অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ১৪

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ১৪
Mousumi Akter

“স্যার বস্তায় একটা পঁচা, গলা লা’ শ।হাড় থেকে মাংস একদম খসে খসে পড়ছে।এই লা’শ থেকেই দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।”
কনস্টেবল এর কথায় ওয়াসেল এর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।মস্তিষ্ক ভোঁতা হয়ে এল।চোখ দু’টো বড় করে তাকাল।তার রাজ্য তার অজান্তে কোনো মানুষের লা’ শ কীভাবে এল? এত বড় ঘটনা তার বাড়িতে আগে -পরে ঘটেনি।বাইরের কেউতো এই বাড়িতে চাইলেই প্রবেশ করতে পারেনা।

ওয়াসেল এর মাথায় কাজ করছে না।রাজন মোটেও অবাক হলনা।কারণ রাজন একজন পুলিশ।পুলিশদের কাছে এসব ঘটনা খুব স্বাভাবিক। কনস্টেবল এর কথা শুনে রাজন এবং ওয়াসেল এগিয়ে গেল।কনস্টেবল চারজনের নাকে রোমাল দেওয়া।রাজন এবং ওয়াসেল এর ও নাকে কাপড় দেওয়া। চৌধুরী বাড়ির পুকুর পাড়ে লতা-পাতার ঝোপ ঝাড়ের মাঝে একটা প্লাস্টিকের বস্তা পাওয়া গিয়েছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সেই বস্তায় একটা লা’ শ পাওয়া গিয়েছে।সাথে সাথে চারদিকে খবর ছড়িয়ে পড়ল।বাগানের যে যেখানে আছে পুকুর পাড়ে এসে জড় হল।লা’শ টি দেখেই রাজন চমকে গেল।এটা কি সত্যি কারো লা’ শ। দেখে মনে হচ্ছে এক বস্তা মাংশ কে- টে রাখা হয়েছে।রাজন খুব অভিজ্ঞ চোখে লা’শটির দিকে তাকিয়ে আছে।কি নৃসংস ভাবে খু” ন টা করা হয়েছে।রাজনের জীবনের এমন ভয়াবহ কোনো লা’ শ আগে -পরে দেখেনি। এমন সময় প্রভাত এবং অজান্তা এসে হাজির হল। প্রভাত-কে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে।প্রভাত এসে ভীড় ঠেলে লা”শ ভরাটকৃত বস্তার পাশে এসে দাঁড়াল।চোখ মুখে গভীর চিন্তার ছড়াছড়ি। প্রভাত আসতেই রাজন প্রভাতের কাঁধে হাত রাখল।প্রভাত চিন্তিত চোখের দৃষ্টিতে রাজনের দিকে তাকাল। রাজন প্রভাতকে বলল,

“দেখুনতো লা’শ টা আপনাদের পরিচিত কারো কীনা?”
প্রভাতের দুই কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ানো। সে চিন্তিত কন্ঠে বলল,
“এভাবে চিনব কীভাবে? বস্তা থেকে বের করুন।”
রাজন কনস্টেবল কে উদ্দেশ্য করে বলল, “লা’শ টা বের করো।”
একজন কনস্টেবল বলল, “স্যার এখানে বের করব?”
রাজন বলল,

“পরিষ্কার জায়গা নিয়ে বস্তা থেকে লা’শ বের করো।”
পুকুর পাড়ের জঙ্গল থেকে বস্তাটা টেনে পরিষ্কার একটা জায়গা এনে বের করল।বস্তা থেকে লা’শ টা বের করতেই সবাই চমকে উঠল।শরীরের লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেল সবার-ই।সাথে সাথে চোখ বন্ধ করল সবাই।এমন বিভৎস খু’ নে’ র বর্ণনা আগে কেউ গল্পেও পড়েনি।গরু কা’ টা’ র মত কেটে টুকরো টুকরো করা।মাথাটা যেন চাপট দিয়ে কু’চি কু’চি করা।চোখ দুটো তুলে ফেলা।চেনার মত কোনো উপায় নেই।
ওয়াসেল চিন্তিত কন্ঠে বলল, “আরে এটা কার লা’শ?”
রাজন বলল, “জয়নাব না’তো!যিনি নিঁখোজ।”

