প্রিয়োশীর ভালোবাসা গল্পের লিংক || নুসাইবা রেহমান আদর

প্রিয়োশীর ভালোবাসা পর্ব ১
নুসাইবা রেহমান আদর

সবার বিয়েতে বরযাত্রী আসে আর আমার বিয়েতে হবু স্বামীর সাথে তার একমাত্র বউ এসেছে। সেই বউ আর কেউ না আমারি একমাত্র বেষ্টফ্রেন্ড। অবাক হচ্ছেন না? আমি অবাক হয়ে নির্বিকার তাকিয়ে আছি অইদিকে। উপস্থিত সবাই ও চমকে আছে সবার চেহারাই বলে দিচ্ছে। লিয়ার পেটটা অনেকটা উঁচু হয়তো অন্তঃসত্ত্বা৷ আচ্ছা আয়ান ভাইয়া বিবাহিত হলে আমার সাথে এতোদিন প্রেমের নাটক কেনো করলো? আমার ইমোশন নিয়ে খেললো?

– আমি রওনাক কে বিয়ে করতে পারবো না বাবা আমার স্ত্রী আছে আর সে আমার হবু সন্তানের মা হতে চলছে।
– তোমার যদি রওনাক কে বিয়ে করার ইচ্ছা ছিলো না তাহলে এতো নাটকের কি প্রয়োজন ছিলো?
– সে যাইহোক আমি পারবো না বিয়ে করতে মানে পারবো না। এসব ড্রামা অফ করো আমাকে আর লিয়া কে ভিতরে যাইতে দেও। লিয়া অনেক টায়ার্ড এই মুহুর্তে ওর বিশ্রাম প্রয়োজন।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এই পরিস্থিতীতে আয়ান ভাইয়া শুধু তাদের কথা ভেবে যাচ্ছে এটা ভেবে সবাই আশ্চর্য হয়ে গেছে। এক মেয়েকে বিয়ের আসরে ছেড়ে দেওয়া তার সাথে প্রায় ৫ টা মাস প্রেমের নাটক করা। এবং শেষ মুহুর্তে এসে তাকে ছেড়ে দেওয়া সেই মেয়েটার মনের অবস্থা কেমন হচ্ছে তা সে ভাবছে না। আচ্ছা রওনাক তো লিয়ার থেকে দেখতে খারাপ নয় তাহলে। আয়ান কে দেখে বোঝা যাচ্ছে না যে সে অনুতপ্ত তার কাজে। রওনাক ড্রয়িংরুম থেকে দৌড়ে সোজা নিজের রুমে ঢুকে দোরজা আটকে দিলো। সবাই রওনাকের পিছু পিছু গিয়ে দরজা ধাক্কাতে লাগলো।

রওনাক নিজের ক্ষোভ আটকাতে পারছে না। ড্রেসিংটেবিলের সামনে রাখা সব ফেলে দিলো। রওনাকের নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে। ওয়াসরুম থেকে ফিনাইলের বোতল এনে ঢকঢক করে আধ বোতল খেয়ে নিলো সে। চারোপাশ রওনাকের ঘুরতে লাগলো চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে পড়ছে।

নিজেকে না সামলাতে পেরে সে লুটিয়ে পড়লো ফ্লোরে। অনেক্ষন ধরে দরজা খোলাতে না পেরে দরজা ভাঙ্গার প্লেন করলো সবাই। দরজা ভেঙ্গে রওনাক কে সবাই ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখে হতবাক হয়ে যায়। রওনাকের মা আলিয়া সিকদার নিজের কলিজার টুকরার এমন অবস্থা দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। রওনাকের বড় ভাই রাফিন একমাত্র বোনের অবস্থা দেখে কি করবে ভেবে পায়না। দ্রুত তাকে কোলে উঠিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে৷ আয়ান আর লিয়া রাফিনের কোলে রওনাক কে দেখেও চুপচাপ বসে ছিলো।

