আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ২৫

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ২৫
Raiha Zubair Ripte

-“ দেখো বাবা বিয়ে যদি করতেই হয় তবে আমি রাহা কেই করবো। বিকজ আই লাভ হার। সো এই রাগারাগি আমায় না দেখিয়ে ঝটপট ফুপি দের বাসায় চলো ফটাফট বিয়ের ডেট ফিক্সড করবে ফুপির ভাই বাবা।
রিয়াদ তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো। ছেলের আব্দাী খানা দেখো। এক্সের দেবর ননদের মেয়ে কে কি না বিয়ে করতে চাইছে! ইচ্ছে করলো রাহাতের ডান গালে থাপ্পড় দিয়ে বাম গাল বেঁকিয়ে দিতে। সিমি পাশে বসে আছে। রিয়াদের মুখ খানা দেখে অনেক কষ্টে হাসি চেপে রেখেছে। ছেলেকে বলতে ইচ্ছে করছে- আহাম্মক রাফির মেয়ে কে না ভালোবেসে তুলি কে বাসতি তাহলে তোর বাপের মুখ খানা জাস্ট দেখার মতো হতো। এক্সের মেয়ে যখন ছেলের বউ আহ একটা বাঙালি নাটক হতো।

কথাটা মনে করেই হো হো করে হেসে উঠলো। পাশ থেকে রিয়াদ বিরক্তিকর চাহনি নিয়ে বলে-
-“ তোমার আবার কি হলো? এমন বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হাসছো কেনো?
সিমি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে রুমে দিকে যেতে যেতে বলে-
-“ একটা জোক্স মনে পড়েছিল সেজন্য হাসি পেলো। জোক্স টা এতো দারুন আহা খুব হাসি পেলো।
-“ বাবা কিছু বলো, যাবে তো কাল ও বাড়ি?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-“ দেখ বাবা জ্বালাস না। প্রেম করার জন্য আর মেয়ে পেলি না হতচ্ছাড়া।
-“ ছিঃ ল্যাঙ্গুয়েজের এ অবস্থা কেনো তোমার বাবা! বাংলা মিডিয়ামে পড়েছো দেখেই ল্যাঙ্গুয়েজের এ অবস্থা, আমার মতো ইংলিশ মিডিয়ামে পড়লে স্মার্ট হয়ে কথা বলতে পারতে। সে যাই হোক কাল কিন্তু যাচ্ছি আমরা ওক্কে?
-“ তোর মা কে নিয়ে যাস তুই।
-“ তুমি যাবে না?
-“ আমি গিয়ে কি করবো? বিয়ে করবি তুই সংসার করবি তুই,আর সংসারে হাতে হাতে হেল্প করবে তোর মায়ের। ডেট আর ফিক্সড করা লাগবে ক্যান কালই বিয়ে পড়িয়ে একেবারে বউ নিয়ে চলে আসিস। কম বাজেটে সব হয়ে যাবে।

-“ ছ্যা বাবা,তুমি কিপ্টামি করছো কেনো? আর দাদা ডাক টা কে শুনবে যখন আমার বাচ্চা হবে? তুমিই তো শুনবে তাই না? সেই অধিকার কি যেচে হারাতে চাইছো? আমার বাচ্চাদের বলে দিব তার দাদার মতো হাড়কিপটে আর দুটো নেই।

রিয়াদ উঠে দাঁড়ালো। এই ছাতার মাথার ছেলের সাথে এখন বকবক করতে থাকলে তারই মেজাজ খারাপ হয়ে যাবে। শালার পুড়া কপাল কেনো ছেলে দিলা মাবুদ। একটা মেয়ে দিতা তাহলে আজ একটা ধমক দিয়ে চুপ করাতে পারতাম। এমন এক ছেলে দিলা যারে এক ধমক দিলে কথায় কথায় বাড়ি ছেড়ে চলে যায়৷ আর পাইছে এক বা’লের চাকরি কিছু বলা যায় না ছ্যাত ছ্যাত করে উঠে।

সাব্বির আজ গ্রামে গিয়েছে দেখে আসবে তার চাচি কেমন হুরপরী দেখে রেখেছে তারজন্য। বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছে সাব্বির বাসের জন্য। আশেপাশে তাকিয়ে হাত ঘড়িটায় সময় দেখে নেয়। তারপর বাস আসতেই বাসে উঠে বসে। একটা ফাঁকা সিট পেতেই সাব্বির সেটায় বসে পড়ে। তার পাশের সিটেই বসে আছে এক রমণী। মুখে মাস্ক পড়ে সিটে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। সাব্বির এক পলক তাকালো। মেয়েটার ইয়া লম্বা চুল গুলো বিনুনি করা। চুল গুলো ভালো লাগলো সাব্বিরের। তারপর চোখের দৃষ্টি সরিয়ে পকেট থেকে ব্লুটুথ বের করে কানে গুঁজে সিটে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে।

