প্রিয়দর্শিনী পর্ব ৩৯

প্রিয়দর্শিনী পর্ব ৩৯
প্রজ্ঞা জামান তৃণ

বৃষ্টির মধ‍্যেই আবিদ দর্শিনী সিটি হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। বোনের জন‍্য চিন্তায় দর্শিনীর কান্নাকাটি থামানোর অবকাশ নেই। আবিদ সবটা জানতে চাইলে দর্শিনী তাকে সবটা বলেছে। প্রজ্জ্বলিনী সিঁড়ি থেকে নিচে পড়ে গেছিল! মাথায় আঘাত পেয়েছে অনেক। তবে বেবি কেমন আছে সেই সম্পর্কে জানেনা।

উজান ততক্ষণাৎ তাকে হসপিটালে নিয়ে গেছে। চিকিৎসারত অবস্থায় আশরাফ সাহেবকে জানিয়েছে। এতোসব কিছু ঘটে যাবে কেউ কল্পণা করেনি। শুনেছিল তাদের প্ল‍্যানকৃত প্রথম বেবি ছিল। সবটা শুনে আবিদের অনেক খারাপ লাগছে। প্রজ্জ্বলিনীর বেবির কিছু হলে উজান হয়তো পাগল হয়ে যাবে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

অন‍্যদিকে দর্শিনীকে সামলানো সহজ কাজ হবে না আবিদের জন‍্য। মেয়েটা বোনের জন‍্য একদম পাগল। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, দূর্ঘটনার আগে দুইবোনের মধ‍্যে মনোমালিন‍্য চলছিল। উজান এসব ব‍্যাপারে জানতো না। দর্শিনী এজন্য আরো বেশি ভেঙ্গে পড়বে। আবিদ বারবার চাইছে সবকিছু যেন ঠিক হয়ে যায়। কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা যেন না ঘটে।

দর্শিনী আবিদকে অনেক জোরে গাড়ি চালাতে বলে। যতবারই দূর্ঘটনার কথা মনে পড়ছে দর্শিনী কেঁদেই চলেছে। হসপিটালের সামনে গাড়ি থামে। দর্শিনী গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত ভেতরে চলে যায়। আবিদ তার পিছু পিছু ভেতরে আসে। আশরাফ সাহেব এবং প্রিয়মা বেগম দুজনে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তারা খবর পাওয়া মাত্রই দর্শিনীদের আগে চলে এসেছিল।

দর্শিনী আবিদকে ক‍েবিনে নিয়ে যাওয়ার জন‍্য দুজনে নিচে করিডরে অপেক্ষা করছিলেন। দর্শিনীর মাকে দেখে মনে হলো তিনি প্রজ্জ্বলিনীর জন‍‍্য অনেক কেঁদেছেন। দর্শিনী মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। তাদের দুজনের চোখেই পানি। আবিদ শ্বশুর-শাশুড়িকে সালাম দেয়। আশরাফ সাহেব তাদেরকে নিয়ে প্রজ্জ্বলিনীর কেবিনে উপস্থিত হয়। উজান ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলছে।

তাকে অনেক বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে। ডাক্তার উজানকে টেনশন করতে নিষেধ করে চলে যায়। দুইজন নার্স প্রজ্জ্বলিনীর সঙ্গে সর্বদা ছিল। তারা প্রজ্জ্বলিনীর সেবা করছে। প্রজ্জ্বলিনীর মাথায় ব‍্যান্ডিজ। স‍্যালাইন দেওয়া হয়েছে। দর্শিনী বোনের পাশে বসে কাঁদতে থাকে। উজান শ্বশুর-শাশুড়িকে দেখে বলে,

‘আমার কাছে সবকিছু দুঃস্বপ্ন মনে হচ্ছে। কী থেকে কী হয়ে গেলো? আমি ড্রয়িং রুমে ছিলাম। অফিসের প্রজেক্টে কাজ করছিলাম। রুমে কাজ করলে নিদ্রিতার ঘুমাতে সমস্যা হতো। এই সময়ে ঘুমটাই বেশি জুরুরি। তাই নিচে কাজ করা শ্রেয় হবে ভেবেছিলাম। নিদ্রিতার যা কিছু প্রয়োজন ছিল মেইডরা উপরে পাঠিয়ে দিতো। হঠাৎ করে নিচে নামবে আমি বুঝতে পারিনি। সিঁড়ির কাছে কিছু পড়ে যাওয়ার আওয়াজ পেয়ে চমকে উঠি।

