প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৩২

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৩২
তানিশা সুলতানা

জমিদার বাড়িতে আজকে একটা বিশাল ঘুর্ণিঝড় আসতে চলেছে বেশ বুঝতে পারছে অভি। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেছি পূর্ণতার এক কথা “সে বাড়িতে ফিরবে”
অভির ইচ্ছে ছিলো আরও একটা দিন শশুর বাড়িতে কাটানোর। কিন্তু বউয়ের জেদের কাছে হার মেনে নেয়।
গোটা রাস্তা একটাও কথা বলে না পূর্ণতা। জমিদার বাড়ির সামনে গাড়ি থামতেই নেমে পড়ে পূর্ণতা। বড়বড় পা ফেলে বাড়িতে ঢোকে।

জমিদার বাড়ির সকল পুরুষটা সকালের নাস্তা করতে বসেছে। বরাবরই সকলে এক সাথে খাবার খায়। মাটিতে পাটি বিছিয়ে সকলেই লাইন ধরে বসেছে থালা নিয়ে। শিউলি একা হাতে খাবার পরিবেশন করছে।
ইফাদ কালকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে। সেও সকলের সাথে খেতে বসেছে। ডান হাত না থাকাতে বা হাতেই খেতে হয় তাকে। কিছু দিনে মোটামুটি অভস্ত হয়ে উঠেছে।
ইমন ইশানও রয়েছে এখানে উপস্থিত।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

পূর্ণতা সকলের দিকে নজর বুলায়। জমিদার বাড়িতে বেশ কিছু কাজের লোক থাকার পরেও রান্নার দিকটা বরাবরই বাড়ির বউরা দেখে নেয়। কাজের লোকের হাতের রান্না পুরুষদের ঠিক পোষায় না।
মমতা বেগম খানিকটা দূরে বসে পান চিবুচ্ছে। রেশমা শাশুড়ীর পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
পূর্ণতা সরাসরি জমিদার সাহেবের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তিনি সবে এক টুকরো রুটি মুখে পুরতে যাচ্ছিলেন। পূর্ণতার আগমনে থেমে যায়।

“আপনার নাতনিকে বিয়ে দিতে হবে আজকেই এবং এই মুহুর্তেই।
চমকায় সকলেই। খাওয়ার মনোযোগ নষ্ট হয়। দৃষ্টি পড়ে পূর্ণতার দিকে।
মমতা বেগম খেঁকে এগিয়ে আসে

“ হা রা ম জা দি আমার নাতনি বিয়া দিমু কি না দিমু এইডা তুই বইলা দিবি?
পূর্ণতা মাথার ঘোমটা টেনে চোখ পাকিয়ে তাকায় মমতা বেগমের পানে।
“হ্যাঁ আমি বলে দিবো। এমপির বউ আমি। জমিদার বাড়ির বড় বউ। আমার কথাই সব হবে।
মামুন ভাতের থালা ঠেলে দাঁড়িয়ে যায়।
“এই মেয়ে গলা নামিয়ে কথা বলো।

“ আপনি গলা নামিয়ে কথা বলুন। লজ্জাহীন কাপুরুষ। ঘরে বউ থাকতেও পরক্রিয়া করেন। বড় ভাবির সাথে রঙ্গলীলায় মত্ত থাকেন। ওই মুখে কথা বলেন কি করে? কাপুরুষ।
থমথমে খায় মামুন। ললাটে চিন্তার ভাজ পড়ে। এক রত্তির মেয়ে এসব জানলো কি করে?
রীমা মামুনের পাশেই ছিলো। সেও বুঝতে পেরেছে পূর্ণতার কথার মানে। আঁখি ছলছল করে তার। মাথা নুয়িয়ে ফেলে।

অভি ততক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে পূর্ণতার পাশে। মনে মনে বেশ ঘাবড়ে আছে সে। তার বউযে আজকে লঙ্কাকাণ্ড বাঁধাবে বেশ বুঝতে পারছে।
মনোয়ার শান্ত গলায় বলে
“পূর্ণ মা কি হয়েছে ভালো করে বলো। আমরা বুঝতে পারছি না তো।
ঠিক এটারই অপেক্ষায় ছিলো পূর্ণতা। চওড়া গলায় বলতে থাকে

