অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ১৮

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ১৮
Mousumi Akter

সকাল আটটা বাজে।রৌদ্রময় দিনের আরো একটি নতুন দিনের সূচনা হল ধরনীতে।ভোর হতেই চারদিকে পাখির কলরবে মুখরিত হচ্ছে। রঙ বেরঙের পাখির কিচির -মিচির শব্দে ঘুম ভেঙেছে প্রভাতের আরো এক ঘন্টা আগেই। ঘুম ভাঙতেই অনুভব করল ভারী কিছু একটা তার বুকে চাপা পড়েছে।উষ্ণ কিছু একটা থেকে থেকে তার বুকে আছড়ে পড়ছে।এমন উষ্ণতা তো সে আগে অনুভব করেনি।এ যেন অন্যরকম এক উষ্ণতা।

এমন উষ্ণতায় নতুন এক অনুভূতির ছোঁয়া পেল। ভাললাগায় দুলিয়ে উঠল তার দেহ মন।প্রভাতের চোখ খুলতে ইচ্ছা করছে না।চোখ খুললেই যেন এমন মিষ্টি অনুভব বিলীন হয়ে যাবে।এটা স্বপ্ন হলে হোক, কল্পনা হলে হোক তবুও হারিয়ে না যাক এই ভাললাগাটুকু। খানিক সময় অতিবাহিত হল। আর কতক্ষণ জাগ্রত অবস্থায় চোখ বন্ধ করে থাকা যায়। প্রভাত আস্তে করে চোখের পাতা খুলল।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

চোখ খুলতেই চোখ দু’টো আটকে গেল পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট মধুময় দৃশ্য দেখে।সে দেখল তার বুকে মাথা রেখে তাকে খুব শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে পূর্ণতা।দেখতে হুবহু একটা নিষ্পাপ শিশু।যে মুখের অদলে সর্বক্ষণ রাগ আর জিদের ছড়াছড়ি থাকে সেই মুখে মায়াবী এক সুবাস ছড়াচ্ছে। প্রভাত অজানা এক সুবাস পাচ্ছে পূর্ণতার থেকে।সেই সুবাসে সে আরো বেশী মাতোয়ারা হচ্ছে।

প্রভাতের ওষ্টকোনে ভুবনভোলানো মিষ্টি মৃদু হাসি। সেই হাসিতে কোনো শব্দ নেই। সাত সকালে শখের নারী সেচ্ছায় যখন কোনো পুরুষ কে নিজের সাথে আষ্টে -পিষ্টে জড়িয়ে ধরে তখন তার মত ভাগ্যবান পুরুষ পৃথিবীতে দ্বিতীয় কেউ হয়না।প্রভাত যে নারীর কাছাকাছির যাওয়ার জন্য হাজারটা কারণ সৃষ্টি করত আজ সেই নারী নিজেই তার বুকে মাথা রেখে উষ্ণতা ছড়াচ্ছে।সেই উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ল সর্বাঙ্গে।

এমন একটি সকাল প্রভাতের কল্পনায় অজস্রবার এসেছে। কল্পনার চেয়ে বাস্তব অনুভূতি কত মধুর হতে পারে আজ অনুভব করতে পেরেছে প্রভাত।সে চাইছে এই শ্রেষ্ঠ অনুভূতিময় সময়টুকু যেন থমকে যায়।এই সময়টুকু যেন আটকে যায় পৃথিবীর নিয়মের বাহিরে গিয়ে।কিন্তু চাইলেই কি সব সম্ভব হয়।সময়ের কাঁটা তার গতিতে চলছে।প্রভাত মোহবিষ্ট আঁখিযুগলে তাকিয়ে আছে পূর্ণতার মুখপানে।পাতলা ঠোঁট যেন শিল্পির রং তুলি দিয়ে অঙ্কন করা।সরু নাক যেন আলাদা কোনো কথা বলছে।

