প্রিয়োসিনী পর্ব ১৮

প্রিয়োসিনী পর্ব ১৮
নীরা আক্তার

ইশা করিডোরের গ্রীল ধরে একা একা দাড়িয়ে আছে।পাশে এসে দাড়ায় নওরিন।সবাই বাড়ি চলে গিয়েছে।ইসরাক বাহিরে,তাদের জন্য খাবার আনতে গিয়েছে।
নওরিন ইশাকে ডেকে বলে,

-ওয়েদারটা সুন্দর না?
ইশা একপলক দেখে মুখ ফিরিয়ে নেয়,
-হু
-কেমন লাগছে এখন?
-তুই চলে গেলি না কেন?গেলেই পাড়তিস!
-যেটা জিঙ্গেস করেছি ঐটার উওর দে…
কেমন লাগছে?
-ভালো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-কিছু কথা বলবো শুনতে পারবি?শরীর খারাপ করবে না তো?
-কি এমন কথা যে শরীর খারাপ করবে?
-আমি কথাগুলো আগেই বলতাম। সুযোগ হয়ে উঠে নি।জানতে বুঝতে সময় লাগলো।আসলে বুঝার পরও বিশ্বাস করতে সময় লাগলো। ইচ্ছে করছিলো অসুস্থ ইশাকে টেনে তুলে কথাগুলো বলি কিন্তু হিউমানিটি বলে একটা কথা আছে…।তাই ধৈর্য্য ধারণ করছিলাম।
– তোর ঐ একটা জিনিসেরই কোনো অভাব নেই
-তোর আছে?
ইশা ভ্রু কুচকে তাকায়,

-কি এমন কথা?এভাবে বলিস কেন?
-আমান ভাইকে এতো ভালোবাসিস কখনো বলিস নি কেন?
ইশা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে নওরিনের দিকে,
-কি বলিস?
-সত্যিটা কি ইশা?
-কিসের সত্যি
-কিসের সত্যি জানিস না আমানভাইকে তুই ভালোবাসিস এটা সরাসরি জানিয়ে দিলেই পারতিস আমার জীবন কেন নষ্ট করলি?

-তোর মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে নওরিন?তোর জীবন আমি নষ্ট করবো?
-আমার নাম করে তুই সব করেছিস তাই না?
-কি করেছি আমি?
-প্রশ্নটা তুই নিজেকে কর!
নওরিন ইশার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়।ইশা বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে,

–আমান ভাই সবাইকে বলেছে আমি নাকি তার সাথে সম্পর্কে ছিলাম….,ওনাকে নাকি আমি ঠকিয়েছি,ওনাকে ঠকিয়ে সাগরকে বিয়ে করতে চেয়েছি।প্রথমে যখন তোর ভাই কথাগুলো বললো বিশ্বাস করতে পারি নি।ভেবেছিলাম হয়তো পাগলের প্রলাপ বকছে।
কিভাবে এতো কিছু করলি একটু এক্সপ্লেইন করবি প্লিজ?তোর মাস্টারপ্ল্যান টা খুব জানতে ইচ্ছে করছে।
ইশা মাথা নিচু করে নেয়,

-কেন করলি?তুই আমার নাম ইউজ করে আমান ভাইয়ের সাথে সম্পর্কে গিয়েছিলি তাই না?যেই বদনামের দায় ভার বয়ে বেরাচ্ছি সবটাই তুই আমাকে দিয়েছিস ইশা?মানতে কষ্ট হচ্ছে।কিন্তু এটাই সত্য!
-নওরিন এই বিষয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাই না প্লিজ….
–আমি সবটা সবাইকে বলে দেবো ইশা!তোর যা কথা সব তোর বাড়ির লোকের কাছে গিয়ে বলিস!আমাকে আর কিছু বলার দরকার নেই
ইশা বেশ জোরে চেচিয়ে বলে উঠে,

-কি বলবি?
-যেটা সত্যি সেটাই বলবো!
-কোনো প্রমান আছে তোর, কাছে?
-ইশা!
-এতোদিন তো সবাইকে বলে বেরিয়েছিস আমি এটা করিনি আমি ওটা করিনি কেউ বিশ্বাস করেছে?না তো….করে নি।এটাও করবে না।আর
এতোদিন পর এইসবকরবে বলে তোর মনে হয়?
-ইশা….তুই না আমার বন্ধু!সবচেয়ে কাছের বন্ধু।

