প্রিয়োসিনী বোনাস পর্ব 

প্রিয়োসিনী বোনাস পর্ব 
নীরা আক্তার

আমান গাড়িতে বসে অপেক্ষা করছে ইশার জন্য।ইশা গাড়ির কাছে এসে দাড়ালে আমান গাড়ি থেকে নেমে ইশার কাছে এসে দাড়ায় ।ইশা হাপাতে থাকে,
–আমান ভাই চলো বিয়ে করবো।
আমান বিরক্তের সাথে বলে উঠে,
-ফাজলামির একটা সীমা থাকা দরকার।এভাবে বিয়ে হয় নাকি?
ইশা মুখ বাঁকিয়ে বলে উঠে,

-সবাই আমাদের বিয়ের বিরুদ্ধে এখন বিয়ে না করলে আর আমাদের বিয়ে হবে না।
আমান কিছুটা বিরক্ত হয়।বিরক্তের স্বরেই বলে উঠে,
-অনেক পাগলামো ছাগলামো করেছিস এখন আমাকে একটু রেহায় দে।জীবনটা তো আমার শেষ হয়েই গেছে।বাড়ি চল বম্মা বড় আব্বুকে আমি রাজি করাবো।
-যাবো না

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-তোর বিয়ে হবে আর এলাকার লোকজন জানবে না তা কি হয়।চল বাড়ি চল
আমান ইশাকে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে।জিনাত সিকদার ইশার উপর ভীষন রেগে যায়।রাগে গজ গজ করতে করতে ইশাকে মারতে তেড়ে আসেন ।
আমান বম্মাকে আটকিয়ে দেয়।বম্মার হাত দুটো শক্ত করে ধরে,
-আমাকে বিশ্বাস করো বম্মা ঠকবে না।
যে তোমাদের ঠকিয়েছে তার রূপটা দেখতে পাবে
ইমতিয়াজ সিকদার আমানকে সে দিনের জন্য বিদায় করে দেয়।
ইসরাককে ফোন করে ডেকে পাঠায়।
পরিস্থিতি ক্রমশ্য ঘোলাটে হচ্ছে।ইসরাককে তার প্রয়োজন।

এভাবে হটাৎ নোহাকে দেখে চমকে যায় ইসরাক,
-কি হয়েছে?হটাৎ এভাবে এলি?কোনো সমস্যা?
-নাহ বাড়ি চলো দাভাই!
-কেন?
-দরকার আছে যাবে না?
-বাড়িতে তো বিয়ে নিজের বোনের বিয়ের দাওয়াত পাও নি?
ইসরাক নোহার দিকে ভ্রু কুচকে তাকায় -কিসের বিয়ে?
নোহা ইসরাককে ডিটেইলস জানায়।
ইসরাকে রাগ হচ্ছে।ভীষন রাগ হচ্ছে।

-দাভাই চলো এক্ষুনি বাড়ি যাবো …..গাড়ি বার করো!
ইসরাক নওরিনকে ফোন করে।সে চলে যাচ্ছে এটা নওরিনের জানা দরকার
নোহা ইসরাককে থামিয়ে দেয়,
-দাভাই তুমি দাড়াও আমি দৌড় দিয়ে নওরিনের সাথে কথা বলে আসি।
নোহা ছুট লাগায় বাড়ির ভেতরে।নওরিন নোহাকে দেখে ভীষণ খুশি হয়।
-কেমন আছো সখি?
-ভালো।তুমি?

–আমি খুব ভালো আছি।কাল না তোমার জন্মদিন।কাল তোমার জীবনের সবচেয়ে স্মরনীয় দিন হয়ে থাকবে কথা দিলাম।তোমার জন্মদিনের সেরা উপহার তুমি পাবে।
এতোটুকু বলেই নোহা নওরিনকে জড়িয়ে ধরে।
-দাভাইকে বাড়ি নিয়ে গেলাম সময় মতো তোমার কাছে দিয়ে যাবো।চিন্তা করো না।
নোহা নওরিনকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বেরিয়ে যায়।
নওরিন অবাক চোখে তাকিয়ে আছে তার যাওয়ার দিকে,
ইসরাকও নওরিকে মেসেজে জানিয়ে দিয়ে বেরিয়ে পড়ে।তিয়াশ সেখানেই দাড়িয়ে দাড়িয়ে তাদের যাওয়া দেখতে থাকে

জিনাত সিকদার, ইমতিয়াজ সিকদার সাথে দাদু-দীদা ড্রইং রুমে বসে আছে।আমানের সাথে ইশার বিয়েতে কারোরই তেমন কোনো সমস্যা নেই জিনাত সিকদার ব্যাতিত।
ইসরাক অমত করলেও নোহা তাতে সায় দেয়।
-হোক না বিয়েটা,ঝামেলা বিদায় হবে,
অনেক আলাপ আলোচনা করে ঠিক করাহয়

