প্রিয়োসিনী পর্ব ১০

প্রিয়োসিনী পর্ব ১০
নীরা আক্তার

কলেজ ক্যাম্পাসে কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে বসে আছে সাগর আর নওরিন। সাগর বলেছিলো তার নওরিনের সাথে কথা আছে।।অনেক কথা আছে কিন্তু মুখ দিয়ে কোনো কথা বার হচ্ছে না।দুজনই চুপ চাপ বসে আছে সেখানে।
সাগর নওরিনকে কিছু বলতে যাবে এর মাঝে ইসরাক উপস্থিত হয়।
দুম করে এসে তাদের মাঝে বসে পড়ে।

-কি হচ্ছে এখানে?
-আসলে
নওরিন আমতা আমতা করে বলতে থাকে
ইসরাক থামিয়ে দেয়,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-জানি তোমার কাজিন।দেখো বউ স্পষ্ট করে একটা কথা বলি বিয়ের পর কোনো পর পুরুষের সাথে কথা বলতে নেই এতে বর রাগ করে।বর রাগ করলে আল্লাহ নারাজ হয়। তাও যদি হয় প্রাক্তন প্রেমিক তাহলে তার থেকে ১০ মাইল দূর দিয়ে হাটবা।বোঝা গেলো?আমি কিন্তু এইসব সহ্য করবো না।
নওরিন বোকার মতো মাথা নাড়ে,

-এখন চলো!
-কোথায়?আমার না ক্লাস আছে?
-ক্লাস আছে যখন তখন ক্লাসে যাও নাই কেন?এখানে কি করো?
-আসলে…..কোথায় ‌ যাবো?
-শ্বশুর বাড়ি।তবে তোমার না আমার।
নওরিন মুখ বাকিয়ে উওর দেয়,

-কিহ্
-হুম্ম
-চলো যেতে হবে ইট’স আর্জেন্ট
-কিসের আর্জেন্ট কি হয়েছে?বলবেন তো…
নওরিন ইসরাককে একটার পর একটা প্রশ্ন করছে আর ইসরাক নওরিনের হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
ইসরাক নওরিনকে নিয়ে চলে যেতে থাকে।পেছন থেকে সাগর তাকিয়ে আছে তাদের যাওয়ার দিকে।সে মনে মনে বলে উঠে,

-এটা নওরিনের বর।এটা তো ইসরাক ভাই…আমি তো ভেবেছিলাম ওর বাড়িরলোক ওকে সিকদার বাড়ির ঐ বখাটে ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছে।
মাথা চুলকায় সাগর। ইসরাককে সে চেনে।ইসরাক ভাই নিঃসন্দেহে একজন ভালো মানুষ।কলেজে পড়াকালিন এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে ইসরাকের সাথে সে পরিচিত হয়েছিলো, ভার্সিটির প্রিপারেশনের জন্য হেল্প নিতে।
সাগর একটু অবাক হয় তার সাথে সাথে খুশিও হয়।নওরিন তাহলে সেফ!

সাগর মনে মনে দোয়া করে।নওরিন যেন সুখে থাকে।মেয়েটা এতটুকু বয়সে বড্ড লাঞ্চনা সহ্য করে ফেলেছে….
সাগর আজ রাতের ফ্লাইটেই আবার বিদেশে ফিরে যাবে।ক’দিন আগে
সাগরের বাবা হটাৎই অসুস্থ হয়ে পড়ে।সেই অছিলায় তার দেশে আশা।নয়তো তার মা তাকে ভুল করেও ফিরতে দিতেন না।
[যেদিন নওরিন আর ইসরাকের পারিবারিকভাবে বিয়েটা হয় সেদিনই নওরিনের মেজো খালা মানে সাগরের মা সাগরকে ফোনে নওরিনের বিয়ের কথা জানায়,

–আব্বা ঝামেলা বিদায় হইছে।
সাগর ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে,
-কিসের ঝামেলা
-রিনির বিয়ে হয়ে গেছে।মেয়েরে তোর নানাভাই আর তোর ঘারে চাপাইতে পারবে না।
সাগর উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠে,
-কার সাথে?

