অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ১২

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ১২
Mousumi Akter

ওয়াসেল মদ খেতে খেতে বলল,
“আমার চেয়ে বেষ্ট প্রেমিক তুমি কোনদিন হতে পারবে না। তুমি জানো আমি তোমার মা’কে বিয়ে করার জন্য কি কি করেছি।ওসব শুনলে যে কারোর ই শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যাবে।”
প্রভাত ভ্রু কুঁচকালো।খানিকটা কৌতুহলী হয়ে ওয়াসেল এর দিকে ঝুঁকল।ভ্রু নাচিয়ে বলল,

“ইন্টারবস্টেড ! আমি শুনতে চাই তুমি কি কি করেছিলে।ভাল কাজ কিছু করেছিলে বলে তো মনে হচ্ছেনা।”
“প্রেমে জয়ী হতে হলে কোনটা ভাল কোনটা খারাপ এসব মাথায় আনলে প্রেমে জয়ী হওয়া যায়না।প্রেমের জন্য সব ই সঠিক।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“তাহলে টিপস দাও। কীভাবে মেয়ে পটিয়ে প্রেমে জয়ী হতে হয়। তুমি তো এই ব্যাপারে এক্সপার্ট ছিলে বাবা।”
ওয়াসেল আবার গ্লাসে মদ ঢেলে বলল,
“মেয়ে পটাতে আবার টিপস লাগে নাকি।তুমি পূর্ণতার পেছনে যেভাবে লেগে আছো আমি তোমার মায়ের পিছে এর এক শতাংস সময় ও ব্যয় করিনি।দেখো তোমার মা এমনিই আমার ইশারায় চলে এসেছিলো।আর তুমি কীনা পূর্ণতার পিছে ঘুরেই যাচ্ছো, কোনো পাত্তা পাচ্ছোনা।”

প্রভাত গভীর চোখে তাকাল ওয়াসেল ওর দিকে।হাতের গ্লাস সেন্টার টেবিলের উপর রেখে পায়ের উপর পা তুলল।কনুই ভাজ করে থুতনিতে ঠেকালো।গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“আমি আস্ট্রেলিয়ার সাথে খেলছি।খেলব যখন আস্ট্রেলিয়ার সাথেই খেলে জিতব। আর তুমিতো পাকা প্লেয়ার হয়ে সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুর সাথে খেলেছিলে।তোমার ওয়াইফ এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শান্ত শিষ্ট নারী।আর আমার বউ এর নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে আ’ গু’ ন।ওই মেয়ে সহযে হার মেনে নেওয়া পাত্রী নয়।সময় তো লাগবেই।”
ওয়াসেল তাচ্ছিল্যের সুয়ে বাঁকা হেসে বলল,

” তুমি আমার ছেলে হয়ে এত মিনমিনে কবে হলে বলোতো।একটা মেয়ের কাছে গিয়ে বিড়ালের মত হয়ে যাও।তার ইশারায় নাচছো।আমিতো জানতাম তুমি চিতা বাঘ।তোমাকে এসব মানায় না প্রভাত।”
“পুরুষ যত বড়ই বাঘ হোক না কেন?বউ এর কাছে সবাই ই বিড়াল।”
“আমরা তো বউ এর কাছে বিড়াল না।গায়ে এক বিন্দু র* ক্ত থাকতে তা হবো ও না।”
এইবার প্রভাত তাচ্ছিল্যের সুরে হেসে বলল,

“তোমরা তো বউ মানে কি তাই ই জানোনা।জানলে আমার চেয়ে বড় বিড়াল হয়ে যেতে।তোমাদের কাছে যেটাকে বউ এর কাছে বিড়াল হওয়া আমার কাছে ওটা ভালবাসা।”
“তুমিও অন্য কোনো মেয়েকে বিয়ে করলে এত দূর্বল হতে না। পূর্ণতার জন্যই আজ তোমার এই অবস্থা।”
“কারণ পূর্ণতাকে আমি ফিল করতে পারি।যাকে ফিল করতে পারি তার জন্য দূর্বলতা আপনা – আপনিই তৈরি হয়ে যায়।”