ওয়াসেল বলল, “ছেলে নাকি মেয়ে এটাই তো বোঝা যাচ্ছেনা।বুঝব কীভাবে এটা কার লা’ শ।”
প্রভাত চিন্তায় পা-গ-ল প্রায়। ভীষণ ব্যস্ততায় এদিক-সেদিক ফোন দিচ্ছে।সবার ভীড় দেখে পূর্ণতা এগিয়ে এল।প্রভাত ফোন করার জন্য ভীড় থেকে একটু ফাঁকায় এল।তখনি পূর্ণতাকে দেখল লা’ শের দিকে এগিয়ে গেল।প্রভাত ব্যস্ত অবস্থায় পূর্ণতার দিকে না তাকিয়ে পূর্ণতাকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন ছুড়ল, ” ওদিকে না যাওয়ায় ভাল।ওখানে একটা বিভৎস লা’শ আছে।ভ’ য় পেতে পারো।”

পূর্ণতা খেয়াল করল প্রভাত তার দিকে তাকাচ্ছে না। কথা ও বলতে চাচ্ছে না। শুধু মাত্র সে ভ~য় পাবে বলে বাধ্য হয়ে এটুকু বলল।পূর্ণতার কৌতুহল কম নয় লা’ শ নিয়ে। সে প্রভাতের কথা শুনল না।এগিয়ে গেল।প্রভাতের আটকানোর ইচ্ছা থাকলেও ভেতরের রাগ আর ব্যস্ততায় আটকালো না।পূর্ণতা গিয়ে পুষ্পের পাশে দাঁড়াল।তখন ই সজল এসে পূর্ণতার পাশে দাঁড়াল।

সজল এই লা’শ নিয়ে পূর্ণতার সাথে বিভিন্ন আলাপ-আলোচনা করছে।সজল ইচ্ছাকৃত ভাবে বিভিন্ন প্রশ্ন তুলে পূর্ণতার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে।প্রভাত দূর থেকে বিষয়টা খেয়াল করছে।এত ঝামেলার ভীড়েও প্রভাতের চোখ এড়াল না সে দৃশ্য। তবুও প্রভাত নিশ্চুপ দেখে যাচ্ছে।তার মনের ভেতরে কি চলছে সে ছাড়া কেউ জানেনা বা বোঝার ও উপায় নেই।
প্রভাত ফোনে কথা শেষ করে এসে আবার লা’শে’র কাছে এল।রাজনকে উদ্দেশ্য করে বলল,

” কিছু বুঝতে পারলেন? ”
রাজন মাথা নাড়িয়ে বলল,
” বোঝার কোনো উপায় নেই।”
প্রভাত বসে পড়ল।খুব ভাল ভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে লা’শে’র দিকে তাকিয়ে দেখে বলল,
“এটাতো কোনো পুরুষ ছেলে হবে।”
ওয়াসেল বলল, “পুরুষ ছেলে হবে কীভাবে? দেখো জয়নাব কীনা!কারণ জয়নাব নিঁখোজ হয়েছে।”
প্রভাত খুব আশ্চর্যজনক ভাবে তাকাল ওয়াসেলের দিকে।খুব আশ্চর্যজনক ভাবে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল,

“জয়নাব আন্টি? উনাকে কে মা’র’বে?”
” কে মে’রে’ছে সেটা পরের প্রশ্ন।যেহেতু জয়নাব কে পাওয়া যাচ্ছেনা ওর কথাটা আগে মাথায় আসল।”
প্রভাত রাজনের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপনার কি মনে হচ্ছে?”
রাজন বলল, “আমার ও মনে হচ্ছে ছেলে।দেখুন হাতের আঙুল দেখা যাচ্ছে।তাতে পুরুষ মানুষের আংটি।”
ওয়াসেল বলল,

“লাশ যার-ই হোক আমাদের বাড়িতে কেন রাখবে?”
রাজন বলল, “তার চেয়ে বড় প্রশ্ন খু’ ন টা কে করল?”
জমেলা বলল, “নিশ্চয়ই কেউ শ’ য় ‘ তা’ নি করে এই শ’ত্রু’তা করেছে।”
রাজন বলল, “আপনাদের সাথে এমন শত্রুতা আছে কারো?”
ওয়াসেল বলল,