-কার সাথে আবার যেই পোলায় হেরে তুলে নিয়া গিয়া নষ্ট করছে তার সাথেই।সিকদার বাড়ির পোলা।
–আম্মা ঐ রাক্ষসটা নওরিনকে মেরে ফেলবে।আমি ফিরে আসি।নওরিনকে নিয়ে দূরে কোথাও পালিয়ে যাবো?
সাগর ফোনের ওপার থেকে গভীর আকুতি জানায়।
মেজো খালা একটা জোরে নিঃশ্বাস নেই।শেষ একবছর ধরে ছেলেটা তাকে বার বার একই আকুতি জানাচ্ছেন।কিম্তু তিনি নিরুপায়। রিরি করে উঠেন সাগরের মা,

–আমার কসম লাগে সাগর তুই আসবি না।দরকার পরলে আমি গলায় দড়ি দিবো, তাও নষ্ট মাইয়ারে ছেলের বউ হিসেবে মেনে নোবো না!
–আম্মা তুমিই না আমাদের বিয়ে ঠিক করছিলা?তুমি বলো এখানে নওরিনের কোনো দোষ আছে?
ভদ্র মহিলা শান্ত হয়,নওরিনের জন্য তারও ভিষন মায়া হচ্ছে।কিন্তু কিছু করার নেই।
তিনি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠেন,

–আসিস না বাপ ওরা তোকে মেরে ফেলবে।আমার একমাত্র সম্বল তুই।
সাগর চুপ হয়ে যায়।মায়ের আকুতি ফেলতে পারবে না সে]
[ছোট বেলাতেই সাগর আর নওরিনের বিয়ের কথা সেড়ে রেখেছিলো তাদের দুই পরিবার।
নওরিন আর সাগরের মধ্যে সম্পর্কও ছিলো বেশ।সোজা সাপ্টা অগোছালো একটা সম্পর্ক। কখনো ভালো বন্ধু কখনো খুব প্রিয়োজন,কখনো বা সবচেয়ে বড় শত্রু।খুনসুটিতে ভর পুর।

দিব্যি চলছিলো নওরিনের সোজা সাপ্টা জীবন। একদিন হুট করেই নওরিনের নানুভাই অসুস্থ হয়ে পড়েন।জীবন যায় যায় অবস্থা।কোনো রকমে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।নানুভাই বেশ কয়েকদিন বিছানায় শয্যা নেন।
সেবার নানুভাই বেঁচে গেলেও মৃত্যু কে খুব কাছ থেকে দেখে ফিরেছেন তিনি।
সন্তানদের ডেকে আবদার করে বসেন মরার আগে নওরিন আর সাগরের বিয়েটা তিনি দেখে যেতে চান।তার স্ত্রীর ও একই ইচ্ছা ছিলো।কিন্তু তিনি দেখে যেতে পারেন নি।নওরিন তখন সবে দশম শ্রেনীতে উঠেছে মাত্র।এতো অল্প বয়সে বিয়ে দিতে চান না কেউই।তবে তিনি গো ধরে বসে থাকেন।

হয় বিয়ে হবে নয়তো তিনি আমরণ উপবাস করবেন।
নওরিনের নানুবাসার সবাই সভা ডাকেন।সেখানে নির্ধারণ করা হয় আপাতোতো নওরিনের সাথে সাগরের আকদটা সেড়ে রাখা যাক তারপরে নওরিন যখন প্রাপ্ত বয়স্ক হবে তখন না হয় ধুম ধাম করে তুলে নেওয়া যাবে।ততোদিন পর্যন্ত যে যার মতো আলাদা থাকবে।কোনো রকম মেলা মেশা করবে না।

সেখানেও তিনি বাদ সাজেন।এক্কেবারে বিয়ে দেখতে চান পুঁতির মুখ দেখতে চান,বুড়োর কতো স্বপ্ন!!
তবে এবার সবাই নানুভাইকে বোঝায়।এভাবে সম্ভব না।নওরিন সাগর দুজনেই ছোট।এখন বিয়ে দিয়ে দিলে দু’জনেরই ক্ষতি হবে।শারিরীক মানসিক দুইরকম ভাবেই।
বুড়ো মুখ কালো করে সম্মতি জানায়।

