অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ১৬

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ১৬
Mousumi Akter

অজান্তার ওষ্ট কোনে বিশ্বজয়ের হাসি।ভাগ্যক্রমে তার প্রিয় মানুষকে নিজের করে পাওয়ার সুযোগ পেয়েছে।ভাগ্যক্রমে প্রিয় মানুষকে নিজের করে পাওয়ার মত আনন্দ পৃথিবীর অন্য কিছুতে নেই।অজান্তার হৃদয়ে আনন্দের জলস্রোত এবড়োথেবড়ো ভাবে বয়ে চলেছে।খুশিতে পা-গ-ল পারা সে।অন্যদিকে পূর্ণতার চোখের নোনাজলে সাগর ভেসে যাওয়ার মত অবস্থা।

কথায় আছে কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ।কেউ মনের আনন্দ ধরে রাখতে পারেনা, আবার কেউ মনের দুঃখ ধরে রাখতে পারেনা।প্রভাত পেছনে হাত বেঁধে গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে আছে। অপেক্ষা করছে কাজী আসার জন্য।ত্রিশ মিনিট অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে।টুপি মাথায়, দাঁড়ি মুখে সাদা পাঞ্জাবি পরা একজন ভদ্রলোক এসে উপস্থিত হল।উনি যে কাজী সেটা বুঝতে বাকি রইলোনা কেউ।প্রভাত আজ নিশ্চুপ। অন্যদিনের মত বাড়তি কথা নেই, তেজ নেই কিচ্ছুনা।সবার ধারণা প্রভাত হয়ত পূর্ণতা এবং সজলের ব্যাপারে কথা বলতে চাইছেনা।প্রভাত ও পূর্ণতাকে অবিশ্বাস করছে।প্রভাতকে এতটা চুপচাপ আগে কেউ দেখে নি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কাজী আসতেই জমেলা বলল, ” কার বিয়ে আগে হবে? প্রভাত নাকি পূর্ণতার।”
এইবার প্রভাত নড়েচড়ে উঠল।সে সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছিলো।
প্রভাত জমেলার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল, ” প্রভাত এবং পূর্ণতার বিয়ে আগে হবে।”

প্রভাতের উত্তর শুনে সবার মস্তিষ্ক হঠাৎ সচল হল।প্রভাতের নিরবতা এত সময় সবাইকে ভাবাচ্ছিলো।কারণ পূর্ণতার জীবনের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছিলো প্রভাতের সিদ্ধান্তের উপর।একমাত্র প্রভাত-ই ছিল সহস করে কথা বলার মত।যার কথায় সব কিছু এলোমেলো হবার সম্বাবনা ছিলো।
প্রভাতের একটা কথার মানে হঠাৎ কেউ বুঝে উঠতে পারল না।কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগে ওয়াসেল প্রভাতের উদ্দেশ্য বলল,

“তাহলে অজান্তার বাবাকে কল দিয়ে জানিয়ে দিই। কি বলো প্রভাত?”
প্রভাত গম্ভীর চোখ ওয়াসেলের দিকে চোখ তুলে তাকাল।ভ্রু যুগল সুঁচালো করে প্রশ্ন করল, ” হুয়াই?”
প্রভাতের কথার ধাঁচ অন্যরকম শোনালো।ওয়াসেল গভীর বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ। ছেলের কথার ধাঁচ শুনেই সন্দেহপ্রবন হল।এত সময় ধরেও তার সন্দেহ হচ্ছিলো।প্রভাত শেষ অবধি এমন কিছুই করবে।তার ছেলে যে মেয়ে মানুষ পা-গ-ল এটা সে আগেই বুঝে গিয়েছে।কিন্তু বুঝতে দিলনা কিছু।স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিল,

