এই মন তোমারি পর্ব ৩৬

এই মন তোমারি পর্ব ৩৬
নুজাইফা নূন

-” শফিকুল দেওয়ান মনে মনে বললো,টাকা, গহনার ব্যাপারে তো‌ আমি ছাড়া আর কেউ জানে না। তাহলে কোথায় গেলো এতো গুলো টাকা? শফিকুল দেওয়ান এর ভাবনার মাঝে রুমের লাইট জ্বলে উঠলো। শফিকুল ঘাবড়ে গিয়ে বললো, কে আছে রুমে?”

-” ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট মিষ্টার শফিকুল দেওয়ান।”
-” শাফায়াতের কথা শুনে শফিকুল দেওয়ান ঘামতে শুরু করলেন। তবু ও এমন ভান করলেন যেনো তিনি কিছু করেন নি। তিনি অনেক টা অবাক হ‌ওয়ার ভঙ্গিতে বললেন, এসব তুই কি বলছিস শাফি। তুই আমার সাথে মজা করছিস তাই না?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

-” তুই নিশ্চয় আমার বেয়াই লাগো না যে তোমার সাথে আমি মজা করবো। তুমি খুব ভালো করে জানো তুমি ঠিক কি কি করেছো। আচ্ছা বাদ দাও।নিচে আম্মি ,খালামনি ,নানা ,নানু সবাই আড্ডা দিচ্ছে। কিন্তু তুমি এই বন্ধ রুমে কি করছো?কি খুঁজতে আসছো এইখানে?”

-“আমি তোকে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নয় শাফি। ভুলে যাস না আমি তোর বাবা।”
-” বাবা বলে সম্মান করি দেখে এখনো তুমি এই জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছো।তোমার জায়গায় অন্যকেউ হলে তার মুখ থেকে কিভাবে সত্যি কথা বের করতে হয় সেটা খুব ভালো করে জানা আছে আমার। তুমি একটা অপরাধ লুকোতে গিয়ে আরো অনেক গুলো অপরাধ করে ফেলেছো।আমি তোমাকে ক্ষমা করলেও আইন তোমাকে ক্ষমা করবে না বাবা।”

-” তুই কি বলছিস এসব? তুই কি নেশা টেশা করেছিস নাকি?”
-” তোমার আর বাঁচার কোনো রাস্তা নেই বাবা।তাই শুধু শুধু মিথ্যা নাটক করে কোনো লাভ নেই। অতঃপর শাফায়াত একটা ব্যাগ শফিকুল দেওয়ান এর সামনে ধরে বললো , তুমি এটাই খুঁজছিলে তাই না বাবা? যার মধ্যে সেই রাতে হারিয়ে যাওয়া টাকা, গহনা রয়েছে।যে টাকা , গহনা চুরির অপবাদ তুমি নিষ্পাপ একটা মেয়েকে দিয়েছিলে। অথচ সেই টাকা গহনা এখন আমার হাতে রয়েছে। শুধু মেয়েটা’ই নেই।”

-” তুই এই টাকার খোঁজ কিভাবে পেলি?”
-“তখনি নাজমা দেওয়ান রুমের ভেতর প্রবেশ করে বললো, শাফি নয় আমি পেয়েছি টাকার ‌ব্যাগ।তোমাকে আমি নিচু মনের মানুষ ভাবতাম তাই বলে তুমি এতোটা নিচু কাজ করতে পারো কখনো ভাবতেও পারিনি।তোমার এই গুপ্ত কুঠুরির ব্যাপারে শুধু মাত্র আমি জানতাম।

যেটা তুমি জানতে না।শাফি যখন আমাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলে তখনি আমার তোমাকে সন্দেহ হয়।কেনো করলে এমন? মেয়েটা কে কেনো চোর অপবাদ দিলে? কেনো তাকে এই বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করলে?সে তো বেশি কিছু চেয়েছিলো না। শুধু একটু ভালোবাসা চেয়েছিলো। আমাদের সবার সাথে হাসি খুশি থেকে বাকি জীবন টা পাড় করে দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু তুমি তার বেঁচে থাকার অধিকার টুকু কেড়ে নিলে।”

-” আমি তাকে এই বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করি নি।সে সেচ্ছায় এই বাড়ি ছেড়েছে।”
-” মিথ্যা কেনো বলছো বাবা?”
-” মিথ্যা কেনো বলবো আমি?”

-“শাফায়াত তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে ফোন বের করে ভিডিও টা প্লে করে শফিকুল দেওয়ান এর সামনে ধরে বললো, তাহলে এসব কি বাবা? তুমি সুরা কে মেন্টালি প্রেশার দিয়েছো এই বাড়ি ছেড়ে চলে ‌যাওয়ার জন্য।এখানেই তোমার অপরাধ শেষ নয়। তুমি নিজের স্বার্থের জন্য সূরার কাকা সেলিম কে ব্যবহার করেছো। মেয়েটা তোমার কাছে কতো আকুতি মিনতি করেছিলো তার কাকার যেনো কোনো ক্ষতি না হয়।

কিন্তু তুমি শোন নি।সূরা যখনি আমার কাছাকাছি এসেছে ঠিক তখনি সূরা কে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য তুমি সূরার কাকার এক্সিডেন্ট করিয়েছো। মাজেদা খালা তোমার আসল রূপ দেখে ফেলে।তাই তুমি তাকে তার একমাত্র ছেলেকে মে’রে ফেলার ভয় দেখিয়ে এই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেও। তুমি যে আমার বাবা ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে আমার।যদি পারতাম তোমার মতো অমানুষের মুখে থুথু ছুঁড়ে দিতাম।”