“এতদিন জানতাম ছিলনা,কিন্তু এখন মনে হচ্ছে গোপনে শত্রু জমেছে।তা’ না হলে আমার বাড়ির পুকুর পাড়ে লা’শ ফেলবে কেন কেউ।”
রাজন খুব কৌতুহলী মনে প্রশ্ন করল,
“আপনাদের বাড়িতে বিগত তিনদিনে বাইরের কেউ প্রবেশ করেছে।”
ওয়াসেল মাথা নাড়িয়ে বলল,
“না’তো।”

“যে কেউতো সহযে এ বাড়িতে প্রবেশ করতে পারেনা তাইনা? হাই সিকিউরিটি দেওয়া আপনাদের বাড়িতে।”
ওয়াসেল বলল,
“নিশ্চয়ই কেউ কৌশলে, এ বাড়িতে প্রবেশ করেছে।”
রাজন আবার প্রশ্ন ছুড়ল,
“এই বাড়িতে এত সহযে কেউ প্রবেশ করতে পারে?”
ওয়াসেল বলল,

“কিছু না কিছু রহস্য তো আছেই। না ‘হলে এখানে লা’শ আসবে কীভাবে?”
“তার আগে দেখতে হবে লা’শ টা কার।আমার পক্ষে কোনো চিহ্ন দেখে বোঝা সম্ভব নয়। আপনারা কেউ চিনে থাকতে পারেন।ভাল ভাবে দেখুন তো কোনো চিহ্ন পান কীনা!”
এরই মাঝে প্রভাত বলে উঠল,
” ওহ শীট! এটাতো মারুফ, আমার ড্রাইভার।”

মারুফের নাম শুনে সবাই চমকালো।মারুফ বিগত পাঁচ বছর ধরে প্রভাতের সাথে আছে।প্রভাতের ড্রাইভার হলেও খুব কাছের মানুষ। প্রভাতের ব্যক্তিগত সব কিছুতে মারুফ থাকে। এ বাড়ির সব মানুষের সাথে ভাল সম্পর্ক।প্রভাতের বুকের মাঝে কেমন যন্ত্রণায় জর্জরিত হয়ে উঠল।খুব কাছের কেউ হারানোর মত যন্ত্রণা বোধহয় পৃথিবীতে আর কিছুতে নেই।
রাজন কৌতুহলী মনে প্রশ্ন ছুঁড়ল,

“আপনার ড্রাইভার?”
“হ্যাঁ আমার ড্রাইভার।কারণ ওর হাতের যে আংটি ওটা আমার ই আংটি।আমি ওকে দিয়েছিলাম।”
রাজন আরো বেশী কৌতুহল নিয়ে প্রশ্ন করল,
“আপনার ড্রাইভার কে আপনার ই বাড়িতে কে মা’ র’ বে?”
প্রভাত বলল, ” আমার বাড়িতে নাকি বাড়ির বাইরে মে’ রে’ ছে সেটা বুঝার উপায় আছে?”
ওয়াসেল বলল, ” মারুফের এত বড় শত্রু কে?
আমার তো মনে হয় কেউ ষড়যন্ত্র করেছে,বড় ষড়যন্ত্র।”
” কে করবে ষড়যন্ত্র?”

” এই জয়নাব মারুফ কে মে’রে পালিয়ে যায়নিতো। ওদের মাঝে কিছু একটা সম্পর্ক ছিল।”
রাজন বলল, ” আমরা জয়নাবকে খুঁযে বের করছি। আপনারা কেউ কিন্তু শহর ছেড়ে যাবেন না। এখন আপনাদের সবার নাম্বার দিন।যাকে তাকে প্রয়োজন হতে পারে।”
রাজন একটা কাগজ -কলম বের করে সবার দিকে এগিয়ে দিল।এঁকে এঁকে সবাই নাম্বার দিল।সবার মাঝে রাজন পুষ্পের নাম্বার টা খেয়াল করল।

দিন কেটে গেল। ওয়াসেল এবং প্রভাত বাড়িতে ছিলনা। তারা মারুফের লা’ শের জন্য সারাদিন থানায় ছিল।প্রভাত কথা বলে থানা সামলিয়ে এসছে।তখন সন্ধ্যা ঘুরে রাত নেমেছে।প্রভাত আর ওয়াসেল, ওয়াজেদ কে সাথে বাড়িতে ফিরল।সন্ধ্যার নাস্তা বানাচ্ছিলো জাহান আর মেরি রান্নাঘরে। সাথে নতুন কাজের মহিলা রহিমা।ওয়াজেদ বাড়িতে পা রেখেই বলল,

