প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৩৪

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৩৪
তানিশা সুলতানা

“তোমার নামে লিখে চিঠি দিলাম হাওয়াই উড়িয়ে
তুমি আমার বাঁচার কারণ হৃদয়ে রেখো জড়িয়ে!!
পূর্ণতার দিকে নজর রেখে মনে মনে আওড়ায় অভি। আজকাল মনটা বড্ড আনচান করে। হারানোর ব্যাথা হৃদয় নাড়িয়ে দেয়। “সুখের দিন বেশিদিন স্থায়ী হয় না” কথাটা মস্তিষ্কে সারাক্ষণ বিচরণ করে। ছোট বেলায় মাকে দেখেছে।

মা এবং তার জীবন ছিলো রূপকথার মতো। কিন্তু হঠাৎ দমকা হওয়া সবটা এলোমেলো করে দিয়েছিলো। মাত্র কয়েকটা ঘন্টা ছোট্ট অভিরাজকে এতিম বানিয়েছিলো। আজও মনে পড়ে মায়ের আত্নচিৎকার। চোখের সামনে ভাসে র ক্তা ক্ত মায়ের দেহখানি। পোস্টমর্টেম এর রিপোর্ট এর লেখাগুলো আজকে ভুলে নি। অভিরাজের ফুলের মতো মায়ের গায়ে নরপিশাচের ছোঁয়া লেগেছিলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আবারও কি সেই দমকা হওয়া আসবে? ভাসিয়ে নিবে সব সুখ? কেঁড়ে নিবে পূর্ণতার রূপী ফুলকে? আরও একবার এতিম হবে কি অভিরাজ?
বুক চিঁড়ে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসে। তারই সামনে গভীর মনোযোগ দিয় বই পড়ছে পূর্ণতা। লম্বা চুল গুলো ছড়িয়ে আছে বিছানায়। কলম ঠোঁটের ভাজে গুঁজে কিছু একটা চিন্তা করছে। কি অপূর্ব দৃশ্য।

সোফা ছেড়ে পূর্ণতার দিকে এগিয়ে আসে অভিরাজ। বসে পড়ে পূর্ণতার পাশে। যত্ন করে খোঁপা তুলে দেয় পূর্ণতার চুলে। পূর্ণতার মনোযোগ নষ্ট হয়। অভির পানে তাকায়। বরাবরের মতো ডুবে যায় বিলাই চোখ দুটোতে। কিছু তো একটা আছেই ওই চোখে। যা পূর্ণতাকে মুগ্ধ হতে বাধ্য করে।
“এমপি সাহেব দিলে তো মনোযোগ নষ্ট করে। পড়ছিলাম আমি।
কপাট রাগ দেখিয়ে ঠোঁট চৌকা করে বলে পূর্ণতা। অভি পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে চুলের ভাজে চুমু খেয়ে জবাব দেয়
“ ঠোঁট ফুলাবে না বউ। খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে।

পূর্ণতা চিমটি কাটে অভির বাহুতে। বয়াথা না পেলেও মিছামিছি “আহহ” শব্দ করে ওঠে। থেমে যায় পূর্ণতা। আলতো করে হাত বুলিয়ে দেয় আঘাত দেওয়া স্থানে।
“খেয়ে ফেলুন। না করছে কে?
“না থাক। বাচ্চা বউ। রিক্স নিবো না।
“মোটেও আমি বাচ্চা না। বড় হয়ে গিয়েছি। এখন তো বাচ্চা জন্ম দেওয়ার বয়স আমার।
“ আরেহহহ
বাচ্চা চাইছো?

লজ্জা পায় পূর্ণতা। লাজুক হেসে মাথা নুয়িয়ে ফেলে। পূর্ণতার লজ্জা বুঝতে পেরে অভি আবারও বলে
“কি নাম রাখা যায় বলো তো আমাদের মেয়ের।
“মেয়ে হবে না তো। আমাদের ছেলে হবে।
“ আচ্ছা ছেলেই হলো। তো ছেলের কি নাম রাখা যায়?
পূর্ণতা একটু ভেবে জবাব দেয়

“আমাদের ছেলের নাম রাখবো আরিয়ান। আর মেয়ে হলে ইভা।
অভির ললাটে ভাজ পড়ে। ইভা? কিন্তু কেনো? ইফতিয়ারের নামের সাথে মিল রেখে? তাহলে কি পূর্ণতার মনে ইফতিয়ারের জন্য দুর্বলতা তৈরি হচ্ছে?
মস্তিষ্ক অশান্ত হয়ে অভির। হাত আলগা করে ফেলে। আঁখিদ্বয় জ্বলে ওঠে
পূর্ণতা তখন বলে ওঠে

“ইভার চাচাদের সকলের নাম ই দিয়ে কিন্তু বাবার নামই শুধু অ দিয়ে।
চাচাদের তো অধিকার আছে তাদের একমাত্র রাজকন্যার নাম তাদের নামের সাথে মিলিয়ে রাখার। তাই ইভা রাখবো।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে অভি। শুধু শুধু আজাইরা কথা ভাবছিলো। এটা ভেবেই ঠোঁটের হাসি ফুটে ওঠে যে পূর্ণতার ছোট্ট মস্তিষ্কের কোথাও ইফতিয়ার নামটা নেই। সারাটা জুড়ে অভিরাজের বিচরণ। আর কি চাই?