সাগরদের আদি নিবাস ছিলো কক্সবাজারে। সাগরের দাদু দাদী সবাই সেখানেই থাকতো।বিয়ের আয়োজনও সেখানেই হবে।তারা খুব কম সংখ্যক লোকজনকে নিয়ে রওনা হয় কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে।নওরিন ইশাকেও সাথে নিতে চায় তবে ইশাকে যেতে দেওয়া হয় না।সিকদার বাড়ির মেয়ে এতো দূর যাবে তাও একা একা এটা হয় না।
ইশা একগুঁয়ে সে তো যাবেই।ইশার বায়না দেখে জিনাত সিকদার আমানকে ডেকে পাঠায়।আমনকেই দায়িত্ব দেয় ইশাকে নিয়ে যাওয়ার।

আমান জিনাত সিকদারের মুখে নওরিনের বিয়ে শুনেই থমকে যায়।রাগে অভিমানে কেঁপে উঠে সে…নওরিন বিয়ে করছে….অথচ সে জানে না।তাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করে নি!
ফোন আর ওয়ালেট নিয়ে বেরিয়ে পড়ে….

ততোক্ষনে ইশা বুঝে গেছে সে খুব বড় একটা ভুল করে ফেলেছে।পাগলা ষাঢ় না পাগলা প্রেমিক ছুটেছে।আপাতোতো আমান ভাইয়াকে না জানানোটাই ভালো ছিলো।ইশা নিজের গালে নিজেই কয়েকটা চর মারে।
পর দিন রাতেই আকদের আয়োজন করা হয়।আকদের মাঝেই উপস্থিত হয় আমান। সাথে বেশ কিছু ছেলে পেলে।তাদের সাথে অস্ত্র সস্ত্র ছিলো।সেই বিয়ের আসর থেকেই নওরিনকে উঠিয়ে নিয়ে যায় সাগর।
নওরিন বার বার ছোটার চেষ্টা করছিলো কিন্তু কোনো উপায় নেই।একটা ফ্লাটে এনে তালা বন্ধ করে দেয়।কোমর থেকে বেল্ট খুলে ইচ্ছে মতো মারতে থাকে নওরিনকে।নওরিন মেঝেতে পরে যায়

আমানের পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।
-ছেড়ে দিন ভাইয়া আপনি না ইশার ভাই।আমিও তো ইশার মতোই।একটু মায়া করুন…
আমান নওরিনের গলা চেপে ধরে,
আমানের চোখ দিয়েও পানি পরছে,আমান স্ব শব্দে হেসে উঠে,
-বোন??মজা করছো আমার সাথে?
নওরিনকে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দেয়।

“ভালোই যখন বাসবি না কাছে ডাকলি কেন?এমন মায়ায় জড়ালি কেন?ছেড়েই যখন যাবি কাছে টানলি কেন?বেঈমান।দরকার পরলে তোকে এখানেই মাটিতে মিশিয়ে দেবো তবুও অন্য কারো হতে দেবো না!
বেঈমান!!! সব কিছু তোর নাটক ছিলো তাই না??”
নওরিন আমানের মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।আমানের কোনো কথায় তার মাথায় ঢুকছে না।
একটু পর নওরিন সেখানেই জ্ঞান হারায়
জ্ঞান ফেরার পর সে নিজেকে মেঝেতে একই স্থানে আবিষ্কার করে।গায়ে প্রচুন্ড ব্যাথ্যা।কতোটা সময় পার হয়েছে তার জানা নেই।

আমান তখন নওরিনের পাশের টেবিলটাতে মাথা লাগিয়ে আধশোয়া অবস্থায় পড়ে আছে।
বোধয় ঘুমিয়েছে।নওরিন গুটি গুটি পায়ে দরজার কাছে যায়।দরজা খুলতেই শব্দ হয়।আমান জেগে যায়।
আমান নওরিন কে টেনে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে…

“বেঈমান প্রেমিকাদের ছেড়ে দিতে নেই।হয় নিজের কাছে বেঁধে রাখতে হয় নয়তো একেবারে শেষ করে দিতো হয়”
নওরিন হাতের কাছে থাকা ফল কাটা ছুরিটা আমানের বুকে বিধে দেয়।আমান ছিটকে সরে যায়।নওরিন একছুটে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।বাড়ির মেইন গেইট ক্রস করে ছুটতে নিলেই সামনে থেকে ছুটে আশা গাড়িটার সাথে ধাক্কা খায়!!
প্রায় দুদিন পর নওরিনকে বিদ্ধস্ত অবস্থায় একটা প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করে নওরিনের বাবা মা ।
নওরিন তখন অনকটাই সুস্থ।একটুর জন্য প্রাণটা বেঁচে গেছে।

