প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৩৩

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৩৩
তানিশা সুলতানা

পূর্ণতার দাপটে ইফাদ এবং মনার বিয়ে দিতে বাধ্য হয় জমিদার সাহেব। ঘরোয়া ভাবে কাজি ডেকে বিয়ে সম্পূর্ণ করা হয়। রেশমা বেগম আঁচলে মুখ ঢেকে কেঁদে চলেছে। নিজের ছেলের পাশে মনাকে মানতে নারাজ সে। ইফাদের চোখে মুখেও বিরক্তির ছাপ।

স্বভাবতই ছেলেরা বিয়ের করার ক্ষেত্রে সাধারণ এবং শালীন মেয়ে খোঁজে।
গোটা বিয়ের সময়টাতে চুপ ছিলো অভি। বউয়ের কান্ডকারখানা দেখতে ব্যস্ত সে। কে বলবে? এই মেয়ে সদ্য পনেরোতে পা দেওয়া কিশোরী? তাকে তো পূর্ণ বয়ষ্ক যুবতী মনে হয়।
যেমন রূপের ঝিলিক তেমন দাপট। মনে মনে সন্তুষ্ট অভি। আসলেই সৃষ্টিকর্তা প্রতিটা মানুষের জন্য সঠিক জীবন সঙ্গী বাছাই করে রেখেছেন।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

অভির ওয়ালেট হতে মোটা অঙ্কের কিছু টাকা বের করে কাজির হাতে ধরিয়ে দেয় পূর্ণতা। হাসি মুখে বলে
“ওনাদের জন্য দোয়া করবেন চাচা। তারা যেনো ভালো মানুষ হয়ে উঠতে পারে।
কাজি পূর্ণতার মাথায় হাত বুলিয়ে চলে যায়।
মনা পূর্ণতার মুখোমুখি দাঁড়ায়। চোখে চোখ রেখে বলে

“ কাজটা একদম ভালো করলি না তুই। তোকে আমি খু ন করে ফেলবো।
মনা বেশ অনেকটা লম্বা পূর্ণতার থেকে। ধবধবে ফর্সা গায়ের রং। উজ্জল চেহারা। পোশাক আশাক গুলোতেও আভিজাত্যের ছোঁয়া। পাতলা সরু ঠোঁট দুটোতে হালকা লিপস্টিকের ছোঁয়া রয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে গতকাল রাতে লিপস্টিক না মুছেই ঘুমিয়েছিলো৷
মৃদু হাসে পূর্ণতা। দুই হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট গলায় বলে

“আপনার আমাদের স্কুলের আজিম স্যারের সাথে অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। তার সংসারটা ভাঙতে বসেছে আপনার জন্য। ইফতিয়ার চৌধুরীকে বাজে প্রস্তাব দিয়েছেন আপনি। সে আপনাকে প্রত্যাখ্যান করাতে তার বোনকে অপহরণ করানোর বুদ্ধি সাজিয়েছেন।
এই অবদি ঠিক ছিলো। আমি সবটা জেনেও চুপ ছিলাম। কারণ ওনাদের থেকে আপনি আমার বেশি আপন।
কিন্তু আপনি ভুল জায়গায় হাত বাড়িয়েছেন। পূর্ণতার এমপি সাহেবের দিকে হাত বাড়ানোর সাহস হলো কি আপনার?

আমার এমপির দিকে বাজে দৃষ্টিতে তাকানোর স্পর্ধা কে দিয়েছে?
আপনার চোখ দুটো খুলে লুডু খেলবো আমি। মনে রাখবেন।
পূর্ণতার চোখ দিয়ে যেনো আগুন বেরুচ্ছে। ভয় পায় মনা। দু পা পিছিয়ে যায়। ঘাবড়ায় অভি নিজেও। এতো কথা কিভাবে জানলো পূর্ণতা?
পূর্ণতা আবারও বলে ওঠে

