অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ১৭

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ১৭
Mousumi Akter

পূর্ণতার হাতের থা’প্প’ড় খেয়ে সজল এক মিনিট ও দাঁড়াল না। সে পা বাড়াল বাড়ি থেকে বের হবার জন্য।কিন্তু প্রভাত সে পৃথিবীর একমাত্র ঘাড়ত্যাড়া যুবক। এত সহযে সজল’কে ছেড়ে দেওয়ার মত পাত্র সে নয়।সজলকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষা না দিয়ে সে ছাড়বে না।সজল পা বাড়াতেই প্রভাত সজলের হাত টেনে ধরল।সজল গম্ভীর মুখে বলল, “আমার হাত ছাড়ুন প্রভাত ভাই।”

প্রভাত সজলের হাত গায়ের সমস্ত বল প্রয়োগ করে চেপে ধরল।ভেঙে যাবার মত উপক্রম হল।সজল ব্যাথায় কুকিয়ে উঠল।কিন্তু তাতে প্রভাতের ভেতরের কোনো পরিবর্তন হলনা।সে সজলের গাল খুব জোরে চেপে ধরে বলল,
“আমার বউ এর সামান্য উপহার নিয়ে কীভাবে ফিরে যাবি ভাই। আমার দেওয়া উপহার তো এখনো বাকি।মাত্র ট্রেলার দেখেছিস।সিনেমা আভি বাকি হে। বাকি উপহার না নিয়ে ফিরতে পারবি না। আমি তোর জন্য এক্সক্লুসিভ কিছু সারপ্রাইজ রেখেছি।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সজল চরম অপমানে চুপসে আসা মুখ নিয়ে প্রভাতের দিকে তাকাল
সজলের মনে হাজারও প্রশ্ন।কি করতে চাইছে প্রভাত তার সাথে এ বিষয়ে কোনো ধারণা নেই।।সজলের চাহনি দেখে প্রভাত বুঝতে পারল সজল সন্দিহান তার প্রতি।প্রভাত সজলের মাথার চুল টেনে ধরে বলল,
“চেহারাটা এমন চোরের মত দেখাচ্ছে কেন? দেখাবে তো লুচ্চার মত। ”

কথাটা শুনে পুষ্প গাল চেপে হাসল।
জমেলা বলল, “যা হবার হয়ে গিয়েছে, ওকে এবার যেতে দাও প্রভাত।”
ওয়াসেল ও বলল, “এখন আর ওকে আটকে রেখে লাভ কী? তুমি তো পূর্ণতাকে বিয়ে করছো। ওকে ছেড়ে দেও।”
প্রভাত বলল,

” ও নিজ চোখ আমার আর পূর্ণতার বিয়ে দেখবে তারপর রাতে ওকে উপযুক্ত উপহার দিয়ে বিদায় দিবো। আজ রাতে ওকে চৌধুরী বাড়িতেই থাকতে হবে।এটাই আমার ফাইনাল ডিসিশন।”
ওয়াসেল মিনমিন করে বলল,
” আর কি কি অশান্তি করতে চাও তুমি। তুমি আমাকে পয়মাল করে ছাড়বে।”
প্রভাত ওয়াসেল এর দিকে ঝুঁকে বলল,
“চেষ্টা করছি।”

চেষ্টা করছি কথাটা শুনে ওয়াসেলের চোখ কপালে উঠল।তার ছেলে তাকে এসব কি বলে।ওয়াসেলের ওভাবে তাকানো দেখে প্রভাত দুষ্টু হেসে বলল,
“ভ’ য় পেয়ে গেলে নাকি। ভ’য় পেওণা।আপাতত দোয়া করো যেন আগামি বছর নাতি-নাতনীর মুখ দেখতে পারো।”
ওয়াসেল দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
“এক্কেবারে নির্লজ্জ। আমি সব বাবাদের বলব বয়স হলেই যেন তাদের সন্তানদের বিয়ে করিয়ে দেয়।না’হলে আমার ছেলের মত বিয়ে করার জন্য লজ্জার মাথা মুড়ি ঘন্ট রেধে খেয়ে ফেলবে।”

