প্রথম প্রেম সিজন ২ পর্ব ৪

প্রথম প্রেম সিজন ২ পর্ব ৪
লেখিকা- খেয়া

প্রথম ভালোবাসাকে ভুলে যাওয়া খুব কঠিন একটা কাজ জানি।তবুও আমি তোকে বলব তুই নিবিরকে ভুলে যা।ও তোর জন্য ঠিক না।
—- কিন্তু ভাইয়া প্রহর কী আমার জন্য ঠিক।
—- বনু, সেটা নাহয় তুই নিজেই দেখে নে।ওর সাথে টাইম স্পেন্ড কর, ওকে বোঝার চেষ্টা কর।
—- হুম।
—- আমি যাচ্ছি।
—- আচ্ছা।

আজ ভাইয়ার কথা শুনে ঠিক করলাম আমি প্রহরকে একটা চান্স দিব।হয়ত সে ভালোবাসার প্রতি আমার ধারনাটাই পাল্টে দিবে।
রেডি হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি।প্রহর নাকি আজ আমায় নিয়ে কোথাও যাবে।প্রায় দশ মিনিট পর উনি আসলেন।
—- উঠে এসো।
—- আমাকে নিয়ে কোথায় যাবেন?
—- তোমাকে মেরে ড্রেনে ফেলে দিব আজ।
—- এগুলা কেমন কথা!
—- তো এমন বিহেব করছ কেন।আমি কী তোমাকে কিডনাপ করে নিয়ে যাচ্ছি।
—- আমি তো নরমালি,,,
—- পুরো রাস্তা যদি আর একটাও কথা বলেছো তো,,,,
—- আচ্ছা একদম চুপ করে থাকব।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ঘন্টাখানিক পরে উনি আমায় একটা নদীর পাড়ে নিয়ে এলেন।জায়গাটা বেশ সুন্দর,নিরিবিলি।অনেকটা গ্রাম টাইপ।
এতদিন পরে এমন খোলা হাওয়া পেয়ে মনটা একদম ফুরফুরে হয়ে গেলো।
—- ধন্যবাদ, আমার মনটা ভালো করে দেওয়ার জন্য। এই ভালোটা কতক্ষন স্থায়ী হবে জানিনা তবে ধন্যবাদ।
—- সারাজীবন এভাবে তোমার মনটা ভালো রাখার অধিকার দিবে আমায়,আফরা।
তার কথার পরিপেক্ষিতে আমি চুপ রইলাম।
—- ভয় পেয়োনা,আফরা।তুমি আমার ক্ষণিকের মোহ নও। তুমি আমার ভালোবাসা।তোমাকে আমি ভালোবাসি, আফরা।প্রচন্ড ভালোবাসি।

—- এত কম সময়ে কী কাউকে এতটা ভালোবাসা যায়?
—- ভালোবাসা মন থেকে আসে।এখানে সময়টা ফ্যাক্ট না।
তুমি কি এখনো আমায় বিশ্বাস করতে পারছোনা, আফরা। তোমার কী আমার প্রতি এ কদিনে একটুও ফিলিংস জন্মায়নি?
—- হ্যা জন্মেছে তবে সেটা ভালোবাসা কিনা তা আমি জানি না।আপনার সাথে থাকতে আমার ভালোলাগে।আপনাকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে।আর আপনি যদি আমাকে এতটাই ভালোবাসেন তাহলে কাল ঐ মেয়েটা,,,,

—- মেয়েটা রাহি ছিল।আমার কাজিন।তোমার জন্য চুড়ি কিনতে গিয়েছিলাম কিন্তু একটাও চয়েস হচ্ছিল না।তাই ওকে নিয়ে গিয়েছিলাম।আর ও অনেক ছোট।
—- সরি।
—- আমি কিন্তু আবার কাজিনকে ভালোবেসে বাঁশ খায়না।
—- আপনি সবকিছুতে নিবির ভাইয়াকে কেন টানেন বলুনতো।
—- আচ্ছা সরি।আমি কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তরটা পায়নি।
—- আমার একটু সময় লাগবে।
—- তুমি সময় নাও কিন্তু এতটাও সময় নিও না যেন পরে পস্তাতে হয়।
—- হুম।

একটু আগে মামি ফোন করেছিল।নিবির ভাইয়া আর প্রহরের মাঝে যেন ঝামেলা হয়েছে। তারা নাকি মারপিট ও করেছে।
আমি ঠিকই বুঝলাম যে ঝামেলাটা আমার কারনেই হয়েছে।
এতকিছু না ভেবে আমি নিবির ভাইয়াকে ফোন করলাম।
—- বল,আফরা।
—- আপনার সমস্যাটা কী, নিবির ভাই।
—- মানে?
—-প্রহরের সাথে ঝামেলা বাধিয়েছেন কেন?
—- ওর জন্য কষ্ট লাগছে বুঝি।ও কোন সাহসে আমার থেকে তোকে কেড়ে নিতে চাই।
—-আমি কখনো আপনার ছিলাম না নিবির ভাইয়া।তাই আপনার থেকে আমাকে কেড়ে নেওয়ার প্রশ্ন আসে না।
—- কিন্তু আমি তো তোকে আমার বানাতে চাই।

