আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ২৬

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ২৬
Raiha Zubair Ripte

-“ সাড়ে চার বছর তৃষা ছিলো গাজীপুর। তৃষা কে যার কোলে দেওয়া হয়েছিল সে আমারই ঠিক করা লোক। সে বিভিন্ন কিডন্যাপিং এর কাজ করে থাকে। আমি সেদিন ইচ্ছাকৃত ভাবেই স্কুলে আগুন টা লাগিয়েছিলাম। জানতাম তন্ময় কে নিয়ে বের হতে দেরি হলে চিত্রা ঠিক আসবে ভেতরে।

সেজন্য ঐ কিডন্যাপিং মহিলা রহিমা কে বলেছিলাম চিত্রার আশেপাশে থাকতে। তো চিত্রা যখন বাচ্চা টাকে রহিমার কোলে দিলো তখনই ও বাচ্চা টাকে নিয়ে রহিমা গাজীপুর চলে যায়। চিত্রা ওর মুখ দেখতে পায় নি সেজন্য ওকে ধরতে পারে নি। ও সাড়ে বছর পালে তৃষা কে। তারপর আমার বিদেশে চলে যাওয়ার ডেট এগিয়ে আসতেই বাচ্চা টাকে এতিমখানার সামনে এনে ফেলে যায় রহিমা।
তারপর রহিমা কে কানাডার টিকিট কেটে দেই ও কানাডা পার্মানেন্টের জন্য চলে যায়।
অধরা থামলো। তৃষ্ণা তাকিয়ে রইলো অধরার পানে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-“ তোমার কি এখনও একটু ও অনুশোচনা হচ্ছে না আপু?
অধরা স্মিত হাসলো-“ না হচ্ছে না। তুই তো রাফি কে ভালোবাসতি। তোরই চোখের সামনে যদি রাফি কে কেউ বিয়ে করতো। দেখতি তোর ভালোবাসা অন্য রমণী কে ভালোবাসছে। তোরই চোখের সামনে তাদের সংসার হচ্ছে পারতি সামলাতে?

-“ তাই বলে নিশ্চয়ই তাদের ক্ষতি করতাম না তোমার মতো।
-“ আমি অতো টাও ভালো নই তৃষ্ণা। আমি তুষার ভাইয়ের কোনো ক্ষতি করি নি।
-“ তার শারিরীক কোনো ক্ষতি করো নি ঠিক আছে। কিন্তু তার কলিজা টাকে তার থেকে আলাদা করে দিয়েছো। এই ব্যাথা শারীরিক ব্যাথার থেকেও গাঢ়।

-“ অযত্নে তো রাখি নি তার কলিজা কে। বেশ ভালো মতোই রেখেছিলাম।
-“ মা ছাড়া একটা শিশু কতটুকু ভালো থাকে?
-“ যতটুকু ই থাকুক না কেনো। তৃষার কোনো ক্ষতি করি নি। আমি জাস্ট চিত্রার থেকে ওর বাচ্চা কে দূরে সরিয়ে বুঝিয়েছি কেমন লাগে কাছের কেউ দূরে সরে গেলে।
-“ তন্ময় টাকেও তো ম্যানুপুলেট করে তার মায়ের বিরুদ্ধে উস্কে দিলে। এটা না করলেও তো পারতে।
-“ চিত্রার সব প্রিয় মানুষ কে আমি ওর থেকে দূরে সরাতে চেয়েছি। শুধু মাত্র চিত্রার কারনেই আমি এতদূর গিয়েছি।
-“ এখন জেলে থাকতে কষ্ট হবে না? রাতুল ভাইয়ের সাথে ওমন টা না করলেও পারতে। ভীষণ ভালোবাসতো ভাইয়া তোমায়।