“পূর্ণ
ধরো আমি কোনো ভুল করে ফেললাম। বা কখনো তুমি জানতে পারলে মস্ত বড় অপরাধী আমি। আমায় কি ক্ষমা করবে?
না কি কঠিন শাস্তি দিবে?
আলতো হেসে পূর্ণতা জবাব দেয়
“আপনাকে আঘাত করার শক্তি আমার নেই। তবে নিজেকে আঘাত করার সাহস আছে। যদি কখনো ঠকে যাই। তাহলে সেই দিনই হবে এই দুনিয়ায় আমার শেষ দিন।
আর জবাব দেওয়ার সাহস হয় না অভিরাজের। চুপ করে দেখতে থাকে প্রেয়সীকে।

আজকে ইফতিয়ার চৌধুরী ঠোঁটের কোণে হাসি লেগেই আছে। ইরিন ছোট ছোট চোখ করে ইফতিয়ারকে পর্যবেক্ষণ করছে। এতো খুশি কেনো সে?
সুঠাম দেহে সাদা রংয়ের শার্ট জড়িয়েছে। সিল্ক চুল গুলোতে একটু জেল এর ছোঁয়া লাগিয়ে ভালো করে পরিপার্টি করে নেয়। ক্লিন সেভ করেছিলো কিছুদিন আগে। হালকা দাড়ির দেখা মিলেছে ফর্সা গালে।
সব মিলিয়ে দারুণ লাগছে। ইরিন মনে মনে কয়েকবার মাশাআল্লাহ আওড়ায়।
আমেনা বেগম এবং ইসমাইল চৌধুরীও তৈরি হয়েছে। একমাত্র ছেলের জন্য সমন্ধ নিয়ে যাচ্ছে একটু সাজুগুজু না করলে চলে?

মিষ্টির জন্য বিদেশ হতে ডায়মন্ডের নেকলেস আনিয়েছেন তিনি। আজকেই বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে আসবে।
ইরিনের পাশে বসেছে ইফতিয়ার। ভাইয়ের মুখশ্রীতে খুশির আমেজ দেখে ইরিন প্রশ্ন করে
“ভাই তুই এতো খুশি?
“ হবো না আপু?
কতোদিন পরে পূর্ণতাকে দেখবো।
হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে ইরিন।

“তুই পাগল হয়ে যাচ্ছিস ভাই। এভাবে বাঁচা যায় না কি? তুই কেনে মেনে নিচ্ছিস না? পূর্ণতা অন্য কারো বউ।
“তুমি তো এখনো মেনে নিতে পারলে না সাগর ভাইয়া আর বেঁচে নেই। দশ বছর হয়ে গেলো। নতুন করে জীবন সাজাতে পারলে না তো।
ইরিন মাথা নুয়িয়ে ফেলে।
ইফতিয়ার ইরিনের কাঁধে মাথা রাখে

“ সাগর ভাইয়া দুনিয়াতে নেই দশ বছর হয়ে গেলো। পৃথিবীর কোথাও খুঁজে তুমি তাকে একটু দেখতে পারবে না। তবুও তাকে ভালোবাসো। তার জায়গা অন্য কাউকে দিতে পারছো না।
আর পূর্ণতা বেঁচে আছে। ইচ্ছে করলেই আমি তাকে দেখতে পাচ্ছি। তাহলে আমি কি করে ভুলবো?
আপু ভালোবাসা কখনোই ভোলা যায় না। হ্যাঁ ভাগ্যে নেই বলে ছোঁয়ার অধিকার পাই নি। তাই বলে ভালোবাসবো না? ভুলে যাবো?
ইরিন দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে

“এটা কেমন ভালোবাসা? কাল রাতে তুই জমিদার বাড়ির ছোট ছেলেকে খুন করেছিস। এবং জমিদার বাড়িতে ভুল খবর পাঠিয়েছিস যে “মামুন কাজের জন্য শহরে গিয়েছে”
তুই তো খুনি হয়ে যাচ্ছিস।
“পূর্ণতা পাপ করতে দিবো না আমি। আর পূর্ণতার ইচ্ছেও অপূর্ণ রাখবো না।

মিষ্টিকে নিজ হাতে সাজিয়ে দিচ্ছে পূর্ণতা। হাসি নেই মিষ্টির মুখে। মমতা বেগম তখন থেকে বসে আছে ওদের পাশে। আসলে তিনি দেখছে পূর্ণতা ঠিকঠাক সাজাতে পারছে কি না?
সাজাতে সাজাতে পূ্ণতার গলা শুকিয়ে আসে। হাত বাড়িয়ে টেবিল থেকে পানি গ্লাস নিতে গিয়ে নিচে পড়ে যায়।
আর তখনই মমতা বেগম খেঁকিয়ে বলে ওঠে
“একটা কাজও করতে পারে না। খালি পারে গিলতে
পূর্ণতা ভেংচি কেটে বলে

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৩৩

“হুমম তারপর?
“বলি স্বামীর বাড়ির ভাত খাওয়া অতো সোজা না। রূপ দেখাইয়া বিয়া করলেই খালি হয় না। কি ভাবছিলা তুমি?
স্বামীর টাকা আছে পায়ের ওঠে পা তুলে বসে বসে খাবো। কাজ করতে হবে না?
“নাহহহ
ভেবেছিলাম স্বামীর কুটনী দাদি আছে। সে নেচে নেচে খাইয়ে দিবে আমি শুয়ে শুয়ে গিলবো।

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৩৫

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here