অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ১৫

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ১৫
Mousumi Akter

পূর্ণতা সজলের সাথে বের হল ঠিকই কিন্তু বারকয়েক পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখল প্রভাত তার পিছ পিছ আসে কীনা! কিন্তু সে হতাস হল।অন্যদিনের ন্যায় প্রভাত এলনা।এমন তো হওয়ার কথা নয়। প্রভাত তো তাকে অন্য কোনো পুরুষের সাথে সহ্য করতে পারেনা।সজলের সাথে রাতের বেলা বের হল তবুও প্রভাত এগিয়ে এলনা।

পূর্ণতার মন সন্দিহান হল।সে প্রভাতকে সহ্য করতে পারেনা এমনকি ভাল ও বাসে না।যে কোনো ভাবে সে প্রভাতের থেকে মুক্তি চায়।সে তো এমনটাই চেয়েছিলো প্রভাত যেন তাকে বিরক্ত না করে। তার পিছু না নেয়।তবুও প্রভাতের ইগনোর তাকে যাতনা দিচ্ছে।মনের অজান্তে কোথাও কিছু জমেছে কীনা সেকথা কেউ জানেনা।মেয়ে মানুষ স্বভাবগতভাবে এমন ই।সে ভালবাসবে না তাই বলে অন্য কাউকে ভালবাসবে এটাও সহযে মেনে নিতে চায়না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রাগে পূর্ণতার সমস্ত শরীর জ্বলছে।অস্থির দেখাচ্ছে।বাড়ি থেকে বের হয়ে বাগানের খানিকটা ভেতরে প্রবেশ করল।সজলের সাথে একটা কথা ও বলল না।আচমকা সজল পূর্ণতার হাতের কব্জি চেপে ধরল।আকস্মিক হাত ধরাতে পূর্ণতার হৃদয়আত্মা কেঁপে উঠল।সে ভায়ার্ত চোখে সজলের দিকে তাকাল।পূর্ণতার চাহনি দেখে সজল পূর্ণতার হাত ছেড়ে দিল।ঢোক গিলে বলল, “তোমাকে এমন অস্থির দেখাচ্ছে কেন?”

পূর্ণতা অন্যমনস্কভাবে উত্তর দিল,
“না, কিছুনা এমনি।”
” কেমন যেন দেখাচ্ছে।”
“আপনি থাকুন আমি বাড়ির ভেতরে যাচ্ছি।” হঠাৎ পূর্ণতার মনে হল প্রভাত কে? তাকে দেখাতে অন্য একজনের সাথে কেন আসবে সে।এটা করা একদম তার উচিৎ হয়নি।প্রভাতকে তার অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়ে গিয়েছে।প্রভাত অন্য নারীর সাথে ঘুরুক, যা ইচ্ছা তাই করুক।তাতে তার কিছুই যায় আসেনা।প্রভাত কে সে ঘৃণা করে।তীব্র ঘৃণা করে।প্রভাত তার জীবন থেকে বিদায় হলেই সে বেঁচে যায়।এসব ভাবতে ভাবতে পূর্ণতা হাঁটা দিল।সজল পেছন থেকে আবার পূর্ণতার হাত টেনে ধরে বলল, ” দাঁড়াও পূর্ণতা।”

পূর্ণতা এবার চমকালো না। তবে অবাক হল।সজল আজ হুট হাট তার হাত ধরছে কেন? পূর্ণতা ঘুরে দাঁড়িয়ে নিজের হাত ছুটিয়ে নিয়ে বলল,
“কি সমস্যা সজল ভাই? হুট হাট হাত ধরছেন কেন?”
পূর্ণতা খেয়াল করল সজল ঘামছে।কিছু একটা গড়বড় মনে হচ্ছে পূর্ণতার কাছে।সজল কপালের ঘাম মুছে বলল,
“তোমার সাথে আমার সিরিয়াস কথা আছে পূর্ণতা।”
পূর্ণতার সজলের আচরণ একদম ভাল লাগছে না।বিরক্ত কন্ঠে বলল,