“রাজনীতির চেয়ে প্রেম নিয়ে বেশী গবেষণা করছো তুমি।”
“এইজন্য দ্রুত বিয়ের ব্যবস্থা করো।বিয়ের উপযুক্ত ছেলে বিয়ে না করিয়ে আছো কেমন বাবা তুমি।”
“সময় দাও আমাকে।”
“তোমার সময়ের চক্করে দাঁড়ি একটা পেঁকে গিয়েছে আমার।বাকি গুলা পাঁকার আগেই বিয়ে করব।এই সপ্তাহেই বিয়ে করতে চাই আমি।এটাই ফাইনাল। ”

“এই মেয়ে বাদে অন্য যে কোনো মেয়েকে পছন্দ করো।তার চৌদ্দ গুষ্টিসহ তোমার পায়ের নিচে এনে ফেলে দিব।এই মেয়ের দ্বারা চৌধুরী বংস ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে।আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি পূর্ণতা তোমাকে মেয়েলি মায়ার দ্বারা ঘায়েল করে এই বংশ ধ্বংস করে দিবে।বহু আগে একজন জ্ঞানী মানুষ বলে গিয়েছিলেন যতদিন না চৌধুরী বংশের কোনো পুরুষ কোনো নারীর মায়ায় পড়বে ততদিন এই বংশের ক্ষমতা যাবেনা।কারণ নারীর মায়ায় পড়লে পুরুষ একটা রাজ্যর ক্ষমতা এক নিমিষে শেষ করে দিতে পারে সেই নারীর মায়ার জন্য।”

প্রভাত দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে বলল,
” পূর্ণতার জন্য চৌধুরী ব্বংস কেন, গোটা পৃথিবীতে তান্ডব করতে দু’বার ভাবব না আমি।”
” এইজন্য আমি চাইনা তুমি এই বিয়ে করো।এই মেয়ে তোমার জন্য মঙ্গলজনক নয়।”
“আপাতত সজল আমার জন্য মঙ্গলজনক নয়। কাল সকালেই সজলকে এ বাড়ি থেকে বের করে দিবে।ও পূর্ণতার হাত ধরেছিলো আজ।এত সাহস ও কীভাবে পায়।ওর হাত আমি কে* টে ফে’ল’ব বাবা।তার আগে ভালোই ভালোই সজল কে বের করে দাও এ বাড়ি থেকে।”

“পূর্ণতা হাত ধরার সাহস দিয়েছে কেন?কা’ট’তে হলে পূর্ণতার হাত কা’টো। আগে ঘর শাষণ করো তারপর না হয় পর শাষন করবে।”
“ক্যান্সার আঙুলে হলে কি আঙুলের চিকিৎসা না করে পুরা হাত কা’ ট’ ব। পূর্ণতাকে ফুলের টোকা পর্যন্ত দিবনা আমি।কিন্তু যে ওর দিকে তাকাবে তার অবস্থা অমন করা হবে।আমি হলাম ডিফারেন্ট প্রেমিক।ঘর শাষন নয় পরই শাষন করব।”
“তুমিতো এই মেয়ে মানুষের ফাঁদে পড়ে একেবারে শেষ হয়ে গিয়েছো দেখছি।আর খেওনা পরে তাল হারিয়ে ফেলবে।”

“কোনদিন মাতাল হতে দেখেছো?আমি সব সময় লিমিট রেখেই সব করি।”
“বাইরে এত চেচামেচি করছে কেন সবাই?বিড়াল মরেছে নিশ্চয়ই কোথাও।”
“তোমার মায়ের একার গলায় তো শোণা যাচ্ছে।এই বয়সেও বুড়ির গলার যে তেজ।পূর্ণতা দাদীর মতই তেজী হয়েছে।”