আয়ানের বাবা – মা সবাই রওনাকের সাথে চলে গেছে। বিয়েতে আসা সবাই ও নিজদের মতো কথা বলতে বলতে চলে গেলো। একটু আগে কোলাহলে পরিপূর্ণ বাড়িটা কেমন নিস্তব্দতায় ছেয়ে গেছে। পুরো বাড়িতে কেবল আয়ান আর লিয়া। লিয়ার প্রেগন্যান্সির অষ্টম মাস শেষের দিকে এই সময় টায় যেকোনো মেয়েই বেশি চলাচল করতে পারেনা। লিয়ার মাথা গড়িয়ে ঘাম ঝড়ে পড়ছে তাকে দেখে আয়ান বিচলিত হয়ে পড়লো৷

– তুমি ঘামছো কেনো লিয়া? এনিথিং রং?
– আপনি কোনো কিছু ঠিক করছেন না আয়ান। আপনি সবার জিবন নিয়ে খেলছেন। এতোটা প্রতিহিংসা তাও আবার নিজের আপনজনদের সাথে? একদিন পস্তাবেন আপনি খুব পস্তাবেন। আমার রনুর যদি কিছু হয়ে যায় আয়ান আমি ক্ষমা করবো না আপনাকে।

– ওহ আচ্ছা নেক্সট। একদম চুপচাপ থাকবা ভুলে যাবানা আমি আয়ান সিকদার। তুমি আমার হবু সন্তানের মা বলে যে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিবো এটা ভুলেও ভাব্বা না। আমার থেকে একটু বেশি বুঝতে যাবা অই মুহুর্তে আমি ভুলে যাবো কে তুমি।

আয়ানের বিরক্তি মাখা কন্ঠে বলা এসব কথায় লিয়ার ভয় শুরু হয়। সত্যিই তো আয়ান যেমন মানুষ সে যা ইচ্ছা তা করতে পারে। আমাকে আমার সন্তানের জন্য সুস্থ থাকতে হবে। আল্লাহ তুমি রওনাক কে সুস্থ করে দিও প্লিজ।
– আর কতদিন দূরে দূরে থাকবে সে এবার তো তাকে ফিরতেই হবে। তার প্রিয়শ্রী যে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে। এবার খেলা জমবে যা হবে সব সামনা সামনি।

হাসপাতালের এখন প্রচুর ভির কারন পুরো সিকদার বাড়ির লোকজন যে এখানে জমা হয়েছে। সিকদার বাড়ির কলিজার টুকরার যে এই অবস্থা৷ সিকদার হসপিটাল টা সিকদার দের ই তৈরি করা। রওনাক কে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ও.টি.তে এখন তার স্টমাক ওয়াস করা লাগবে। ও.টি.র বাহিরে বসে সবাই দোয়া করছে সুস্থতার। রাফিন একটু বাহিরে বের হয় কল লাগায় কাউকে।

– হ্যালো ব্রো কেমন আছিস?
– কি হইছে রাফিন তোর আওয়াজ এমন শুনা যাচ্ছে কেনো আর ইউ ওকেহ?
– ইয়াহ ব্রো আ’ম ফাইন,তুই কি দেশে আসবি?

-হোয়্যাটস দি ম্যাটার রাফিন উইদাউট এনি রিজন তুই আমাকে আসার কথা বলতেছিস? বাসায় সব ঠিক আছে?
– নাথিং ইজ ফাইন ব্রো,রওনু সু*সা’ই’ড করার ট্রাই করছে। আমরা ওরে হস্পিটালে নিয়ে আসছি। ও.টি.তে ওকে নিয়া যাওয়া হইছে। আমি হেল্পলেস ফিল করছি আমার বনু খুব কষ্ট পাচ্ছে ব্রো।
– হোয়্যাট দা হেল ম্যান তুই আমাকে এখন বলছিস। আমি আসছি বাকিটা এসে শুনবো কাল সকালের মধ্যে আমি বাসায় থাকবো।