অদ্ভুত মায়াবী দেখাচ্ছে পূর্ণতার মুখের অদল।বালিশে ছড়িয়ে আছে তার সোনালি চুলগুলো।প্রভাতের চোখে যেন নেশা ধরে গেল।একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ কতক্ষণ নিজেকে সামলে রাখতে পারে।প্রভাত ও পারল না।সে কোথায় যেন হারিয়ে গেল।ইচ্ছা করছে পূর্ণতাকে হৃদয়ের শক্ত শিকলে আবদ্ধ করতে।নিজের ওষ্টদ্বয় নিয়ে এগিয়ে গেল পূর্ণতার কপালের দিকে। পর পর চারটা চুমু এঁকে দিল পূর্ণতার কপালে।জীবনে প্রথম সে কোনো নারীকে এভাবে আকৃষ্ট হয়ে চুমু খেল।

প্রভাতের ওষ্টের ছোঁয়ায় ঘুম ভাঙল পূর্ণতার।লাস্ট চুমুটায় সে ধড়ফড়িয়ে উঠল।স্পষ্ট বুঝতে পারল তার কপালে কারো ঠোঁটের উপস্থিতি।ঘুম ভাঙতেই নিজেকে আবিষ্কার করল প্রভাতের বুকে।এক লাফে সোয়া থেকে উঠে বসল।দ্রুত এদিক সেদিক তাকাল।পায়ের কাছে পড়ে আছে জরজেট ওড়না।পূর্ণতা দ্রুত নিজের ওড়না টেনে গায়ে ভালভাবে জড়িয়ে নিল।বিছানা ছেড়ে লাফ দিয়ে নামল।পূর্ণতা বুঝতে পারল না সে নিজেই প্রভাতের কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরেছিলো।প্রভাতের সারাদিনের ঠোঁট কাটা কথার জন্য সে প্রভাতকেই দায়ী ভাবছে।সাত-সকালে প্রভাতের দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,

“কি করছিলেন কি আমার সাথে হ্যাঁ। ”
প্রভাতের ঠোঁটে মৃদু হাসি।তার হাসি পাচ্ছে।ভীষণ হাসি পাচ্ছে।সোয়া অবস্থায় নিজের চুলে আঙুল দিয়ে চিরুনি করে দুষ্টু হেসে বলল,
“কি করছিলাম বলো।” পূর্ণতার মুখে শোনার জন্য প্রশ্নের বিপরিতে প্রশ্ন করল প্রভাত।
পূর্ণতা তেজের সাথে বলল,

“এত বড় অসভ্য খারাপ কেন আপনি?জানেন না কি করছিলেন”
প্রভাত ভ্রুঁ উঁচিয়ে কৌতুহলী কন্ঠে প্রশ্ন করল,
“কি অপরাধ আমার জানালে উপকৃত হবো।করেছি কি আমি? আনসার মি!”
পূর্ণতার ইতস্তত বোধ হচ্ছে। তবুও বলল,
“আপনি আমাকে চুমু দিলেন কেন?”

প্রভাত এইবার হাসির মাত্রা বাড়াল। তবে হাসিতে শব্দ নেই।নিঃশব্দে হাসল। সুদর্শন পুরুষের এমন হাসি দেখলে মেয়েরা কতক্ষণ হার্টফেল না করে যাবে।প্রভাত ভ্রু নাচিয়ে বলল,
“যেভাবে হাগ দিয়েছিলে আমায় ;বেঁচে গিয়েছো শুকনো চুমু মাত্র চারটা দিয়েছি, চারদিন ধরে ভেজা চুমু দিইনি এটাই তোমার ভাগ্য।”

পূর্ণতা চোখ কপালে তুলল।প্রভাতের কথায় তার মাথা ভনভন করে ঘুরতে শুরু করল।চারদিন ধরে আবার মানুষ চুমু দেয় কেমনে।চুমুর কি আবার প্রকারভেদ আছে। চুমু আবার ভেজা ও হয়।পূর্ণতা নিশ্চিত প্রভাত কোনো অশালীন কথার ইঙ্গিত দিয়েছে।কারণ সে প্রভাত কে হাড়ে হাড়ে চিনে।ঠোঁট কাটা অশালীন কথার হেড মাষ্টার হল প্রভাত।পূর্ণতার চোখ মুখের রিয়্যাকশন দেখে প্রভাত স্পষ্ট বুঝতে পারল পূর্ণতা তার কথা নিয়ে রিচার্জ করছে।পূর্ণতা আরো রাগিয়ে দিতেই প্রভাত বলল,