“কথাটা মন্দ বলোনি।”
প্রভাত নাক সিঁটকে বলল,
“আসলেই তো বিশ্রী একটা গন্ধ ভেষে আসছে।এত বাজে গন্ধ কোথা থেকে আসছে। ”
ওয়াসেল ও নাক সিঁটকে বলল,
“সেটাই তো বুঝতে পারছি না।
ছোট খাটো ইদুর, বিড়াল মরলে তো এমন গন্ধ হয়না।”

প্রভাত মদের গ্লাস থেকে মদ ফ্লোরে ঢেলে ফেলে বলল,
“তোমার ভাই ওয়াজেদ এর খোজ নেই দু’দিন।কোথাও কি ম’রে পড়ে আছে।তার থেকে গন্ধ ছড়াচ্ছে কিনা কে জানে।”
“তোমার চাচা হয়।এসব কি অলুক্ষুণে কথা বলছো।”
“তা কি বলব।দুইদিন কোথায় গায়েব হয়েছে সে।ফোনেও তো পাওয়া যাচ্ছে না।”
“আছে কোন হোটেলে।”

“আমি বলেই এমন দুঃচরিত্র লোকের মেয়ে বিয়ে করছি।”
” বিয়ে কেন করছো?”
” কারণ ওর বাপের চরিত্রে সমস্যা ওর চরিত্রে সমস্যা নেই।”
“তুমি ঘুমাও।তুমি যে শেষ এতে আর সন্দেহ নেই।দেখি আমি বাইরে গিয়ে দেখি কি হয়েছে।”
প্রভাত ড্রিংকস করতে করতে ঘুমিয়ে গেল।

পরেরদিন সকাল সাতটা বাজে।বাড়িতে আপাতত কাজের লোক নেই।ফায়েল রিতীমত মাছ নিয়ে হাজির।জাহান আর মেরি দু’জনে মিলে মাছ দেখছে।কিন্তু চিন্তার বিষয় মাছ কাটবে কে?এ বাড়ির বউরা কেউ মাছ কাটেনা।গতকালের মাছ ফ্রিজে রাখা।এখনো কাটা হয়নি।জমেলা দেখলেই চেঁচামেচি করবে।সে ফ্রিজের মাছ খেতে চায়না।আজ আবার মাছ রাখলে দুই দিনের মাছ জমা হবে।এত মাছ একসাথে জমলে কাটবে কে?

মেরি জাহান-কে বলল,” মাছ যে নিব কাটবে কে জাহান? গতকালের মাছ ও রয়েছে।”
“তাহলে কি আজ মাছ নেওয়া বাদ দিব।”
“মাছ না নিলেও তো ঝামেলা।জিজ্ঞেস করবে আজ নদীর মাছ কেন রান্না হলনা।”
জাহান বলল, ” বিয়ের পর তো আর মাছ কাটিনি।সব ভুলে গিয়েছি আপা।কি করব এখন তাহলে।”
এমন সময় বাগান ঝাড়ু দেওয়া তারেক এল।তারেক এর নাকে গামছা বাঁধা।মেরির কাছে এসে বলল,
“কাকিমা বাগান ঝা’ ড়ু দিতে পারব না আমি।”
মেরি একটু কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল,

“কেন?”
“পঁচা গন্ধ।আমি একদম টিকতে পারছি না।”
জাহান বলল, “খুজে দেখ বাবা কোথায় কি মরল।সবার তো পেটে অসুখ করবে।”
মেরি বলল, “বাগানে কিছু খোজা লাগবেনা।আগে কাজের লোক খুজে নিয়ে আয় তারেক।মাছ কাটার লোক লাগবে।এত পদের রান্নার জোগাড় করতে হবে।আমাদের দু’জনের পক্ষে সম্ভব নয় এত কিছু ম্যানেজ করা।”
তারেক বলল, “যারে তারে তো আর এ বাড়িতে আনা যায়না।ভাল কাউকে আনা লাগব।”

তারেক ফায়েকের দিকে তাকিয়ে বলল,”আরে ফায়েক চাচা।আপনার বউ তো আছে।চাচী কি কাজ করবে?”
ফায়েক মৃদু হেসে বলল, “আমার পোলা আমারে এই কাম ই করতে দিতে চায়না।পোলা ঢাকা থেকে লেখাপড়া শিখছে।এহন বড় চাকরি করে।ওর মারে দিয়া কাম করাবে না।”