“আমার সাথে আপনার আবার কীসের সিরিয়াস কথা।আর কতবার সিরিয়াস কথা বলবেন।”
“তুমি আমার চিঠি পাওনি।”
“পেয়েছিলাম তো!”
“চিঠিতে আমি যা লিখেছিলাম তুমিতো সেগুলা বললে না।তুমি কি মজা করলে নাকি সত্যি চিঠিতে ওয়াব লেখা ছিল।”
“আমি মজা করব কেন? আপনি তো স্পষ্ট লিখেছেন আমাকে আর কোনদিন প্রেম ভালবাসা বিষয়ক কিছু লিখবেন না।”

” আমি এসব লিখিনি কিচ্ছু। নিশ্চয়ই প্রভাতের হাতে চিঠি পড়েছিল।আর প্রভাত-ই এই চিঠি পাল্টে দিয়েছিলো।”
পূর্ণতা কপাল কুচকালো। কিছুটা অবাক হয়ে বলল,
” প্রভাত কেন চিঠি পাল্টাবে, আপনার চিঠি ওর কাছে কীভাবে যাবে?”
” প্রভাত অনেক ধূর্ত। প্রভাতের পক্ষে অসম্ভব কিছুই নেই।”
” দেখুন সজল ভাই আমার এসব নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতে ইচ্ছা করছে না।এখন আমি যায়।”
সজল আবার পূর্ণতার হাত টেনে ধরে বলল, ” পূর্ণতা তুমিতো এই বাড়ি থেকে মুক্তি চাও? আমি তোমাকে মুক্ত করব।চলো আমার সাথে।”

সজল কেমন যেন চোরের মত বারবার পূর্ণতার দিকে তাকাচ্ছে আবার সামনে পেছনে ডানে বামে তাকাচ্ছে।খুব অদ্ভুত লাগছে পূর্ণতার কাছে।সজলের এমন চাহনি সন্দেহজনক লাগছে পূর্ণতার কাছে।পূর্ণতা স্পষ্ট সজলের চোখে মুখে কামনা দেখতে পাচ্ছে।একদম অস্বাভাবিক দেখাচ্ছে সজলকে। সজল এইবার পূর্ণতার দুই বাহু চেপে ধরে বলল,
” আমার তোমাকে চাই পূর্ণতা। তোমাকে আমার লাগবেই। ”
রাগে পূর্ণতার সমস্ত শরীর জ্বলে উঠল।সজলের এমন স্পর্শ তাকে বিরক্ত করল। গায়ের সমস্ত বল প্রয়োগ করে সজলের গালে থা*প্প*ড় মে*রে বলল,

“আমি প্রভাতকে গিয়ে এখনি বলছি। বার বার আমাকে স্পর্শ করছেন প্রভাত জানলে আপনাকে শে’ ষ করে ফেলবে।”
পুরুষের চরিত্রে যখন খারাপ সত্ত্বা প্রবেশ করে তখন তাদের ভাল-মন্দ, ভ-য় ডর কিছুরই ভ-য় থাকেনা।এমন সময় কারেন্ট চলে গেল।চারদিক ঘুটঘুটে অন্ধকারে ছেঁয়ে গেল।অন্ধকারে কারো মুখ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছেনা।পূর্ণতা অন্ধকারে হাতড়ে পেছনে ঘুরতে যেতেই পড়ে গেল।সজল ফোনের টর্চ জ্বালিয়ে দেখল পূর্ণতা নিচে পড়ে গিয়েছে।পূর্ণতাকে দেখে নিয়ে ফোনের আলো নিভিয়ে দিল।পূর্ণতা বুঝতে পারল তার সাথে খারাপ কিছু হতে চলেছে।

বুকের মাঝে অজানা এক ভয় বাসা বাঁধল।আতকে উঠল সে ভ-য়ে।হৃদপিন্ড থরথর করে কাঁপতে শুরু করল।তার মাথার মাঝে চক্কর দিয়ে উঠল।এই পৃথিবীর প্রতিটা পুরুষের জাতই কি তাহলে চরিত্রহীন।সজলের মত বিশ্বস্ত মানুষ ও কীনা আজ তার সাথে এমন আচরণ করছে।যে সজল কে সে চোখ বুজে অন্ধের মত বিশ্বাস করত সেই সজল ই আজ তার বিশ্বাস ভাঙল।ছোট বেলা থেকে নিজের সব চেয়ে কাছের বিশ্বস্ত বলে যাকে ভেবে এসছে আজ সেই তার বিশ্বাস ভেঙে চুরে চুরমার করে দিল।তাহলেএই পৃথিবীতে কাকে বিশ্বাস করা যায়।