-বন্ধু বলেই সবসময় তোর পাশে দাড়িয়েছি।এখনো দাড়াবো।নওরিন আমি আমান ভাইকে ভালোবাসি আমি যা করেছি সব ওকে ভালোবেসে করেছি।এতোদিন যেমন সব মুখ বুজে সহ্য করেছিস এখনো তাই কর।তোর না অনেক ধৈর্য্য।আমি ভাইয়াকে বলে দেবো তোর সাথে যেন কোনো মিস বিহেভ না করে।আমান ভাইকেও বলবো…তোর যেন আর কোনো ক্ষতি না করে!আমি আমান ভাইকে বিয়ে করে নেবো তারপর ও সব ভুলে যাবে নওরিন।তুইও ভুলে যা!
নওরিন সজোরে ইশার গালে একটা থাপ্পড় লাগায়,

-এক থাপ্পরে মন ভরলো না ইচ্ছে করছে তোকে এখান থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেই কিন্তু আমার দূরভাগ্য যে সেটা আমি পারবো না।
ইশা গালে হাত দিয়ে নওরিনের দিকে তাকিয়ে আছে…
-তুই কি করে জানলি নওরিন?
-অন্ধকারে ঢিল ছুরছিলাম।নোহার কাছে শুনে সবটা বুঝতে পারছিলাম কিন্তু মানতে পারি নাই।ভেবেছিলাম তুই অন্তত আমার সাথে এমন কিছু করবি না হয়তো আমান সিকদার মিথ্যে বলছে।কিন্তু আমি ভুল।যা করেছিস অনেক করেছিস আর কিছু করতে হবে না।এবার যা করার আমি করবো….!

–আমায় ক্ষমা করে দিস নওরিন।তবে তুই চাইলোও কিছু প্রমান করতে পারবি না!
-ক্ষমাও তোকে দেখে লজ্জা পাবে……
ছি!ঘেন্না লাগছে আমার!ধিক্কার তোর মতো বন্ধুকে।
নওরিন আর এক মুহূর্তও সেখানে দাড়ায় না।ছুট লাগায় বাহিরে।বন্ধুত্ব বিশ্বাস ভালোবাসা সব কিছু ভেঙ্গে গিয়েছে তার।
অতীত বর্তমান মিলে মিশে একাকার হয়ে গিয়েছে।

পর্দার আড়ালে দাড়িয়ে থাকা ছায়া অব্যয় তাদের সমস্ত কথোপকথন শুনে স্থির হয়ে গিয়েছে।হাত পা রীতিমতো কাপছে।কিছুটা রাগে, কিছুটা ঘৃনায়,কিছুটা অপরাধ বোধে।
ইশা রুমে গিয়ে বালিশে মুখ গুজে হাউ মাউ করে কাঁদতে থাকে।ভীষন ঘৃনা লাগছে তার নিজের উপর।
কিন্তু কিছু করার নেই….
ভালোবাসায় সব কিছু করা যায়।সেও সব কিছু করেছে।

রাত তখন ১২ বেজে পয়তাল্লিশ মিনিট। বাহিরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে।বাড়ির সদর দরজার সামনে দাড়িয়ে এক নাগাড়ে কলিং বেল বাজিয়েই যাচ্ছে নওরিন।
নওরিনের মেজো ভাই এসে দরজা খুলে।ভাইকে দেখে ছলছল চোখে তাকায় নওরিন।
বিধ্বস্ত নওরিনকে দেখে অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকে তার ভাই…
-কি হয়েছে রিনি?

-আমি মরে যেতে চাই ভাইয়া।
নওরিন মেজো ভাইকে জড়িয়ে ধরে, “হাউ মাউ করে কাঁদতে থাকে….”
ততোক্ষণে সবাই জেগে গেছে।
নওরিনকে বাড়িতে দেখে তার মা চেচামেচি শুরু করে দেয়,
-তোকে কি শ্বশুড় বাড়ি থেকে বের করে দিলো?এতো অমানুষ তারা?তুই ও কি একটু মানিয়ে নিতে পারলি না।
নওরিন টেবিলে থাকা ফুলদানিটা সজোড়ে মেঝেতে ছুড়ে দেয়,

–আমায় একটু বিষ এনে দিবা মা?খেয়ে মরে যাই।মানাইয়ে তো আর নিতে পারবো না।শ্বশুর ঘরও করা হবে না….তুমি আমার মা অথচ তুমিও আমায় জায়গা দিবা না তার চেয়ে বিষ দাও আমার মুখে।
নওরিনের মা হা হয়ে মেয়ের কথাগুলো শুনছে,
যেই মেয়ে সাত চরে রা কাটে না সেই মেয়ে তার মুখে মুখে এতো কথা বলছে।

-নওরিন আমি কখনো তোর খারাপ চাইনি আমি শুধু চেয়েছি তুই স্বামীর সংসার কর।স্বামী ছাড়া মেয়েদের কোনো দাম নেই। এতো বড় কলঙ্কের বোঝা মাথায় নিয়ে একা একা কি করে বাঁচতি তুই?আমি বুঝতে পারিনি তুই এতো কষ্টে আছিস।
নওরিনের বাবা স্ত্রী কে ধমক দেয়।তারপর নওরিনের কাছে আসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে উঠে,
-নওরিন মা কি হয়েছে?