কাজী সাহেব মাথার টুপি ঠিক ঠিক করতে করতে বলল,
“তাহলে কার সাথে কার বিয়ে পড়াতে হবে।রাত তো অনেক হল।শুরু করা যাক।”
প্রভাত কাজীর দিকে তাকিয়ে বলল, ” আপনি শুরু না করে বসে আছেন কেন? শুরু করুন।আর হ্যাঁ খুব লম্বা একটা মোনাজাত ধরবেন।আমার বাবা- চাচা তো নামাজ আদায় করেনা।আমার বিয়ে উপলক্ষে মোনাজাত ধরবে।পুরা রাত কাটিয়ে দিবেন ওরা যেন হাত না নামাতে পারে। সারাজীবনে যত দোয়া লাগে সব ওদের থেকে আদায় করে নিব।”
কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করল।প্রভাত তখন পূর্ণতার হাত ধরে টেনে ডায়নিং এর এক কর্ণারে নিয়ে গেল।শান্ত চোখে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে বলল,

“পূর্ণতা আমি জানি আমি তোমাকে সজলের থেকে রক্ষা করছি।কিন্তু নিজের থেকে রক্ষা করতে পারলাম না।কাউকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে বিয়ে করা অন্যায়।কিন্তু এই অন্যায় আমাকে করতেই হবে।অবশ্য এর জন্য বিশাল বড় দুইটা কারণ আছে।এক আমার বেঁচে থাকার জন্য, দুই তোমাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য।এর মাঝে একটা প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারব। সেটা হল আমার বেঁচে থাকার জন্য তোমাকে প্রয়োজন।তুমি আমার বেঁচে থাকার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন।হৃদয়ের বা পাশে হঠাৎ হঠাৎ জেগে ওঠা তুফান।সেই তুফান কত ভায়বহ তুমি বুঝবে না।

বুকের মাঝে চিন চিন ব্যাথা অনুভবের কারণ তুমি।তুমি চোখের সামনে থাকো।তবুও একান্তে তোমাকে নিয়ে ভাবলে বুকের মাঝে অদ্ভুত এক ব্যাথার সৃষ্টি হয়।সেই ব্যাথা নিরাময়ের কারণ তোমার অগ্নি চোখের চাহনি।তাইতো বারেবার তোমাকে রাগিয়ে দিই আমি।তুমি রেগে গেলেনা কেমন একটা আ’গু’ন আ’গু’ন লাগে তোমাকে।সেই আ’গু’নে পু’ড়ে ছাঁই হওয়ার জন্য ছটফট করি।আমার নির্ঘুম রাত জানে তোমার অস্থিরতায় আমি কীভাবে ছটফট করি।এসব শুনে অবাক হইও না তুমি।আমার তোমার প্রতি ভালবাসার এক কিঞ্চিৎ পরিমান শেয়ার করলাম।এই মুহুর্তে তোমাকে হাজার হাজার কবিতা আবৃত্তি করে শোনালেও তুমি বুঝবে না। আমায় ঘৃণা করো সমস্যা নেই তবে চন্দ্র আর সূর্যের ন্যায় চিরন্তন সত্য হল,’ তোমাকে আমি ভালবাসি। ‘

তোমাকে বিয়ে করার জন্য এই একটা কারণ ই যথেষ্ট। আরেকটা কারণ আছে সেটা তুমি সময়ের সাথে সাথে নিজেই বুঝতে পারবে।আমি এক বুক ভালবাসা নিয়ে তাকে বিয়ে করতে চলেছি যার এক বুক সমান ঘৃণা আমার জন্য।কিন্তু এই ঘৃণায় আমার শক্তি।”

পূর্ণতা প্রভাতের কথার কোনো উত্তর দিলনা। সে জানে এটাই তার নিয়তি। এটাই তাকে মেনে নিতে হবে।এখানে তার কিছু বলা আর না বলায় কিছু যায় আসেনা।পূর্ণতা চুপ থেকে বিয়েতে সম্মতি দিয়ে দিল।রাত বারোটায় ঘরোয়াভাবে প্রভাত আর পূর্ণতার বিয়ে হয়ে গেল।বিয়ে শেষ হতেই প্রভাত বিজয়ের হাসি হাসল। পূর্ণতার সাথে একদম মিশে সবার মাঝে পূর্ণতার কানের সাথে ঠোঁট মিশিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“ভাগ্যক্রমে তোমাকে পেয়ে গেলাম। তুমি আমার জীবনের সেরা প্রাপ্তি পূর্ণতা চৌধুরী। প্রভাত চৌধুরীর অর্ধাঙ্গিনীরুপে তোমাকে স্বাগতম।”

