তো থাকো না! দেখে মনে হচ্ছে স্কুল থেকে এসেছো। তাহলে বাড়ি যাও। এখানে কেনো?”
এশা আশা এখনো চুপ তারা একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। ফুপা কি তাদের চিনতে পারে নি! তারা কি নিজেদের পরিচয় দিবে নাকি গোপন করবে! এর মধ্যেই দীপ্ত বলে উঠলো,
“আংকেল ওরা ইলিয়াস মামার মেয়ে। হয়তো ওদের বল এখানে চলে এসেছে। সেটা খুঁজছিলো। ওরা প্রায়ই বাহিরে খেলাধুলা করে। আপনাকে দেখে হয়তো ভয় পেয়েছে”

দীপ্ত এর কথাটা কর্ণপাত হতেই বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকালো এশা আশা। দীপ্ত যা বলছে একেবারে দাহা মিথ্যে। তবে কি সে তাদের সাহায্য করছে! কিন্তু চেরাগআলী তাদের সাহায্য কেনো করছে! নাহ! এই প্রশ্ন এখন গুরুত্বপূর্ণ নয়! গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো কিভাবে অস্ট্রেলিয়ান ফুপার এই এলাকা থেকে প্রাণ নিয়ে পালানো যায়। ফুপার হাত থেকে প্রাণ নিয়ে পালাতে পারলে পরে চেরাগআলীকে নিয়ে ভাবা যাবে। সেলিম সাহেব দীপ্তের কথা শুনেই হেসে দিলেন। মানুষটাকে যতটা ভয়ংকর লাগছিলো হাসিমুখে তাকে ততটা ভয়ংকর লাগছে না, বরং কপালের ভাঁজ মিলিয়ে গেছে, ক্রোধাগ্নি মুখশ্রী হয়ে উঠেছে নির্মল। তিনি হেসে বললো,

“ও তোমরা জামাল কাকার নাতীন। তাই বলো, আমি লাস্ট যেবার এসেছি ইলিয়াস কেবল বিয়ে করেছিলো। তোমরা ছিলেই না। তাই চিনতে পারি নি। চকলেট খাও! দাঁড়াও”
বলেই পকেট থেকে দুটো লজেন্স বের করে এশা আশার হাতে দিলো। এশা আশা এখনো বিস্মিত। এই দানব হুট করে আলাদিনের জিন কিভাবে হলো বুঝে উঠতে পারছে না তারা। তারপর তাদের মাথায় দু হাত রেখে বললো,
“বাড়ি যাও, ক্লান্ত শরীরে এতোটা হুটোপুটি ঠিক না। আর পড়াশোনা ভালো করে করো। যাও”
সেলিম সাহেবের মুখে “যাও” কথাটা শুনতেই যেনো প্রাণ ফিরলো এশা আশার। ভো দৌড় দিলো তারা। প্রাণ নিয়ে পালানো হয়তো এটাকেই বলে।

এশা আশা বিল্ডিং থেকে বের হতেই হাফ ছাড়লো। এশা আশাকে বললো,
“এখন কিছু দিন আন্ডারগ্রাউন্ড হতে হবে”
“হু, ঠিক। এই ফুপার মতিগতি ভালো না। ধরা খেলে আর আস্তো থাকবো না”
এর মধ্যেই পেছন থেকে একটি পুরুষালি কন্ঠস্বর ভেসে আসে,
“টুইন্স, দাঁড়াও”
অতিপরিচিত কন্ঠটি চিনতে সময় লাগলো না এশা আশার। পেছনে তাকাতেই দেখলো দীপ্ত ছুটে এসেছে। মিষ্টি করে হেসে মুঠোবন্ধি বা হাতটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
“তোমাদের একটা জিনিস রেখে যাচ্ছো তো! প্রিয় বন্ধুটিকে নিবে না?”
আশা অবাক কন্ঠে বললো,
“কি?”

দীপ্ত মুঠো খুললো। মুঠো খুলতেই বেড়িয়ে এলো সেই তেলাপোকাটি। তেলাপোকাটি মৃত। মৃত তেলাপোকা দেখে খানিকটা নয় পুরোপুরি থ পেরে গেলো জমজরা। তাদের থমকে যাওয়া মুখশ্রী দেখে ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো দীপ্ত। তারপর বললো,
“ইঁদুর তবে শেষ হলো, আমি তো ভেবেছিলাম ইঁদুরের বংশকে দত্তক নিয়েছো। তো এখন কি তেলাপোকা সাপ্লাই এর ধান্দা?”
এশা আশা উত্তর দিলো না। শুধু ভ্রু কুচকে দীপ্তকে দেখতে লাগলো। দীপ্ত হাসি প্রসারিত করে বললো,
“লাভ নেই, তোমাদের ধারাপুকে এবার আমরা নিয়েই যাবো। রাক্ষস বুড়ির মতো একটা খাঁচায় আটকে রাখবো। বেশ হবে না?”
“আমাদের ধারাপুকে নেওয়া এতো সোজা?”
“দেখি কিভাবে আটকাও”