-বাবা একটা মেয়ে নিশ্চয় যেচে পরে কোনো ছেলের কাছে গিয়ে বলে না আমার সর্বনাশ করো…তাহলে এখানে মেয়ের দোষটা কোথায়?কোনো অঘটন ঘটলে একদল লোক হয় তাদের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলে হয় তো পোশাক নিয়ে….কেউ কেন সেই পুরুষের বিকৃত চিন্তা নিয়ে কথা বলে না?
আমি কি করেছি দোষ করেছি? কেন আমাকে দোষ দেওয়া হয় সবসময়?সব অপমান কেন আমাকে করা হয়?তোমরাও তো আমাকে ছাড় দাও নি!
নওরিনের বাবা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে,

-তুমি কি চাও মা?
-আমি সংসার করবো না… আমায় না রাখতে চাইলে কেটে ভাসিয়ে দাও। আমি একা বের হয়ে যেতে পারবো না কারণ একা একটা মেয়ের জন্য দুনিয়া কতোটা হিংস্র তা আমার চেয়ে ভালো কেউ জানে না।
নওরিনের মেজো ভাই নওরিনকে শান্ত করে,

-এই যে আমি আমার বোনের সারা জীবনের ভরন পোষনের দায়িত্ব নিলাম আমি দেখতে চাই তোকে আমার থেকে কে নিয়ে যায়।মা বাবা যদি তোকে না রাখতে চায় আমি তোকে আর প্রিয়াকে নিয়ে চলে যাবো।কখনো ফিরবো না
নওরিন তার মাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ঘরে চলে যায়।ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।

ইসরাক রুমে এসে নওরিনকে না দেখতে পেয়ে পাগলের মতো খুঁজতে থাকে। সারা হাসপাতালে কোথাও নওরিন নেই।এদিকে ইশারও হটাৎ করেই প্রচুন্ড প্যানিক এট্যাক হয়েছে।
ইসরাক পাগলের মতো এখানে সেখানে ফোন করতে থাকে…..।

নওরিনের বাড়িতে ফোন দিলে নওরিনের মা ইসরাককে জানিয়ে দেয় নওরিন তাদের কাছেই আছে।
ইসরাক কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়।
ইসরাক বাড়িতে জানিয়ে দেয় যাতে ভোর ভোর কেউ একজন ইশার কাছে আসে।

জিনাত সিকদার হাসপাতাল থেকে ফিরেই বোনকে ফোন করে।নওরিনকে সে আর ঘরে তুলবে না।রাগে গা রিরি করছে তার।আস্ত নির্লজ্জ মেয়ে একটা।
-শিউলি
-হু বুবু
-কবে ফিরবি?
-কেন বুবু?
-কালই ফিরে আয় সঙ্গে করে স্নেহাকেও নিয়ে আয়।আমি স্নেহার সাথে ইসরাকের বিয়ে দেবো।নওরিনকে আর ঘরে তুলবো না।দরকার পড়লে জোর করে ইসরাককে রাজি করাবো
-সত্যি বুবু?
-হুম্ম।
–আমি কালই আসছি।

ভোরের আলো ফুটতেই ইসরাক বেরিয়ে পরে।উদ্দেশ্য নওরিনের কাছে যাওয়া।সারা রাত ঘুমোই নি সে।করিডোরে পায়চারি করে কাটিয়েছে।
নওরিনের বাড়ির দরজায় কয়বার নক করতেই নওরিনের বড় ভাই দরজা খুলে দেয়,
ইসরাক সালাম দিয়ে ভেতরে যায়,
নওরিনের মা ইসরাককে ড্রইং রুমে বসায়,
-বাবা তোমাদের কি কোনো ঝামেলা হয়েছে?
ইসরাক মাথা নাড়ে,