মেরি হেসে বলল, “তাই নাকি ফায়েক। বললে নাতো এত বড় খুশির খবর।তোমার ছেলে চাকরি করে।”
“পোলা নিষেধ করছে।কইছে সে নিজেই কইবে।তাই আর আমি কাউকে কই নাই।”
“আচ্ছা তোমার ছেলেকে একদিন পাঠায় দিও।”
“দিবো, তার তো কইছিলাম মাছের টাকা নিতে আইতে।আহে নাই।”
“নাতো।”

ফায়েক মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল,
“আমারে যে কইলো সে এই বাড়িতে আইব।বুঝলাম না ঘটনা খান।”
“হয়ত অন্য কোনো কাজ ছিল।”
ফায়েক চলে গেল।মেরি আর জাহান আজ ও মাছ নিয়ে ফ্রিযে রেখে দিল।দু’জনেই রান্নাঘরে রান্নার জিনিস গোছাচ্ছে আর জয়নাব-কে নিয়ে আলোচনা করছে।জয়নাব এভাবে গায়েব হল কোথায়।জাহান বলে উঠল,
“আপা আমার কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছে।আপনার দেবর কিছু করে নাইতো।তারতো চরিত্র সমস্যা আছে।”
“তাই বলে কি গায়েব করে দিবে?”

“দিতেই পারে,তার দ্বারা অসম্ভব কিছুই নেই।দেখছেন না আজ ও বাড়িতে আসেনি।”
“মেয়ের বিয়ে আজ বাদে কাল, এখনো শুধরালো না।”
“আপা আমার তো খুব চিন্তা হচ্ছে পূর্ণতা আর প্রভাত কে নিয়ে।সব ঠিক ঠাক হবেতো।”
মেরি জাহানের কাধে হাত রেখে বলল, ” আমার ছেলেকে আমি চিনি।তুইও চিনিস।পূর্ণতাকে নিয়ে ভাবিস না।ও সুখি হবে।এক সময় বুঝবে প্রভাত ওর জন্য সঠিক। ”

“তাই যেন হয় আপা।আমিতো জীবনে স্বামীর ভালবাসা পেলাম না।মেয়েটা যেন পায়।”
মেরি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, “তুই তো পাস নি।আমি জীবনে অনেক কিছু পেয়েও হারিয়েছি।”
“আপা আপনাকে দেখে আমি মাঝে মাঝে অবাক হই।আমাকে ছোট বোনের মত আগলায় রেখেছেন।অন্য একটা দেশ থেকে এ দেশে এসে সংসার করছেন।এত সুন্দর দেখতে আপনি ওই দেশের কোনো পুরুষের চোখেই কি এমন ভুবনভোলানো রুপ পড়েনি।”

মেরি একটা ভারী নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, ” এই রুপ ই আমার কাল। অতিরিক্ত কিছুই ভাল না।রুপ ও না।এতে জীবনের সুখ শান্তি নষ্ট হয়।”
“মাঝে মাঝে আপনার জীবনের কাহিনী জানতে ইচ্ছে করে আপা।”
“কিছু গল্প সিনেমাকেও হার মানায় জাহান।অনেক মর্মান্তিক হয়। যা না শোনায় ভাল।”
“তবুও আপা আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে।”
“একদিন বলব।”

“আমি মরার আগে দুইটা ইচ্ছা যেন পূর্ণ হয়।এক আমার পূর্ণতার যেন সুখ দেখতে পারি দুই আপনার জীবনের গল্প।”
“এখনি মরার কথা ভাবছিস কেন?”
“মাঝে মাঝে মাথার মাঝে এত ঘুরায় আর হঠাৎ হঠাৎ জ্বর আসে মনে হয় কিছু একটা হয়ে গেল।”
“কিছুই হবেনা।প্রভাত কে বলব ভাল ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে।”

