অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ১১

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ১১
Mousumi Akter

পূর্ণতার একটু ভ-য় করছে প্রভাতের কাছে যেতে।প্রভাতের রা’গ মানে সিডরের মত তছনছ হয়ে যাবার অশংকা।কি বলবে প্রভাত পূর্ণতা আন্দাজ ও করতে পারছে না।প্রভাত কখন কি করে কেউ বুঝতেও পারেনা।টিপে টিপে পা ফেলছে পূর্ণতা।হৃদপিন্ড থর থর করে কাঁপছে। হাত-পা ও কেমন ভারী হয়ে এসছে।

কাঁপা কাঁপা হাতে প্রভাতের ঘরের দরজায় উঁকি দিল।দরজায় উঁকি দিতেই আরেকবার হৃদপিন্ড কেঁপে উঠল তার।প্রভাত চোয়াল শক্ত করে বিছানার চাঁদর খামচে ধরে বসে আছে নিচু হয়ে।চোখ দু’টো নিবদ্ধ ফ্লোরে।চোখের দৃষ্টি ফ্লোরে থাকলেও পূর্ণতার উপস্থিতি প্রভাত টের পেল।প্রভাত ফ্লোরে চোখ রেখেই বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“এসো।” কন্ঠে শীতল হলেও তা ভয়াবহ শোনাল।কারণ ঝ-ড়ে-র পূর্বেই আকাশ গম্ভীর এবং থমথমে আকার ধারণ করে।
পূর্ণতা ভ-য় পেলেও প্রভাতের সামনে সেটা প্রকাশ করল না।প্রভাতের সামনে ঝাঁঝালো গলায় বলল,
” কি এমন গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার জন্য ডেকেছেন।তাড়াতাড়ি বলুন।আমার কাজ আছে।”

রাগে প্রভাতের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গিয়েছে। চোখ দিয়ে যেন অগ্নি ঝরছে।পূর্ণতার কথা কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই চোয়াল আরো শক্ত করে উঠে দাঁড়াল।প্রভাতের এমন ভয়ংকর রূপ দেখে ভেতর থেকে পূর্ণতার কাঁপাকাপি শুরু হল।ঢোক গিলছে বার বার।তবুও স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে।প্রভাত ভয়ানক রাগি দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। এক’পা দু’পা করে এগিয়ে যাচ্ছে ধীর গতিতে।

প্রভাতকে ওভাবে এগিয়ে আসতে দেখে পূর্ণতা পেছন দিকে সরছে।সে বুঝতে পারছে প্রভাত আজ নিজের ভেতর নেই।ভয়ংকর ভাবে রেগে আছে।এখন যেকোনো অঘটন ঘটতে পারে।পূর্ণতা পেছনে সরতে সরতে দরজা অবধি চলে গেল।প্রভাতের অগ্নি দৃষ্টি স্থির রয়েছে পূর্ণতার দিকে।দৃষ্টির কোনো নড়চড় নেই।এক’পা দু’পা করে পূর্ণতার কাছাকাছি পৌছে গেল। ভয়ে পূর্ণতা ঢোক গিলল।জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বলল,

” এভাবে এগিয়ে আসছেন কেন?যা বলার দূর থেকে বলুন।আমি কি কানে কম শুনি নাকি।”
প্রভাত পূর্ণতার থেকে চোখ সরাল।পূর্ণতার পেছনে দৃষ্টি নিক্ষেপণ করল।দৃষ্টি সরাসরি দরজায়।কয়েক সেকেন্ড দরজার দিকে তাকিয়ে নিজের হাত টা বাড়াল।হাত বাড়াতে দেখে পূর্ণতা কেঁপে উঠল।প্রভাত পূর্ণতাকে স্পর্শ করল না।দরজার জোরে লাগাল।তাতে প্রচন্ড জোরে শব্দ বল।সাথে সাথে সিঁটকিনি লাগিয়ে দিল।

পূর্ণতা সাথে সাথে মাথা তুলে পেছনে তাকাল। তাকিয়ে দেখল সত্যি সত্যি প্রভাত দরজা লাগিয়ে দিয়েছে।এই ভর-সন্ধ্যা বেলায় দরজা লাগিয়ে দিল কেন? এই বন্ধ করে তার সাথে কি করতে চাইছে প্রভাত।বাড়ির মানুষ জন ই বা কি ভাববে।বিয়ের আগে এক ঘরে দরজা লাগিয়ে।তখন ই পূর্ণতা কোমরে হাতের স্পর্শ পেল।হাতের স্পর্শ পেতেই সর্বাঙ্গ ভূমিকম্পনের ন্যায় কম্পিত হল।