পাশে কেউ বসেছে বুঝতে পেরে মিথিলার ঘুম ভেঙে যায়। সোজা হয়ে বসে মুখের মাস্ক খুলে পাশে তাকাতেই তার চোখ কপালে। এ তো সেই ছেলে দোলনের স্বামীর বন্ধু অভদ্র ছেলে। যাচ্ছে টা কোথায়?
মিথিলা যাচ্ছে তার ফুপি দের বাসায়। তার ফুপি জরুরি তলব করেছে তার বাসায় যাওয়ার জন্য। কারন টা তার মা ফুপি জানলেও মিথিলা জানে না।

মিথিলা তড়িঘড়ি করে আবার মাস্ক পড়ে। চায় না এ ছেলের মুখোমুখি হতে।
গাড়ি ধামরাই আসতেই সাব্বির নেমে যায়, সাব্বিরের পরপরই মিথিলাও নেমে যায় বাস থেকে। তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে রিকশা ডেকে চলে যায় ফুপির বাড়ি।
খাঁন বাড়ির ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে রাফি। তার ভালো লাগছে না কিছু। কি করে এতো গুলো বছর কে’টে গেলো? সেই আগের দিন গুলো ভীষণ মনে পড়ছে। বাড়িতে ছিলো বাবা,কাকা,দাদু। তিনজনের কেউই আর বেঁচে নেই। তৃষ্ণা কফির মগ এনে রাফির সামনে ধরে। মন খারাপ হয়ে বসে থাকতে দেখে বলে-

-“ কি হয়েছে তোমার মন খারাপ কেনো?
-“ মনের অসুখ হয়েছে গো। তাই মন খারাপ।
-“ ধূর মনের আবার অসুখ হয় নাকি?
-“ তে হয় না আবার? দেখো আমরা কেমন বুড়ো হয়ে যাচ্ছি।
-“ হ্যাঁ তো?
-“ আমার তো বুড়ো হতে ইচ্ছে করে না। বুড়ো হওয়া মানেই জীবনের শেষ ধাপের দিকে এগিয়ে যাওয়া।
-“ মরণ কে ভয় পাচ্ছ নাকি?
-“ অবশ্যই। তোমাকে ছাড়া থাকতে আমার কষ্ট হবে।
-“ আহা আমি সেজন্য তোমার কবরে একটা কুঁড়েঘর বানিয়ে ঘাঁটি বেঁধে থাকবো। ফাজিল,,এই ফালতু কথা বাদ দিয়ে বলোতো হচ্ছে টা কি?

-“ কি হচ্ছে?
-” রিয়াদ রা আসছে শুনলাম।
-“ হ্যাঁ।
-“ কেনো?
-“ তোমার ঘরে একটা বিয়ের উপযুক্ত মেয়ে আছে না?
-” হ্যাঁ।
-“ তোমার মেয়ে কে তার ছেলের সাথে বিবাহ দিতে আসবে।
-“ কিহ!
-“ হ। এবার আর মাথা খেয়ো না। তোমার চোখের সামনে থেকেই মেয়ে আমার প্রেম করে বসলো!
-“ বাপ মা তো আর কম করে নি। তারই রেশ এটা।

তুষার চুপচাপ বসে আছে খাটে। চিত্রা সারা রুম জুড়ে পায়চারি করছে। রাগে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে। এতোগুলা বছর পর ঐ রিয়াদ আবার তাদের বাড়ি আসবে শুনে। আরো বেশি রাগ হলো যখন শুনলো তুষার আসতে বলেছে ওদের। তুষার চিত্রা কে ছুঁতে পারছে না ছুঁতে গেলেই বারবার অগ্নি দৃষ্টি তে তাকাচ্ছে। তুষার এবার বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। চিত্রা কে জোর করে টেনে ধরে বসালো।