পূর্ণতা গোল গোল চোখে প্রভাতের দিকে তাকাল। চাপা কন্ঠে বলল,
“সবাই দেখছে, রুমভর্তি মানুষ। ”
জমেলা বলল, “বউ এর কানে কি বলছো দাদাভাই।”
প্রভাতের ঠোঁটে মৃদু হাসি।সে হাসতে হাসতে বলল,
” স্বামী -স্ত্রীর গোপন কথা শুনতে নেই।”
“গোপনে না বলে সবার মাঝে বলছো কেন?”
“তোমার চোখ সব দিকে যায় নাকি।”

জাহান যেন আজ নিশ্চিন্ত হল।পূর্ণতার সাথে প্রভাতের বিয়ে হওয়াতে এই পৃথিবীর সব থেকে বেশী খুশী হয়েছে জাহান।জাহান প্রভাতের কাছে গিয়ে বলল,
“বাবা প্রভাত আমার জীবনের বেঁচে থাকার একমাত্র কারণ পূর্ণতা।আজ থেকে আমার অবুঝ মেয়েটা তোমার হাতে দিয়ে দিলাম।আমার মেয়েটার জীবন যেন আমার মত না হয়।”

পূর্ণতা জাহানের দিকে তাকিয়ে কেদে দিল।জাহান বুঝতে পারছে পূর্ণতার এই বিয়েতে সম্মতি ছিলনা।আজ এমন পরিস্থিতিতে বিয়ে হওয়ার জন্য আরো কষ্ট পাচ্ছে।জাহান পূর্ণতার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“মায়ের দোয়া কখনো বিফলে যায়না সোনা।আজকে তুমি যে কষ্ট পাচ্ছো, এই কষ্ট একদিন সুখে পরিণত হবে।”
প্রভাত জাহানকে সালাম করে বলল,

“চাচী আম্মা আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।পূর্ণতাকে আমি ভাল রাখব।এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সর্বশ্রেষ্ঠ সুখী মানুষ রুপে পরিণত করব।”
মানুষের কোলাহল ভাল লাগছে না পূর্ণতার।তার একাকি সময় কাটাতে ইচ্ছা করছে।পৃথিবীর সব কিছুই বিরক্তির লাগছে তার।
মেরি এসে প্রভাত আর পূর্ণতার মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে বলল,
“অনেক সুখি হও দু’জনে।”

প্রভাত পূর্ণতাকে বলল, “তোমার শ্বাশুড়িকে সালাম করো, দোয়া চাও।”
পূর্ণতা মেরির দিকে তাকাল।মেরি মিষ্টি হেসে বলল, “আমার দোয়া সব সময় থাকবে তোমাদের প্রতি। সালাম করা লাগবে না।”
পূর্ণতা মেরির দিকে তাকিয়ে বলল, ” চাচীআম্মা আমার খুব মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে।ঘুমোবো।”
“ঠিক আছে ঘুমোতে যাও।”

পূর্ণতা উঠে দাঁড়াল।প্রভাত ও উঠে দাঁড়াল।প্রভাত উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“কোথায় ঘুমোতে যাচ্ছো?”
“আমার রুমে।”
“আজ থেকে তুমি আমার রুমে ঘুমোবে।”
“কেন?”
“বিয়ের পর বরের সাথে ঘুমোতে হয় জানোনা।”

“জানি, তাই বলে আজ থেকেই।”
“আজ নয় এখন থেকেই। আমি এক সেকেন্ড সময় ও নষ্ট করতে চাইনা।এত যু’ দ্ধ করে বিয়ে করেছি কি বউ ছাড়া ঘুমোনোর জন্য।”
পূর্ণতা বিরক্ত চোখে প্রভাতের দিকে তাকাল।মানুষ কতটা নির্লজ্জ হতে পারে তা প্রভাতকে না দেখলে পূর্ণতা বুঝত না।লজ্জা -শরম একেবারেই কিছুই নেই।মেরি পুষ্পকে বলল,
“যাও পূর্ণতাকে নিয়ে প্রভাতের ঘরে দিয়ে এসো।”

পুষ্প পূর্ণতাকে নিয়ে প্রভাতের ঘরে গেল।পুষ্প হেসে বলল,
“ভালবাসলে ভাইয়ার মত ভালবাসা উচিৎ। দেখলি কীভাবে তোকে নিয়ে যু’দ্ধ করল।এর পরেও আমার ভাইয়ার প্রতি অবিচার করিস না।”
পূর্ণতার এসব নিয়ে কিছুই বলতে ইচ্ছা করল না।প্রভাতের সাথে এক ঘরে ঘুমোনোর কথা ভেবে তার শরীর শিউরে উঠল।প্রভাত তার সাথে কি না কি করবে তার ঠিক নেই।পূর্ণতা কাচুমাচু মুখে বলল,
“আপু আমার ভ’য় করছে।আমি তোমার কাছে ঘুমাব।”