-“ তার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য আমি নই। তবে একটা রিকুয়েষ্ট করতে চাই রাখবি?
-“ কি?
-“ উনি যেহেতু দ্বিতীয় বার বেঁচে ফিরেছেই,,তখন তাকে দ্বিতীয় বার কারো সাথে জুড়ে দিস। কোনো মিষ্টি একটা মেয়েকে তার বউ হিসেবে এনে দিস। মন থেকে দোয়া করবো তারা যেনো সুখী হয়।

-“ জানি না রাতুল ভাইয়া রাজি হবে কি না। তবে চেষ্টায় কোনো ত্রুটি রাখবো না।
-“ আচ্ছা ভালো থাকিস। আর আসিস না এখানে। ভুলে যাস অধরা নামের আদৌও কেউ ছিলো।
-“ এতো সহজ মানুষ ভুলা!
-“ ঘৃণিত মানুষ কে মনে রেখেই বা কি হবে? ভুলা টাই তো শ্রেয়।
-“ কেনো যেনো চেয়েও পারছি না তোমায় ঘৃণা করতে অধরা আপু। এমন টা না করলে কি এমন হতো? হিংসা, রাগ,দেখলে কতটা নিচে নামিয়ে দিলো তোমায়? তুমি জানো রাহা টাও তো তোমার স্বভাব পেয়েছে। ভয় করছে না জানি তোমার মতো সম্পূর্ণ হয়ে যায় তার স্বভাব।
অধরা স্মিত হাসলো।

-“ না না তোর মেয়ে আমার সব স্বভাব পাবে না। চিন্তা করিস না। কারন তার ভালোবাসার মানুষের সাথেই তো দিচ্ছিস তাকে বিয়ে। মেয়েটা কে নুতন জীবনের জন্য শুভেচ্ছা।
-“ তুমিও কি ফারহানের সাথে নারী পা’চার করার কাজে যুক্ত ছিলে?
-“ না না,,আমি ওসবে যুক্ত নেই। থাকলে তো কোর্টে প্রমাণ ই হতো।
-“ লিমনকে কে মারলো?

-“ ওকে তো ফারহানই লোক লাগিয়ে মে’রেছে। লিমন জানতো না এসবে আমিও জড়িত আছি। লিমন বেঁচে থাকলে আমি,ফারহান ধরা পড়ে যেতাম। সেজন্য লিমন যখন নিজেকে বাঁচানোর জন্য পালাচ্ছিলো,তখন ফারহান লোক লাগিয়ে ওরে উঠিয়ে নেয়। তারপর ভিডিও ধারণ করে যেখানে লিমন সব দোষ স্বীকার করে। তারপর লিমন কে মে’রে ফেলা হয়।

তৃষ্ণা নির্নিমেষ চেয়ে থেকে চলে গেলো আর কিছু বললো না। বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। অধরা তৃষ্ণার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। আজকাল ভীষন ভাবে রাতুল কে নিয়ে। আচ্ছা সত্যি কি এই অপরাধীর পথ টা বেছে না নিলে রাতুলের সাথে সুখে থাকতো সে? কি জানি এতো দ্বিধা এখনও মনে। তবে অনুশোচনা হচ্ছে না কেনো?
তন্ময় বিছানায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। দোলন বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বিকেলের গোধূলি আকাশ দেখছে। ইশ আকাশ টা কি সুন্দর লাগছে!
তন্ময়ের পানি তেষ্টা পেলো। ল্যাপটপে চোখ রেখেই বলল-

-“ দোলন।
দোলন আসলো।
-“ কিছু লাগবে?
-“ হু এক গ্লাস ঠান্ডা পানি আনো।
দোলন নিচে চলে গেল পানি আনতে। তন্ময় পাশ থেকে ফোন টা নিয়ে লারা কে ফোন দিলো।
লারা ডায়েরিটা হাতে নিয়ে তাকিয়ে ছিলো। ফোন কল বেজে উঠায় পাশ থেকে ফোন উঠালো।চোখের জল মুছে ফোন রিসিভ করে বলল-

