প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৩১
তানিশা সুলতানা
জমিদার সাহেবের বড় পুত্র মনোয়ার শান্ত স্বভাবের মাটির মানুষ। বাবার অন্যায়ের প্রতিবাদ সে কখনোই করতে পারে নি তবে সমর্থন ও করে নি। তার নিজস্ব একটা জগত ছিলো। সেই জগত জুড়ে ছিলো বউ এবং ছেলে।
মনোয়ারের প্রথম স্ত্রী আনিকা ছিলেন সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেধাবী মেয়ে। বাবার স্বপ্ন ছিলো উকিল হবে। সেই পথেই হাটছিলেন সে। হঠাৎ মনোয়ারের সাথে দেখা হয়। প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলে মনোয়ার। তারপর দুই বছর পেছন পেছন ঘুরে প্রেমের জালে ফাঁসিয়েছিলেন আনিকাকে।
মনোয়ারের দাদা জমিদার মতিন বেশ পছন্দ করে আনিকাকে। প্রস্তাব পাঠায় বাড়িতে। উচ্চবিত্ত জমিদার পরিবার থেকে প্রস্তাব পাওয়া মানে আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া। আনিকার বাবা আনিস খুশি হয়ে মেয়ের বিয়ের তোরজোর শুরু করেন।
বিয়ের পরে শশুর বাড়ি পা রাখতেই আনিকা বুঝতে পারে জমিদার বাড়ির পুরুষদের চরিত্রে সমস্যা রয়েছে। নতুন বউয়ের দিকে লালসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন দুই দেবর।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
সব উপেক্ষা করে সংসার করার প্রতিজ্ঞা করে। দেবরদের শুধরানোর কথা ভাবে। তখন বুঝতে পারে নারী পাচারের চক্র। অন্যায়ের সাথে কখনোই আপোষ করে না আনিকা। তাই ঘোর প্রতিবাদ জানায়। মনোয়ারের কাছেও নালিশ জানায়।
কিন্তু আনিকার কথা কেউ আমলে নেয় না। ততদিনে আনিকার পেটে অভির অস্তিত্ব টের পেয়েছে আনিকা।
দিন যায় মাস যায় জমিদারদের নারী পাচারের রহস্য উন্মোচন হতে থাকে। নিরীহ অনাথ মেয়েদের চোখের পানি ভাসতে থাকে আনিকার চোখে।
অতঃপর পুলিশের সাহায্য নেওয়ার হুমকি দেয় আনিকা। জমিদার সাহেব ঢেড় বুঝতে পারে এই মেয়েকে হালকা ভাবে নিলে চলবে না। মুখ বন্ধ করাতে হবে। হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন তার বড় পুত্র মনোয়ারকে।
বউয়ের থেকে ছেলেকে দূরে করতে দ্বিতীয় নারীর সাহায্য নেয়। উত্তেজনা মূলক ঔষধ খাইয়ে ছেলের কক্ষে পাঠায় অন্য নারী।
বাবার চক্রান্ত ধরতে অক্ষর মনোয়ার নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে পরনারীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।
হাসপাতালের বেডে প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা আনিকা বার-বার দরজার দিকে তাকাচ্ছিলেন স্বামীর আশায়।
আনিকা যখন দুই হাতে চেট চেপে চিৎকার করে কাঁদছে মনোয়ার তখন অন্য নারীর অধর সুধা পান করছে। চাওনি যখন আনিকার কাপড় আগলা করে বাচ্চা বের করার প্রস্তুতি নিচ্ছে মনোয়ার তখন অন্য নারীর কাপড় খুলে নরম দেহের ভাজে সুখ খুঁজছে। কিছু মুহুর্তের জন্য আনিকার মনে হচ্ছিলো সে বাঁচবে না। মরণ যন্ত্রণায় যখন ছটফট করছিলো আনিকা মনোয়ার জন্য কামুক উত্তেজনায় বেসামাল হচ্ছিলো পরনারীর সঙ্গে। ঘন নিঃশ্বাসে মুখরিত হচ্ছিলো গোটা কক্ষ।
সন্তান যখন দুনিয়াতে ভূমিষ্ট হলো তখন মনোয়ার শরীরের ক্ষুধা নিবারণ করে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে।
চিকন স্বরে কেঁদে ওঠে ছোট বাচ্চা। হাত পা নারিয়ে গলা ছেড়ে চিৎকার করে নিজের আগমন বার্তা দেয় গোটা জমিদার বাড়িকে। মতিন তার কক্ষ হতে শুনতে পায় সেই কান্নার স্বর। ছটফট করে ওঠে সে। কারুকাজে নির্মিত লাঠি ভর দিয়ে দ্রুত পায়ে ছুটতে থাকে আতুরঘরেরদিকে। মাঝপথে মমতা বেগমকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিনি।
“বড় বউ আমার নাতীর ঘরের পুতি আইছে। মিষ্টি বিলাইতে কও গোটা পাড়ায়। ডাকো সাহেবরে। দশটা গরুর ব্যবস্থা করতে কও। পাঁচ দিয়ে গরু মেরে আকিকা দিয়া বেটার নাম রাখমু আমি৷