—-কিন্তু আমি আপনার হতে চায়না।একটা সময় তো আপনার হতে চেয়েছিলাম কিন্তু আপনি কী করেছিলেন।
—- প্রতিশোধ নিচ্ছিস।
—- হয়ত।নিবির ভাই প্লিজ নতুন করে আর কোনো ঝামেলা করেন না।আপনি নিজেও ভালো থাকেন আর আমাকেও ভালো থাকতে দেন।
ফোনটা রেখেই দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে বিছানায় বসে পড়লাম।আর নিতে পারছিনা এসব।আজ যদি বাবা- মা থাকত তাহলে হয়ত এত কষ্ট পেতে হতো না।
একটা ভুল মানুষকে ভালোবাসলে বুঝি এত কষ্ট পেতে হয়।
পরেদিন ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে মামার বাসায় গেলাম।মামি ফোন দিয়েছিল, নিবির ভাইয়া নাকি কী পাগলামি শুরু করেছে।

মামির বাসায় গিয়ে সোজা নিবির ভাইয়ার রুমে গেলাম।চারিদিকে সবকিছু উল্টোপাল্টা হয়ে পড়ে আছে।মেঝেতে কাচের টুকরো ছিটানো।নিবির ভাইয়ার হাত থেকেও রক্ত ঝরছে।
—- এসব কী নিবির ভাইয়া।
—- আফরা, প্লিজ আমার হয়ে যা।তোকে ছাড়া আমি থাকতে পারবনা।
—- হঠাৎ এতো ভালোবাসা কই থেকে এলো, নিবির ভাই।আপনি এসব শুধু মাত্র জেদের বসে করছেন।কথা আপুকে নিজের ক্ষমতা দেখানোর জন্য আমার সাথে এমন কেন করছেন?
—- আফরা!

—- বাস্তবে ফিরে আসুন নিবির ভাই।বাস্তবতা বড় কঠিন।বুঝতে শিখুন।শুধু অন্যের কাছে নিজেকে জাহির করার জন্য অন্যের লাইফ নিয়ে খেলা বন্ধ করুন প্লিজ।
—- তুই ও আমাকে ছেড়ে চলে যাবি, আফরা।
—-এখানে চলে যাওয়ার কোনো কথা আসছেনা ভাইয়া।আপনার জীবনে যার কেনো অস্তিত্ব নেই তার চলে যাওয়া নিয়েও আপনার কোনো প্রবলেম হবে না।
দ্বিতীয়বার আর ভাইয়ার দিকে তাকানোর সাহস হলোনা।ঐ চোখে যে আমাকে মেরে ফেলার বিষ আছে।
আমি সরাসরি মামির কাছে গিয়ে জানতে চাইলাম

—- নিবির ভাইয়া এসব কেন করছে, মামি।
মামি আমার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
—- প্রহরের মা ফোন করেছিল।বলল ওদের নাকি তোকে খুব পছন্দ। ওরা তোকে প্রহরের বউ বানাতে চায়।প্রহর ও নাকি তোকে পছন্দ করে।আমাদের কোনো সমস্যা ছিলনা এটাতে।
কিন্তু নিবিরকে জানানোর পর থেকেই ও এসব উল্টোপাল্টা কাজ করছে।

প্রথম প্রেম সিজন ২ পর্ব ৩

—- তুমি একটু নিবির ভাইয়াকে বোঝাও।
—- আমার ছেলেটার আজ ঐ অবস্থা শুধু কথার জন্য।ঐ মেয়েটা কখনো ভালো থাকবেনা দেখিস।
—- মামি,এখন তুমিও যদি তার খারাপ চাও তবে তোমার আর তার মধ্য পার্থক্য রইল কই।
—- তুই হয়ত ঠিকই বলেছিস।
—- আমি আসছি, মামি।
—- সাবধানে যাস।
—- হুম।

নিবির ভাইয়াদের বাসা থেকে বেড়িয়ে রাস্তায় এসেই দেখলাম কথা আপুকে।সাথে একটা ছেলেও আছে।হয়ত ওর হাসবেন্ট হবে। দুজন কী সুন্দর হাসছে।
মানুষকে ঠকানো মানুষগুলোই বুঝি দিনশেষে ভালো থাকে।নিবির ভাইয়া তো সত্যি কথা আপুকে খুব ভালোবাসতো।তাহলে কথা আপু এমনটা কেন করল?
আর নিবির ভাইয়া এমন পাগলামি কেন করছে।আমার জন্য নিবির ভাইয়া আর প্রহরের সম্পকর্টা খারাপ হয়ে গেল।এরপর এসব কতদিন চলবে।

এসব ভাবতে ভাবতে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম তখনই কেউ” আফরা ” বলে চিৎকার করে উঠল।
তার চিৎকারে ধ্যান ভাঙল আমার। সামনে তাকিয়ে দেখি একটা ট্রাক খুব দ্রুতগতিতে আমার দিকেই আসছে।
আমার চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে গেলো।এই বুঝি আফরা নামক মানুষটার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেলো।এবার বুঝি সব সমস্যা মিটে যাবে।
আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই ট্রাকটা আমার,,,,,

প্রথম প্রেম সিজন ২ পর্ব ৫