এমনিই পূর্ণতার পুরুষ মানুষের প্রতি নেগেটিভ ধারণা। সজলের এই আচরণ পূর্ণতার মন থেকে বিশ্বাস নামক জিনিস উঠিয়ে দিল।পূর্ণতা ধরেই নিল এই পৃথিবীতে কোনো পুরুষের কাছেই একাকিত্বে, নির্জনে কোনো নারীই সেফ নয়। যত সাধু পুরুষ ই হোক নারীর প্রতি তারা কামুক দৃষ্টি ফেলবেই।নারী হল পুরুষের কাছে ভোগের বস্তু।পূর্ণতার সমস্ত ভ-য় সত্যি করে,বিশ্বাস ভেঙে সজল হুমড়ি দিয়ে পড়ল পূর্ণতার উপর।অন্ধকারে পূর্ণতা কিছু দেখতে পারছে না।তাই আঘাত ও করতে পারছে না।সে শুধু বলছে, “আমাকে ছাড় জানোয়ার, নাহলে খু’ ন হয়ে যাবি। আমি কিন্তু তোকে ছাড়ব না।”

এমন সময় কয়েকজোড়া পায়ের শব্দ শোনা গেল।টর্চের আলো দেখা গেল দূরে।সেই আলো সজল এবং পূর্ণতার চোখের উপর পড়ল। ওয়াসেল গলা খ্যাক করে বলে উঠল, “কে ওখানে?”
সজল সাথে সাথে পূর্ণতাকে ছেড়ে দিল।তখন ওয়াসেল এর সামনে স্পষ্ট হল সজল এবং পূর্ণতা এতক্ষণ অন্তরঙ্গ অবস্থায় ছিল।ওয়াসেল এর সঙ্গে চৌধুরী বাড়ির বাগানের কিছু লোক ছিল।প্রত্যোকের চোখ কপালে উঠল সজলে এবং পূর্ণতাকে এই অবস্থায় দেখে।সজল মাথা নিচু করে দাঁড়াল।ওয়াসেল যা বোঝার বুঝে গিয়েছে।সে তার নিজের মত করে বুঝল।বাকি সবাই ও তাই বুঝল।
ওয়াসেল সজলের দিকে তাকিয়ে চোখ গরম করে বলল,

” এখানে কি হচ্ছে?”
পূর্ণতা জোরে কেদে দিয়ে ওয়াসেলের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
“চাচা সজল আমার সাথে…” এতটুকু বলে আর কিছু বলতে পারলনা।পূর্ণতার শুধু কাঁন্না পাচ্ছে।শরীর কাঁপছে থর থর করে।
ওয়াসেল পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে বলল, “এখানে কি করছিলে তুমি?”

পূর্ণতা কিছুই বলতে পারল না।ওয়াসেল এর ভাব ভঙ্গি দেখে সে বুঝল ওয়াসেল তাকেও অপরাধী ভাবছে।নিজেকে নির্দোষ প্রমান করার মত কোনো উপযুক্ত প্রমান এখন তার কাছে নেই।
ওয়াসেল দু’জনের দিকে তাকিয়ে বলল,
” দু’জনে বাড়ির ভেতরে চলো।”
পূর্ণতা আসার সময় কাদতে কাদতে ওয়াসেল কে বুঝানোর চেষ্টা করল,
“চাচা আমি কিছুই করিনি,সজল আমার সাথে খারাপ আচরণ করেছে।”

কিন্তু ওয়াসেল কোনো কথার জবাব দিলনা।ওয়াসেল বাড়িতে ঢুকেই দেখল ডায়নিং এ প্রভাত আর অজান্তা বসে টিভি দেখছে।ওয়াসেল খুব জোরে ওয়াজেদ কে ডেকে বলল,
“ওয়াজেদ এখনি নিচে আয়,দেখে যা তোর মেয়ের কির্তী।”
ওয়াসেল এর হুংকারে ওয়াজেদ নিচে নেমে এল।সেই সাথে বাড়ির সবাই ডায়নিং এ একত্রিত হল।
অজান্তা ফিসফিস করে প্রভাত কে বলল,