বলেই মৃত তেলাপোকাটা ফেলে হাত ঝেড়ে বাসার দিকে পা বাড়ালো৷ এশা আশা ক্রোধাগ্নি দৃষ্টি প্রয়োগ করলো কিন্তু কাজে দিলো না। ফলে ব্যার্থ আশা বলে উঠলো,
“এবার আর চুপ থাকা যায় না, চেরাগআলী কিভাবে চ্যালেঞ্জ করলো দেখলি!”
“হুম, এতোদিন মিডিয়াম পন্থায় যাচ্ছিলাম। এখন হার্ড পন্থা ব্যাবহার করতেই হবে। ও না ওর চোদ্দগুষ্টি দেশ ছেড়ে পালাবে”
দাঁত কিড়কিড় করে কথাটা বললো এশা। যা একটু আন্ডারগ্রাউন্ড যাবার কথা ভাবছিলো এবার সেটি হচ্ছে না_______

করিডোরে নোটিশবোর্ড ঝুলছে। অবশেষে ক্ষুদ্র মানবজীবনের ফলাফলের পালা। পরীক্ষাতে এতোটা ভয় করে না ওতটা তার ফলাফল দেখতে করে। পরীক্ষার সময় মনের মাধুরী মিশিয়ে কিছু একটা লিখে আসলেই হলো কিন্তু পুলসিরাতের সময় তো সেই ফলাফল। পাশ, ফেল, সিজি হাবিজাবি টাই মানুষকে নাজেহাল করে তোলে৷ যেমনটা বন্ধুমহলের ক্ষেত্রে হচ্ছে। ভীত পাঁচজোড়া নজর তীর্থের কাকের মতো দাঁড়িয়ে আছে নিজেদের রেজাল্ট দেখার জন্য।

ভালোই তো সেকেন্ড ইয়ারের ক্লাস চলছিলো এই রেজাল্টের ফাড়া গেলে বাঁচা যায়। ভিড় ঠেলে দিগন্ত ভেতরে ঢুকলো। একে একে রেজাল্ট দেখলো। বরাবরের মতো ফার্স্ট হলো নীরব। শান্তির ব্যাপার একজন ও ফেল করে নি। অভীকের সিজি কোনো মতে ৩.৩০ এর কাছে, মাহির ৩.৪০ দিগন্তের টা কোনো মতে ৩.০৫। আর ধারা একেবারে কাটায় কাটায় ৩.২৫৷ মেয়েটি আরোও ভালো করতো। ধারা তো খুশিতে আত্মহারা। এজন্য নয় সে তার সিজি ভালো। নাহ, এজন্য যে সে এখন অনলকে যেতে বলবে “চল না ঘুরে আসি অজানাতে”। অনল স্যার কাউকেই নাকানিচুবানি দেয় নি। সবাই পাশ করে গেছে ভালোভাবে। মাহি উচ্ছ্বাসিত কন্ঠে বলে উঠলো,

” কি রে ধারা, তুই তো ছক্কা হাকিয়েছিস। কই টেনেটুনে পাশ আর কই ৩.২৫”
“কার বউ দেখতে হবে না! একজন গণিতমাষ্টারের বউ যদি ফেল করে, সমাজে মুখ দেখাবে কিভাবে!”
ধারার কথা শুনে অভীক বলে উঠলো,
“বুঝলি না, ধারার রেজাল্টের রহস্য অনল স্যারের ভালোবাসা। তা স্যারকে বল, আমাদের ও একটু পড়াতে”
“তুই নীরবের কাছেই পড়। সে শুধু আমাকে পড়ায়। আমার পার্সোনাল টিউটর”
“হিংসুটে ধারারানী”
“ভালো হইছে। থাক আমি আসছি”
বলেই ধারা ছুটলো। বন্ধুমহলে উৎসাহ বেশ। ধারা চলে গেলে অভীক দিগন্তের ঘাড়ে হাত দিয়ে বলে,

“ক্যাফেতে পার্টি করবি নাকি অন্য কোথাও”
“যেখানে তোরা বলিস”
এর মাঝেই মাহি বলে উঠলো,
“আমার হচ্ছে না, বাড়ি যেতে হবে আজ। তোরা যা”
“একা যাবি? আমি দিয়ে আসি?”
দিগন্তের প্রস্তাব খানা শুনতেই সকলের নজর যায় দিগন্তের দিকে। মাহির মুখ হা হয়ে আছে। দিগন্ত তাকে নিয়ে যাবার কথা বলছে এ যেনো অষ্টম কোনো আশ্চর্য! সকলের হতবাক নজর দেখে দিগন্ত শুধালো,