গিয়ে দেখি নিদ্রিতা দেয়ালে মাথা ঠেঁকিয়ে আছে। অচেতন হয়ে গেছিলো ততক্ষণাৎ না ধরলে হয়তো ফ্লোরে পড়ে যেতো। দেয়ালে রক্ত দেখে ভয় পেয়ে গেছিলাম। শাড়ির কুচি এলোমেলো ছিল। যথাসম্ভব শেষের সিঁড়ি থেকে শাড়িতে বেঁধে পড়ে যাচ্ছিলো বলে দ্রুত দেয়াল ধরে বেবিকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে। তখনই দেয়ালে মাথায় আঘাত লাগে। নিদ্রিতা বেবির ক্ষতি হয়েছে ভেবে ভয়ে সেন্সলেস হয়ে যায়।

এদিকে সে পেটে আঘাত পেয়েছে ভেবে আমার হিতাহিত জ্ঞান ছিলনা কিছুক্ষণ। তারপর নিজেকে ধাতস্থ করে পরক্ষণেই তাকে হসপিটালে নিয়ে আসি। ডাক্তার চেকআপ করে বলে বেবি সম্পূর্ণ ঠিক আছে। তবে নিদ্রিতার মাথায় আঘাত লেগে রক্তক্ষরণ হওয়ার জন‍্য চিকিৎসার পাশাপাশি একব‍্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে। আপাতত ডাক্তার ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পারিয়ে রেখেছে। নাহলে আমার বেবি, আমার বেবি বলে চিৎকার করছিল। তাকে বুঝিয়ে পারছিলাম না বেবি ঠিক আছে। আঘাত যতটুকু পেয়েছে তার মাথার পিছনে আর পিঠে।’

উজান একদমে সবটা বলে থামল। কোনো বিপদজনক অবস্থা সৃষ্টি হয়নি বলে সবাই একসঙ্গে আলহামদুলিল্লাহ বলল। তবে এখনো ভয় দূর হয়নি কারো। উজান দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিলো। হাত-পা কাঁপছে তার। আবিদ উজানের কাঁধে হাত রেখে বলে,

‘নামাজে দাঁড়িয়ে আলহামদুলিল্লাহ পড়ুন। ভাগ‍্য ভালো ছিল বড় কোনো বিপদ হয়নি। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ! আমিতো দর্শিনীকে থামাতে পারছিলাম না। বোনের জন‍্য প্রচুর কেঁদেছে।’
‘ঠিক বলেছেন! আমি এখুনি আসছি।’

উজানের চোখের কোণায় অশ্রু টলমল করছিল। সে নিজেকে সামলে সবাইকে বলে বাহিরে গেল। হসপিটালের সঙ্গে একটা মসজিদ রয়েছে।সেখানে নফল নামাজ পড়বে। প্রজ্জ্বলিনীর এখন জ্ঞান নেই। দর্শিনী বোনের পাশে বসে অপেক্ষা করতে লাগল। আবিদ, আশরাফ সাহেব কেবিনে রাখা লম্বা সোফায় এসে বসে। দুপুর হয়ে গেছে অথচ দিনটা মেঘলা থাকার কারণে মনে হচ্ছে না।

যোহরের নামাজের জন‍্য আজান শোনা যাচ্ছে। প্রিয়মা বেগম নার্সদের সহায়তায় হসপিটালে একটা রুমে গিয়ে নামাজ পড়ে নেন। যোহরের নামাজের সঙ্গে তিনি নফল নামাজ পড়ে হাতে তসবি নিয়ে দোয়া পড়ে মেয়েকে ফুঁ দিয়ে দেন। কিছুক্ষণ পর আশরাফ সাহেব আর আবিদ নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়। প্রিয়মা বেগম রুমে ফিরে আসলে দর্শিনী ওযু করে নামাজ পড়তে চলে যায়।