পরশু কিছুটা ঘরোয়া ভাবেই ইশা–আমানের বিয়েটা দিয়ে দেওয়া হবে।
নোহা চেয়ে ছিলো কালই বিয়েটা হোক।কিন্তু বিয়ের মতো একটা আয়োজনে একটু সময় তো দরকার।নোহা একটু হতাশ হয়।আরো একটা দিন তাকে চুপ করে থাকতে হবে,এ যে বড়ই কঠিন কাজ
আলাপ আলোচনা শেষ করে ইসরাক তার মেডিকেল পেপার গুলো আলমারিতে রেখে বারই হচ্ছিলো এমন সময় শিউলি পারভিন ,জিনাত সিকদারের আগমন ঘটে তার ঘরে,

-ইসরাক বাবা বস আমার কাছে
ইসরাক মায়ের কাছে গিয়ে বসে
-কোথাও যাবি?
-হুম্ম।নওরিনের কাছে যাবো
জিনাত সিকদার তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে,
–আমি চাই তুই ঐ বউকে তালাক দিয়ে দে।স্নেহার সাথে তোর বিয়ে ঠিক করেছি আমি।রাজি হয়ে যা
ইসরাক মায়ের দিকে একপলক তাকায়

-তুমি চাও স্নেহাকে আমি বিয়ে করি তাই তো?আচ্ছা ঠিক আছে করে নেবো।
ইসরাক আলমারি থেকে তার মেডিকেল রিপোর্ট গুলো বার করে শিউলী পারভিনের সামনে ছুড়ে মারে,
-এগুলো আমার রিপোর্ট। এখানে লিখা আছে আমার ব্রইন টিউমার হয়েছে আমি বড়জোর আর তিনমাস বেঁচে থাকবো।এই তিনমাসে জন্য যদি আপনি চান আমার সাথে স্নেহার বিয়ে দিয়ে দিতে পারেন।তারপর আমি মরে গেলে বিধবা মেয়ের জন্য অন্য ছেলে খুজিয়েন!নাহলে আগে থেকেই খুজে রাখিয়েন মরে গেলে সাথে সাথে বিয়ে দিতে পারবেন।
ইসরাক কথাগুলো বলেই হন হন করে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়…….

(কিছু বিষয় ক্লিয়ার করি….
আমি এই গল্পটাতে কারো ক্যারেক্টারই ১০০% পজিটিভ দেখায় নি।ইসরাককেও নয়।পরিস্তিতির উপর নির্ভর করে আমি ক্যারেক্টারগুলোকে মেইনটেইন করার চেষ্টা করেছি।যেমন ধরুন শুরুর দিকে যখন ইসরাক জানতো নওরিন একজন প্রেমিককে ঠকিয়ে অন্য কাওকে বিয়ে করতে চেয়েছিলো আর তার জন্যই তার ভাই মরতে বসেছিলো সে নওরিনকে অপছন্দ করেছে।এখানে আমি তার চরিত্রটাকে নেগেটিভ ভাবে দেখিয়েছি।তারপর কিছু জায়গায় মায়ের বাধ্য সন্তান যেটা সচরাচর সব সংসারেই হয়েই থাকে।ছেলেরা কখনো কখনো মাকে সাপোর্ট করে বউয়ের বিষয়গুলো না জেনেই।।।এখানেও আমি ইসরাককে নেগেটিভ দেখিয়েছি।আমি চাইলে ইসরাককে মহান নায়ক হিসেবে দেখাতে পারতাম যেখানে সে বউকে সবসময় সাপোর্ট করবে, ভালোবাসবে,এইসব আরকি।তাহলে পরিস্থিতির সাথে চরিত্রটা মানাতো না!!!আবার কিছু জায়গায় আমি নওরিনের প্রতি ইসরাকের এট্রাকশন,দায়া মায়া দেখানোর চেষ্টা করেছি যেখানে নওরিন তার ভাইয়ের দ্বারা অপমানিত অসহায় এক নারী।

ভালোবাসাও দেখিয়েছি যেখানে সে নওরিনের স্বাভাবের প্রেমে পড়েছে।
এবার আসি নওরিনের সেল্ফ রেস্পেক্ট নিয়ে,
ক্লাস নাইন টেনে পরা একটা মেয়ে যার সাথে এমন অদ্ভুত কিছু ঘটনা ঘটেছে,সে ঠিক কি ধরনের সেল্ফ রেসপেক্ট দেখাবে আমার বুঝে আসে নি।তাই ওভাবে চরিত্র সাজাতে পারি নি।