“কি ঘটনা বলতো।আঙ্কেল এভাবে রেগে বাড়িতে প্রবেশ করল কেন?”
প্রভাত গভীর চোখে পূর্ণতার দিকে তাকাল।পূর্ণতার চোখ দিয়ে অবিরাম নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে।প্রভাত তীক্ষ্ণ দৃষ্টি মেলে পূর্ণতার দিকে তাকিয়েই আছে।অজান্তা আবার বলল,
“কি ঘটনা রে।”

প্রভাত থমথমে কন্ঠে জবাব দিল,
“জানিনা, তুইও যেখানে আমিও সেখানে।”
ওয়াজেদ নিচে নেমে এসে বলল, “কি হয়েছে ভাই?”
ওয়াসেল রাগি কন্ঠে বলল,
“ওয়াজেদ তোর মেয়ের কাছে শোন এত রাতে বাগানে কি করছিলো।”
ওয়াজেদ সন্দিহান কন্ঠে প্রশ্ন ছুঁড়ল,
“কেন ভাই কি হয়েছে?”

“যা হয়েছে তা বলার মত নয়। ছিঃ ছিঃ। বাড়ির কাজের লোকদের সামনে মান সম্মান বলে কিছুই আর বাকি নেই।”
“হয়েছে টা কী?”
জমেলা খিটমিট কন্ঠে বলল, ” জোয়ান ছেলে-মেয়ে এত রাতে বাগানে কি করে তা কি তোকে বুঝিয়ে বলতে হবে নাকি।বুঝতে পারছিস না।”
ওয়াজেদ চিন্তিত মুখে পূর্ণতা আর সজলের দিকে তাকাল।ওয়াসেল যা বলছে সে তা স্পষ্ট বুঝতে পারল।তবুও প্রশ্ন চালিয়ে গেল।
ওয়াসেল খিটমিট করে বলল,

“তোর মেয়ে আর সজল অন্তরঙ্গ অবস্থায় বাগানে ছিল।যা দেখেছি তা বলার মত নয়।এত বড় নিকৃষ্ট কাজ তোর মেয়ে কীভাবে করল।”
পূর্ণতার কাদতে কাদতে হেচকি উঠে গিয়েছে।সে হেচকি ওটা অবস্থায় বলল, “চাচা আপনি যা ভাবছেন তা সত্য নয়।আপনি যা দেখছেন তা সত্য নয়।সজল আমার সাথে জোর করছিলো।”
ওয়াসেল দাঁত কিড়মিড় করে বলল,

“শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে হবেনা।আমার চোখের দেখা কি মিথ্যা? ”
ওয়াসেল এইবার সজলের দিকে এগিয়ে গেল।
ওয়াসেল এর চোখ ছুটে যাচ্ছে রাগে।ওয়াসেল সজলের গালে খুব জোরে একটা থা-প্প-ড় মে-রে বলল,
“তোমার দ্বারা এসব আশা করিনি।তোমাদের মাঝে কোনো সম্পর্ক থাকলে আমাকে জানাতে পারতে।আমি দেখতাম বিষয় টা।”

সজল মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।ওয়াসেল প্রভাতের দিকে তাকাল।প্রভাতের মুখে কোনো কথা নেই।সে ডায়নিং এর সোফায় বসে আছে পায়ের উপর পা তুলে।সে প্রখর ভাবে কিছু একটা ভাবছে।নিশ্চুপ বসে সব দেখছে।তাকিয়ে আছে পূর্ণতার মুখের দিকে।ওয়াসেল প্রভাতকে বলল, “প্রভাত দেখো কান্ড, তোমার কি কিছু বলার আছে এতকিছুর পরেও।আমি তোমার কোনো কথায় কিন্তু এ ঘটনার পর মেনে নিবোনা।”
প্রভাত থমথমে মুডে বলল,

“আপাতত আমার কিছু বলার নেই, তুমি শেষ করো।”
পুষ্প, মেরি, জাহান পূর্ণতার পাশে গিয়ে দাঁড়াল।পুষ্প বারবার প্রভাতকে খেয়াল করছে।কেন যেন পুষ্পের মন বলছে পূর্ণতার এই অবস্থা, এই অপমান প্রভাত মেনে নিবেনা।নিশ্চুপ আছে, নিশ্চয়ই বড়সড় বো-ম ব্লাস্ট করবে।মেয়ের কাঁন্না দেখে জাহান ও কাদছে।পূর্ণতা অসহায় এর মত জাহান কে বলছে, “আম্মু তুমি আমাকে বিশ্বাস করো, আমি কিছুই করিনি।কেউ আমাকে বিশ্বাস করছে না কেন?”

