প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৩৮

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৩৮
তানিশা সুলতানা

ঘড়ির কাটায় রাত তিনটে বেজে বারো মিনিট। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন পূর্ণতা। ড্রিম লাইটের আলোতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তাকে। কালো রংয়ের শাড়িখানা হাঁটু ওবদি উঠে গেছে। বুক হতে আঁচল সরে গিয়ে দৃশ্যমান হয়েছে নারীর স্পর্শ কাতর অঙ্গ। কুচকুচে কালো লম্বা কেশ এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে চারিপাশে।
বড্ড পিপাসা পায় অভিরাজের। বাঁকা চোখে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে পূর্ণতার অবয়ন। ভেতরে পুরুষালি চিত্ত অস্থির করে তুলেছে তাকে। ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠেছে পৈশাচিক হাসি। বউয়ের নরম দেহে সুখ খোঁজার আনন্দে হৃদয় পুলকিত হয়ে ওঠে।

বসে পড়ে পূর্ণতার পাশে। হাত এগিয়ে ব্লা উ জের বোতাম খুলতে শুরু করে। একটা একটা করে খোলার ধৈর্য যেনো তার হচ্ছে না। টেনে হিঁচড়ে ছেঁড়ার চেষ্টা চালায়।
নিজের শরীরে কারোর অস্বস্তি টের পেতেই ঘুম ভেঙে যায় পূর্ণতার। বিশ্রী একটা গন্ধ নাকে লাগে। নাক কুঁচকে পিটপিট করে চোখ খুলতেই চমকায় পূর্ণতা।
উত্তেজনায় জর্জরিত অভিকে দেখে ভয় পায়। ভয়ার্তক দেখাচ্ছে তাকে।
নিজের ব্লা উ জে থাকা অভির হাতের ওপর হাত রেখে সুধায়
“কি হয়েছে এমপি সাহেব? এমন করছেন কেনো?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

পূর্ণতার কথা যেনো কানেই পৌঁছায় নি অভির। পাগলের মতো ওষ্ঠের বিচরণ ঘটায় বক্ষদেশে।
এটা ভালোবাসার ছোঁয়া নয়। দুই দুই বার অভির সাথে ঘনিষ্ঠ হয়েছে সে। তবে যন্ত্রণা কখনোই দেয় নি অভি। বরং ক্ষণে ক্ষণে পিছিয়ে গিয়েছে। আদরে যত্নে ভালোবাসায় ভরিয়ে তুলেছে।
কিন্তু আজকের অভি?

আজকের এই অভি আর আগের সেই অভির রয়েছে বিস্তর পার্থক্য।
পুরুষালি শক্ত হাতের চাপ এবং ওষ্ঠের সংঘর্ষে ক্ষণে ক্ষণে ব্যাথায় কুঁকিয়ে উঠছে পূর্ণতা।
পূর্ণতার আবেদনময়ী আওয়াজে অভি যেনো আরও পাগল হয়ে ওঠে। বুক থেকে মুখ তুলে ওষ্ঠদ্বয়ে হামলা চালায়। খানিকক্ষণের জন্যও হাত জোড়া স্থির রাখছে না। যেনো সে পিষে মে রে ফেলতে চাচ্ছে পূর্ণতাকে।
দীর্ঘ কয়েক কয়েকঘন্টার শারীরিক নির্যাতনে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে পূর্ণতা। তবুও থেমে থাকে না অভি। নিথর দেহখানাতেই শারিরীক তৃপ্তি মেটায়।

ফজরের আজানের পরপর ক্লান্ত শরীর বিছানায় এগিয়ে দেয় অভি। ঘেমে নেয়ে একেকার। একেকটা নিশ্বাসের শব্দে গোটা রুম মুখরিত। পাশে পরে থাকা নারীর কথা বেমালুম ভুলেই গিয়েছে অভি। নয়ত মনে করতে চাচ্ছে না।
নিঃশ্বাসের প্রবণতা কমে আসতেই চটজলদি উঠে পড়ে। গায়ের কাপড় ঠিক করে বেরিয়ে যায় রুম হতে। একেবারও তাকায় না পূর্ণতার পানে।

হতের ঘা এখনো পুরোপুরি শুকায় নি ইফাদের। মাঝেমধ্যেই অসয্য প্রীড়া দেয়। আজকেও মাঝরাতে হঠাৎ ব্যাথা করে ওঠে। অবশ্য এর কারণ আছে। ঘুমের ঘোরে বা পাশে শুতে গিয়ে বিছানার সাথে ভালোই লেগেছে।
ব্যাথায় চোখ মুখ খিঁচে উঠে বসে ইফাদ। চোখের কোণে পানি জমেছে। পাশে তাকাতেই দেখতে পায় মনা নেই। দুজনই শারীরিক দিক থেকে কাছাকাছি আসলেই মনের দিক থেকে আসতে পারে নি৷ নিয়ম করে প্রতি রাতেই রোমাঞ্চকম মুহুর্ত অনুভব করলেও কথা বলে না কেউ কারোর সাথে।