” কোথায় গেলি? চা দিয়ে যা।”
জাহান মেরির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ ওইযে বাড়িতে এসছে আর শুরু হয়ে গিয়েছে।’
মেরি শান্ত গলায় বলল,
‘যা চা দিয়ে আয়।দিন শেষে ওরা আমাদের স্বামী আর আমরা ওদের বউ।’
‘এইজন্য ওদের লা’ থি ঝাঁটা ছাড়া কপালে কিছুই জুটল না।এইযে উনি ইচ্ছামত বাড়ির বাহিরে থাকে।আমি থাকলে কি আমাকে মেনে নিত।’

‘ওরা পুরুষ ওদের চরিত্র নষ্ট হয়না হাজার নারীর কাছে গেলে।কারণ ওরা প্রেগন্যান্ট হয়না। এটাই ওদের প্রধান অস্ত্র।আর আমরা নারী ফুলের মত। কেউ একটু ছুঁয়ে দিলেই আমরা ঝরে পড়ি।’
‘চরিত্র কি শুধু নারীর ই নষ্ট হয়, পুরুষের হয়না আপা।’
‘ এই সমাজে দেখেছিস কেউ নারীকে রেখে পুরুষের দিকে আঙুল তুলেছে। নষ্ট পুরুষ চেনার জন্য তার শরীরে কোনো চিহ্ন খুজে পাওয়া যায়না।যা দেখে নিশ্চিত হওয়া যায়।অথচ নারীর শারীরিক বৈশিষ্ট্যর বিভিন্ন দিক দেখেই মানুষ চরিত্র যাচাই ~বাছাই শুরু করে।’

‘কোনদিন এর পরিবর্তন হবেনা।’
‘হবে, তবে এই বাড়িতে হবেনা।’
‘আমাদের প্রভাত তো এই বাড়ির মত হয়নি।’
‘কারো উপর দেখে কি ভেতর যাচাই করা যায় জাহান।আমরা দেখছি আমাদের ছেলে আলাদা হয়েছে।কিন্তু আড়ালে কেমন হয়েছে সেটা বুঝব কীভাবে?’

‘কেন আপা দেখেই তো বোঝা যায়।ওর বাবা -চাচার চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা হয়েছে।’
‘মানুষ দেখে কিছুই বোঝা যায়না।প্রতিটা মানুষের দু’টো রুপ থাকে।আমরা ততটুকু দেখি মানুষ যতটুকু দেখায়।’
‘প্রভাত-কে নিয়ে আপনার মনে সন্দেহ আছে?’
‘না নেই। আমার ছেলেকে অনেক কষ্টে তৈরি করেছি। যা বললাম তা পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে বললাম।’
‘আপনার জীবনের অভিজ্ঞতা গুলো অনেক ভয়াবহ লাগে আমার।’
জাহান চায়ের পানি বসালো।

প্রভাত ওয়াজেদ এর দিকে তাকিয়ে বলল,
‘আপনি ছিলেন কোথায় চাচা?’
‘একটু ঢাকায় গিয়েছিলাম।’
‘ আপনার বয়স হয়েছে চাচা,এখন নিজেকে শুধরানোর প্রয়োজন।এখন আর কচি বয়স নেই আপনার।’
‘ কি করব বাড়িতে অশান্তি।,’
‘ অশান্তি তো আপনি সৃষ্টি করেন। আপনাদের জন্য যত অশান্তি।’
‘আমি কি অশান্তি করি।’

‘নিজের বউ রেখে অন্যোর বউ-এর যত্ন করা খুব শান্তির কাজ তাইনা?’
ওয়াজেদ মাথা গুজে রইলো ফ্লোরের দিক।এতদিন ভাতিজা ছিল এখন সে জামাই হতে চাইছে।তার মুখে এমন কথা অতি লজ্জার বিষয়। ওয়াজেদ মিন মিন করে বলল,
‘তুমি দিন দিন এসব কি বলা শুরু করেছো?’
‘আমার অনেক রুপ এখনো দেখার বাকি।সামনে দেখবেন চাচা।’

জাহান চা নিয়ে এল।ওয়াজেদের সাথে কোনো কথা বলল না।চা টা এগিয়ে দিল।প্রভাত কে বলল,
‘ বাবা তুমি চা খাবে।’
প্রভাত জাহানের সাথে সব সময় নমনীয় ভাবে কথা বলে।নমনীয় কন্ঠে বলল, ‘ চাচি সারাদিন অনেক ক্লান্ত।এখন গোসল করে রেস্ট নিব।’
‘ঠিক আছে বাবা যাও।’
প্রভাত উপরে চলে গেল।