-“ হু বল।
-“ ঠিক আছিস?
-“ হ্যাঁ।
-“ সত্যি?
-“ হ্যাঁ।
-“ কেঁদেছিস?
-“ না।
-“ মিথ্যা বলিস না। তোকে চিনি আমি। কেঁদে কি হবে যে আর পৃথিবীতে নেই তার জন্য? মুভ অন কর। কাজে জয়েন হ।

-“ হুমম চেষ্টা করবো।
-“ ডায়েরি টা সম্পূর্ণ পড়া শেষ?
-“ না। কিছুটা বাকি আছে।
-“ আর পড়তে হবে না।
-“ না পড়বো।
-“ রাহাতের বিয়ে ঠিক হয়েছে জানিস তো?
-“ হুমম রাহাত ফোন করে জানলো। আচ্ছা রাখি পরে কথা হবে।

লারা ফোন কেটে দিলো। তন্ময় তপ্ত শ্বাস ফেললো। দোলন পানির গ্লাস নিয়ে রুমে ঢুকে এগিয়ে দিলো। তন্ময় পানি টা ঢকঢক করে খেয়ে নিলো। তারপর গ্লাস টা সাইডে রেখে দোলন কে পাশে বসতে বললো। দোলন বসলো। তন্ময় দোলনের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। সেদিন ফারহানের বলা কথাটা এখনও কানে বাজছে। যখন বললো মিনাল হোসেন তার মেয়ে কে পা’চার করার জন্য বিয়ে টা দিচ্ছিলেন। কথাটা সম্পূর্ণ ফেক ছিলো। তন্মদের মাথা টাকে অন্য দিকে ঘুরানোর জন্য। তন্ময় মিনাল হোসেনের সম্পর্কে এ টু জেট তদন্ত করে জেনেছে। মিনাল হোসেন এসবের সাথে কোনো ভাবেই জড়িত না। ডায়েরিতে স্পষ্ট ফাহাদ জানিয়ে গিয়েছে,ফাহাদেরই ফাস্ট নজর পড়েছিল দোলনের উপর। সেজন্য এতোসব প্ল্যান। তবে ফাহাদের মৃত্যু টাতে একটুও খারাপ লাগছে না তন্ময়ের। যার ভাগ্যে যেটা আছে সেটা তো হবেই।

-“ কি দেখছেন ওভাবে?
তন্ময়ের ধ্যান ভাঙে। মুচকি হেসে বলে-
-“ তোমাকে।
-“ আমাকে দেখার কি আছে? এতোদিনে ও কি দেখেন নি আমায়?
-“ সম্পূর্ণ ভাবে দেখতে আর পারলাম কথায়? এখনও কত কিছু দেখা করা বাকি।
চোখ টিপে বলল তন্ময়। দোলনের বুঝতে খানিক টা সময় পোহাতে হলো। যখন বুঝলো কথাটার মানপ তখন লজ্জায় লালা নীল হয়ে গেলো। তন্ময় দোলনের গাল টেনে দিয়ে বলে-
-“ আমার লজ্জাবতী,, জাস্ট বলাতেই এমন লজ্জায় লাল নীল হচ্ছে। প্যাক্টিক্যালি করলে কি তোমায় খুঁজে পাওয়া যাবে?

-“ উফ চুপ করুন না।
-“ আচ্ছা করলাম চুপ। শরীর সুস্থ এখন?
দোলন উপর নিচ মাথা ঝাকালো।
-“ তাহলে আর এতো দূরত্ব আর সইতে পারছি না। ইউ নোও? দূরত্ব সহ্য করা বেশ কঠিন আমার মতো পুরুষের জন্য।
দোলন হন্তদন্ত হয়ে উঠে চলে গেলো। তন্ময় দোলনের তড়িঘড়ি করে চলে যাওয়া দেখে হেঁসে ফেললো।
সাব্বির বাড়ি আসতেই সাব্বিরের মা আর চাচি সাব্বিরের রুমে আসে।