“আপনার বোনের মেয়ে আদরে আদরে চরিত্রহীন হয়ে উঠেছে। বিবাহিত পুরুষদের প্রতি ঝোঁক তার। এতে আমার কোনো সমস্যা ছিলো না। কিন্তু আপনার বোনের কন্যা আমার স্বামীর দিকে নজর দিয়েছে। আমার শুদ্ধ পুরুষকে অশুদ্ধ করে দেওয়ার পায়তারা এঁটেছে। তাকে আমি ছেড়ে দিবো না।

হয় আপনারা এই মুহুর্তে তার বিয়ে দিবেন নয়ত আমি থানা পুলিশ করবো। তারায় তারায় রটিয়ে দিবো জমিদার বাড়ির পুরুষদের মতোই জমিদার বাড়ির মহিলাদেরও চরিত্রে সমস্যা রয়েছে।
মনাও চলেছে এসেছে। সদ্য ঘুম থেকে উঠেছে সে। অবশ্য পূর্ণতার চওড়া গলার আওয়াজেই তার ঘুম ছুটেছে। পূর্ণতার সম্পূর্ণ কথাই মনা শুনতে পেয়েছে।
গটগট পায়ে পূর্ণতার সামনে এসে দাঁড়ায়

“এই মেয়ে চাপকে তোম
বাকিটা শেষ করতে পারে না। তার আগেই পূর্ণতা ঠাটিয়ে থাপ্পড় বসিয়ে দেয় মনার বা গালে। চমকায় সকলে। অভি শুকনো ঢোক গিলে।
মমতা গর্জে উঠে

“মা***** তোর সাহস কতো?
আমার নাতনি গায়ে হাত তুলিস।
পূর্ণতা আঙুল তুলে মমতাকে বলে
“ আর একটা কথা বললে আপনার গায়েও হাত তুলতে পারি।
দু পা পিছিয়ে যায় মমতা।
ইফাদ নিরব দর্শক। সে কথা বলার সাহস করে না। তবে মনে মনে রাগ পুষে রয়েছে তার। শুধু একটু সময়ের প্রয়োজন। এই রত্তি মেয়ের তেজ ইফাদ ভেঙে দিবেই।
শিউলি অভিকে বলে

“তোমার বউকে সামলাও। ও ভুল করছে।
অভিকে জবাব দিতে না দিয়ে পূর্ণতা জবাব দেয়
“ বউকে সামলানোর কিছু নেই এখানে। এমপি সাহেবের বউ অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না।
সাহেব মনে মনে কিছু একটা ভাবে। মামুন তার কানে কানে বলে
“বাবা মেয়েটার তেজ দিন দিন বেড়েই চলেছে।
জমিদার দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে

“ উয় পোকার পাখা গজায় মরিবার তবে। মেয়েটার সময় ঘনিয়ে এসেছে।
খুকখুক করে কেশে গলা পরিষ্কার করে জমিদার বলে
“বিয়ে দিবো ছেলে পাবো কোথায়?
“ছেলে তো সামনেই রয়েছে। চরিত্রহীন মেয়ের জন্য চরিত্রহীন ছেলে। একদম মিলবে দুজনের।
ইফাদের টনক নরে। পূর্ণতা যে তার দিকেই ইশারা করছে বেশ বুঝতে পেরেছে।

“একদম আমাকে টানবে না এসবের মধ্যে। মনাকে আমি কিছুতেই বিয়ে করবো না। এর মতো মেয়েকে বিয়ে করার চেয়ে ম রে যাওয়া ভালো।
ইফাদের উচ্চস্বর।
মুচকি হাসে পূর্ণতা।
“তাহলে ভাবুন আপনি আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন তখন আমার কেমন লেগেছে? আমারও মনে হয়েছে আপনাকে বিয়ে করার চেয়ে ম রে যাওয়া ভালো। একই রকমের অনুভূতি আমারও হচ্ছিলো। জীবনের প্রতি ঘৃণা চলে এসেছিলো।

অনুভব করতে পারছেন? খারাপ মানুষদের জীবনে জড়াতে কতোটা যন্ত্রণা হয়?
মাথা নিচু করে ফেলে ইফাদ। মনাকে বিয়ে করতে একদম চায় না সে। কারণ মনার খারাপ রূপটা ভালো করেই জানা তার। খারাপ চরিত্রহীন মেয়েদের সাথে বিছানায় যাওয়া যায় বিয়ে করা যায় না।
জমিদার সাহেব বলে

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৩১

“ঠিক আছে
আমি ইফাদ এবং মনার বিয়ে দিবো।

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৩৩