অজান্তা, পুষ্প এবং পূর্ণতা ওদের রুমে বসে আছে।তিনজনে গল্প করছে।এমন সময় সজল দরজায় কড়া নেড়ে বলল, “আসব?”
পুষ্প গলা এগিয়ে দিয়ে বলল, ” জি আসুন সজল ভাই।”
সজল রুমের ভেতর প্রবেশ করে লজ্জারাঙা চোখে পূর্ণতার দিকে তাকাল।সারাদিনের ব্যস্ততায় সে পূর্ণতার কাছে চিঠি বিষয়ে শুনতে পারেনি।তবে অপেক্ষায় ছিল কখন নিরিবিলি হবে।সজলের চোখ মুখের এমন অবস্থা দেখে পূর্ণতা কিছুটা সন্দিহান।চোখ-মুখের লজ্জাভাব টা অদ্ভুত দেখাচ্ছে পূর্ণতার কাছে।ইতোমধ্যে পুষ্প সে চিঠি পড়েছে।
অজান্তা সজল কে দেখে বলল,
“তোমার প্রভাত ভাই কি এসছে?”
সজল বলল, ” জি এসছে?”

অজান্তা বলল, “তোমরা থাকো, আমি একটু প্রভাতের সাথে দেখা করে আসি।”
পুষ্প পূর্ণতার মুখের দিকে তাকাল।পূর্ণতা হাসি-খুশি মুখ নিয়ে বলল, ” যান।”
অজান্তা চলে গেল।পুষ্প কপাল কুচকে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে বলল, ” কোথাও কি কিছু পু-ড়ে-ছে? কেমন পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি।”
পূর্ণতা কপাল কুচকে বলল, ” কি পু-ড়-বে? কি আশ্চর্য! ”
“কার যেন মন পু-ড়-ছে।”

পূর্ণতা এক গাল হেসে বলল, “ট্রাস্ট মি! খুশিতে গান গাইতে ইচ্ছা করছে।আমি খুব বড় বাঁচা বাঁচি।”
” এইযে বাঁচা বাঁচা করছিস।একদিন দেখবি ভাইয়ার আশে পাশে কাউকে সহ্য হবেনা তোর।তাইনা সজল ভাই?” পুষ্প সজলের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল।
পুষ্পের কথাবার্তা সজলকে পো-ড়া-চ্ছে।সজল কোনো ভাবে চাইছেনা পূর্ণতার সামনে প্রভাত-কে নিয়ে কিছু বলুক।সে চিঠিতে লিখেছিলো পূর্ণতা চাইলে এখান থেকে সে পূর্ণতাকে নিয়ে পালিয়ে যাবে। কিন্তু পূর্ণতার মাঝে কোনো অনুভূতি দেখা যাচ্ছেনা। পূর্ণতা কি চিঠি পড়েনি।সজল পূর্ণতাকে বলল,

” একটু জরুরী দরকার ছিল বাইরে আসবে?”
পুষ্প বলল, ” কেন আমাকে বলা যাবে না সজল ভাই।”
” একটু সিক্রেট।”
পূর্ণতা সন্দিহান দৃষ্টিতে সজলের দিকে তাকাল। সরল কন্ঠে বলল, ” চিঠিতে তো সব লিখেই দিয়েছেন আর কি কথা।”

” সে ব্যাপারেই একটু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।একটু বাইরে এসো।”
পূর্ণতা উঠে এল। বারান্দায় দাঁড়াল।
সজল লজ্জারাঙা মুখে বলল,
“পূর্ণতা আমার চিঠি পড়েছিলে?”
“হ্যাঁ। ”
“কেমন লাগল? তোমার অনুভূতি কি?”
“সত্যি বলতে চমৎকার সজল ভাই। ”
“আমি নিশ্চিত ছিলাম, তুমি বুঝবে।আসলে সরাসরি অনেক কিছুই বলতে লজ্জা করে।মনে মনে যা ভাবি তা বুঝাতে পারিনা।”
পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল,