-“ সাব্বির রেডি হয়ে নে,মেয়ে দেখতে যাব।
সাব্বির ভ্রু কুঁচকালো। তিন ঘন্টা ও হয় নি বাসায় এসেছে। সে বলছে মেয়ে দেখতে যাওয়ার কথা! চাচির কথায় মন মেজাজ সব খারাপ হলো সাব্বিরের।
-“ আজই যেতে হবে? বিরক্তিকর চাহনি নিয়ে বলল।
-“ হ্যাঁ আজই যেতে হবে। মেয়ে এসেছে তার ফুপির বাসায়। কাল চলে যাবে।
-“ তাতে আমার কি?
-“ তোর কিছু না। কিন্তু আজ না গেলে আমাদের মেয়ে দেখা আর লাগবে না।
-“ আচ্ছা রেডি হচ্ছি।
সালমা বেগম আর লামিয়া বেগম চলে গেলো।

সাব্বির গোসল করে রেডি হলো। তাদের বাড়ি থেকে দশ মিনিট লাগে রিকশায় যেতে মেয়ে দেখতে যাওয়া বাড়ির দুরত্ব।
মেয়ের বাড়ির জন্য মিষ্টি, ফল,চকলেট নিয়ে নিলো সাব্বির। তারপর মা চাচির সাথে বাড়িতে ঢুকলো। একতলা বিশিষ্ট বাড়ি। বাড়ির সামনে বড় উঠান। উঠানের এক পাশে বাগান। সাব্বির আশেপাশে তাকাতে তাকাতে বাড়ির ভেতর ঢুকলো। মেয়ের ফুপি সাগরিকা বেগম এগিয়ে আসলো। সাব্বির প্যাকেট গুলো এগিয়ে দিলো। সাগরিকা বেগম প্যাকেট গুলো টেবিলে রেখে তাদের বসার ঘরে বসতে দিলো।

এদিকে মিথিলা রুমের ভেতর বসে রাগে কাঁপছে। ঘুনাক্ষরে আগে টের পেলে জীবনেও আসতো না ফুপির বাড়ি। মিথিলার মা পইপই করে ফোনে বলে দিয়েছে সুন্দর মতো করে পাত্র পক্ষের সামনে গিয়ে বসতে। মিথিলা মায়ের উপর দিয়ে আর কথা বলতে পারে নি। এখন শাড়ি পড়ে বসে আছে। সাগরিকা বেগম রুমে ঢুকে মিথিলা কে বলে-
-“ এই মিথি মাথায় সুন্দর করে কাপড় দে। ওরা চলে এসেছে আয়।
মিথিলা রাগ নিয়েই বসা থেকে উঠে মাথায় কাপড় দিলো। সাগরিকা বেগম মিথিলা কে ধরে পাত্র পক্ষের সামনে নিয়ে গেলো।

সাব্বির সোফায় বসে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছিলো। রুমের দরজা দিয়ে মাথায় কাপড় দিয়ে এক রমণী কে আসতে দেখে তাকালো। মুখের দিকে তাকাতেই চমকে গেলো। এ তো তন্ময়ের শালি। মিথিলা এখনও দেখেনি সাব্বির কে। সাব্বির হাসফাস করতে লাগলো মিথিলা কে দেখে। লামিয়া বেগম মিথিলা কে দেখে মুচকি হেঁসে বলে-
-“ মাশাআল্লাহ মেয়ে তো ছবির থেকেও বেশি সুন্দর।
লামিয়া বেগমের কথা শুনে মিথিলা মাথা উঁচু করলো। লামিয়া বেগমের দিকে তাকিয়ে চোখ ফেরাতেই পাশে থাকা সাব্বিরের দিকে চোখ যায়।
অবাক হয়ে বলে-

-“ আপনি এখানে!
সাগরিকা বেগম মিথিলার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ চিনিস সাব্বির কে?
-“ হ্যাঁ। দোলন আপুর জামাইয়ের ফ্রেন্ড।
-“ তাহলে তো আরো ভালো। দুজন দুজন কে আগে থেকেই চিনিস। সম্পর্ক গড়ার আগে এটা ভালো।
সাব্বিরের মা বলল-

