প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৩৫

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৩৫
তানিশা সুলতানা

কালো রংয়ের অতি পরিচিত ডাইরি হাতে বাগানের মাঝ খানে বসে আছে পূর্ণতা। শুধুমাত্র পূর্ণতার জন্য বাগানে দোলনা বসানো হয়েছে। সেই দোলনার আশেপাশে পূর্ণতা এবং মিষ্টি ব্যতিত আর কারো যাওয়ার অনুমতি নেই। হালকা নীল রংয়ের শাড়ি পড়েছে পূর্ণতা। অধর কোণে তৃপ্তির হাসি। কয়েক প্রহর যাবত ডাইরিখানা পড়েই যাচ্ছে সে আর কিটকিটিয়ে হেসে উঠছে। তার এমপি সাহেব ভীষণ চতুর মানুষ। সে ভেবেছে পূর্ণতা কিছু বুঝতে পারে না। বোকা পূর্ণতা। কিন্তু সে কি জানে না? তার বউও ভীষণ চতুর?

কালো রাঙা ডাইরি খানা অভিরাজ লিখে এটা কি পূর্ণতা জানে না?
অবশ্যই জানে। প্রথম থেকেই জানে।
আজকেও লিখেছে। তবে আজকে হাতের লেখা ভিন্ন। হয়ত অন্য কাউকে দিয়ে লিখিয়েছে৷
কি লেখা ডাইরিতে?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“প্রিয় পূর্ণতা
আমি আছি তো। আর সারাজীবন থাকবো। তোমার নরম তুলতুলে হাতে নকশা আঁকা চুড়ি মানায়। অশ্র নয়৷
তুমি নিশ্চিন্তে থাকো। তোমার মা বাবা আর ভাইয়ের দিকে কেউ চোখ তুলেও তাকাতে পারবে না৷ ভরসা রাখো আর ভীষণ ভালো থাকো।

এই লেখাটুকু আহামরি কিছু না। তবে পূর্ণতার কাছে ভীষণ দামি। বাবা মায়ের দায়িত্ব যে পুরুষ নিয়েছে সেই পুরুষটিকে পূর্ণতা নিজের থেকেও বেশি ভালো বাসতে চায়। জীবন যৌবন উজার করে দিতে চায় তার জন্য।
তবে ইদানীং পূর্ণতার মনে অন্য একটা চিন্তা বাসা বেঁধেছে। চিন্তার মানুষটি হলো ইফতিয়ার চৌধুরী। ইফতিয়ার পূর্ণতাকে পছন্দ করে ভালোবাসে এতে বিন্দুমাত্র সমস্যা নেই পূর্ণতার। যা খুশি করুক। কিন্তু ভালোবাসা নিজের মধ্যে রাখা উচিত ছিলো না কি? সবাই জাহির করে নিজের ভালোবাসার কথা বলতে হবে?

নেহাৎ অভি ভীষণ ভালো মানুষ। কোনো স্বামী কি মেনে নিতে পারবে? তার স্ত্রীকে কেউ ভালোবাসি বললে?
আজকে পূর্ণতার কানে এসেছে গ্রামে বিশাল হাসপাতাল হচ্ছে। পূর্ণতার নামে হাসপাতাল হচ্ছে। সেই হাসপাতালের মালিক পূর্ণতা।
এটা মেনে নিতে পারছে না সে। এতোটা বাড়াবাড়ি করার কোনো মানে ছিলো না।
পূর্ণতা ভেবে ফেলে ইফতিয়ারের সাথে কথা বলবে।

পরনের গহনা গুলো খুলতে ব্যস্ত মিষ্টি। মনে তার রং লেগেছে৷ হৃদয় পুলকিত হচ্ছে। নাম জানা অনুভূতিরা আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিচ্ছে। ক্ষণে ক্ষণে অধর কোণায় হাসি ফুটে উঠছে। জীবন এতো সুন্দর কেনো?
শিউলি মিষ্টির এতো সুখ দেখে ভ্রু কুচকে এগিয়ে আসে। সাহায্য করতে থাকে গহনা খুলতে।
শিউলি বলে

“মিষ্টি শুনলাম ইফতিয়ার হাসপাতাল বানাচ্ছে। সেখানে বিনামূল্যে চিকিৎসা করা হবে গ্রামের মানুষদের। বিদেশ থেকে বড়বড় ডাক্তার হায়ার করে আনবে ইফতিয়ার।
অধর কোণের হাসি চওড়া হয় মিষ্টির। হবু স্বামীর এইরকম সিদ্ধান্তে গর্বে বুক ভরে আসে। খুশিতে দুই হাতে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে শিউলির কোমর। মুখ লুকায় মায়ের বুকে।
শিউলি বিরক্ত হলেও প্রকাশ করে না। হাত বুলিয়ে দিতে থাকে মিষ্টির মাথায়

“মা আমি কতো ভগ্যবতী। আমার আল্লাহ দুহাত ভরে দিচ্ছে আমায়। পৃথিবীর সব থেকে ভালো মা আমার। সব থেকে ভালো ভাইয়া আমার। ভালো ভাবিও আমার। আর ভালো বরও আমার হচ্ছে। আমি তো দমে দমে শুকরিয়া আদায় করেও সৃষ্টি কর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ব্যর্থ হবো।
শিউলি মিষ্টির দুই গালে হাত দিয়ে বলে