মেয়ের কাঁন্নায় জাহানের কঁন্নার মাত্রা বেড়ে গেল।
পূর্ণতা এইবার মেরির দিকে তাকিয়ে বলল,
“চাচি আমাকে বিশ্বাস করুন।”
ওয়াজেদ অগ্নিমূর্তির ন্যায় চোখ নিয়ে পূর্ণতার কাছে এগিয়ে এসে বলল,
“কি করছিলে বাগানে ওর সাথে? কেন গিয়েছিলে এই রাতের বেলা।”
পূর্ণতা কাদতে কাদতে বলল,
“বাবা সজল ভাই আমার সাথে জোর করছিল।আমি গিয়েছি কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নয়।”

পূর্ণতা ওয়াজেদ কে খুব একটা বাবা বলে ডাকেনা। আজ তার অসহায় লাগছে।এই অসহায় অবস্থায় কেন যেন মনে হল তার বাবা তাকে বিশ্বাস করবে।বাবা অন্তত মেয়েকে বিপদ থেকে রক্ষা করবে।তার কলঙ্ক মুছে দিতে প্রতিবাদ করবে।কিন্তু এখানেও ব্যার্থ হল।নিজের বাবাকেও পাশে পেলনা।ওয়াজেদ কঠিন গলায় প্রশ্ন করল,
“ও কি তোমাকে জোর করে নিয়ে গেছিলো?”
“আমি নিজেই গেছিলাম কিন্তু বুঝিনি এমন হবে।সজল ভাই এমন করবে আমার সাথে।”
জমেলা বলে উঠল,

“একটা জোয়ান ছেলের সাথে এত রাতে এমনি বাগানে গেছিলি।তোর না দুইদিন পর প্রভাতের সাথে বিয়ে।অন্য ছেলের সাথে বাগানে চলে গেলি।”
জমেলার কথা পড়তে না পড়তেই ওয়াসেল বলে উঠল,
“এইসব ঘটনার পর প্রভাত কোনদিন -ই পূর্ণতাকে বিয়ে করবে না।আমার ছেলে অন্যোর এঁটো কখনো গ্রহন করবেনা।”

পূর্ণতাকে ঘিরে এই নোংরা কথাগুলো পূর্ণতা সহ্য করতে পারছে না।নিজের পরিবারের মানুষের কাছে তার নিজেকে খুব বেশী অসহায় মনে হচ্ছে।নিজের আপনজনরাই কেউ তাকে বিশ্বাস করছে না।
ওয়াসেল এর কথা শুনে মেরি বলল,
“আপনার ছেলের বিষয় এ ছেলেকে ভাবতে দিন।আপনি কেন এসব বলছেন?”
ওয়াসেল মেরির দিকে চোখ পাকিয়ে বলল,

“তোকে এসবের মাঝে কথা বলতে কে বলেছে? আর এক কথাও বলবিনা।”
জমেলা বলল, “ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দে বাড়ি থেকে।”
ওয়াজেদ বলল, আগে ওর মাকে দূর করব তারপর ওর মেয়েকে।
এটুকু বলেই ওয়াজেদ জাহানের দিকে তেড়ে গিয়ে বলল,
“এই বান্দীর বাচ্চা তোর মেয়ে নিয়ে নাম।দূর হ আমার বাড়ির ত্রিসীমানা থেকে।”
জাহান ভয়ে চুপ আছে।তার মেয়ের জীবনে কি ঝ-ড় উঠতে চলেছে সে জানেনা।
ওয়াসেল বলল,

“কোথায় নামবে? নেমে গেলেই কি সমাধান হয়ে যাবে।”
ওয়াজেদ বলল,
“তাহলে কি করব?”
“যার সাথে অকাম করছে তার সাথেই বিয়ে দিতে হবে।এত বড় ঘটনা জানাজানির পর এই মেয়েকে তো বাইরের কেউ বিয়ে করবে না।কোনো ছেলেই আর বিয়ে করতে চাইবেনা।তাই সজলের সাথেই বিয়ে দিতে হবে।ওয়াজেদ কাজী ডাক।”

