প্রথম প্রেম সিজন ২ গল্পের লিংক || নতুন ভালোবাসার গল্প

প্রথম প্রেম সিজন ২ পর্ব ১
লেখিকা- খেয়া

দিনশেষে যখন সবাই ক্লান্ত হয়ে নীড়ে ফেরে তখন বুঝি গোধূলি টাকে এত সুন্দর লাগে।
সবে সূর্য ডুবেছে।চারিদিকে এখনো সূর্যের লাল আভা বিদ্যমান।
—- আফরা!
বিকেলে ছাদে গিয়ে দাড়িয়ে ছিলাম।তখনই রাহাকে দেখে বেশ অবাক হলাম।
—- রাহা,তুই এসময়।
—- তুই এমন কেন রে?
—- কেমন!

—- নিবির ভাইয়া তো তোকে জন্মেও কোনোদিন পাত্তা দেয়নি।অথচ তার পিছনে তো আঠার মতো লেগে থাকতি। আর প্রহর ভাইয়া এতদিন ধরে তোর সাথে শুধু একটু কথা বলতে চাচ্ছে । আর তুই তার সাথে কথা তো বলিসনি উল্টো ফোনটাকেও বন্ধ করে রেখেছিস।
—- আমি এখন এসব নিয়ে ভাবতে চায়না,রাহা।
—- আসলে কী জানিস তো, তুই প্রচন্ড বড় একটা ভুল ধারনা নিয়ে বসে আছিস।হতে পারে নিবির ভাইয়া তোর প্রথম প্রেম কিন্তু সে কখনোই তোকে বোঝেনি।তুই শুধু তাকে ভালোবেসে কষ্ট পেয়েছিস।তুই তো একবার প্রহর ভাইয়ার ব্যাপারে ভাবতে পারিস।
—- আমি প্রচন্ড ক্লান্ত, রাহা।এই ভালোবাসা,প্রেম এগুলো যে আমার জন্য না।
—- তোর সাথে তো কথা বলাই বৃথা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রাত প্রায় দশটা বেজে গেছে।ভাইয়া এখনো আসেনি।ভাইয়া কখনোই এত রাত করে বাড়ি ফেরেনা।কিন্তু আজ এত লেট কেন করছে?
হাসপাতালে কোনো ইমার্জেন্সি থাকলে আমাকে ফোন করে বলে দেয়।কিন্তু আজ ভাইয়ার ফোনটাও বন্ধ দেখাচ্ছে।
প্রায় এগারোটার দিকে ভাইয়া আসল।
—- তুই কিরে ভাইয়া,এত রাত করে ফিরবি একবার ফোন করে বলতে তো পারতি।
—- সরি বনু, ফোনটা না বন্ধ হয়ে গেছে।আমি একটা ঝামেলায় পড়ে গেছিলাম।আমি ফোনটা চার্জিং এ দিয়ে আসি।
—- তুই ফ্রেশ হয়ে আয়।আমি খাবার গরম করে আনছি।

রান্নাবান্না কখনোই পারতাম না।একমাত্র মেয়ে বলে কখনোই কিছু করতে হয়নি।তবে এখন টুকটাক পারি।ভাইয়া একটা মেয়েকে রেখেছে।সে রান্নাসহ ঘরের সব কাজ করে দিয়ে যায়।
আমি আর ভাইয়া বসে খাবার খাচ্ছিলাম।তখনই ভাইয়ার ফোনটা বেজে উঠল।আমি চার্জিং থেকে ফোনটা নিয়ে এলাম।
ওপাশ থেকে কী বললো তা শুনিনি তবে ভাইয়ার কথাটা এমন ছিল
—- লিসেন,আমারও একটা পরিবার আছে, পারসোনাল লাইফ আছে।আপনার মেয়ের জন্য তো আমি সেগুলো স্পয়েল করতে পারবনা।
বেশ রেগে কথাগুলো বলে ভাইয়া ফোনটা কেটে দিল।