“কি হয়েছে?”
“তুই মাহি চু’ন্নীকে বাড়ি দিয়ে আসবি?”
“হ্যা, সমস্যা কোথায়? আর এমনিতেও ধারাও নেই। তাই আজ সেলিব্রেশন বাদ দেই। আর মাহি একা একা এই সময় যাবে। আমি দিয়ে আসলে তো ক্ষতি কি!”
“না ক্ষতি নেই, কিন্তু কখনো মাহির প্রতি তোর এতো দরদ তো দেখি নি, তাই”
“আজাইরা, এই চল তো মাহি। অভীকের কথার আগামাথা নেই। ওর কথার মাঝে পড়লে যাওয়া হবে না”
বলেই হাটা দিলো দিগন্ত। মাহিও তার পিছু নিলো। এই ভরদুপুরে বাড়ি যাওয়াটা একটা ঝামেলা বটে। এদিকে অভীক নীরবকে বললো,

“কেস কি নীরব বাবা?”
“নতুন প্রেমের ফুল ফুটবে ফুটবে ভাব! শুধু প্রেমের অভাব”

অনলের রুমের কাছে আসতেই আশপাশটা দেখে নিলো ধারা। ছুটির সময় বিধায় স্যারদের আনাগোনা নেই। সেই ফাঁকে অনলের রুমে ঢুকতে হবে। কিন্তু যেই অনলের রুমে লক মোচড় দিলো অমনি তা খুলে গেলো। ভেতর থেকে কেউ দরজাটা খুললো। এই মানুষটি আর কেউ নয় বরং অনন্যা। অনন্যাকে দেখে রীতিমতো অবাক হলো ধারা। কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই অনন্যা বলে উঠলো,
“ভালো আছো?”
“জ্বী, আলহামদুলিল্লাহ। আপনি?”
“আমিও ভালো! এই ভার্সিটির স্টুডেন্ট নাকি?”
“হ্যা, আমি ম্যাথ ডিপার্টমেন্ট সেকেন্ড ইয়ার। আপনি এখানে?”
“তোমাদের ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টে জয়েন করেছি। পার্মানেন্ট না, পার্ট টাইম ক্লাস নিবো। অনলের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম। আসি”

ধারার উত্তরের অপেক্ষা করলো না অনন্যা। হনহন করে হেটে চলে গেলো। অনন্যার হুট করে জয়েন করাটা খটকা লাগলো ধারার। সে ভেতরে পা বাড়ালো। রুমে ঢুকতেই দর্শন হলো অনলের কঠিন মুখশ্রীর। তার মুখখানা শক্ত হয়ে রয়েছে। চোখজোড়া রক্তিম। কপালের বা পাশে শিরা ফুলে উঠেছে। ধারা নরম গলায় বললো,
“আসবো?”
ধারার কন্ঠ শুনতেই চোখ তুললো অনল। নির্বিকার কন্ঠে বললো,
“তুই? ক্লাস শেষ?”
“হ্যা, তোমার সাথে দেখা করতে এলাম। বাড়ি যাবে না?”
“হু, যাবো। দশ মিনিটের একটা কাজ আছে। করে নেই?”
“আচ্ছা”

বলেই চেয়ারটা টেনে বসলো ধারা। একবার ইচ্ছে হলো অনন্যা আপুর কথাটা তুলবে কিন্তু অনলের কঠিন মুখশ্রী দেখে আর সাহস হলো না। তার বুঝতে বাকি নেই অনল তার রাগ সংবরণ করে রেখেছে। অনল ল্যাপটপে হাত চালাতে চালাতে কিছু একটা ভেবে বললো,
“রেজাল্ট দিয়েছে, দেখেছিস?”
“সেটা দেখেই তো ছুটে আসা। তা কোথায় নিয়ে যাবে আমায়৷ বলেছিলে তো আমাকে হানিমুনে নিয়ে যাবে”
“তোর মনে আছে?”
হাত থামিয়ে বিস্মিত কন্ঠে বললো অনল। ধারা উৎসাহিত কন্ঠে বললো,
“বাহ রে! থাকবে না। তুমি জানো আমি এই ঘোরার লোভে কত কষ্ট করেছি। আমি কিছু বাহানা শুনছি না। নিয়ে যাবে মানে যাবে”