প্রজ্জ্বলিনীর জ্ঞান ফিরে এসেছে ততক্ষণে। তখন প্রিয়দর্শিনী ছাড়া কেবিনে কেউ ছিলোনা। প্রজ্জ্বলিনী বোনকে দেখে ইমোশনাল হয়ে যায়। বোনের চোখের কোণে পানি দেখে দর্শিনী আবারো কেঁদে ফেলে। ব‍্যাতিব‍্যস্ত হয়ে বোনকে বলে,

‘আমার ভুল হয়ে গেছে আপু। তোমার কথা না শুনে মুখের ওপর ফোন কেঁটে দিয়েছিলাম আমি। আমাকে মাফ করে দেও, আপু। তোমার শরীরের অবস্থা জেনেও অভিযোগ পুষে রেখেছিলাম। তুমি মাফ না করলে আমি নিজেকে নিজেই মাফ করতে পারবো না।’

প্রজ্জ্বলিনীর অশ্রুসিক্ত চোখ। সে ডান হাতটা সর্বপ্রথম পেটে রাখে। এইতো বেবির অস্তিত্ব বোঝা যাচ্ছে। পেটের উপর হাত রাখতেই পেটের ভেতরে মাংসপিণ্ড দুইবার নড়েচড়ে উঠল। প্রজ্জ্বলিনী বুঝল তার বেবি সুস্থ আছে। এইতো রেসপন্স করছে। প্রজ্জ্বলিনী শেষের সিঁড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার সময় কৌশল করে বাঁচতে মাথার পেছনে দেয়ালে বারি খায়। সেজন্যই মাথায় আর ঘাড়ে প্রচন্ড আঘাত লেগেছে। যদি এমনটা না করতো আজকে হয়তো দূর্ঘটনায় বেবিটাকে হারাতে হতো। আল্লাহ তার ভুলের শাস্তি বেবিকে দেয়নি। সে মনে মনে আলহামদুলিল্লাহ বলল। হঠাৎ দর্শিনীর দিকে সরল নিষ্পাপ চাহনী দিয়ে বলে,

‘তোকে কিছু বলার আছে প্রিয়।’
‘কিছু বলবে না তুমি। মাথায় ব‍্যাথা করছে? এভাবে কথা বললে সমস্যা হবে। পরে শোনা যাবে তোমার কথা। আগে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাও, তারপর। আমি শুনবো তোমার কথা।’

‘নাহ আমি ঠিক আছি। আমি মানছি আমি আসফি শাহরিয়ারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিয়েটা ভেঙ্গে দিতে চাইছিলাম। এটা আমার অন‍্যায়। কিন্তু বিশ্বাস কর! আসফি যে তোকে জোর করে বিয়ে করতে চাইছিল এটাতে আমি সমর্থন করিনি। আমি এমনটা হতে দিতাম না। আমি শুরু থেকে চাইনি আবিদ বা আসফি কারো সঙ্গে তোর বিয়ে হোক। আমি আবিদ শাহরিয়ারকে ভুল ভাবতাম এটা আমার ভুল ছিল। আবিদ শাহরিয়ারের কোনো দোষ ছিলনা। আমি আবিদ শাহরিয়ারকে ভুল বুঝেছিলাম। নিঃসন্দেহে আবিদ শাহরিয়ার অনেক ভালো মানুষ। তুই অনেক ভাগ‍্যবান বোন! পারিপাশ্বিক ঘটনা, অহেতুক কারণে উনাকে অবহেলা করিস না, প্রিয়। উনার মতো মানুষ হয়না।’

প্রজ্জ্বলিনী থেমে সংক্ষেপে দর্শিনীকে সবটা বলে কীভাবে সে আবিদকে দেখে মুগ্ধ হয়েছিল। কিন্তু তার প্রতি আবিদের কোনরকম আগ্রহ ছিলনা। সে আবিদের জন‍্য চিঠি লিখতো। চিরকুট দিতো। কিন্তু আবিদ তার আবেগকে প্রশ্রয় দেয়নি। সেতো তার স্বপ্নকন‍্যাকে ভালোবাসত। প্রজ্জ্বলিনীর অনেক চিঠি পেয়ে একদিন আবিদ তাকে দেখা করার জন‍্য বলে। তখন সে ভেবেছিল হয়তো আবিদ তার প্রতি দূর্বল হয়ে গেছে এজন্য দেখা করতে চাইছে।