প্রভাত নিশ্চুপ দেখে যাচ্ছে সব কিছু।তার নিঃশ্বাস এর ও যেন শব্দ পড়ছে না।
পূর্ণতা কাঁন্নাভেজা কন্ঠে বলল,
“কাজী কেন?”
ওয়াসেল ধমকের সুরে বলল,
“তুমি আর একটা কথা ও বলবে না।”
ওয়াসেল সবার উদ্দেশ্য বলল,

“এখনি সজল আর পূর্ণতার বিয়ে দিয়ে দিব। আর এখানেই প্রভাতের সাথে অজান্তার বিয়ে দিয়ে দিব।আমার ছেলের জন্য এটা চরম বেইজ্জতি ব্যাপার।আমার ছেলের যাতে খারাপ না লাগে তাই আজই আমার ছেলের ও বিয়ে দিব।পরে ধুমধাম করে অনুষ্টান হবে।”
পূর্ণতা এইবার আরোও জোরে কেদে বলল,

“না আমি বিয়ে করব না। চাচা, বাবা আমি কিছু করিনি।আমি সজল ভাই-কে বিয়ে করব না।”
ওয়াজেদ দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
“আর একটা কথাও বলবি না।”

পূর্ণতা তখন অশ্রুভেজা চোখে প্রভাতের দিকে তাকাল।প্রভাত ও গভীর চোখের দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে রইলো পূর্ণতার দিকে।পূর্ণতার মত তেজী মেয়েকে জীবনে প্রথমবার এইভাবে অসহায়ের মত কাদতে দেখছে প্রভাত।দু’জনের হৃদয়ের অনুভূতি এই মুহুর্তে স্পষ্ট নয়।প্রভাত পূর্ণতাকে নিয়ে কি ভাবছে তা পূর্ণতা জানেনা।শেষ আশ্রয় হিসাবে প্রভাতের কাছে ছুটে গিয়ে প্রভাতের পায়ের নিচে বসে পড়ল।প্রভাতের পা জড়িয়ে ধরে অসহায়ের মত বলল,

“প্রভাত ভাই আপনি অন্তত আমাকে বিশ্বাস করুন। আমি কিছু করিনি।সবাই যা ভাবছে তা ভুল।আমি কিছুই করিনি।আমাকে এই দুনিয়াতে বিশ্বাস করার মত কেউ নেই।সবাই আমাকে চরিত্রহীন ভাবছে।”
প্রভাতের হৃদয়ের অনুভূতি কাউকে বুঝতে দিলনা।এইবার প্রভাত উঠে দাঁড়াল।ওয়াসেল কে বলল,
“বাবা কাজী ডাকো।”

প্রভাতের কথা শুনে পূর্ণতার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল।অনুভূতিরা ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।প্রভাত ও তাকে বিশ্বাস করছে না।পূর্ণতা কাঁন্না থামিয়ে নিরবে চোখের পানি ফেলছে।পুষ্প তার বাবার ভ’য়ে কিছুই বলতে পারছে না।প্রভাতের উত্তরের অপেক্ষায় ছিল।প্রভাতের মুখ থেকে এমন উত্তর শুনে পুষ্পের ভেতর থেকে রাগ তৈরি হল প্রভাতের প্রতি।সে পূর্ণতার এই অসহায়ত্ব সহ্য করতে পারছে না।শেষ অবধি বলে উঠল,
“এসব কি বলছো ভাইয়া।কাজী ডাকবে মানে!এখানে সবাই পূর্ণতাকে অবিশ্বাস করলেও আমি করিনা।আমি জানি পূর্ণতা কিছু করেনি।”

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ১৪

প্রভাত থমথমে মুখে উত্তর দিল,
“বিয়ে হবে আর এখনি হবে।”
পূর্ণতা কাঁন্নাজড়িত কন্ঠে বলল,
“একজন ধ’র্ষ’ ক কে আমি কোনদিন বিয়ে করব না। প্রয়োজনে ওকে খু* ন করে আমি জেলে যাব।”

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ১৬