“আচ্ছা, যাবো। তবে ছুটি পেলে। এখন সেমিষ্টার শুরু। কিভাবে ছুটি নেই? এর চেয়ে একটু অপেক্ষা কর। ছুটি পাই। নিয়ে যাবো”
কথাটা শুনতেই ধারার উৎসাহে পানি পড়ে গেলো। অভিমানী কন্ঠে বললো,
“সব তোমার বাহানা। নেবে না বলে দিলেই হয়। কথা ঘোরাচ্ছো কেনো?”
“ঘোরালাম কোথায়! যাবো তো, এখন তুই যদি একদিনের ছুটিতে ঘুরে আসতে চাস সেটা আলাদা কথা। আর দশদিনের একটা জম্পেশ বান্দরবান ট্যুর দিতে চাস সেটা আলাদা কথা। কোনটা চাই বল”

ধারা গভীর চিন্তায় পড়লো, এদিকে ঘোরার মন ও হচ্ছে আবার একদিন ঘুরলে পোশাবেও না। তাই বাধ্য হয়ে বললো,
“বেশ, জম্পেশ ঘুরবো। কিন্তু আমি ঘুরতে যাবো, কোনো বাহানা চাই না। সামনের যে ছুটি পাবো তাতেই যাবো”
“যথাআজ্ঞা মহারাণী। চল কাজ শেষ”
বলেই ল্যাপটপ টা ব্যাগে পুরলো অনল। তখন ই রয়ে সয়ে ধারা বললো,
“আচ্ছা, অনন্যা আপু কি সত্যি জয়েন করেছে? না আসলে তোমার ঘরে ঢুকতেই ওকে দেখলাম তো”
অনন্যার কথাটা শুনতেই কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো অনল। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

“হ্যা, তাই তো বললো!”
“তা তোমার রুমে কি করছিলো?”
একটু কৌতুহলী কন্ঠেই কথাটা বললো ধারা। অনল ধারার মুখের দিকে তাকালো। মুখ ই বলে দিচ্ছে মনে কত কত প্রশ্নেরা উঁকি মারছে। উপরন্তু কিঞ্চিত ঈর্ষাও যেনো দেখতে পেলো সে। অনল ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো। তারপর খানিকটা মজার ছলে বললো,
“প্রেম নিবেদন করতে এসেছিলো!”
“কি?”

অনলের আকস্মিক উত্তরে মাথাটা শুন্য হয়ে গেলো। হুট করে বুকটা ধক করে উঠলো। ফলে কৌতুহল মনের আবেগ মুখে উঠে এলো। খানিকটা ভীত হয়ে উঠলো মন। ফলে উচ্ছ্বাসিত মুখখানা হয়ে উঠলো রক্তশূন্য। ধারার মুখশ্রীর অনবদ্য মুখভঙ্গি দেখেই হেসে উঠলো অনল। মাথায় আলতো করে গাট্টা মেরে বললো,
“ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে আর চাপ দিস না। ফেটে যাবে। ও এসেছিলো একটা অফার নিয়ে। যা আমি মানা করে দিয়েছি। চিন্তা করিস না। প্রেম নিবেদন দিলেও তা মানাই করতাম। আমার ধারারানীর জায়গা নেওয়া কি এতো সোজা। অবশ্য কি দিন ছিলো, স্বর্ণালী দিন। কত শত প্রেম নিবেদন। শুধু যারটার প্রতীক্ষা করতাম, তারটাই পেলাম না। আফসোস”

“কার প্রতীক্ষা করতে?”
অভিমান ধরা গলায় বললো ধারা। তখন তার কানে মুখ ঠেকিয়ে খাঁদে নামানো স্বরে বললো,
“তোর, একটা প্রেম নিবেদন তো আমারো পাপ্য ছিলো”
কথাটি শুনতেই নরম গালটি রক্তিম হয়ে উঠলো। অভিমানেরা বাস্পায়িত হয়ে গেলো। শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেলো উষ্ণ রক্তের স্রোত। দুহাতে আঁড়াল করলো মুখখানা। ইশ কি লজ্জা!

প্রণয় প্রহেলিকা পর্ব ৩২

জ্বালাময়ী গরমে কুপকাত সকলে এর মাঝে অংকের বোঝা মাথায় নিয়ে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। কোনো মতে ক্লাসের সমাপ্তি ঘটিয়েই যেনো হাঁফ ছাড়লো ধারা এবং মাহি। রেজাল্টের আনন্দটা বেশি স্থায়ী হলো না। তার আগেই স্যার ম্যাডামদের ক্লাস টেস্টে খ’ড়া ঝুললো। ব্রেকের মাঝে একটা ঠান্ডা পানির বোতলে চুমুক দিতেই যাবে অমনি একটা মেয়ে বলে উঠলো,
“অনল স্যারকে নিয়ে মিটিং হচ্ছে। তাকে সাসপেন্ড করা হবে”……….

প্রণয় প্রহেলিকা পর্ব ৩৪