“কিন্তু মা
তোমার ভালো বর তো পূর্ণতার নামে হাসপাতাল খুলছে। শুনলাম পাগলের মতো ভালোবাসে পূর্ণতাকে। হিংসা হয় না পূর্ণতাকে?
“ না।
হিংসে কেনো হবে?
“বোকা তুই মিষ্টি।
“ এভাবেই ভালো আমি। চালাক হতে চাই না।
“মানুষ চিনতে তো শিখবি?
“ যদি কাছের মানুষদের চিনে ফেলি তাহলে বাঁচবো কি করে? বোকারা প্রকৃত সুখী। আমি সুখীই থাকতে চাই।
শিউলি চিন্তায় পড়ে যায়। মিষ্টির গলার স্বর বদলে কেনো গেলো? বোকা গাঁধাটা এতো পেঁচিয়ে কথা বলতে শিখলো কবে? তার মনের মধ্যে কি চলছে? পূর্ণতার বিরুদ্ধে উসকাবে কি? না থাক। আজকের মতো এইটুকুই যথেষ্ট।

পতিতালয় জমিদারদের তৈরি। আজ থেকে বিশ বছর আগে তৈরি হয় এই পতিতালয়। জমিদারদের পোশাকের ব্যবসা ছিলো। বিদেশ থেকে তিনজন লোক এসেছিলো পোশাক দেখতে। তারা বাঙালি পোশাক বিদেশে প্রচার করতে চাচ্ছিলো।

ঝড়বৃষ্টির রাত। জমিদার সাহেব অভির মা অনামিকা, বাড়ির সুন্দরী অল্প বয়সর কাজের মেয়ে ললিতা এবং জমিদারের ভাইয়ের বউ সুমিতাকে পাঠিয়েছিলো বিদেশি লোক তিনজনকে আপ্যায়ন করতে। তিনজন সরল মেয়ে খুশি মনে গিয়েছিলো জমিদারদের নতুন বাড়িতে। এক তালা বাড়িটা। ভীষণ সুন্দর দেখতে ছিলো। বাড়ির ভেতরে পা রাখতেই বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তিনজন দানবের মতো পুরুষ ঝাঁপিয়ে ওড়ে ওদের ওপর। অমানবিক শারিরীক নির্যাতন করে। যাবে সহজ ভাষায় ধর্ষণ বলা হয়।

সেইদিন থেকেই পতিতালয়ের উৎপত্তি। সেই বাড়িতে এখন ৫৬ জন নারী রয়েছে। যাদের টাকার বিনিময়ে প্রতি রাতে ভিন্ন ভিন্ন পুরুষদের কাছে শুতে হয়।
ইফতিয়ার একটা কাজে পতিতালয়ে পা রাখে। দশ বারোটা মেয়ে এসে ইফতিয়ারকে টানতে থাকে তাদের কক্ষে যাওয়ার জন্য।
তখনই ইফতিয়ার দেখে অভি একটা রুম হতে বের হচ্ছে শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে। উসকোখুসকো চুল আর শুকনো মুখখানা। ভ্রু কুচকে অভিকে পর্যবেক্ষণ করে ইফতিয়ার। ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠে বাঁকা হাসি। মেয়েদের সরিয়ে এগিয়ে যায় অভির দিকে।

“অভিরাজ তাহলে পরনারীর স্পর্শে মাতোয়ারা হয়?
অভি ইফতিয়ারের দিকে তাকায়।
“আপনি এখানে?
“ টেস্ট করতে আসলাম কেমন হয় পতিতালয়ের মেয়েদের আদর।
“আচ্ছা

বলেই অভি চলে যেতে নেয়। ইফতিয়ার বলে
“ পাঁচ নাম্বার রুমে যেতে চাচ্ছি। শুনেছি সে না কি মারাক্তক হট।
রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে অভির। হাত মুষ্টি বদ্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে
“তাকে হট বলবে না।
সে তোমার গুরুজন।
“গুরুজন?

তাকে পতিতালয়ের বে ই শ্যা বানাতে পেরেছো আমি হ ট বলতে পারবো না?
অভি জবাব দেয় না। শুধু বলে
“পূর্ণতাকে ভালোবাসো তুমি। সে বউ আমার। নিশ্চয় আমার বুকে পূর্ণতাকে মানতে কষ্ট হয় তোমার। কিন্তু পরিস্থিতির চাপে কিছু বলতে পারো না।
আমি আর তুমি একই পথের পথিক।
অভিরাজ চলে যায়। ইফতিয়ার মনে মনে বলে
“তুমি ভীষণ ভালো মানুষ অভি। এতো নরম মন কেনো তোমার? বেঁচে থাকতে হলে মায়া কাটাতে হয়। তুমি যাদের ভালোবেসে দুর্বল হয়ে পড়েছো। তারা তোমাকে মারার জন্য ওঁত পেতে আছে। কবে বুঝবে তুমি?

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৩৪

ভর দুপুরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছে পূর্ণতা। শাড়ি ছেড়ে সালোয়ার কামিজ পড়ে বেরিয়েছে। উত্তেজনায় মৃদু কাঁপছে পূর্ণতার হাত পা। ওড়না দ্বারা মুখ ঠেকেছে। কাঠফাঁটা রোদ্দুরের শরীর পুরে যাচ্ছে। রাস্তাঘাটের জনসংখ্যা কমে এসেছে। পূর্ণতা শহরের পিচ ঢালা রাস্তা পেরিয়ে গ্রামের সরু রাস্তায় পা রাখে।

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৩৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here