-সবাই অদ্ভুত ভাবে নওরিনকে প্রশ্ন করতে থাকে, ছেলেগুলো তার সাথে কি কি করেছে?ছেলে গুলো কে?কেন তাকে নিয়ে গেলো?তার সাথে খারাপ কিছু করেছে কি না?
নওরিন চুপ চাপ থাকে,
“কোই কেউ তো তাকে প্রশ্ন করছে না তার কষ্ট হচ্ছে কি না,কতোটা ব্যাথ্যা সে পেয়েছে”
নওরিন চারপাশে চোখ বুলিয়ে সাগরকে খুজতে থাকে,সাগর নেই তবে মেজো খালা আছে।

সাগরের সাথে নওরিনের বিয়েটা ভেঙ্গে যায়।অদ্ভুত ভাবে যেদিনই নওরিনকে পাওয়া যায় সেদিনই সাগর গুম হয়ে যায়।পরে জানা যায় সাগর বিদেশে পারি জমিয়েছে।সাগর নওরিনকে ফেলে পালিয়েছে।সে নওরিনকে আর গ্রহন করবে না।
বাড়ির সবাই চোখ মুখ শক্ত করে নওরিনকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে আসে।নওরিন চেয়েছিলো থানা পুলিশ করতে কিন্তু তার বাবা মা করতে দেয় নি। মেজো ভাই প্রথমে সাপোর্ট করেছিলো কিন্তু পরে মায়ের কথায় সে ও দমে যায়।

সিকদার বাড়ির প্রভাব প্রতিপত্তির সামনে তারা নেহাতই তুচ্ছ।নওরিনের বাবা চেষ্টা করতে থাকেন নওরিনের বিয়ের জন্য।ততোদিনে ঘটনাটা সিকদার বাড়ির সবার কানেও চলে গেছে।বিষয়টা সিকদার বাড়ির সন্মানের।মান সন্মানের ভয়ে সিকদার বাড়ির মাথারা সিদ্ধান্ত নেয়। নওরিনকে বাড়ির বউ করবে।আমানের সাথে বিয়ে দেবে।দাদু নওরিনের বাবাকে কথা দেন নওরিনের সন্মানের দায়িত্ব তাদের।
নওরিন আর আমান তখন দুজনই অসুস্থ থাকায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আগে দুজন সুস্থ স্বাভাবিক হোক তার পর বিয়েটা হবে…..]

গাড়িতে ইসরাক আর নিওরিন পাশাপাশি বসে আছে।নওরিন বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে,
ইসরাক বার বার নওরিনের দিকে ঘুরে ঘুরে দেখছে!নওরিন ঘুরতেই চোখাচোখি হয়ে যায়
-এভাবে ক্যাবলার মতো তাকিয়ে আছেন কেন?এ্যাক্সিডেন্ট করিয়ে মারবেন নাকি?এমন কোনে ইচ্ছে থাকলে বলে দিন নেমে যাচ্ছি!
ইসরাক মুখ ঘুরিয়ে নেয়,জোরে নিঃশ্বাস নেই,

-তোমার জীবনের গল্পটা অন্যরকম হতে পারতো নওরিন কিন্তু,
-কিন্তু কী?
-বেঈমানরা কখনো সুখ পায় না!কিন্তু তুমি পাবে!
নওরিন ইসরাকের দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকায়
-কিসের বেঈমান?কে বেঈমান?
-কিছু না
-বলুন?
-ফুসকা খাবে?
নওরিন মুখ বাকিয়ে বলে,

-মুখ পুড়ানোর দরকার নেই আর কথা বলবো না সাগরের সাথে।ও বার বার রিকুয়েষ্ট করছিলো ফেলতে পারি নি!
-এরপর ও যদি বার বার রিকুয়েষ্ট করে চলো আমার সাথে পালিয়ে চলো তাহলে কি পালিয়ে যাবে?
নওরিন ইসরাকের কথায় একটু বিরক্ত হয়,
-এ কেমন কথা!
ইসরাক শান্ত স্বরে বলে,