সে কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রভাত তার কোমরে হাত দিয়ে তার দিকে টান দিল।সেই টানে পূর্ণতা প্রভাতের সাথে মিশে গেল।কিঞ্চিৎ পরিমান ও ফাঁকা নেই তাদের মাঝে।প্রভাত খুব শক্তভাবে পূর্ণতাকে নিজের সাথে মিশিয়ে ধরল।পূর্ণতা ব্যাথায় কুঁকিয়ে উঠল।প্রভাত এত শক্তভাবে তার কোমর চেপে ধরেছে মনে হচ্ছে চামড়াসহ মাংস ছি’ ড়ে উঠে আসবে।পূর্ণতাকে ব্যাথায় কুঁকিয়ে উঠতে দেখে প্রভাত দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

” খুব ব্যাথা তাইনা পূর্ণ? ”
পূর্ণতা প্রভাতের র*ক্তবর্ণ চক্ষুর দিকে তাকাল।প্রভাতের শক্ত হাতের বাঁধন থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করতে করতে বলল,
” ছাড়ুন আমাকে,ব্যাথা পাচ্ছি।”
প্রভাত পূর্ণতার থুতনিতে হাত দিয়ে উঁচু করে ধরে বলল,

” আমি কাছে আসলেই ছাড়ুন ছাড়ুন করো।ব্যাথা পাও।যত সমস্যা আমি কাছে আসলেই শুরু হয়।সজল যখন হাত ধরছিলো, গা ঘেষে দাঁড়াচ্ছিলো তখন কোনো সমস্যা হচ্ছিলো না তাইনা? সজলের স্পর্শে কি মধু আছে।আর আমার স্পর্শে কি বি’ ষ আছে।পৃথিবীর সবাই কাছে আসলে কোনো সমস্যা নেই তোমার,শুধু আমি কাছে আসলেই সমস্যা হয়ে যায়।এর পর থেকে যদি সজলের আশে পাশে কোথাও দেখি বা কোনো ছেলের আশেপাশে দেখি খুব খারাপ হয়ে যাবে। এমন খারাপ হবে পৃথিবীর কেউ তা কল্পনা ও করেনি।আমি কি করতে পারি তার কোনো ধারণা নেই তোমার।”

পূর্ণতা প্রভাতের বুকে হাত দিয়ে খুব জোরে ধাক্কা মেরে বলল,
“চোখ গরম দেখাচ্ছেন কেন? ধমক কাকে দেখাচ্ছেন আপনি? প্রভাত চৌধুরী একটা কথা কান খুলে শুনে রাখুন এই পৃথিবীর সবাই আপনাকে ভ-য় পেলেও আমি আপনাকে ভ-য় পাইনা।আপনার ভ-য়ে আপনি যা বলবেন আমি তাই শুনব এমন ভেবে থাকলে ভুল করছেন।সজল কেন আমি এই পৃথিবীর সমস্ত ছেলের সাথে মিশব।দেখি আপনি কি করে দেখাতে পারেন।”

প্রভাত পূর্ণতাকে আরো শক্তভাবে চেপে ধরে বলল,
“আর একবার যদি তোমার মুখে অন্য ছেলের কথা শুনি এখনি ধ্বং*স করে দিব সব কিছু।আমাকে বাধ্য করোনা খারাপ কিছু করতে।আমি কি করতে পারি তার বিন্দুমাত্র আইডিয়া নেই তোমার।”
পূর্ণতা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

” যা ইচ্ছা করুন আপনি। তার আগে ছাড়ুন আমাকে।বললাম না ব্যাথা পাচ্ছি।পুরুষ হয়েছেন বলে গায়ের বল খাটাচ্ছেন।এই ছাড়া পারেন কি আপনি।”
প্রভাত পূর্ণতার বাঁধন আলগা করে দিল।পূর্ণতার কথা তার প্রবল আত্মসম্মানে লাগল।সে নারীর প্রতি জোর খাটানো পুরুষ পছন্দ করেনা।পূর্ণতার মুখের অদলে তাকিয়ে ভারী কন্ঠে বলল,