“আশা করবো এখন থেকে ভালো হয়ে যাবেন। দেহ ব্যবসায় ছেড়ে স্বামী সংসার নিয়ে ভাববেন। ভালো স্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করবেন।
ইফাদ প্রস্থান করে। মনাও চলে যায়। হাসে পূর্ণতা। অতঃপর সকলের উদ্দেশ্যে বলে
“ খেতে বসুন সবাই। আমি খাবার পরিবেশন করবো আজকে।

কেউ কিছু বলার সাহস করে না। ভদ্র লোকের মতো খাবারের আসনে বসে পড়ে। অভিও বসে। ইমন ইশান পূর্ণতাকে সাহায্য করার জন্য একে একে খাবারের সকল জিনিস আনতে থাকে।
নিজ হাতে জমিদার বাড়ির সকল পুরুষদের খাবার পরিবেশন করে পূর্ণতা। পাক্কা গিন্নির মতো সকলের থালায় ভাত তরকারি বেরে দিতে থাকে। জমিদার সাহেব ভেতরে ভেতরে রেগে থাকলেও ওপরে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে। এক রত্তি মেয়েকে তিনি কোনোভাবেই ভেঙে দিতে পারছে না। হারাতে পারছে না। ঠিক নাকের ডগা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। এমন চলতে থাকলে ক্ষমতা রাজত্ব দুটোই হারাবে তিনি।

জমিদারের থালায় দুটো রুটি দিয়ে চলে আসতে নিলেই জমিদার বলে ওঠে
“বড্ড বেড়েছো তুমি। জানো তো যত বাড়তি তত ঘাড়তি।৷
পূর্ণতা আরও একটা রুটি জমিদারের থালায় দিয়ে ফিসফিস করে বলে
“আজকে রাতে একটা পুত্র হারাতে চলেছেন আপনি।

আপনার বেহায়া বেয়াদব কাপুরুষ ছেলে আজকে আমার মায়ের দিকে হাত বাড়াতে যাবে। আর ঠিক তখনই তার হাত দুটো কা টা পড়বে। প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারবে না কথা দিলাম আপনাকে।
জমিদার ঘাবড়ায়। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের দেখা মেলে। আজকে তার ছেলে?
আর খাবার মুখে তুলতে পারে না। থ মেরে বসে থাকা খাবারের দিকে তাকিয়ে। পূর্ণতা বাঁকা হেসে উঠে যায়।
আপন মনে বিরবির করে বলে

“আপনাদের বধিবে যে
এই বাড়িতেই বাড়ছে না
মিষ্টি নিজ কক্ষ হতে বের হয় নি। এমনিতেই বাড়ির পরিবেশ তার পছন্দ না। যত বড় হচ্ছে তত পরিবারের প্রতি বিতৃষ্ণা চলে আসছে তার।
বালিশে মুখ থুবড়ে পড়ে ছিলো সে। ইফতিয়ারে জন্মদিন আজ। সুন্দর একটা উপহার তৈরি করেছে মিষ্টি নিজ হাতে। ইফতিয়ারকে দেবে বলে। কিন্তু ইফতিয়ার যে নেবে না ঠিক জানে সে।
সকাল থেকে কয়েকবার কল দিতে গিয়েও দেয় নি৷ সেই পূর্ণতা পূর্ণতা শুরু করে দেবে। এসব ভাবনার মাঝেই কল বেজে ওঠে। মিষ্টি চমকালেও ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। কোনোনা ইফতিয়ার ছাড়া আর কেউ মিষ্টিকে কল করে না। তারাহুরো করে উঠে বসে কল রিসিভ করে মিষ্টি।

“শুভ জন্মদিন চৌধুরী সাহেব।
ইফতিয়ার প্রতিত্তোরে কিছু বলে না। উল্টে প্রশ্ন করে
“ বাড়িতে ঝামেলা হয়েছে?
“নাহহ
ভাবি মেঝোভাইয়া আর মনা আপুর বিয়ে দিয়ে দিয়েছে।
ইফতিয়ার বোধহয় একটু বিরক্ত হয়। হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে বলে