সজল সকাল থেকে পায়চারী করছে কখন পূর্ণতা ঘুম থেকে উঠবে।সজলের ভীষণ রকমের দূর্বলতা পূর্ণতার প্রতি সেই ছোটবেলা থেকে।শেষ সময়ে এসে একবার যদি সে পূর্ণতাকে রাজি করাতে পারে তাহলেও সে জিতে যাবে।যেহেতু পূর্ণতা প্রভাত কে বিয়ে করতে চায়না সেক্ষেত্রে একটা সুযোগ আছে।তাছাড়া গতকাল রাতের ঘটনাটার জন্য পূর্ণতাকে সরি ও বলতে হবে।সজল সুন্দর একটা চিঠি লিখে পূর্ণতার বিড়ালের গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে পূর্ণতার ঘরের সামনে ছেড়ে দিল।বিড়াল টা সারাক্ষণ পূর্ণতার সাথেই থাকে।

পূর্ণতার সব ইশারা বোঝে।রাতে পূর্ণতার সাথেই ঘুমায়।সকালে জানালা দিয়ে বাইরে বেরিয়েছে।সজল বিড়াল টাকে জানালা দিয়ে ঘরের ভেতর ছেড়ে নিচে এসে ডায়নিং এ বসে অপেক্ষা করছে।বিড়াল টা ঘরে আছে।পূর্ণতার ঘুম ভাঙলেই বিড়ালের গলা থেকে চিঠি নিয়ে পড়তে পারবে।গত রাতের সব ঝামেলা মিটে যাবে চিঠি পড়ে।বিড়াল টা পূর্ণতার মুখ ঘষাঘষি করছে।পূর্ণতা ঘুমের ঘোরে বিড়াল কে তাড়া দিল।বিড়াল টা জানালা দিয়ে বের হয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়াল।জমেলার চোখে বিড়াল টা পড়তেই জমেলা তাড়া দিয়ে বলল,

“এমনিই কোথায় কি জন্তু ম’ রে ‘ছে তার ঠিক নেই।এইদিকে আবার এই আপদ। ”
জমেলা দাঁত কিড়মিড় করে বিড়াল টা তাড়া দিল।বিড়াল টা তাড়া খেয়ে গেস্ট হাউজের দিকে গেল।গেস্ট হাউজের জানালা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল।যে রুমে প্রভাত সুয়ে আছে সেই রুমেই প্রবেশ করল।প্রভাত খালি গায়ে সুয়ে আছে।প্রভাতের ফর্সা উন্মুক্ত পিঠকে বিড়ালটার আরামদায়ক বিছানা মনে হল কীনা কে জানে।পিঠের উপর গিয়ে সুয়ে পড়ল।

বিড়াল তাড়ালেও পূর্ণতা আর ঘুমাতে পারেনি।পুষ্প কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে ঘুমোচ্ছে।পূর্ণতা বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামল। ড্র‍য়িং রুম আজ ফাঁকা।ড্রয়িং রুমের সোফায় কয়েক প্যাকেট চিপস।পূর্ণতা এক প্যাকেট চিপস ছিড়ে নিয়ে বসল। বসে মুভি দেখছে আর চিপস খাচ্ছে।সজল এতক্ষণ পূর্ণতার জন্যই অপেক্ষা করছিলো।পূর্ণতাকে দেখেই পাশের সোফায় বসল।সজল মোলায়েম কন্ঠে বলল, “রেগে আছো পূর্ণতা।”
পূর্ণতা শান্ত কন্ঠে বলল,

“না সজল ভাই।”
“তাহলে মন খারাপ।গতকালের ঘটনার জন্য আসলে আমি দুঃখিত পূর্ণতা।”
“না সজল ভাই আপনি কেন দূঃখ প্রকাশ করছেন।আমার ভাগ্যটাই তো ভালনা।”
“আমি তো তোমার ক্লোজ ফ্রেন্ডের মত সেই ছোটবেলা থেকে।সব সময় তোমার পাশে থেকেছি।সব সময় তোমার পাশেই আছি।”