“মেয়ের বিয়ে তা জানবে না।”
প্রভাত ভ্রুঁ কুচকালো।কুঁচকে আসে ভ্রু নিয়ে প্রশ্ন করল, “তার মেয়ের বিয়ের খবর সে তোমাকে দিবে।উল্টা তুমি তাকে দিচ্ছো?”
“কারণ বিয়েটা হঠাৎ করে এখানে হচ্ছে তাই।”
“তার মেয়ের বিয়ে তার বাড়িতেই হবে। এ বাড়িতে কেন? ”
“তুমি সব জেনেও উল্টা-পাল্টা প্রশ্ন করছো কেন বুঝলাম না?পরিস্থিতির জন্য আজ এখানে বিয়ে দিতে হচ্ছে।”
প্রভাত আবার-ও ভ্রঁ সুঁচালো করে প্রশ্ন করল,

“সব বুঝতে পারছি। কিন্তু পাত্র কে? এখানে সজল ছাড়া তো আর কোনো পাত্র দেখছি না।অজান্তার মতো একটা মেয়েতো সজলের মত বাস্টার্ড কে ডিজার্ভ করেনা তাইনা বাবা?”
ওয়াসেল গলা খ্যাঁক করে উঠে বলল,
“সজল কেন হতে যাবে? তুমি থাকতে।বিয়ে হবে তোমার সাথে।”
প্রভাত ওয়াসেলের দিকে ঝুঁকল।একদম ওয়াসেলের মুখের সাথে মুখ নিয়ে আস্তে আস্তে বলল,
“তুমি যদি পাক্কা খেলোয়াড় হও; আমি পাক্কা খেলোয়ার তৈরির মেশিন।”
প্রভাতের কথা ওয়াসেলের কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই ওয়াসেলের চোখ কপালে উঠল।উত্তেজিত কন্ঠে প্রশ্ন করল,

“মানে?”
প্রভাত ঠোঁট উল্টালো। গভীর দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ ওয়াসেলের দিকে তাকিয়ে থেকে উত্তর দিল,
“সাধারণ একটা বিষয় কে এমন জলঘোলা করার মানে ছিলনা।”
“তুমি কোনটাকে সাধারণ বিষয় বলছো।” ওয়াসেল প্রশ্ন ছুড়ল।
“পূর্ণতা আর সজলের বিষয়টাকে।”
“এত বড় ঘটনাকে তুমি সাধারণ বিষয় কীভাবে বলছো?”
প্রভাত এইবার চোয়াল শক্ত করে বলল,

“হ্যাঁ এটা সাধারণ বিষয়। তুমিই এটা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছো।তোমার জন্য পূর্ণতার চোখে পানি।” পূর্ণতার চোখে পানি এটুকু বলার সময় প্রভাতের গলা কাঁপছিলো।কন্ঠে কষ্টের তীব্রতা স্পষ্ট ছিল।পূর্ণতার চোখের পানিই যে প্রভাতের কষ্টের কারণ এতক্ষণে তা বোধগম্য হল সবার।
ওয়াসেল চারদিকে চোখ বুলিয়ে প্রশ্ন করল,
“তুমি কি বলতে চাইছো?”
প্রভাত কপালে দুই আঙুল চালাতে চালাতে বলল,

“এতক্ষণ নাটকীয় রুপে অনেক কথা হয়েছে।এইবার স্পষ্ট কথা শোনো,পূর্ণতার বিয়ে হবে; তবে সজলের সাথে নয়,আমার সাথে।আমি যাকে বউরুপে ভেবে রেখেছি আমার সামনে এত সাহযে অন্য কেউ তাকে পেয়ে যাবে এটা আমি হতে দিব ভাবলে কীভাবে? তোমার ছেলেকে এই চিনলে নাকি।আমার জিনিস অন্য কারো দখলে যেতে দিইনি কোনদিন।সেখানে আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হাতছাড়া করি কীভাবে?”