-জানি না!
-নওরিন ওভাবে রাতে চলে এলো।তুমি কি কোনো বকা বকি করেছো?
ইসরাককে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নওরিনের বাবা এসে ইসরাকের পাশে বসে পড়ে,
–আমার মেয়েকে হয়তো আমিই সাহস দিতে পারি নি তাই হয়তো মেয়েটা আমার জোর পায় নি, মুখ বুজে সব অপমান সহ্য করেছে তার হয়তো ধারনা ছিলো তার বাবা মা তার পাশে দাড়াবে না।তবে তার মা কি করবে জানি না আমি তো আমার মেয়েকে আর যেতে দেবো না।
ইসরাক কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠে,

–আমি নওরিনের সাথে কথা বলতে চাই!
নওরিনের মেজো ভাই কিছুতেই ইসরাকে নওরিনের সাথে কথা বলতে দেবে না।
নওরিনের বাবা মা মেজো ভাইকে বুঝায় নওরিন ইসরাকের সাথে কথা বলতে চাইলে বলবে না হলে নয়।কোনো জোর নেই।নওরিন যা চাইবে তাই হবে,
নওরিন বিছানায় বসে আছে।চোখ মুখ লাল করে বসে আছে সে।
ইসরাক একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ে,

-কি হয়েছে নওরিন?
-কিছু না
–আমি তো তোমায় বকি নি!তাহলে এভাবে চলে এলে কেন?মায়ের কথায় কষ্ট পেয়েছো?
-(….)
-তুমি মনে করেছো আমানের সাথে কথা বলা প্রয়োজন বলেছো।আমি বিশ্বাস করি তোমায়।
-তাহলে ওভাবে বললেন কেন?

–আমি আমানকে বিশ্বাস করি না….বাড়ি ফিরে চলো নওরিন,
–আপনি আমাকে কি মনে করেন বলুনতো?খেলনা?নাকি ফেলনা?
-কোথায় কি মনে করলাম?তুমি তো আমার কুইন!কুইনকে কুইন মনে করি!
–আমি আপনার সাথে থাকবো না!
-নওরিন!
-চলে যান।
-নওরিন….প্লিজ
-আমি মরে যাবো কিন্তু বলে দিলাম!

-চুপ!আমাদের মাঝে অনেক প্রবলেম আছে অনেক মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং আছে যেগুলো ক্লারিফিকেশন দেওয়া প্রয়োজন।
-কিসের ক্লারিফিকেশন দিবো?গত দেড় বছর ধরে সবাইকে একটার পর একটা ক্লারিটি দিতে দিতে আমি ক্লান্ত।সবার একই প্রশ্নের উওর দিতে দিতে ক্লান্ত আমি।সবাই আমাকে ভুল বুঝে একটার পর একটা দোষ দিয়ে গিয়েছে।কখনো কেউ সত্যি জানতে চায় নি।আপনিও চান নি।আমি নিজে থেকে সত্যিই বলতে গেলে আমাকে মিথ্যে বানিয়ে দিয়েছে।আর কতো সহ্য করবো আমি?

-তোমার অতীতের কোনো ক্লারিফিকেশন আমার চাই না!
-তাই?সত্যিই চান না নাকি সত্যি জানার পর আমাকে কথায় কথায় অপমান করতে পারবেন না এটা ভেবে জানার চেষ্টা করেন না?
-তোমায় আঘাত করে আমি কোনো সুখ পাইনা নওরিন।বরং কষ্ট লাগে।ভীষন কষ্ট লাগে…তোমায় করা প্রত্যেকটা আঘাত আমার গায়ে লাগে কিন্তু আমি এমনই।রেগে গেলে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারি না।আমি চেষ্টা করছি নিজেকে বদলানোর।

-প্রয়োজন নেই।
-কি হয়েছে বলো?
-যদি বলি আমি নির্দোষ।আপনি যা জানেন সব ভুল সব মিথ্যে।আপনার ভাই আপনাকে যা কিছু বলেছে সব ভুল….মিথ্যে বিশ্বাস করবেন আমাকে?ও
-কি হয়েছে?
-ঠকিয়েছে আমায়।সবাই ঠকিয়েছে।কাছের মানুষগুলোই আমাকে ঠকিয়েছে
-কে ঠকিয়েছে?
-বলে লাভ নেই….কেউ বিশ্বাস করবে না।কাছে তো কোনো প্রমান নেই।
-বলে তো দেখো!
-(…)