“আমি জানি সজল ভাই এই পৃথিবীতে আপনিই একমাত্র আমার কাছের কেউ কিন্তু এই মুহুর্তে আমার কাছের হয়েও কিছু করতে পারবেন না আপনি।আমার জন্য আপনি প্রভাত এর সাথে অশান্তি করুন এটা আমি চাইনা।দেখলেন তো গতকাল রাতে কি করল।”
“দেখলাম তো তোমার উপর টর্চার করল।”
“আমাকে কিছুই বলেনি।সে নিজের ক্ষতি করেছে।জানিনা পায়ের কি অবস্থা হয়েছে।নিশ্চয়ই আমার উপর রাগ করে মদ খেয়েছে।”

“তুমি তোমাকে কেন দায়ী ভাবছো? প্রভাত মদ খায় এটা ওর অভ্যাস।ওর পা কেটেছে ওর সাইকোগিরির জন্য।”
“আমি আমাকেই দায়ী ভাবছি।”
সজল মনে মনে ভাবছে পূর্ণতা কি চিঠিটা পড়েনি।
এমন সময় পূর্ণতার বিড়াল এসে পূর্ণতার কোলের উপর এসে বসল।গলায় একটা চিঠি ঝুলানো।সজল চিঠিটা দেখে চোখ বড় বড় করে তাকাল।তার মানে চিঠি এখনো পড়েনি।তার সামনে তার চিঠি পড়বে এর চেয়ে লজ্জাজনক ঘটনা আর নেই।সজল উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

“ইয়ে পূর্ণতা তুমি থাকো আমি আসছি একটু।”
পূর্ণতা সজলের কথার উত্তর দিলনা।তার আদরের বিড়ালের গলায় চিঠি দেখে অবাক হল।সে চিঠিটা খুলবে তখন ই পেছনে থেকে রাজন বলল,
“গতকাল তো পুলিশের ভ-য় দেখালেন।আজ কীসের ভয় দেখাবেন ম্যাডাম।”

পূর্ণতা ঘাড় ঘুরাল।রাজন কে দেখে কিছুটা অবাক হল।কে এই ছেলে।এমন ভাবে কথাটা বলল যেন পূর্বে তার সাথে পরিচয় ছিল।রাজন দু’পা পেছালো।কিছুটা ঘাবড়ালো।সে পুষ্পকে ভেবেছিলো।পুষ্প আর পূর্ণতাকে পেছন থেকে হুবহু একই রকম দেখায়।চুলের রং আর স্টাইল ও একই রকম।
পূর্ণতা কৌতুহলী চোখে উত্তর দিল,

“সরি, বুঝলাম না আপনার কথা।”
রাজন ঢোক গিলে বলল,
“এক্সট্রিমলি সরি আপু।ভীষণ সরি।আমি অন্য কাউকে ভেবেছিলাম।”
পূর্ণতা ভ্রু নাচিয়ে বলল,
“এ বাড়িতে কি আপনার বউ থাকে যে আপনি তাকে ভেবে এমন রোমান্টিক ভাবে কথা বললেন।”
“বউ না বোন।আপনি আমার বোন।আপনি আছেন এ বাড়িতে।আর কেউ নেই।”
পূর্ণতা এবার হেসে দিয়ে বলল,

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ১১

“বসুন আপনার ম্যাডাম কে পাঠিয়ে দিচ্ছি।”
রাজনের সাথে পুষ্পের যে কথোপ-কথন তার সবটা পুষ্প শেয়ার করেছে।রাজনের বর্ণনা ও দিয়েছিল।পূর্ণতার চিনতে ভুল হয়।পূর্ণতা রুমে গিয়ে পুষ্পকে ধাক্কা দিয়ে ডাকাডাকি করে বিছানায় বসল।খুব আগ্রহের সাথে চিঠি খুলল।কে তাকে চিঠি লিখল।চিঠিটা খুলেই চোখ কপালে উঠল।

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ১৩