-“ কথা শুনো চিত্রা। ও তোমার এক্স ছিলো তাতে কি। এখন তো ওর আলাদা সংসার আছে,বউ আছে বাচ্চা ও আছে। আর ওরা এমনি এমনি আসছে না। বিয়ে নিয়ে কথা বলতে আসছে?
-“ কার বিয়ে নিয়ে কথা বলতে আসছে ওরা?
“ রাহাত আর রাহার। ওরা দু’জন দু’জন কে ভালোবাসে। এখন তোমার আমার বিভেদের কারণে কি ওদের ভালোবাসা কে জলাঞ্জলি দিতে বলবো? ওদের ব্যাক্তিগত ইচ্ছে পছন্দ আছে। তাই আমাদের ও উচিত ওদের ইচ্ছে কে প্রাধান্য দেওয়া। সেজন্য আসতে বলেছি।

চিত্রা কিছু বললো না। রুম থেকে বেরিয়ে আসলো।
পরের দিন সকালে রিয়াদ,সিমি রাহাত আসলো খাঁন বাড়িতে। চিত্রা সকাল থেকে চুপচাপ রয়েছে। তেমন একটা কথা বলছে না।রাতুল ফোন করে সায়ান কে আসতে বললো। সায়ান ব্যুরো তে ছিলো। ফারাহ্ কে চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। রাতুলের ফোন পেয়ে চলে আসলো খাঁন বাড়ি।
রাহা কে এনে বসানো হয়েছে রাহাত দের সামনে। তুষার আর রাতুল কথাবার্তা বলছে রাফি নীরব দর্শক হয়ে এর ওর মুখের দিকে তাকাচ্ছে।

ডেট ফিক্সড করা হলো আগামী চব্বিশ তারিখ তাদের বিয়ে। দোলন মিষ্টির প্লেট এনে সামনে রাখে। চিত্রা পানির গ্লাস নিয়ে রাখে টেবিলে। চোখাচোখি হয় রিয়াদের সাথে। চিত্রা শক্ত মুক করে তাকায়। রিয়াদ দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। মনে মনে বলে- এ্যাহ এমন ভাবে তাকাচ্ছে মনে হচ্ছে সম্পত্তি লুট করতে এসেছি। বলছি কি শুনে রাখো নেহাৎ জা’ওরা ছেলে এই মেয়ে কে পছন্দ করেছে বলে আসতে হলো। তা না হলে জীবনে পা দিতাম না এ বাড়ি।
মুখ বাঁকালো রিয়াদ। সিমি প্লেট থেকে মিষ্টি নিয়ে রিয়াদের মুখ ঠেসে খাইয়ে দিয়ে ফিসফিস করে বলে-

-“ নাও নাও নাও এক্সের বাড়ির মিষ্টি খাও।
এক্সের বাড়ির মিষ্টি খেতে ভারি টেস্টি।
রিয়াদ মিষ্টি চিবাতে চিবাতে রাগী দৃষ্টি নিয়ে তাকায়। তুলি আজ পার্পল কালারের থ্রিপিস পড়েছে। সায়ান তাকালো তুলির দিকে দোলনের পাশে কেমন দাঁড়িয়ে আছে। রাতুল কে একটা খোঁচা দিলো। রাতুল তাকালো ইশারায় বলল

-কি?
-“ আমার ও তো বিয়ের বয়স হয়েছে মামু। আমার বিয়ের ঘটকালি কবে করবে?
-“ এই তো বাবা সবুর কর। আগে এটা ঠিকঠাক ভাবে হয়ে নিক তারপর।
-“ কতদিন লাগবে?
-“ এই মাস টা সময় দে।
-“ ওকে।
লারা বসে আছে নিজের রুমে। হাতে তার ফাহাদের দেওয়া সেই ডায়েরি যেটা তন্ময় লারা কে দিয়েছে। ডায়েরি টা দেখেই কেমন কান্না পাচ্ছে। লারা ডায়েরি টা খুলল-

-“ সময় টা তখনকার,,যখন আমার বয়স ছয় বছর। আর ফারাহ্ র বয়স আড়াই বছর। সেদিন আমি স্কুলে গিয়েছিলাম। মা বাসায় ছিলো। কি এমন হলো সেদিন জানি না। স্কুল থেকে ফিরে এসে দেখলাম বাবা কাঁদছে বোন কে জড়িয়ে। আমি ও কেঁদে দিলাম বাবার কান্না করা দেখে। জিজ্ঞেস করলাম কেনো কাঁদছো। প্রতিত্তোরে বাবা আমাকে আর বোন কে জড়িয়ে ধরে বলল মা পালিয়ে গেছে অন্য এক পুরুষের সাথে। বাবা এমন ভাবে বুঝিয়েছিল যে মায়ের প্রতি ঘৃণা টা সেদিন থেকেই জন্ময়। বোন কে পালার মতো মানুষ নেই সেজন্য বিডি পাঠিয়ে দিলো।