-“ মেয়ে তো আমাদের পছন্দ। ছেলেও নিশ্চয়ই আপনাদের পছন্দ?
-“ হ্যাঁ আমার তো পছন্দ। এখন মরিয়ম কে জিজ্ঞেস করে দেখতে হবে।
-“ তাহলে জিজ্ঞেস করে দেখুন। যদি পছন্দ হয় তাহলে আজই আংটি পড়িয়ে রেখে যেতে চাই।
সাগরিকা বেগম সাইডে গিয়ে মরিয়ম মান্নান কে ফোন দিলো।
-“ মরিয়ম হোয়াটসঅ্যাপে দেখ ছেলের ছবি পাঠিয়েছি। পছন্দ হয় কি না দেখতো। আর ছেলেটা নাকি দোলনের জামাইয়ের কোন বন্ধু।
মরিয়ম মান্নান হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকলো। সাব্বিরের পিক দেখে চমকে উঠলো।

-“ আপা এটা তো সাব্বির।
-“ হ্যাঁ। পছন্দ হয়েছে?.
-“ হ্যাঁ হয়েছে।
-“ উনারা আজই আংটি পড়িয়ে যেতে চায় কি বলবো?
-“ পড়াতে বলো। সমস্যা নেই।
-“ আচ্ছা।
সাগরিকা বেগম ফোন কেটে তাদের সামনে এসে বলল-

-“ সমস্যা নেই। আপনারা আংটি পড়াতে পারেন।
সালমা বেগম ব্যাগ থেকে আংটির বক্স বের করে মিথিলার হাতে পড়িয়ে দিলো। সাব্বির পুরো টা সময় চুপ ছিলো। টুকটাক আরো কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে সালমা বেগম রা চলে আসে। চলে আসার আগে সাব্বির একবার তাকিয়েছিল মিথিলার দিকে। মিথিলা ও তখন তাকিয়ে ছিলো। দু’জনের চোখাচোখি হয়। মিথিলা মুখ বাঁকায়। সাব্বির বুঝলো না হঠাৎ মুখ কেনো বাকালো?

তুলি আজ স্কুলে এসেছে পড়াতে। চিত্রা তুষার না করেছিল। কারন তারা চাইছিলো না তাদের মেয়ে স্কুলে গিয়ে আর পড়াক। কিন্তু তুলি না করেছে। ঐ ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাদের পড়াতে গেলে বেশ শান্তি পায় সে। আর নিজের আসল পরিচয় জানার আগে ঐ জব টাই ছিলো তার কর্মসংস্থানের জায়গা। সেটা ছাড়তে পারবে না। তুষার জোর করে নি।
তুলি ক্লাসে পড়াচ্ছে। স্কুলের সকল টিচার রা তুলি কে দেখলেই কেমন একটা নজরে তাকায়। সবাই জেনে গেছে তুলিই তুষারের মেয়ে। এই স্কুলের মালিকের মেয়ে। তাই ইতস্তবোধ করছে কথা বলতে। তুলি সুন্দর করে বলেছে,,মালিকের মেয়ে নয় বরং আগের মতো একজন টিচার হিসেবেই যেনো তাকে ট্রিট করা হয়।
তিন ঘন্টা ক্লাস করিয়ে স্কুল ছুটি হতেই তুলি বাহিরে এসে দেখে সায়ান গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তুলি ভ্রু কুঁচকালো। এগিয়ে গিয়ে বলল-

-“ আপনি এখানে যে?
সায়ান গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। তুলির কথায় চোখ থেকে সানগ্লাস টা খুলে বলে-
-“ আপনাকে নিতে এসেছি।
-“ মানে? আমাকে কেনো নিতে আসবেন?
-“ এমনি ইচ্ছে হলো। গাড়িতে উঠুন,অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি।
-“ আপনি কি ও বাড়ি যাবেন?
-“ হ্যাঁ কেনো?
-“ মামুর সাথে দেখা করতে।
-“ ওহ্ আচ্ছা।