” হ্যালো কি ভাবছো? নিশ্চয়ই ভেজা চুমু কি বুঝোনি। আগে পরে তো ভেজা চুমু খাওনি বুঝবা কেমনে।কাছে এসো সুইটহার্ট এখনি প্রাক্টিক্যাল ক্লাস হয়ে যাক।”
পূর্ণতা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” এসব অশালীন বিষয়ে জানার কোনো আগ্রহ নেই আমার।সত্যি করে বলুন আমি আপনার কাছে কীভাবে গেলাম?আমি ঘুমিয়ে গেলে কি কি করেছেন আমার সাথে।”

“আরে এত ওভার রিয়্যাক্ট করছো কেন? নিজের বরের কাছেই তো এসছো।এটা পুরাটাই হালাল।পাপ হয়নি তোমার।
“কথা না ঘুরিয়ে বলুন কি করেছেন আপনি? ”
“কি শুনতে চাও?”
“যা করেছেন তাই?”
” বললে কি রিমান্ডে পাঠাবে?”
” আবার কথা ঘুরাচ্ছেন আপনি।”
“সোজাসুজি বলো ইন্টিমেন্ট হয়েছে কীনা সেটা জানতে চাও।”

প্রভাত যে এভাবে সরাসরি কথাটা মুখের উপর বলবে পূর্ণতা কল্পনাও করতে পারেনি। লজ্জায় যেন ম’রে যাচ্ছে।দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“আপনার কাছে আর কোনদিন কিছু জানতে চাইব না।মাফ চাই আমি।”
বলেই ঘরের সিটকিনীতে হাত দিল।প্রভাত শান্ত কন্ঠে প্রশ্ন করল,

“যাচ্ছো কোথায়?”
“বাহিরে।”
প্রভাত আবার দুষ্টুমি করে বলল,
“গোসল করে যাও।”
পূর্ণতা আবার ও সেই অগ্নিচোখের দৃষ্টি মেলে বলল,
“কি কারণে।”

“বিবাহিত দম্পতি আমরা।তুমি সারা দুনিয়াকে বুঝাতে পারবা না আমাদের মাঝে রোমান্টিক কিছু হয়নি। ”
” ছিঃ ছিঃ কত বড় অসভ্য আপনি,অশালীন আপনি।”
বলেই পূর্ণতা দরজা খুলল। প্রভাত এইবার সোয়া থেকে উঠে বসে বলল,
“পূর্ণতা গুড মর্ণিং কে আমাকে জড়িয়ে ধরে আরো বেশী গুড বানানোর জন্য থ্যাংকিউ।রেগুলার এমন গুড মর্ণিং লাগবে আমার।”

“আগামিকাল কীভাবে গুড হয় দেখব।”
তখন ই প্রভাত একটা কাগজ দলা করে পূর্ণতার দিকে ছুড়ে মারল।পূর্ণতা চিঠিটা খুলে দেখল তাতে লেখা,
“প্রভাত চৌধুরীর অর্ধাঙ্গিনীকে জানাই বিবাহিত জীবনের প্রথম সকালের শুভেচ্ছা।আমার অগোছালো জীবনে তোমাকে খুব বেশী প্রয়োজন ছিল।আমার এলোমেলো জীবন টা তুমি গুছিয়ে নিও।”

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ১৭

পূর্ণতার চিঠি পড়া শেষ হতেই নিচ হতে সোরগোল শোনা গেল, বাড়ির গেটের বাইরে কেউ বা কারা সজলকে মে’রে রেখে গিয়েছে।কথাটা পূর্ণতার কানে যেতেই তার সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠল। আবার খু’ ন? তাও সজলকে।সজলের শত্রু কে?

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ১৯

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here