-” আমি যা করেছি তোর ভালোর জন্য করেছি শাফি। শফিকুল দেওয়ান এর কথা শুনে নাজমা দেওয়ান এসে তার গালে থা’প্প’ড় দিয়ে বললো , আর একটা কথাও বলবি না তুই। তুই আমার ছেলের ভালো চাস নি। চেয়েছিলি টাকা।লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু।এ কথা ভুলে গিয়েছিলি তুই। টাকার লোভ আজ তোকে এই পর্যায়ে ‌নিয়ে এসেছে। তোর মুখ দেখতে ও আমার ঘৃণা হচ্ছে।শাফি তুই এই অমানুষ টা কে আমার সামনে থেকে নিয়ে যা।”
-” নাজমা দেওয়ান এর কথা শুনে শাফায়াত শফিকুল দেওয়ান এর হাতে হাতকড়া পরিয়ে টানতে টানতে থানায় নিয়ে চলে গেলো।”

-” সূরা এখন পুরোপুরি সুস্থ্য। হসপিটাল থেকে তাকে ডিসচার্জ দেওয়া হয়েছে।মনিরা চৌধুরী সূরা কে রেডি করে দিয়ে সবকিছু গোছগাছ করছে এমন সময় ডক্টর শুদ্ধ শিকদার সূরার সাথে দেখা করতে আসে।সূরার পরনে পেশেন্টের পোশাকের পরিবর্তে বেগুনী রঙের একটা থ্রিপিস রয়েছে।লম্বা চুলগুলো সুন্দর করে বেনি করে দিয়েছেন মনিরা চৌধুরী।মুখে কোনো প্রসাধনী নেই।

তবু ও শুদ্ধের কাছে সূরা কে অপরুপ সুন্দরী মনে হচ্ছে। ডক্টর শুদ্ধ ভেতরে প্রবেশ করতেই সূরার সাথে চোখাচোখি হয়ে যায় তার।বুক ধুক করে উঠে শুদ্ধের। হার্টবিট দ্রুত থেকে ‌দ্রুততর গতিতে চলতে থাকে।সে কখনো ভাবে নি এই ত্রিশ বছর বয়সে এসে তার গায়ে প্রেমের হাওয়া লাগবে।

এক পিচ্চি মেয়ে তার মনের রানী হয়ে যাবে।শুদ্ধ প্রথম যেদিন সূরা কে দেখে সেদিন থেকেই সূরা কে ফিল করতে শুরু করছে।সব জায়গায় শুধু সূরা কে দেখতে থাকে। ঠিক মতো পেশেন্ট দেখতে পারে না।বড্ড পাগল পাগল লাগে তাকে।সে যখনি সুযোগ পেয়েছে সূরা কে একনজর দেখতে দৌড়ে ছুটে এসেছে। আজকের পর থেকে সে আর সূরা কে দেখতে পাবে না ভাবতেই মনটা বিষিয়ে যায় শুদ্ধের।শুদ্ধ এসে সূরার পাশে বসে বললো, এখন কেমন লাগছে তোমার?”

-” ভালো?”
-” শুদ্ধ সূরার নাম জানে তবুও বললো, তোমার নাম টা কি জানি?”
-” সূ বলতে গিয়েও থেমে গেলো সূরা। পরক্ষণেই সে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো শানজানা চৌধুরী।”
-” ওয়াও নাইস নেইম।”
-” ধন্যবাদ।”
-” তোমার চুলগুলো কিন্তু অনেক ‌সুন্দর।আই লাইক লং হেয়ার।”
-” ধন্যবাদ।”

-” দেখো শানজানা আমি সবসময় স্ট্রেট ফরোয়ার্ড কথা বলতে পছন্দ করি। সবসময় নিজের মধ্যে কাঠিন্যের ছাপ ফুটিয়ে রাখতে পছন্দ করি। কিন্তু কেনো জানি আজ তোমার সামনে আমি নিতান্তই একটা বাচ্চা হয়ে গিয়েছি।মনে হচ্ছে আমার বয়স যেনো ত্রিশ দেখে আঠারো হয়ে গিয়েছে। আমার ডক্টর হ‌ওয়ার আগে একটা রিলেশন ছিল।বড্ড ভালোবাসতাম মেয়েটাকে।

কিন্তু আমি তখন বেকার ছিলাম বলে আমার ভালোবাসার ‌মানুষ টা আমাকে ছেড়ে সরকারী চাকরিজীবী ছেলে বিয়ে করে নেয়। সেদিন প্রচন্ড ভেঙ্গে পড়ি আমি। এরপর থেকে কখনো আর প্রেম , ভালোবাসা, সংসারের মায়ায় জড়াতে চাই নি। কিন্তু তোমাকে দেখার পর আমার সেই মনোভাব পাল্টে গিয়েছে।আমি নতুন করে সংসার পাতার স্বপ্ন দেখেছি।

আমার মম , ড্যাডের ও পছন্দ হয়েছে তোমাকে। তুমি যদি রাজি থাকো আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।আমি তোমার অতীত জানতে চাই না।আমি তোমার বর্তমান নিয়ে বাঁচতে চাই।আমার মনের রানী করতে চাই তোমাকে।হবে কি আমার মনের মালকিন?দিবে কি আমাকে তোমার মনের মালিক হ‌ওয়ার সুযোগ?”

এই মন তোমারি পর্ব ৩৫

-” একজন মানুষের একটাই তো মন থাকে তাই না?আমার সেই মনটা যে অনেক আগেই অন্য কারো নামে লিখে দিয়েছি। আমার মনটা যে আমারি কাছে রেখে যাওয়া তার আমানত।আমি যে চাইলেও আমানতের খিয়ানত করতে পারবো না।।”

এই মন তোমারি পর্ব ৩৭