শশুরের মুখের ওপর কথা বলার সাহস ছিলো না মমতা বেগমের। তাই তিনি ছুটে স্বামীর কক্ষে। ছেলে হওয়ার সংবাদ দেওয়াতে সাহেব খুশি হয়। মমতা বেগম এতক্ষণে আতুরঘরে ঢুকে অভিকে কোলে নেয়। চুমুতে ভরিয়ে দেয় মুখ-মন্ডল।
গভীর রাত। পূর্ণতা হাঁটু মুরে বসে আছে বিছানায়। হাতে তার ডাইরি । এই ডাইরিটা অভিরাজের। ডাইরির ওপরে গোটাগোটা অক্ষরে লেখা রয়েছে নামখানা। পূর্ণতা বুঝতে পারে নিজের জীবনের ঘটনা লিখে রাখা হয়েছে এই ডাইরিতে। ডাইরিখানা মূলত অভিই দিয়েছে পূর্ণতাকে।
এক গুচ্ছ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিলো পূর্ণতা অভির দিকে। কোনো প্রকার উত্তর না দিয়ে অভি ডাইরিটা হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলো পূর্ণতার। এবং বলেছে “এখানেই রয়েছে তোমার সকল প্রশ্নের উত্তর”
বিছানার আরেক পাশে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে অভি। পূর্ণতা দেখে। চোখের পলক ফেলে না। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে পৃথিবীর সব থেকে শুদ্ধ পুরুষটির দিকে।
মনে মনে আওড়ায়
“যদি কখনো জানতে পারি। আপনিই ছিলেন পাপের রাজ্যের রাজা।
কথা দিলাম আপনার বুকে ছুড়ি চালাতেও দুবার ভাববো না আমি।”
দূরে কোথাও কুকুরে কুকুরে বোধহয় ঝগড়া বেঁধেছে। একদল কুকুর ঘেউ ঘেউ করে যাচ্ছে। সেই শব্দে ঘুম ভাঙে অভির। কপাল কুঁচকে টিপটিপ করে আঁখি মেলে তাকায়। প্রথমেই নজর আটকায় বাচ্চা বউয়ের দিকে। কপালে তিনটে ভাজ পড়ে অভির। হাই তুলে বলে ওঠে
“বসে আছো যে?
পূর্ণতা ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায় অভির মুখপানে। কি মায়াময় মুখখানা। যেনো কোনো মায়ারাজ্যের রাজপুত্র। কিন্তু কে বলবে? এই মায়াবী মুখখানার আড়ালে রয়েছে আলাদা এক রহস্য। মুহুর্তেই পূর্ণতার মেজাজ বিগড়ে যায়।
চিবিয়ে চিবিয়ে জবাব দেয়
“ভাবছি কিভাবে খু ন করা যায় আপনাকে।
বাঁকা হাসে অভি। পূর্ণতার হাত ধরে এক টানে বুকে এনে ফেলে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আলতো করে চুম্বন এঁকে দেয় অধরে। হতভম্বপূর্ণতা কিছু বলারও সুযোগ পায় না।
“তুমি ছুঁয়ে দিলেই তো আমি খু ন হয়ে যাই জান।
পূর্ণতা কটমট চোখে তাকায় অভির মুখপানে। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা চালায়। কিন্তু অভির পুরুষালি শক্তির সাথে পেরে ওঠে না। অতঃপর হতাশ হয়ে ঘাপটি করে পড়ে রয়ে লোমশযুক্ত প্রসস্থ বুকে। ইচ্ছে করে গভীর চুম্বন এঁকে দিতে।
অভি পূর্ণতার চুলের ভাজে চুমু খায়। এক হাত পূর্ণতার মাথায় দিয়ে হাত বুলিয়ে দেয়
“ভালোবাসি পূর্ণতা। ভীষণ ভালোবাসি তোমায়। তুমিই আমার সুখ। তোমাতেই পরিপূর্ণ আমি।
পূর্ণতার আঁখি পল্লব ভারী হয়ে আসে। হৃদয়ের আকুলতা বাড়তে থাকে। উপচে পড়া আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে ঠোঁট উল্টে কেঁদে ফেলে। দুই হাতে জড়িয়ে ধরে অভিরাজের গলা।
কান্না গিলে গিলে বলে
“একবার বলুন আমি যা দেখেছি সব ভুল। আমার এমপি সাহেব সৎ এবং শুদ্ধ পুরুষ। আমি যে সহ্য করতে পারছি না এমপি সাহেব। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আমার। হেরে যাচ্ছি আমি। আমার অহংকারের পতন হচ্ছে।
“তোমাকে ছুঁয়ে বলছি পূর্ণতা
তুমি ছাড়া আমার জীবনে দ্বিতীয় কোনো নারী নেই। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তোমার এমপি সাহেব তোমাতেই সন্তুষ্ট থাকবে। কখনো যদি পরনারীর চিন্তা আমার মাথায় আসে তখনই যেনো আমার মৃ ত্যু হয়।
একটু থেমে অভি আবার বলে
প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৩০
“তুমি যা দেখেছো ভুল নয়। মনার সাথে আমাকে এক ঘরে বন্দী করে দেওয়া হয়েছিলো। আমার সাথে ঘনিষ্ঠ হতে মনা
নিজের কাপড় খুলে ফেলেছিলো এবং সেটাই ক্যামেরা বন্দী করেছে আমাকে হুমকি দিতে। আমাদের সম্পর্কে ফাটল ধরাতে।