” সামান্য একটু ব্যাথা সহ্য করতে পারছো না।তাও শরীরের ব্যাথা।আর আমাকে দেখো বুকের এই খানটায় ব্যাথা পাচ্ছি প্রতিনিয়ত। হৃদয়ের মাঝে অদ্ভুত এক যন্ত্রণা হয়।জানোতো হৃদয় খুব নরম।ব্যাথা সহ্য করতে পারেনা।শরীরের সমস্ত ক্ষত তুমি নির্মুল করতে পারবে কিন্তু যে ব্যাথা হৃদয়ে দিয়ে যাচ্ছো প্রতিনিয়ত সেই ব্যাথা কীভাবে সারিয়ে তুলবে?” প্রভাত বুকের বা পাশটায় হাত দিয়ে কথা গুলো বলল।

পূর্ণতা অবাক চোখে তাকাল প্রভাতের দিকে।প্রভাত তো তার বাবার কথা রাখতে তাকে বিয়ে করছে।তাহলে হৃদয়ে কীসের ব্যাথা? প্রভাত তো আর তাকে ভালবাসে না।খানিকটা কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন করল,
” হৃদয়ে ব্যাথা মানে? আমি আপনার হৃদয়ে ব্যাথা দিচ্ছি!”
” যাকে স্পর্শ করার অধিকার আমার একার তাকে সহযে অন্য কেউ এসে স্পর্শ করে যাচ্ছে এর চেয়ে যন্ত্রণা আছে বুঝি।এমনটা যদি আমি কোনো মেয়ের সাথে করতাম তাহলে তোমার কেমন লাগত।তোমার হৃদয়ে কি যন্ত্রণা হতনা।”

প্রভাতের কথার আগাগোড়া কিছুই বুঝার চেষ্টা করল না পূর্ণতা।প্রভাতের কথা পড়তেই উত্তর দিল,
” কিছুই লাগত না। আমি বরং খুশি হতাম।আমিও এটাই চাইতাম আপনি অন্য কোনো মেয়ের কাছে চলে যান।এখনো চাই আপনি অন্য কোথাও চলে যান।”

প্রভাত পূর্ণতার মাঝে জেলাসি দেখতে চেয়েছিল।প্রভাতের মুখে অন্য মেয়ের কথা শুনে রিয়্যাক্ট করবে এমন কিছু আশা করেছিলো।এসব কিছুই না পেয়ে আরো বেশী রেগে গেল।প্রভাতের ইচ্ছা হচ্ছে সব ভেঙে চুরে ফেলতে।রাগে দপ দপ করে জ্বলছে তার শরীর।চোয়াল শক্ত করে বলল,
“একদিন তুমি অন্য মেয়ের দিকে তাকানো নিয়ে আগুন চোখে তাকাবে আমার দিকে।আমার চেয়েও বেশী জ্বলবে তুমি।জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে।”

“আপনার জন্য আমি জ্বলব।কি অদ্ভুত স্বপ্ন আপনার।”
প্রভাত রাগে চিৎকার দিয়ে বলল,
“আরে সমস্যা কী তোমার? কি নেই আমার।আমি কি স্যান্ডসাম না,আমি কি শিক্ষিত না, আমি কি সমাজে মিশতে পারিনা।কি নেই আমার মাঝে বলো।বলো কিসের কমতি আমার মাঝে।”

পূর্ণতা কোনো উত্তর না দিয়ে লোহিতবর্ণ চোখ মুখ নিয়ে প্রভাতের দিকে তাকাল।দৃষ্টিতে তীব্র বিরক্তি।প্রভাত পূর্ণতার চোখ মুখের এমন অবস্থা দেখে পূর্ণতার আপাদমস্তক খুব ভাল ভাবে তাকিয়ে দেখে বলল,
“যে আগ্নেয়গিরির ন্যায় ক্রোধান্বিত আঁখিযুগলে আমার পানে চাও;সেই একই আঁখিযুগলে একদিন লজ্জারা গুটি সুটি মেরে জড় হবে।
লজ্জা রাঙা শীতল চোখের দৃষ্টি মেলবে আমার পানে চেয়ে।”

পূর্ণতা এইবার তাচ্ছিল্যর স্বরে বলল,” কোনদিন আপনার এই স্বপ্ন পূর্ণ হবেনা।আমি কোনদিন আমার চোখের দৃষ্টি আপনার জন্য শীতল করব না।আমার চোখে আপনার জন্য সারাজীবন ঘৃণা ছাড়া কোনদিন অন্য কিছু আসবে না।”
প্রভাতের দৃষ্টি আরো ভয়াবহ হল।দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে আছে।মাথা কাজ করছে না।কি করবে, কি বলবে কিছুই টের পাচ্ছে না।চারদিকে চোখ বোলাল।বিছানায় সামনে থাকা সেন্টার টেবিল মাথার উপর তুলে আছাড় মারল।