-বাদ দাও।প্রয়োজন মনে করেছো কথা বলেছো।আর বলিওনা।
নওরিন মাথা নারে,
–আপনি কি আমাকে বাবা-মায়ের কাছে দিয়ে আসতে চাচ্ছেন?আর রাখবেন না নিজের কাছে?
ইসরাক মুচকি হাসে,
-শুধু দিয়ে আসবো না ছুড়ে ফেলে দিয়ে আসবো।
নওরিন কিছু বলে না।

দুজনই চুপ
-গাড়ি থামান
-কি হলো….
নওরিন হাত উচিয়ে বাহিরের দিকে দেখায়,
–আআইসক্রিম খাবো প্লিজ প্লিজ প্লিজ
ইসরাক দাড়িয়ে যায়।

ইসরাকের গাড়ি নওরিনের বাড়ির সামনে এসে দাড়ায়।নওরিন ভেতরে যায়।ভেতরে গিয়েই জানতে পারে নওরিনের নানু এসেছে।সাথে বড় মামা বড় মামী, বড় খালা আর মেজো খালাও এসেছে জামাই দেখতে।নওরিনের কিছু কাজিনরাও এসেছে বেরাতে।
তাই এমন জরুরি তলফ দিয়ে আনা হয়েছে ইসরাক -নওরিনকে।
নওরিন ইসরাকের দিকে তাকায়,
–আপনার বাড়িতে জানে?
ইসরাক মাথা নাড়ে
-দাদুকে জানিয়ে দিয়েছি।

–আর শ্বাশুড়ি মা?
-ভয় পেয়েনো মা কিছু বলবে না।আমরা আজ এখানেই থাকবো
নওরিন একটু নিশ্চিন্ত হয়।
নওরিনের মা তার চাঁদের টুকরো জামাইকে এনে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।ইসরাকের মতো জামাই পেয়ে তিনি মনে মনে বেশ গর্বিত।
“আমার রিনির ভাগ্য অনেক ভালো এমন চাঁদের টুকরা জামাই পাইছে”
মেজো খালা পাশ থেকে বলে উঠে,

-ভাগ্য তো ভালোই….নাহলে সমাজে এমন মেয়ের বিয়ে দেওয়াই কঠিন।ছেলে যে ভালো তা তো বোঝাই গেলো নাহলে ভাইয়ের বোঝা কেউ নিজের মাথায় তুলে নেয়!
নওরিনের মা তেড়ে যায় মেজো বোনের দিকে,
এদিকে নওরিন ছুট লাগায় নিজের ঘরে।ভীষন লজ্জা লাগছে তার।সে রীতিমতো কাপঁছে।এরাই নাকি তার আপনজন!
ইসরাক নওরিনের পাশে বসে,নওরিন ইসরাকের দিকে তাকায়
-আমি বোঝা?

-জানি না…প্রশ্নটা যদি সেদিন করতে উওর দিতাম হ্যা।তবে সময়ের ব্যবধানে উওর পাল্টেছে।
–ইশাকে দেখার আগ মূহুর্ত পর্যন্ত আমি জানতাম না আপনি সিকদার বাড়ির ছেলে নইলে মরে যেতাম তবুও আপনাকে বিয়ে করতাম না।

কথাটা বলেই নওরিন ওয়াশরুমে চলে যায়।ইসরাকের সামনে সে কাঁদতে চায় না।
এদিকে নওরিনের মা তার মেজো বোনকে গাল মন্দ করে বাড়ি থেকে বার করে দিয়েছে।
যে আত্মীয় দুঃখের দিনে পাশে থাকে না সে আত্মীয় নয়,
যে আত্নীয় সুখের দিনে এসে আরো দুঃখ বারিয়ে দেয় সেও আত্মীয় নয়।
উভয়ই আত্মীয় হওয়ার যোগ্যতা রাখে না!!

প্রিয়োসিনী পর্ব ৯

[প্রথমত বলি আমার কাঁচা হাতের লিখা।অনেক ভুল ত্রুটি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে আমি চেষ্টা করি গুছিয়ে লিখার বার বার রিচেক দেওয়ার।রোজ ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে একটু একটু করে গল্প লিখি লিখা শেষ হলে আপলোড দেই।তাই সময়টা মেইনটেইন করতে পারি না।কখনো সকালে বা কখনো বিকালে হয়।দয়া করে ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

প্রিয়োসিনী পর্ব ১১