“ এই মেয়েটা যেচে ঝামেলার মধ্যে গিয়ে পড়ে। এতো পাকনা। নিজের বিপদের কথা একবারও চিন্তা করে না। আবার দেখা হোক আমার সাথে। একদম বকে দিবো আমি।
মিষ্টির খুব করে বলতে ইচ্ছে করে “আপনার অধিকার নেই আমার ভাইয়ের বধুকে বকার। তাকে নিয়ে চিন্তা করার জন্য আমার ভাই রয়েছে” কিন্তু বলতে পারে না।
অপমান জনক কথা বলে হয়ত চুপ করাতে পারবে। মুখ থেকে পূর্ণতা নামটা সরাতে পারবে। কিন্তু হৃদয়? হৃদয় থেকে কি করে পূর্ণতা নাম মুছবে? কি করে হৃদয়ের ব্যাকুলতা কমাবে?”

“আ’ম সরি মিষ্টি। ওর বিপদের কথা শুনলে জাস্ট কন্ট্রোললেস হয়ে পড়ি।
আম্মু একটা সলিউশন দিলো জানো?
অধিক আগ্রহে মিষ্টি সুধায়
“কি সলিউশন?

“ বললো বিয়ে করে নিতে। সারাক্ষণ বউ পাশে থাকলে না কি পূর্ণতাকে বেশি মনে পড়বে না। ভুলে যেতে সহজ হবে। আর আমিও তাই ভাবছিলাম। তুমি কি বলো?
মিষ্টি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে
“আপনি যা চাইবেন তাই হবে। আমার বলার কিছু নেই। আপনি যা সিদ্ধান্ত নিবেন তাতেই আমার সম্মতি রয়েছে।
“আমি কালকেই আম্মু আব্বুকে নিয়ে আসছি তোমার বাড়িতে।
“ হুমম

“রাগ করেছো। ঠিক আছে
ভালো থেকো। রাগ পড়ে গেলে হেসো। নিজের খেয়াল রেখো। আর
থেমে যায় ইফতিয়ার। মিষ্টি বুঝতে পারে কি বলবে। তাই নিজেই বলে
“ নিজের জীবন দিয়ে হলেও আপনার ভালোবাসার জীবন আমি বাঁচাবো। তার খেয়াল রাখবো। চিন্তা করবেন না। ভাবির কিছুই হবে না। সে ভালো থাকবে।

বলেই কল কেটে দেয় মিষ্টি। ভীষণ কান্না পায়। কিন্তু কাঁদে না। মনকে শান্ত করার পায়তারা চালায়।
“বোকা মিষ্টি মানুষটার সঙ্গ পেতে চলেছিস এটাতেই সন্তুষ্ট থাক। ভালোবাসার আশা করিস না। ওইটা বরণ তোলা থাক। পরের জীবনে সুধে আসলে ভালোবাসা আদায় করে নিস৷
ইফতারের কক্ষে পূর্ণতার বিশাল বড় একখানা ফটো টাঙানো রয়েছে। সেই ফটোর সামনে গিয়ে দাঁড়ায় ইফতিয়ার। পূর্ণতার কপালে হাত রেখে আপন মনে বলে

“তোমাকে পাওয়ার দাবি আমি মরার পরেও ছাড়বো না।
আমার পূর্ণতা
জানো কল্পনায় আমি রোজ তোমায় ছুঁয়ে দেই। তোমার সাথে স্বপ্নের রাজ্যে বসবাস আমার৷ সেখানে তুমি আমি একে অপরের পরিপূরক। কে বলে তুমি আমার না?

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৩২

কে বলে তোমাকে ছোঁয়া সাধ্য আমার নেই?
আমি জানি তুমি আমারই
হোক না কল্পনায়। তবুও তো তুমি আমারই

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৩৪