-থাক বলতে হবে না।পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যর্থ স্বামী আমি।নিজের স্ত্রীকে যোগ্য সন্মান দিতে পারিনি।এই মুহূর্তে আমার চেয়ে অসহায় আর কেউ নেই।মায়ের কথায় রাগ করো না।কষ্ট পেয়ো না।তবে কথা দিলাম তোমায় তোমায় যোগ্য সন্মান না দিয়ে মরবো না।
–আমি আপনার সাথে ফিরবো না।ডিভোর্স দেবো!
সব সম্পর্ক শেষ করে দেবো।
ইসরাক উঠে দাড়ায়,

-একটু সময় দাও তারপর যা ভালো মনে করো তাই করিও…..।আমি নিজেও চাই না এতো অসন্মান সহ্য করে তুমি আমার কাছে থাকো।
ইসরাক সেখান থেকে বেরিয়ে যায়।
নওরিন বসে বসে কাঁদতে থাকে।ইশার নামটা নিতে চেয়েও কেন যেন নিতে পারলো না।সবাই জেনে গেলে ইশার বড্ড ক্ষতি হয়ে যাবে।আর তাছাড়াও স্বামী নামক লোকটা কি তাকে বিশ্বাস করতো?নওরিনের একটু সময় চাই সব কিছু ভেবে উঠতে সময় চায়।পরবর্তী পরিকল্পনার জন্য সময় চায়।

দুপুরের আগে আগেই ইশাকে বাড়ি আনা হয়।ইশার সাথে নোহা আছে আমানও এসেছে।ইসরাক নেই।আমানের আগমনে জানাত সিকদার কিছুটা খুশিই হয়েছে।হাজার হোক নিজের সন্তানের মতো করেই তাকে বড় করেছে সে।নওরিন কে সাথে না দেখে তিনি কিছুট বিচলিত হয়েই প্রশ্ন করেন,
-নওরিন কোথায়?
ইশা মাথা নিচু করে নেয়
-জানি না!
পাশ থেকে নোহা চেচিয়ে উঠে,

-জানবিই না!! তুই তো নওরিনের বন্ধু নয় শত্রু। কি করে জানবি? শত্রু কি শত্রুর খোজ রাখে
জিনাত সিকদার নোহা কে ধমক দেয়।এখন এইসব কথা বলার সময় নয়!
দুপুরে খাবার টেবিলে সবাই একসাথে খেতে বসেছে। শুধু ইসরাক আর নওরিন নেই।ইসরাকে বার বার ফোন করা হচ্ছে কিন্তু সে ফোন ধরছে না!

আমান খাবার খেতে খেতে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
–বড় আব্বু বম্মা তোমরা যদি অনুমতি দাও আমি ইশাকে বিয়ে করতে চাই৷
সবাই সেখানেই থমকে যায়।ইশা অবাক চোখে আমানের দিকে তাকিয়ে থাকে।
আমান গম্ভীর মুখে খেতে থাকে।

নোহা খাওয়া ছেড়ে উঠে যায়।ইশার চোখ ছল ছল করছে।এতোদিনে তার স্বপ্ন পুরোন হতে চলেছে……!!
আমান কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বলে উঠে,
-আমি শুধু বিয়ের প্রস্তাব দিলাম তোমরা ভেবে দেখো মেনে নিলে যতো দ্রুত সম্ভব বিয়ের আয়োজন করো।না মানলেও কোনো সমস্যা নেই।দাভাইয়ের সাথেও কথা বলে নাও…!!
জিনাত সিকদার খাওয়া ছেড়ে উঠে চলে যায়।আমান ইশাকে বিয়ে করতে চাইছে।আদও এটা কি সম্ভব।ইমতিয়াজ সিকদার মুচকি হাসেন।

ইসরাক তার ডাক্তার বন্ধুর চেম্বারে বসে আছে।হাতে তার চেকআপের রিপোর্ট। রিপোর্ট গুলো নিয়ে হাতে নিয়েই সে উঠে চলে যায়।কেন যেন রিপোর্ট গুলো দেখাতে ইচ্ছে করছে না তার।
নওরিনের বাড়ির সামনে অনেক ক্ষন যাবত দাড়িয়ে আছে সে।গাড়িটা একটু দূরে পার্ক করা।

প্রিয়োসিনী পর্ব ১৭

ভেতরে যেতে ইচ্ছে করছে না।আবার দাড়িয়েও থাকতে পারছে না শরীর শায় দিচ্ছে না তার।পকেট থেকে রুমাল বার করে গাল কপালে জমে থাকা ঘামগুলো মুছে নেয় সে…..
এবার বোধয় তাদের গল্পের ইতি টানার সময় চলে এসেছে।

প্রিয়োসিনী পর্ব ১৯