—- কী হয়েছে ভাইয়া।
—- আরে আমাদের হাসপাতালে একটা মেয়ে এসেছে নতুন।এবছর ই চাকরিতে ঢুকেছে।মেয়েটা তো একদম পিছনে পড়ে আছে। আজ তো আমাকে সবার সামনে প্রোপোজ করছিল। রিজেক্ট করেছি বলে সুইসাইডই করে নিয়েছে।
—- মেয়েটা ভালো হলে তো বিয়ে করে নিতে পারিস।
—- আর যাই হোক ঐ সাইকো মেয়েটাকে তো আমি বিয়ে করব না।

রাতে শুয়ে বিছানায় এপাশ ওপাশ করছি।ঘুম আসছেনা।
বারবার বিকেলে রাহার বলা কথাগুলো মাথায় ঘুরছে।ভালোবাসার মানুষের থেকে অবহেলা পাওয়ার কষ্টটা আমি জানি, সেই একই কষ্ট কী আমি প্রহরকেও দিচ্ছি।
অবশেষে সবকিছু সাইডে রেখে প্রহরকে একটা মেসেজ করলাম।উনি দেখলেন ঠিকই কিন্তু কিছু বললেন না।
এবার আমি উনাকে কল করলাম।উনি খুব দ্রুত ফোনটা ধরলেন,যেন এটারই অপেক্ষায় ছিলেন।
আমি সরাসরি উনাকে বললাম

—- আমার সাথে একবার দেখা করবেন, প্লিজ।আমি লোকেশন বলে দিবো।
উনাকে কিছু বলতে না দিয়েই ফোনটা কেটে দিলাম।আমি জানি উনি আসবেন।
আজ ভার্সিটি নেই।তাই ঠিক করেছি বিকেলে প্রহরের সাথে দেখা করতে যাবো।
কিছুক্ষন আগে ভাইয়া ফোন করেছিল, একটা ফাইল রেখে গেছে সেটা যেন হাসপাতালে দিয়ে আসি।
আমিও ফাইলটা নিয়ে গেলাম।উদ্দেশ্য ঐ মেয়েটাকে দেখা।
ভাইয়ার কেবিনের সামনে দাড়িয়ে আছি।ভেতরে কিছু লোক আছে।যাওয়াটা ঠিক হবে কিনা বুঝতেছি না।ভাইয়াকে ফোন দিচ্ছি ধরছেও না।
অবশেষে ঢুকেই গেলাম।কতক্ষন এভাবে থাকব।

—- ভাইয়া আসব।
কথাটা বলা মাত্রই ওখানে উপস্থিত সবাই আমার দিকে এমনভাবে তাকালো যেন আমি একটা এলিয়েন।
—- হুম,আয়।
ভাইয়া সবাইকে বাইরে চলে যেতে বলতেই সবাই চলে গেলো।
—- ওরা আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে ছিলো কেন ভাইয়া।
—- তুই তো জানিস আমি কাজের ব্যাপারে কতটা সিরিয়াস।তাই এরা আমাকে ভয় পায়।তুই এতটা ফ্রি হয়ে কথা বলায় একটু অবাক হয়েছে।
—- একটা কথা বলব, ভাইয়া।
—- বল।
—- আমাকে কালকের ঐ আপুটার সাথে দেখা করাবি।
—- তুই পাগল নাকি,আমি এখন ওখানে গেলে ও আবার পাগলামি শুরু করবে।
—- তোর যাওয়া লাগবেনা।আমি একাই যাবো।আর এটাও বলব না যে আমি তোর বোন।
—- কিন্তু,,,
—- কোনো কিন্তু না।
—- আচ্ছা, ৩০২ নাম্বার কেবিনে আছে।
আমি ভাইয়ার রুম থেকে বেড়িয়ে ৩০২ নং রুমে ঢুকলাম।ওখানে ঐ আপুটা আর একজন ছিল।আপুটা বেশ সুন্দর, ভাইয়ার জন্য একদম পারফেক্ট।
ওরা আমায় দেখে বেশ অবাক হলো।আমায় বলল

—- তুমি কাউকে খুঁজছো?
—- না,আমি আসলে একজনের সাথে এখানে এসেছিলাম।সে তার কাজে ব্যস্ত তাই আমি ভাবলাম কারো সাথে গল্প করে আসি।তাই এখানে এলাম।আপনাদের সমস্যা হলে চলে যাচ্ছি।
—- না না।চলে যাবে কেন?
বসো আমরা গল্প করি।
বেশ খানিকক্ষন ওদের সাথে বসে গল্প
করলাম। আপুটার নাম অনন্যা।আমার তো ওকে বেশ ভালোলেগেছে।