কিন্তু সত‍্যিকার অর্থে আবিদ তাকে বোঝানোর জন‍্য দেখা করতে চাইছিল। সেইসময় ভাগ‍্যক্রমে উজানের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। তখন জানতে পারে আবিদ তাকে ভালোবাসেনা। তাকে পছন্দও করেনা। প্রজ্জ্বলিনী বিয়েটা আঁটকাতে পারেনি। আবিদকে ভুল বুঝে প্রজ্জ্বলিনী উজানের সঙ্গে সুখে থেকে দেখিয়ে দিতে চেয়েছিল। ভেবেছিল একদিন আবিদ তার জন‍্য প্রস্তাবে। কিন্তু এসব কিছুই হয়নি।

পরবর্তীতে প্রজ্জ্বলিনী বুঝতে পারে কোনটা তার আসল ভালোবাসা। ঐসময় আবিদের প্রতি সে মুগ্ধ ছিল। তার আবেগ, কৌতূহল কাজ করেছিল আবিদের আলাদা ব‍্যাক্তিত্ব দেখে। প্রজ্জ্বলিনী আবিদকে নয় উজানকে ভালোবাসে। প্রজ্জ্বলিনী বিয়ের পরেই নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছে। তবে আবিদের প্রতি এখন তার শ্রদ্ধাবোধ কাজ করে। প্রজ্জ্বলিনী বোনের হাতে হাত রেখে বলে,

‘আমার ভুল ছিল। আমাকে মাফ করে দে, প্রিয়। তোকে সবটা আমি আগেই জানাতে চেয়েছি। কিন্তু তুই আমাকে ভুল বুঝে কষ্ট পাবি বলে আবিদ শাহরিয়ার বলতে নিষেধ করেছিল। এটা অপ্রত্যাশিত ঘটনা ছিল। আমার কিশোরী বয়সের ছোট্ট একটা ভুল। যার সঙ্গে আবিদ শাহরিয়ারের কোন সম্পর্ক কখনো ছিলনা। আবিদ শাহরিয়ার তোকে অনেক ভালোবাসে। তার স্বপ্নকন‍্যা আর কেউ নয় প্রিয় তুই নিজে। ‘

দর্শিনী শুধু সবটা শুনে গেলো। বোনের উপর, আবিদের উপর তার কোন রাগ হচ্ছে না। সবটা তো পরিস্থিতি ছিল। প্রজ্জ্বলিনী কিশোরী বয়সে আবিদকে পছন্দ করেছিল। আবিদ প্রজ্জ্বলিনীর আবেগকে প্রশ্রয় দেয়নি। একটু ভল বুঝাবুঝি ছিল দুজনের মধ‍্যে। পরবর্তীতে তারা দুজন ভালোবাসার মানুষকে খুঁজে পেয়েছে।

এসব দর্শিনীর কাছে স্বাভাবিক মনে হলো। তবে একটা বিষয় অস্বাভাবিক ছিল। আবিদের উপর ভুল বুঝে বিয়েটা আঁটকাতে চাওয়ার বিষয়টি। প্রজ্জ্বলিনীর আসফিকে সঙ্গ দেওয়া নিতান্তই ঝোঁকের বসে। প্রেগন‍্যান্ট অবস্থায় মানুষের মুড চেন্জ হয়। প্রজ্জ্বলিনী কনফিউজড ছিল বিধাঁয় আসফির প্ল‍্যানে সামিল হয়ে বিয়েটা আঁটকাতে চেয়েছিল। তবে বোনের খারাপ চেয়ে নয়। প্রজ্জ্বলিনীর লক্ষ‍্য ছিল অন‍্য। তবে বোন এবং দেবর যেহেতু নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছে। ক্ষমা চেয়েছে! তাহলে দর্শিনী কে? তাদেরকে মাফ না করার? তাছাড়া সেযে আবিদের স্বপ্নকন‍্যা এটা দর্শিনী জানে। আবিদ বলেছিল তাকে। দর্শিনী বোনের হাতে হাত রেখে আশ্বস্ত করে বলে,