-আচ্ছা বাই ব্রো।
কল কেটে সেই লোক দ্রুত টিকিট কেটে নিলো,তার বুকের মাঝে শুন্যতা অনুভব হচ্ছে। বাসা থেকে দূরে আসলেও যে বাড়িতে তার প্রান ভ্রমর রেখে এসেছে। সে তো আয়ান বিষয়ক বিয়ে নিয়ে কোনো কথাই জানেনা। আচ্ছা বাড়িতে গিয়ে যখন শুনবে এসব তখন তার রিয়েকশন কেমন হবে। নতুন করে কোন ঝড় আসবে।

রওনাক কে বিছানায় দিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেন্সলেস হয়ে আছে। স্টমাক ওয়াস এতোটা সোজা নয়, বেডে হাত পা বেধে রেখে গলা দিয়ে পেট অব্দি যে মোটা পাইপ দিয়ে ওয়াস করে তাতেই অর্ধেক জান বেরিয়ে যায়। এতো কষ্ট সহ্য কর‍তে হয় বলার মতো না। তবুও মানুষ কিছু না ভেবেই করে ফেলে। এইজন্য ভেবে কাজ করতে হয়, একজন মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা মানুষ থেকে গল্প শুনলে হয়তো কেউ আর আ*ত্ত*হ*ত্যার মতো কাজ করতো না। আজ নিজের ভুলের জন্য এতো কষ্ট রওনাক কেই সহ্য করতে হইছে।

চেহারা মলিন হয়ে আছে রওনাকের,কি এক অবস্থা। চঞ্চলতায় দুষ্টামিতে যে মেতে থাকতো আজ সে শান্ত প্রচুর শান্ত। রওনাক কে সুস্থ দেখে সবাই বাড়িতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। রওনাকের কাছে রাফিন,আর রওনাকে মা,আর বড় মা, মানে আয়ানের মা থেকে গেলো।

আয়ান লিয়া কে নিজের রুমে নিয়ে গেলো ধরে ধরে৷ এই অবস্থায় সিড়ি দিয়ে একা একা উঠা লিয়ার পক্ষে পসিবল না। লিয়ার কোনো কিছু ভালো লাগছে না। একবার যদি একটু রওনাকের খবর পেতো তাহলে শান্তি লাগতো। আয়ান হয়তো লিয়ার অস্থিরতা বুঝতে পেরেছে।

– এইভাবে বেহুদা টেনশনের ফলে যদি আমার সন্তানের ক্ষতি হয় আই ওয়াসান্ট স্পেয়ার ইউ লিয়া। এখন গিয়ে সোজা ঘুমাবে তুমি। আমি তোমার দেখা শুনার জন্য মানুষ নিয়ে আসবো৷ রুম থেকে একদম বের হবানা। আর কারো সাথে কথা বলার চেষ্টাও করবেনা।

– এটা কেমন কথা আয়ান।আমি এভাবে একা একা কিভাবে থাকবো? আমাকে আপনি আমার মায়ের বাসায় রেখে আসেন প্লিজ। আপনার সাথে থাকলে আমি প্রতিটা সময় ভয়ে থাকি। আর সহ্য হচ্ছেনা আমার। কবে আমাকে মুক্তি দিবেন আপনি?

– যতোদিন না অব্দি আমি আমার শুরু করা এই খেলার সমাপ্তি টানছি ঠিক ততোদিন তোমার মুক্তি নাই। সুয়ে পড়ো আমি খাবার অর্ডার করে দিয়েছি৷ এরপর খাবার খেয়ে মেডিছিন খেয়ে ঘুমাবা।।
লিয়া আর কথা বাড়ালো না সে জানে কথা বাড়িয়ে কোনো লাভ নাই।

প্রিয়োশীর ভালোবাসা পর্ব ২