আমার বয়স যখন দশ তখন বাবা একদিন আমাকে তার আস্তানায় নিয়ে গেলো যেখানে নারী দের আঁটকে রাখা হয়। আমাকে হাতিয়ার স্বরূপ ব্যাবহার করতে লাগলো। টাকার লোভ কি সেটা বুঝাতে লাগলো। এভাবেই বাবার সাথে বাবার এই কাজে আমার যোগ। তারপর বড় হতে লাগলাম। এরমধ্যে একদিন বিডি আসি ফারাহ্ র সাথে দেখা করতে। সেদিন রাস্তায় দোলন কে দেখি রাস্তায়৷ দোলন কে নিয়ে যাচ্ছিল কলেজে ওর ফুপি। আমাদের একটা মেয়ে কম পড়তো। কি করে যেনো দোলন কে নজরে পড়ে গেলো। সেজন্য মিলন কে বললাম মেয়েটার খোঁজ নিতে। মিলন খোঁজ নিয়ে সব জানালো। তারপর প্ল্যান করলাম মিথ্যা বিয়ের। কিন্তু তন্ময়ের জন্য হলে না বিয়ে।

এদিকে তন্ময় রা খোঁজ পেয়ে গিয়েছিল আমরা মালদ্বীপ থাকি৷ রাহাত রা চলে আসলো। লারার সামনে সেদিন ইচ্ছাকৃত ভাবেই আমি গিয়েছিলাম। কারন আমি সবার ব্যাপারে সব খবরা-খবর নিয়ে রেখেছিলা। লারা ভিতু সহজ সরল প্রকৃতির। আমি সেটাকেই কাজে লাগালাম। কিন্তু বোকা মেয়েটা প্রেমে পড়ে গেলো। কি জ্বালানোই টা না জ্বালাতো। কারনে অকারনে মেসেজ ফোন একসময় বিরক্ত হলাম। মনে মনে বলতাম কেনো এই আধপাগলের সাথে দেখা করলাম। আবার মাঝে মাঝে তার দেওয়া সুদর্শন অভদ্র ছেলে ডাক নাম টা মনে করে হেঁসে ফেলতাম। তবে লক্ষ্য ভুললে তো চলবে না। তাই বিডি চলে আসলাম লারার সাথে সব ক্লিয়ার করে। বুঝালাম মেয়েটাকে।

কিন্তু বিডি এসে জানতে পারলাম আমারই মা কে পা’চার করেছে আমার বাবা। কিভাবে জানতে পারলাম জানেন? ফারাহ্ লকাপে সিসিটিভি ক্যামেরা ফিট করেছিলো সবার অগোচরে কারন আমার পক্ষে গিয়ে বাবার সাথে দেখা করা সম্ভব হতো না। তুলি যে তৃষা সেটা ফুটেজ থেকে দেখেই জামতে পেরেছি সে সাথে অধরা যখন বলল আমার মা কে সে পা’চার করেছে। বিশ্বাস করুন সেদিন আমার চাইতে দূর্ভাগা হয়তো পৃথিবীতে আর দুটো ছিলে না। হ্যাঁ মানছি আমি নিকৃষ্ট তবে এতোটাও না। কিন্তু আমার বাবা সব পাড় করে দিছে।

তারপর খোঁজ নিলাম আমার মা কে ঠিক কোথায় পা’চার করা হয়েছে৷ খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম সৌদিতে। এবং গত এগারো বছর আগে আমার মা মা’রা গিয়েছে। তখন এতো কষ্ট হচ্ছিলো যা বলার বাহিরে। কাউকে বলতে পারছিলাম না। ফারাহ্ কে জানতে দেই নি ও সহ্য করতে পারবে না।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ২৪

প্লিজ আপনারাও কেউ বলবেন না। তখনই মনে মনে এঁটে নিয়েছি,ফারহান আহমেদ কে আর বাঁচতে দিবো না। তাই কোর্টের বাহিরে ফারহান আহমেদ কে মা’রার প্ল্যান করি।
লারা বন্ধ করে ফেললো ডায়েরি টা। দমবন্ধ হয়ে আসছে তার। বিরবির করে তামিম ফারুকীর নাম নিলো।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ২৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here