“পা’গ’ লি বিয়ের পর সব মেয়ের ই বরের সাথে ঘুমোতে হয়।”
তখন ই প্রভাত ঘরে প্রবেশ করল। প্রভাত কে দেখে পুষ বের হয়ে গেল।পুষ্প বের হতেই প্রভাত ঘরের সিঁটকিনি লাগিয়ে বিছানায় এসে পূর্ণতার পাশে বসল।প্রভাত বসতেই পূর্ণতা খানিকটা সরে বসে তোতলানো গলায় বলল,
“আপনি কোথায় ঘুমোবেন?”
প্রভাত ভ্র উঁচিয়ে বলল,

“কেন খাটে?”
“খাটে?” পূর্ণতা অবাক হয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ল।
পূর্ণতার প্রশ্ন দেখে প্রভাত কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন করল,
“কেন পাপ হবে?”
“পাপ টাপ না। আপনি খাটে ঘুমোলে আমি কোথায় ঘুমোবো।”
“তুমি আমার বুকে ঘুমোবে।”

“ইম্পসিবল।আমি আপনার সাথে ঘুমোবো না।”
“আমিতো জানি স্বামী স্ত্রী একসাথে না ঘুমোলে পাপ হয়।আমি বেঁচে থাকতে তা হতে দেই কীভাবে?আমি তোমাকে পাপ থেকে বাঁচাতে হলেও আমার সাথে নিয়ে ঘুমোবো।”
“পীর সাহেবের খুব পাপের ভয়।”

প্রভাত মনে মনে বলল, “তোমার সাথে আমাকে দুষ্টুমি করে কথা বলতেই হবে পূর্ণতা।তোমাকে রাগান্বিত করতেই হবে।না হলে আজকের ঘটনাটা মনের মাঝে রেখে অশান্তিতে পুড়বে।”
প্রভাত পূর্ণতার দিকে সম্পূর্ণ ঝুঁকে গিয়ে বলল,
“তুমি কি চাও এখন?”
“যেকোনো একজন খাটে আরেকজন নিচে ঘুমোতে হবে।”

“এটা সিনেমা না।দু’জন মানুষ বিয়ের পরেও আলাদা ঘুমোবে।আমি আমার বউ জড়িয়ে ধরে ঘুমোবো রেগুলার।কারণ আমি অত ভদ্র ছেলে নই। ঘরের মাঝে সুন্দরী বৈধ বউ রেখে তাকে টাচ না করে থাকতে পারব।”
পূর্ণতার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।একটা মানুষ এত বাজে লেভেলের ঠোঁট কাটা ও হয়। ছিঃ। পূর্ণতা কঠিন গলায় বলল,

“দেখুন জোর করে বিয়ে করেছেন ভাল কথা।এখন কি জোর করে গায়ের জোর ও খাটাবেন।”
“নাহলে বাচ্চা হবে কিভাবে?”
“দেখুন আমি আর নিতে পারছি না।এত অশ্লিল কথা কীভাবে বলেন আপনি।”
পূর্ণতার রাগি চেহারা টা দেখে প্রভাত মুগ্ধ চোখে পূর্ণতার দিকে তাকাল।মেয়েটা সত্যি অনেক সুন্দর। রাগলে আরো সুন্দর লাগে।এই মেয়েটাকে ভাল লাগার জন্য এই একটা কারণ -ই যথেষ্ট।প্রভাত পূর্ণতার ঠোঁটের কাছে নিজের ঠোঁট নিয়ে নেশালো গলায় বলল,

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ১৬

“এই আ’গু’ন আ’গু’ন চেহারাটা আমার সর্বনাশের একমাত্র কারণ।আই লাভ ইউ সো মাচ।তোমার সাথে খারাপ কিছু করব না।নিশ্চিন্তে সুয়ে পড়তে পারো।” বলেই প্রভাত বালিশ নিয়ে সুয়ে পড়ল।
পূর্ণতা আধাঘন্টা মত বসে থেকে প্রভাতের পাশে গুটি সুটি মেরে সুয়ে পড়ল।

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ১৮

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here