কপালে ভাজ পড়ে ইফাদের। কক্ষের এক কোণায় বিশাল আকারের ঘড়ির দিকেনজর বুলায়। ভোর পাঁচটা বেজে তিন মিনিট। এতো সকালে ঘুর থেকে ওঠার মেয়ে তো মনা নয়। তবে কোথায় গেলো?
চিন্তিত ইফাদ বিছানা হতে নামে। তখনই অর্ধ উলঙ্গ মনা হাসতে হাসতে রুমে ঢুকে। হেলে ঢুলে খাটে বসে পাগলের মতো হাসতে থাকে। সাদা রংয়ের পাতলা শার্ট পরনে তার। সেই শার্টের বোতাম ভেদ দেখা যাচ্ছে নারীর অবয়ন।
ইফাদ দু পা এগিয়ে প্রশ্ন করে

“কার খাট কাঁ পি য়ে আসলি?
মনা তাকায় ইফাদের পানে। ঠোঁটের কোণের হাসি বজায় রেখে বলে
” খাট কাঁপিয়েছি কি না জানি না। তবে বুকের জ্বালা মিটিয়েছি।
তুই আকাশে উড়িস। তোর মতো পঙ্গুর সাথে আমি বেশিদিন থাকছি না।
তোকে দিয়ে পোষাবে না আমার।
ইফাদ কঠিন কিছু গালি আওড়ায়। যা শুনেও মনা জবাব দেয় না।

অসয্য যন্ত্রণায় ছটফট করছে ইফতিয়ার। কোনো কারণ ছাড়াই হৃদয় ব্যকুল হচ্ছে। বুকের ভেতরে ধরফর করছে। অস্থির অস্থির লাগছে। সারা রাত দুই চোখের পাতা এক করতে পারে নি।
মন শুধু বারবার একটা কথাই বলছে “পূর্ণতা ঠিক আছে তো”

ফজরের সালাত আদায় করে মোনাজাতে পূর্ণতার জন্য দোয়া করে। আল্লাহর দরবারে পূর্ণতার দীর্ঘ আয়ু এবং সুস্থতা কামনা করে। অতঃপর একটু ঘুমানোর উদ্দেশ্যে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। তবে ঘুম আসে না। হাজারটা চিন্তা মস্তিষ্ক দখল করে নিয়েছে। ছটফটানি বাড়তে থাকে। ভেবেছিলো নামাজ পড়লে হৃদয় শান্ত হবে। তবুও শান্ত হলো না।
মখমলে বিছানা ছেড়ে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ায় ইফতিয়ার। দূর আসমানের পানে তাকায়। ঘন কুয়াশার রেশ কেটে প্রকৃতির দেখা মিলছে। স্পষ্ট হয়ে উঠছে দূরের গাছপালা গুলো। আসমানে বিশাল আকৃতির চাঁদ এখনো রয়েছে। হয়ত কিছু মুহুর্তের মধ্যে পালিয়ে যাবে। আসমান হতে বিলুপ্ত হবে। ঠিক যেমন ভাবে দেহ হতে প্রাণ বেরিয়ে গেলে মানুষ বিলুপ্ত হয়ে যায়।

“কেনো মনে হচ্ছে?
পূর্ণতা ভালো নেই। কিন্তু পূর্ণতার কিছু হলে বা কেউ কিছু বললে তো আমি ঠিক জানতে পারতাম।
ওই বাড়ির প্রতিটা কোণায় সিসি ক্যামেরা লাগানো। তিন জন গার্ড রেখেছে। তারা কি খবর দিচ্ছে না আমায়?
মুহুর্তেই তীব্র শব্দ দূষণ করে বেজে ওঠে ফোন খানা। ইফতিয়ার দ্রুত পা চালিয়ে ফোন তুলে। স্কিনে মিষ্টি নামটা জ্বল জ্বল করছে। রিসিভ করে কানে তুলে। ওপাশ থেকে ভেসে আসে মধুর সুরে সালামের শব্দ