‘তোমাদের সামান্য দোষ ছিল। তবে এখানে পরিস্থিতি দায়ী ছিল। যদিও একটু অন‍্যায় ছিল! কিন্তু মন থেকে বলছি আমি মাফ করে দিয়েছি। একদম মনে রাখিনি। দ্রুত সুস্থতা লাভ করো এটাই আশা আপু। সবটা এতো সুন্দর করে আমাকে বুঝিয়ে আমার বিশ্বাস রাখার জন‍্য ধন্যবাদ। আবারো বলছি এতো অপরাধ বোধ রেখোনা আপু। সেই সময়টাতে এটা স্বাভাবিক ছিল। খুশির খবর কী জানো? তুমি দ্রুত বুঝে গেছিলে কোনটা তোমার আসল ভালোবাসা।’
ইতিমধ্যে আবিদ, উজান খাবার নিয়ে রুমে এসেছে। উজান দুইবোনকে একসঙ্গে কথা বলতে দেখে বলে,

‘আলহামদুলিল্লাহ! জ্ঞান ফিরেছে তাহলে? কী কথা চলছিল দুইবোনের মধ‍্যে?’
‘এটা আমাদের সিক্রেট ভাইয়া!’
‘ওহহ আচ্ছা তাই নাকি?’
‘হ‍্যাঁ।’
‘তাহলে ঠিক আছে।’

দর্শিনী বোনের ব‍্যাপারটা জানিয়ে উজানের মন খারাপ করতে চায়না। যেহেতু এটা ভুলবশত ভুল ছিলো। সে চায়না এই সিলি বিষয়টা কেউ জানুক। কিশোরী বয়সে অনেকেই ভুল মানুষকে পছন্দ করে থাকে। তবে প্রজ্জ্বলিনীর জীবনে তার আসল প্রণয় পুরুষ এসেছে। সারাজীবন তার বোন প্রণয় পুরুষের সঙ্গে সুখে-শান্তিপূর্ণ সংসার করুক এটাই চাওয়া।

প্রজ্জ্বলিনীরও দর্শিনীর জন‍্য হুবহু একই চাওয়া। তবে দুজনের চাওয়া দুজনের অগোচরে রয়ে গেলো। উজানের দিকে তাকিয়ে প্রজ্জ্বলিনী কান্না করে দেয়। পেটে হাত রেখে ইশারা করে কিছু বোঝায়। উজান বুঝতে পারে তার বেবি ঠিক আছে! প্রজ্জ্বলিনী ইশারায় সেটা বোঝাচ্ছে। উজানের মুখে সুক্ষ্ম হাসির রেখা ফুটে উঠে। উজান বেডের কাছে গিয়ে প্রজ্জ্বলিনীর কপালে চুমু খায়। দুজন লাভ বার্ডকে দেখে আবিদ আলতো করে হাসে। দর্শিনী আবিদের হাসিটা লক্ষ‍্য করে। কী সুন্দর হাসি!

কেবিনের ভেতরে সবাই দুপুরের খাওয়া কম্পিলিট করে। উজান, আবিদ রেস্টুরেন্ট থেকে সবার জন‍্য খাবার অর্ডার দিয়েছিল। ডাক্তার জানিয়েছে প্রজ্জ্বলিনীকে আরো একদিন হসপিটালে থাকতে হবে। ডিসচার্জ করার আগে ডাক্তার আরেকবার তার চেকআপ করবে। তাকে এখন অবজার্বভেশনে রাখা হয়েছে।

প্রিয়দর্শিনী পর্ব ৩৮

তাই উজান আর প্রিয়মা বেগম বাদে একটু পরে সবাই বাসায় রওনা দেবে। অবশ‍্য প্রিয়দর্শিনী বারবার থাকতে চাইছিল। কিন্তু হসপিটালে এতোজন থাকার অনুমতি নেই। তাই বাধ‍্য হয়ে তাকে চলে যেতে হবে। তবুও যেতে চাইছিলনা দর্শিনী। প্রজ্জ্বলিনীকে হসপিটাল থেকে ডিসচার্জ করে দিলে; আবিদ তাকে বোনের বাসায় নিয়ে যাবে বলেছে। এজন্যই দর্শিনী আবিদের সঙ্গে চৌধুরী ভিলায় যেতে রাজি হয়েছে।

প্রিয়দর্শিনী পর্ব ৪০