সেন্টার টেবিলের কাঁচ ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল।প্রভাত কেমন উন্মাদের মত করছে।রুমের সমস্ত জিনিস ভাঙা-চোরা করছে।রুমের সমস্ত আসবাবপত্র হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল।ড্রেসিন টেবিলে খুব জোরে লাথি মারায় গ্লাসে খানিকটা পা কেটে গেল।পূর্ণতা ভ’য়ে কানে দুইহাত দিয়ে চেপে রেখেছে।প্রভাত আজ এত পা’গ-লা’মি করছে কেন? সেতো এমন করেনা কখনো।ভয়ে থর থর কাঁপছে রুমে দাঁড়িয়ে।

চোখ খুলে দেখল প্রভাতের পা কেটে র*ক্ত বের হচ্ছে।র*ক্তে ভেষে যাচ্ছে তার পা।অথচ সেদিকে খেয়াল নেই প্রভাতের।প্রভাত উন্মাদের মত সব ছোড়াছুড়ি করছে আর বলছে আজ সব শেষ করে দিব।পূর্ণতা ভ’য়ে কেদে দিয়ে বলল,

“প্রভাত ভাই আপনার পা কে’ টে গিয়েছে।”
প্রভাতের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।উন্মাদের মত ভা’ঙা চোরা করে যাচ্ছে সব কিছু।ঘরের বাইরে জড় হয়েছে বাড়ির সবাই। দরজা ধাক্কাধাক্কি করছে।বাইরে থেকে সবাই দূঃচিন্তা করছে।বাইরে থেকে শুধু শব্দ শোনা যাচ্ছে আর পূর্ণতার কাঁন্না শোনা যাচ্ছে।পূর্ণতা ছুটে গিয়ে দরজা খুলে দিল।দরজা খুলতেই বাড়ির সবাই রুমের ভেতরে প্রবেশ করল।রুমের এমন অবস্থা দেখে সবাই ভ-য় পেয়ে গেল।জাহান পূর্ণতাকে নিজের সাথে আগলে ধরল।মেরি প্রভাতকে থামানোর চেষ্টা করল।কিন্তু প্রভাত কে থামানো যাচ্ছেনা।মেরি প্রভাতকে জড়িয়ে ধরে বলল,

“প্রভাত থামো এইবার।এইসব কি শুরু করেছো।”
পুষ্প বলল, “আম্মু ভাইয়ার পা কে’ টে গিয়েছে।র- ক্ত।”
মেরি প্রভাতের পায়ের দিকে তাকিয়ে চমকালো।র- ক্তে ভেষে যাচ্ছে তার পা।ফ্লোর জুড়ে র* ক্তের ছড়াছড়ি।মেরি প্রভাতের পায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,

“শান্ত হও।পায়ে ব্যান্ডেজ দিতে হবে তোমার।”
প্রভাত মেরির দিকে তাকিয়ে বলল, “পূর্ণতাকে বলে দাও আম্মু ও যেন বাড়াবাড়ি না করে।ওর বিয়ে আমাকেই করতে হবে।” বলেই শা শা করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। তবে যাওয়ার সময় পা খোড়াল।পেছন থেকে ডাকাডাকি করেও আর কোনো লাভ হলনা।মেরি রুমের চারদিক তাকাল।তারপর পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে বলল,

“কি করেছে রুমের। পূর্ণ মা তোমাকে কিছু বলেনিতো।”
পূর্ণতা কাদো কাদো কন্ঠে বলল,
“না কাকিমনি।”
“আমি বুঝেছি কিছু বলেছে কীনা! আজ এই ছেলেকে আমি দেখে নিব। খুব বাড়াবাড়ি করেছে তোমার সাথে।”
প্রভাতের রুম ছেড়ে সবাই চলে গেল।পূর্ণতা রুমে বসে কাদছে।জাহান পূর্ণতার কাঁধে হাত রেখে বলল,
“কাদে না মা।”
পূর্ণতা কাঁন্নাভেজা কন্ঠে বলল,