“তুমি এত কিছু জেনেও পূর্ণতাকে বিয়ে করবে।বাগানে অন্য একটা ছেলের সাথে অকাম করেছিলো।”
“বাগানে ও একটা ছেলের সাথে সুয়ে ছিল, এমনকি আরো দশ জনের সাথে সুয়ে আসুক ;তবুও আমি পূর্ণতাকেই বিয়ে করব।”

প্রভাতের এমন কথা শুনে ওয়াসেল মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।বাপ -ছেলের কথার মাঝে কেউ কথা বললনা।তবে সবাই খুব অবাক হয়ে ওদের কথা শুনলে।এতক্ষনে পুষ্পের দম বন্ধ হয়ে আসছিলো।এইবার ওষ্টকোনে হাসি ফুটল।ওয়াসেল তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,
“তোমার কি একটুও লজ্জা করছে না।এসব নোংরামি জেনেও পূর্ণতাকে বিয়ে করবে।মানুষ তোমাকে ছিঃ ছিঃ করবে না।”

“না লজ্জা করছে না।কারণ আমি জানি পূর্ণতা নির্দোষ। ও কিছুই করেনি।”
“তুমি কীভাবে জানো ও কিছুই করেনি।”
“কারণ আমি পূর্ণতাকে বিশ্বাস করি। চোখ বুজে বিশ্বাস করি।ওর চরিত্রের সার্টিফিকেট আমি দিতে পারি।”
“মেয়ে মানুষের পাল্লায় পড়েছে।অন্ধের মত বিশ্বাস করছে।”

“আমি আমার জীবনসঙ্গিনীকে বিশ্বাস করব নাতো দুনিয়াতে কাকে বিশ্বাস করবো।”
জাহানের মুখে কেমন যেন অজানা এক সুখের হাসি ফুটল।সব কষ্ট নিমিষেই হাওয়া হয়ে উড়ে গেল।সে তো তার মেয়েকে এমন কারো হাতেই তুলে দিতে চেয়েছিলো।জাহানের কেমন যেন নিশ্চিন্ত লাগছে।
চারদিকে নিরবতা।কেউ কোনো কথা বলল না।

প্রভাত পূর্ণতার দিকে তাকাল।পূর্ণতা ফ্লোরে অন্যমনস্ক হয়ে চোখের পানি ফেলছে।প্রভাত পূর্ণতার কাছে গিয়ে বসল। হাঁটু গেড়ে বসল।পূর্ণতার দিকে মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকাল।পূর্ণতার গালে হাত রাখল।পূর্ণতা লাল ফোলা চোখ দুটো নিয়ে করুণ দৃষ্টিতে প্রভাতের দিকে তাকাল।সাথে সাথে দু’ফোঁটা পানি উপচে পড়ল।প্রভাত সেই উপচে আসা চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলল,

“এই পৃথিবীর কাউকে তোমার বোঝানোর প্রয়োজন নেই যে তুমি কিছু করোনি।তুমি নির্দোষ।কারো বিশ্বাস ভিক্ষা চাওয়ার দরকার নেই। আমি তোমাকে বিশ্বাস করি।পৃথিবীর সবার বিশ্বাস উঠে গেলেও আমার বিশ্বাস কখনো উঠবে না।একটায় অনুরোধ আমার সামনে কোনদিন কাদবে না তুমি।আমার যন্ত্রণা হয়।ঝড় হোক, তুফান হোক, সারা পৃথিবী তোমার বিরুদ্ধে যাক, তবুও আমি তোমার পাশে আছি, ভ’য় নেই।

পূর্ণতা প্রভাতের দিকে তাকিয়ে রইলো।তার শুধু কাঁন্না পাচ্ছে।প্রবল কাঁন্নায় ভেঙে আসছে তার বুক।এই পৃথিবীতে সে অসহায়।প্রভাত ও পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে রইলো।পূর্ণতার চোখের পানি প্রভাতের হৃদয়কে কষ্টের তীরে আঘাতের পর আঘাত করছে।কতক্ষণ দু’জন দু’জনের দিকে তাকিয়ে রইলো তার ঠিক নেই।বিরামহীন চোখের পলক স্থীর রইলো।
ওয়াসেল এইবার শক্ত কন্ঠে বলল, “বাবা হিসাবে কি আমার কোনো অধিকার নেই তোমার প্রতি।আমার পছন্দ অপছন্দ কোনো কিছুর গুরুত্ব নেই।”

প্রভাত পূর্ণতার হাতের কব্জি ধরে উঠে দাঁড়াল।খুব শক্ত করে হাতটা ধরে বলল,
“সব কিছুর প্রতি অধিকার আছে।কিন্তু আমার বিয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নেই। এ সিদ্ধান্ত আমার মনের সিদ্ধান্ত, আমার একার সিদ্ধান্ত।হৃদয়ের অনুভূতির সিদ্ধান্ত আমি তোমার উপর কীভাবে ছেড়ে দিই।”
“আমার উপর ছেড়ে দাও দেখি তোমার খারাপ হয় কীনা!”