তুলি গাড়িতে উঠে বসলো। সায়ান ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
গাড়ি চলছে নিজ গতিতে,, পিনপিনে নিরবতা গাড়ির মধ্যে। তুলি জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে ব্যাস্ত নগরীকে দেখতে ব্যাস্ত। সায়ান আড়চোখে বারবার তুলি কে দেখছে। বিষয় টা নজরে আসলো তুলির। বাহিরে দৃষ্টি রেখেই বলল-

-“ আড়চোখে বারবার তাকিয়ে না থেকে সম্পূর্ণ দৃষ্টি গাড়ি চালানো তে রাখুন। দূর্ঘটনা থেকে বাঁচা যাবে।
সায়ানের ভ্রু কুঁচকে আসলো। পাশে এমন পছন্দের রমণী বসে থাকলে কি সম্পূর্ণ দৃষ্টি গাড়িতে দেওয়া যায়? যায় না তো। সায়ানের ও যাচ্ছে না।
-“ আমার তাকানো তে কি আপনার অস্বস্তি হয়?
-“ না তেমন টা না তবে…
-“ তবে কি?
-“ গাড়ি চালানোর সময় না তাকানোই ভালো।
-“ আমি ড্রাইভিং-এ বেশ পারদর্শী। ভরসা করতে পারেন দূর্ঘটনা ঘটবে না।
তুলি আর কথা বাড়ালো না,চুপ করে রইলো। বাড়ির সামনে আসতেই নেমে বাড়ির ভেতর ঢুকে গেলো। সায়ান তুলির পেছন পেছন আসলো।

ড্রয়িং রুমে বসেছিল রাতুল তুষার। তুলি আর সায়ান কে এক সঙ্গে বাড়ির ভেতর ঢুকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে আসলো তুষারের। তুলি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। সায়ান রাতুলের পাশে বসলো। রাতুল মুচকি হেঁসে বলল-
-“ কিরে ব্যাটা দুজনে এক সাথে আসলি যে? তুলির স্কুলো গিয়েছিলি নাকি?
সায়ান মাথা চুলকে বলল-

-“ হ্যাঁ, এ বাড়িই তো আসছিলাম,পথের সামনে স্কুল টা পড়ায় তুলি কে নিয়ে আসলাম।
-“ বাহ্ বেশ ভালো।
-“ তা বলো ডেকেছো কেনো?
-“ এই তুমি নাকি আমার মেয়ে কে পছন্দ করে শুনলাম?
তুষারের কথায় সায়ান তুষারের দিকে তাকালো। তারপর রাতুলের দিকে তাকাতেই দেখলো রাতুল ঠোঁট চেপে হাসছে। বুঝতে বাকি নেই রাতুল ই এই কথা বলেছে। সায়ান ভনিতা ছাড়াই বলল-
-“ যা শুনেছেন ঠিক ই শুনেছেন আঙ্কেল। আপনার কি আমাকে অপছন্দ?
তুষার পা থেকে মাথা অব্দি দেখে নিলো সায়ান কে।

-“ অপছন্দ করার মতো কিছু দেখছি না আপাতত।
-“ তাহলে কি মেয়ের জামাই হতে পারি আপনার?
তুষার রাতুলের দিকে তাকালো। রাতুল ইশারায় কিছু বলল। তুষার কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল-
-“ ভেবে দেখবো তোমায় মেয়ের জামাই বানানো যায় কি না।
-“ কত সময় লাগবে ভাবার জন্য, আধা ঘন্টা,এক ঘন্টা?
-“ এক বছর লাগবে।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ২৫

হাই তুলতে তুলতে তুষার বলে।
সায়ান সরু চোখে রাতুলের দিকে তাকায়। রাতুলের পেট ফেটে যাচ্ছে হাসি চেপে রাখায়। সায়ান সামনে না থাকলে উচ্চস্বরে হেসে উঠতো।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ২৭

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here