” আসসালামু আলাইকুম চৌধুরী সাহেব।
ইফতিয়ার সালামের জবাব দিয়ে সাবলীল ভাষায় বলে
“পূর্ণতা ভালো আছে?
” হ্যাঁ ভালো আছে।
এতো চিন্তা কেনো করেন চৌধুরী সাহেব? আমি আছি তো। নিজের জীবন দিয়ে হলেও পূর্ণতাকে ভালো রাখবো। কথা দিয়েছি এবং এখনো দিচ্ছি।

মিষ্টির থেকে পূর্ণতার ভালো থাকার খবর শুনেও হৃদয় শান্ত হয় না ইফতিয়ারের। কমে না ছটফটানি।
তবুও জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে একটু স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালায়। এবং বলে
“ওই বাড়িটা তোমার। তোমাকে সবাই অসম্ভব ভালোবাসে। বলা চলে ওই বাড়ি প্রকাশ্যে খু ন বা ধ র্ষ ণ করা হয় না শুধুমাত্র তোমার মুখ চেয়ে৷

আর তাছাড়াও পূর্ণতার ভালো বন্ধু তুমি। সে তোমাকে ভীষণ ভালোবাসে।
তাই তোমাকে জিজ্ঞেস করি পূর্ণতার কথা।
আমি স্বার্থপর নই মিষ্টি।
মৃদু হাসে মিষ্টি।
” আমি জানি তো।
আপনি আমাকে ইদানীং ভীষণ মিস করেন।
রসিকতার ছলে কথাখানা বলে ফেলে মিষ্টি। ইফতিয়ার ভাবে সত্যিই কি মিস করে?
এই যে মেয়েটা নিয়ম করে কল করে। এক বেলা কল করতে দেরি হলেই একটু চিন্তা হয়। প্রশ্ন জাগে “কেনো কল করছে না?”

তাহলে কি এটাকেই মিস বলে?
হয়ত তাই।
তবে নিজ মুখে স্বীকার করতে নারাজ ইফতিয়ার। মিথ্যে সে বলতে পারে না। আর সত্যি বলার সৎসাহস নেই। অগত্য কল কেটে দেয়।
মিষ্টি মোটেও চমকায় না। বরং ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে।
ধীরে ধীরে পাথরের বুকে ফুল ফুটে উঠছে। আর কি চাই?

ব্যাথায় জর্জরিত পূর্ণতা সারাদিন অবচেতন অবস্থায় পড়ে রয়। কেউ তার খোঁজ করে না। জ্বরে গা পুরে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে দুই একবার পানি পানি বলে আহাজারিও করেছে জ্বরের ঘোরে। তবে আফসোস কেউ তার আহাজারি শোনে নি।
কড়া রোদের আলো চোখে পড়তেই হুশ ফেরে পূর্ণতার। চোখের কোণে জলের ধারা শুকিয়ে মোটা দাগ বসে গিয়েছে৷ অধর কেটে রক্ত গড়িয়েছিলো সেটাও শুকিয়ে চামড় ধরেছে। পানি পিপাসায় শুকিয়ে যাওয়া পরাণখানাও শান্ত হয়েছে।

পূর্ণতা টেনে টেনে চোখ খুলে। রাতের কথা মনে পড়তেই অভিমানে বুক ভাড়ি হয়ে আসে।
ভীষণ কান্না পায়। হাউমাউ করে কাঁদতে যেতেই অনুভব করে ভীষণ ব্যাথা সারা শরীরে।।নারাচরা করার শক্তি যেনো তার নেই।

খুব করে মায়ের কথা মনে পড়ে পূর্ণতার। মৃদু স্বরে চিৎকার করে ওঠে মাকে ডেকে। তবে হায়য়
পূর্ণতার এই আহাজারি তার মায়ের কান ওবদি পৌঁছায় না।
ইমন চিন্তিত। পূর্ণতা কেনো আসলো না আজকে খেতে? খেতে মমতা বেগমের সাথে ঝগড়া করলো না?
রুম হতেই কেনো বের হলো না?
সন্দেহ বাঁধে ইমনের। গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যায় পূর্ণতার কক্ষের পানে। দরজায় কান পেতে শুনতে চেষ্টা করে কু করছে পূর্ণতা।
চাপা স্বরে কান্নার আওয়াজ পেতেই চতুর ইমন বুঝতে পারে কিছু একটা হয়েছে।
দরজায় দুটো টোকা দিয়ে বলে

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৩৭

“ভাবি আসবো?
শরীর পাতলা কম্বল ছাড়া আর কিছুই নেই পূর্ণতার। ইমনের ডাক তার কান ওবদি পৌঁছায় না।
পূর্ণতার থেকে জবাব না পেয়ে চট করে কল করে কাউকে

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৩৯