কেবিন থেকে বেড়িয়ে ভাইয়ার রুমের সামনে আসতেই একজনের সাথে ধাক্কা লেগে নিচে পড়ে গেলাম।পাশে থাকা টেবিলে লেগে কপালে বেশ খানিকটা কেটে গেলো।মৃদ্যু আর্তনাদ করে উঠলাম।তখনই ভাইয়া রেড়িয়ে এলো।
ছোটোবেলা থেকে শারীরিক আঘাতটা পায়নি বললেই চলে।আমার কপালে রক্ত দেখে ভাইয়া পুরো হাসপাতাল মাথায় তুলল।
” চাকরির পাশাপাশি আব্বু একটা বিজনেসও করত।কিন্তু ভাইয়ার পক্ষে হাসপাতাল, বিজনেস একসাথে মেনটেইন করা সম্ভব নয় বলে, ঐ বিজনেসের সব টাকা এই হাসপাতালে ইনভেস্ট করেছে।তাই এখানে ভাইয়ার যথষ্ট পাওয়ার আছে।”
ভাইয়া রাগী হলেও ভাইয়াকে কেউ এরআগে এতটা রেগে যেতে দেখেনি।

ভাইয়া আমায় নিয়ে বাসায় চলে এলো।বাসা থেকে বেড়োতে একদম নিষেধ করছে।
তাই আর প্রহরের সাথেও দেখা করতে যাওয়া হবেনা।তাই উনাকে ফোন করলাম।
—- আমি আজ আপনার সাথে দেখা করতে পারবনা।
—- কেন শুভ্রপরী,কী হয়েছে?
—- আসলে, আমি পড়ে গিয়ে একটু আঘাত পেয়ে,,,,,

আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই উনি ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।উনার এই ছোট ছোট কেয়ারগুলো আমার বেশ ভালোলাগে।
রাতে বসে বসে নিউজফিড স্ক্রল করছিলাম।তখনই নিবির ভাইয়া আর কথা আপুর একটা ছবি সামনে এলো।
মনটা আবার খারাপ হয়ে গেলো।কিন্তু এই মন খারাপকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবেনা।নিজেকে শক্ত হতে হবে।
অনেকদিন প্রহর কোনো মেসেজ দেয়না।অবশ্য আমি না করেছিলাম।সে আবার আমার সবকথা খুব মানে।
মাঝরাতে ঘুমটা ভেঙে গেল।আজ আব্বু- আম্মুর কথা খুব মনে পড়ছে।রাতে আব্বু দুই-তিনবার দেখতে আসতো আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা।
কেনো আব্বু- আম্মু আমাকে ছেড়ে চলে গেলো।

পরদিন সকালে ভার্সিটি যাচ্ছিলাম।সামনেই ফাইনাল পরীক্ষা।কীভাবে যে একবছর কেটে গেলো বুঝতেই পারিনি।
বাড়ি থেকে বেড়োতেই যাচ্ছিলাম তখনই নিবির ভাইয়া এসে বললেন-
—- কোথায় যাচ্ছিস, আফরা।
—- ভার্সিটি।
—- ভার্সিটি যেতে হবেনা।আমার সাথে হাসপাতালে চল।
—-হাসপাতালে কেন, ভাইয়া।
—- আম্মুর শরীরটা খারাপ।তোকে নিয়ে যেতে বলেছে।
—-মামির আবার কী হয়েছে।
হাসপাতালে মামির কাছে বসে আছি।মামির একটা ছোটখাটো হার্টএটাক হয়েছে।তবে এখন সুস্থ।মামি আমার হাতটা ধরে বলল
—- আমার একটা কথা রাখবি, আফরা।নিবিরকে বিয়ে করবি?
মামির কথার উত্তরে কী বলা উচিত বুঝতে পারলাম না।তখনই,,,,

প্রথম প্রেম সিজন ২ পর্ব ২