“যার প্রতি আমার অনুভূতি নেই তার প্রতি তুমি অনুভূতি এনে দিতে পারলে আমি মেনে নিব তোমার কথা।”
“দু’দিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে।বিয়ে হলে সব এমনি ঠিক হয়ে যায়।”
“যার প্রতি অনুভূতি আসেনা, সে নগ্ন হয়ে ঘুরলেও কিচ্ছু অনুভব হয়না।সরি খারাপ ভাষা ইউজ করলাম।”
“তাহলে আমি অজান্তাকে কি বলল।”

প্রভাত অজান্তার দিকে তাকাল।হাত জড় করে মাথা নিচু করে বলল,
“অজান্তা আম রিয়েলি সরি।বাবা হুট করে এমন ঘোষণা দিবে আমি বুঝিনি।তোকে ছোট করতে চাইনি আমি।তুই আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড।তোর প্রতি ভালবাসা আমার বিন্দুমাত্র কম নেই।কিন্তু বিয়ে ; এটা সম্ভব নয়।”
অজান্তার হৃদয়ে প্রলয় উঠেছে।তবুও সে হাসি মুখে বলল,

“ইটস ওকে প্রভাত। পূর্ণতা অনেক কিউট মেয়ে। তুই সুখি হবি।”অজান্তা মনে মনে হিংসেতে পু’ড়’ছে। তবুও প্রভাতের সামনে ভাল সাজার ভান ধরল।
প্রভাত হাসি মুখে বলল, ” থ্যাংক্স অজান্তা।”
প্রভাত এইবার কাজীকে বলল, ” বিয়ে পড়ানো শুরু করুন।”
সজলের মুখে কোনো ভাষা নেই।কোনওমতে এখান থেকে সরতে পারলেই সে বাঁচে। মিন মিন কন্ঠে বলল, “মামা আমি চলে যাচ্ছি।”

প্রভাত এইবার তার প্রখর দৃষ্টি সজলের দিকে ফেলে বলল,
“আরে আরে সজল ভাই। ভাবিকে নিয়ে এত সুন্দর চিঠি লিখলেন।ভাবির বিয়ে দেখে যাবেন না।এই বিয়েতে আপনাকে থাকতেই হবে।”
ওয়াসেল বলল,

“না ও চলে যাক।এত নাটকে ওর থাকা লাগবে না।”
প্রভাত রহস্যজনক হাসি দিয়ে বলল,
“আজ রাত তো থাকতেই হবে।পূর্ণতার সাথে এসব ব্যবহার এর উপহার নিয়ে তবেই বাড়ি ফিরবে।”
পুষ্প বলল, “কি উপহার ভাইয়া?”
প্রভাত পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে বলল, “পায়ের জু’ তা খোলো।”

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ১৫

পূর্ণতা চোখ বড় করে তাকাল।প্রভাত পূর্ণতাকে বলল, “ও না চিঠিতে লিখছিল, তোমাকে আর কোনদিন প্রেম ভালবাসা বিষয়ে বললে তুমি যেন জু’তা দিয়ে মা’ রো। তোমার পায়ের জু’ তা দিয়ে ওর মুখটা সোজা করে প্রথম উপহার টা দিয়ে দাও।সেকেন্ড উপহার টা আমি নিজ হাতে দিব।”
পূর্ণতা সাথে সাথে পায়ের জু’ তা খুলে কতগুলা বাড়ি মা’ র’ ল সজল কে নিজেও জানেনা।পূর্ণতা বা’ ড়ি দিচ্ছে আর প্রভাত হাত তালি দিচ্ছে।

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ১৭