বিয়ের পর হাজার স্বপ্ন নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে আসে।তারপর পর পর অসন্মান গুলো যখন পেতে থাকে তখন মা বাবার কাছে সে ছুটে যায়।তার মা তাকে কঠিন স্বরে জানিয়ে দেয় সংসারে মানিয়ে নিতে হবে,তোমার অপমানের বোঝা আমরা নেবো না,যেটা অধিকাংশ সমাজেরই প্রেক্ষাপট।এরকম সিচুয়েশন যেখানে বাবা মা ভাই কেউ পাশে নেই।তার নিজেরও কিছু করার ক্ষমতা নেই,(সে চাকুরি করে না।নিজের খাবার জোগার করার মতোও যোগ্যতা নেই) সেখানে নওরিনের কেমন সেল্ফ রেস্পেক্ট দেখানো উচিত আমি বুঝতে পারি নাই।

তার কাছে দুইটা পথ খোলা ছিলো।শ্বাশুড়ি স্বামী এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে নিজে থেকে বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় বের হয়ে যাওয়া বা তারা বার করে দিলে বাবা মায়ের কাছে গিয়ে অপমানিত হওয়া নয়তো মুখ বুজে সহ্য করা।
এই গল্পে ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ুয়া কলঙ্কিনী নওরিনকে ঠিক কিভাবে প্রতিবাদি,সেল্ফ রেসপেক্ট আলা মেয়ের চরিত্র দিতাম তা আমার মাথায় আসে নি।আমার মনে হয়েছে এই গল্পে একটু শান্ত, কম বুঝা,কম কথা বলা,কম বয়সি,চাপা গম্ভীর,সহজ সরল,সব পরিস্থিতি মানিয়ে নেওয়া এমন নায়িকাই বেশি মানাবে তাই নওরিনকে এমন ভাবে এক্সপ্রেসড করেছি।যার জন্য আমি খুবই দুঃখিত। আমি মোটেও কোনো মেয়েকে অসন্মান করার জন্য গল্প এভাবি লিখি নি।

এবার নওরিন–আর ইসরাকের মধ্যে কখনো রাগ কখনো ভালো এটা নিয়ে কিছু কথা বলি,
স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক গুলো এমনই হয়।টক ঝাল মিষ্টি সব মেশানো থাকে।
যেখানে ভুলবোঝাবুঝি থাকলে তাদের মধ্যে দুরত্বের সৃষ্টি হয়।আবার সব মিটে গেলে কাছা কাছি আসে।যদি গল্পের প্রেক্ষাপট কিছুটা আলাদা।

আমাদের সমাজে,অনেক মেয়েরা আছে যারা সামন্য কয়টা যৌতুকের জন্য স্বামীর হাতে মার খেয়েও দাঁত কামড়ে পড়ে থাকে।সেল্ফ রেসপেক্ট দিখিয়ে চলে যায় না।
শ্বাশুড়ি হাজার অপমান করলেও সংসার ছাড়ে না।
আবার স্বামীর অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে বাপের বাড়ি চলে যায় দুইদিন পর সেই স্বামী ক্ষমা চাইলে তারই হাত ধরে আবার সংসারে ফিরে আসে।এটা বাস্তবতা। কোনো মেয়েই চায় না তার সংসার ভেঙ্গে ডিভোর্সি ট্যাগ লাগাতে।অথবা তালাক বা ডিভোর্স সব সমস্যার সমাধান নয়।

ইসরাক নওরিনকে ভুল বুঝেছে।ভুল বুঝে নওরিনকে কষ্ট দিয়েছে।এটা ভুল…যদিও স্ত্রী কে অসন্মান করা এক ধরনের ক্রাইম।বাট সে ভুল বুঝে করেছে কারণ তাদের সম্পর্ক টা শুরুই হয়েছে ভুল বোঝাবুঝির উপর নির্ভর করে।
এবার সিকদার বাড়ির সবার চরিত্র নিয়ে বলি,

প্রিয়োসিনী পর্ব ১৯

আমি তাদের মাঝে রাগ,দম্ভ্য, প্রভাব, অতিরিক্ত বিলাসিতায় বিগড়ে যাওয়া কিছু চরিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি একটু সাইকো টাপস।জিদ্দি,একগুয়ে
ভালো মন্দ মিলিয়ে মানুষ।তাই কাউকেই ১০০% পজিটিভ দেখায় নি।
আর গল্পটা খুব বেশি বড় করার ইচ্ছে নেই আগেই বলেছি।চেষ্টা করবো দ্রুত ইতি টানতে ধন্যবাদ….)

প্রিয়োসিনী পর্ব ২০