“এমন সিম্পল কথা কি চিঠিতে বলা লাগে।”
” অনুভূতির কথাগুলো এই পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কথা।”
“আরে আপনি তো আর প্রেম নিবেদন করেন নি যে কঠিন লাগবে।আপনি আপনার ভুল বুঝতে পেরেছেন এতেই আমি খুশি।আসলে এতদিন আমার ও একটু আনইজি লাগত আপনার সাথে কথা বলতে।”
সজলের কিছুই বোধগম্য হলনা।পূর্ণতার কথার মানে কিছুই যেন স্পষ্ট হলনা। প্রেম নিবেদন করেনি মানে? পূর্ণতা এসব কি বলছে।সেতো চিঠিতে স্পষ্ট পূর্ণতাকে শেষবারের মত আর একবার ভাবতে বলেছে।সজল সন্দিহান মনে প্রশ্ন করল, “আমি চিঠিতে কি লিখেছি বলোতো।”

“লিখেছেন আমাকে আর কোনদিন প্রেম ভালবাসা জাতীয় কথা বলবেন না।ভাবি ডেকে ডেকে ফ্যানা তুললেন।সজল ভাই আমি সত্যি অনেক খুশি হয়েছি।আসলে আমিও কোনদিন আপনাকে অমন নজরে দেখিনি।”
সজলের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব।সে কিছুই বুঝতে পারছে না।এসব কি বলছে পূর্ণতা।
এরই মাঝে প্রভাত বের হল ওর রুম থেকে।মাত্রই সাওয়ার নিয়েছে সম্ভবত। পরণে শর্ট প্যান্ট,গায়ে কালো গেঞ্জি।অজান্তা প্রভাতের চুলে হাত দিয়ে নাড়াচাড়া দিয়ে পানি ফেলে দিচ্ছে।আকস্মিক পূর্ণতার নজরে এল সে দৃশ্য। প্রভাত হাত দিয়ে অজান্তার হাত সরিয়ে দিল।অজান্তা বলল,

“দেখ তোর হবু বউ তোকে পাত্তা দেয়না।তোর ই কাজিনের সাথে হেসে হেসে ফিস ফিস করছে।”
অজান্তার কথায় প্রভাত গম্ভীর মুডে তাকাল পূর্ণতা আর প্রভাতের দিকে।তাকিয়ে অজান্তাকে বলল,
“আই ডোন্ট কেয়ার।তার যা ইচ্ছা করুক।”
অজান্তা আরেকটু আ-গু-নে-র ফুলকিতে বাতাস দিতে বলল, “প্রভাত চৌধুরীর হবু বউ কীনা অন্য পুরুষের সাথে এত ঢলাঢলি।”

প্রভাতের আত্মসম্মানে লাগল কথাটা।সে অজান্তার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে সোজা হেঁটে গেল পূর্ণতা এবং সজলকে পাশ কাটিয়ে।যাওয়ার সময় পূর্ণতার দিকে একবার ও তাকাল না।পিছ পিছ অজান্তা ও আছে।
প্রভাতের এই ইগনোর পূর্ণতার হৃদয়ের চিন চিন ব্যাথা অনুভব করাল।তার মনে হল প্রভাত তাকে ইগনোর করে অজান্তাকে নিয়ে ঘুরছে। তার ও জিদ কম নয়। সে-ও সজল কে বলল, ” কি যেন বলছিলেন? চলুন বাইরে হাঁটি আর কথা বলি।”

পূর্ণতা ও জিদের বসে সজলের সাথে বাইরে বেরোলো।নিচেই প্রভাত ডায়নিং এ টিভি দেখছে। অজান্তা প্রভাত-কে বলছে, ” আচ্ছা প্রভাত পূর্ণতা তোকে দেখতে পারেনা। তোকে ফাঁসানোর জন্য তোর ড্রাইভার কে মা’ রে নিতো।”
প্রভাত অদ্ভুত চোখে অজান্তার দিকে বলল, ” কিসব ননসেন্সের মত কথা তোর।”

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ১৩

তখন ই প্রভাতের সামনে দিয়েই পূর্ণতা ইচ্ছাকৃত হাসতে হাসতে বাগানের দিকে বেরিয়ে গেল।মাঝে মাঝে কিছু জিদ মানুষের জীবনের চরম সর্বনাশ করে।পূর্ণতা নিজেই জানত না আজ তার এই সামান্য জিদ তার জীবনে কি ঘটাতে চলেছে।প্রভাত শুধু নিষ্পলক তাকিয়ে রইলো পূর্ণতার পথপানে।

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ১৫