“আম্মু এমন বদমেজাজি ছেলের সাথে আমি সারাজীবন কীভাবে থাকব।আমি এই বিয়ে করতে চাইনা।”
জাহান একটা ভারী নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
“বদমেজাজি রা আবার ভাল হয়।ওদের ভালবাসা খাঁটি হয়।”
“আমি এত চেষ্টা করছি প্রভাত তবুও বিয়ে ভাঙছে না কেন?”
জাহান মিষ্টি হেসে বলল,

“কারণ ও জানে তুমি বিয়ে ভাঙার জন্য এমন করছো।প্রভাত কে তো চিনোই মা।যেটা বাঁধা দেওয়া হয় ও সেটাই করতে বেশী পছন্দ করে।”
“আমার জীবন টা প্রভাত নরক বানিয়ে দিচ্ছে।বিয়ে হলে সারাজীবনের মত অশান্তিতে পু’ ড়’ ব তোমার মত।”
জাহান হেসে বলল,

“কেন যেন মনে হয় তুমি অনেক সুখি হবে মা।”
এমন সময় পূর্ণতার দাদী জমেলা চিৎকার চেচামেচি করে বলে উঠল,
“এ বাড়িতে এত আকাইম্মা সব কি বলব। কোথায় কি ম’রে পড়ে আছে কেউ খুজে দেখ।এমন বিশ্রী দূর্গন্ধ আমি টিকতে পারছি না।”

জমেলার চিৎকারে মেরি আর পুষ্প এগিয়ে গেল।জমের রুমের বাইরে বের হয়ে এল।পুষ্প বলল,
“কোথায় গন্ধ দাদী?”
“আমার রুমে যা।গেলেই টের পাবি।”
পুষ্প রুমে যেতেই বিশ্রী একটা গন্ধ নাকে গেল।পুষ্প নাক সিঁটকে বলল,
“আসলেই তো।কীসের গন্ধ এসব?”
জমেলা বলল, “তা আমি কীভাবে বলব। তোরা বাইরে গিয়ে খুজে দেখ।”
“দেখছি দাদী।”

বাড়ির ভেতরের এসব চেচাচেচির শব্দ গেস্ট হাউজ এর বাইরে দাঁড়িয়ে শুনছে প্রভাত আর ওয়াসেল চৌধুরী।প্রভাত হেসে বলল,
“কাউকে খু’ ন করে ফেলে দিয়েছো নাকি বাবা।এত গন্ধ কীসের?”
ওয়াসেল খানিকটা ধমকের স্বরে বলল, “মাথা গেছে না তোমার।চলো মাথা ঠান্ডা করবে।” বলেই ভেতরে নিয়ে গেল।গেস্ট হাউজের গেস্ট রুমে বসে আছে ওয়াসেল আর প্রভাত।ওয়াসেল গ্লাসে ড্রিংক্স ঢেলে দিচ্ছে আর প্রভাত খাচ্ছে।প্রভাত হাসতে হাসতে বলল,

“তুমিই একমাত্র বাপ. ছেলের হাতে কি সুন্দর ড্রিংক্স তুলে দাও।”
ওয়াসেল খুব গর্ব করে বলল,
“আমি জানি আমার ছেলের কখন কি লাগবে।”
“যা লাগবে দিতে পারবা?”
“পারব, বলো কি চায়।”
“শান্তি লাগবে।শান্তি চাই আমি।”

“অশান্তি তো নিজেই জীবনে ডেকে এনেছো।তুমি পূর্ণতাকে বেশী গুরুত্ব দিতে গিয়ে অশান্তিতে আছো।বিয়েটা করোনা দেখবে সব শান্তি ফিরে আসবে জীবনে।”
“বিয়ে করব না?”
“না।”

“ভালবাসি আমি ওকে।ওকে ছাড়া থাকতে পারব না।”
“দুনিয়াতে কি মেয়ের অভাব পড়ছে। এইসব ভালবাসা টাসা বলে কিছুই নেই।”
“তুমি প্রেমের জন্য ইন্ডিয়া থেকে মেয়ে ভাগায় নিয়ে আসছো কেন তাহলে? আমি কি কিছুই জানিনা।”
ওয়াসেল খানিকটা বিব্রতবোধ করে বলল,
“আমার ব্যাপার আর তোমার ব্যাপার আলাদা।”

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ১০

“তোমার চেয়ে আমি প্রেমিক হিসাবে কম কোন দিকে।তুমি ইন্ডিয়া থেকে মেয়ে ভাগায় আনতে পারলে আমি ঘরের মেয়ে পটাতে পারব না কেন? তোমার চেয়ে হাজারগুন বেষ্ট প্রেমিক আমি।”

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ১২