প্রেমময় আসক্তি পর্ব ১২

প্রেমময় আসক্তি পর্ব ১২
নন্দিনী চৌধুরী

রোদেলা কলেজে আসছে, ক্লাস করে এখন কলেজের গেটে অপেক্ষা করছে মুন, রুবা, কাশুর জন্য। ওরা ওদের প্র্যাকটিক্যাল জমা দিতে গেছে। রোদেলা দাঁড়িয়ে ছিলো তখন ওদের কলেজের সিনিওর নীলয় ওর কাছে আসলো। রোদেলার নীলয়কে একদম পছন্দ না। কারন নীলয় একদম গায়ে পরা টাইপের ছেলে। রোদেলা নীলয়কে দেখে চলে যেতে নিলে নীলয় ওর রাস্তা আটকে দেয়।

নীলয়: আমাকে দেখে চলে যাচ্ছিলে রোদেলা?
রোদেলা: নাতো ভাইয়া! আপনাকে দেখে চলে যাবো কেন? আমি আমার বান্ধুবিদের কাছে যাচ্ছিলাম।
নীলয়: কিন্তু আমি যে দেখলাম তুমি আমাকে দেখেই চলে যাচ্ছিলে।
রোদেলা: এমন নয় ভাইয়া।
নীলয়: আচ্ছা বাদ দেও। এখন বলো কেমন আছো?
রোদেলা: জ্বি ভালো, আপনি?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নীলয়: আমিও ভালো। তো রোদেলা তুমি কি আমার সাথে এক কাপ কফি খেতে যাবে?
রোদেলা: সরি ভাইয়া আমার আজকে ক্লাস আছে সাথে কোচিং। সো, আমাকে এখন যেতে হবে।
নীলয়: আচ্ছা। তাহলে কি আমরা বন্ধু হতে পারি?
বলেই রোদেলার দিকে নীলয় ওর হাত বাড়িয়ে দিলো। রোদেলা বুঝতে পারছেনা ও কি করবে। রোদেলা হাতটা বাড়াতে নিলেই। কেউ একজন রোদেলার হাত ধরে টান দিয়েই ঠাস করে একটা থাপ্পড় মেরে দিলো রোদেলার গালে। রোদেলা থাপ্পড়টা খেয়ে একদম মাথা ঘুরে গেলো। রোদেলা সামনে তাকিয়ে দেখে আদ্রিয়ান দাঁড়ানো। ওর চোখ মুখ একদম লাল হয়ে আছে। রোদেলার ভয়ে আত্মা বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম। আদ্রিয়ান রোদেলাকে নিজের বুকের মধ্য নিয়ে নীলয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

আদ্রিয়ান: আমার বউকে টাচ করতে চাওয়ার সাহস ফারদার দেখাবেনা।
নীলয়: বউ!
আদ্রিয়ান: ইয়েস, রোদেলা আমার ওয়াইফ। ওর দিকে কেউ এরপর থেকে নজর তুলে তাকাবেনা। যদি কাউকে দেখি তাকাতে তাহলে তার ফল ভালো হবেনা।
আদ্রিয়ান রোদেলাকে টানতে টানতে গাড়িতে নিয়ে গিয়ে বসালো। তারপর রোদেলাকে নিয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে পরলো।
উপস্থিত সবাই আদ্রিয়ানের কথার উপর আর কোনো কথা বললতে পারলোনা। পুরো ঘটনা মুন, রুবা, কাশু দেখলো। কিন্তু ওরাও কিছু বললোনা।

আদ্রিয়াম ফুল স্প্রিডে গাড়ি ড্রাইব করছে। রাগে ওর শরীর কাঁপছে। আর রোদেলার অবস্থা ভয়ে খারাপ হয়ে গেছে। হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে ভয়ে।
আদ্রিয়ান রোদেলাকে নিয়ে ওদের বাসায় চলে আসে। আদ্রিয়ান গাড়ি থেকে নেমে রোদেলাকে গাড়ি থেকে টেনে বের করলো। তারপর টানতে টানতে ওকে বাসায় ভিতরে ডুকালো। রোদেলার হাতে ব্যাথা পাচ্ছে সেদিকে আদ্রিয়ানের কোনো খেয়াল নেই। আদ্রিয়ান রোদেলাকে টানতে টানতে ওর রুমে নিয়ে এসে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দেয়। এতো জোরে মাটিতে পরায় হাতে ব্যাথা পায় অনেক রোদেলা। তবুও রোদেলা কিছু বলেনা। আদ্রিয়ান চিৎকার করে বলে,

আদ্রিয়ান: তোকে আমি পাগলের মতো ভালোবাসি, সেটা তোর ভালোলাগে না? আমাকে তোর সয্য হয়না? আমার স্পর্শ তোর সয্য হয়না? কিন্তু অন্যের স্পর্শ তোর সয্য হয়। অন্যের সাথে হাত মিলাতে হাসতে ভালো লাগে! আর আমার সাথে কথা বলতে তোর অসয্য লাগে। আমি কুকুরের মতো তোর পিছনের ছুটি, তোর সেটা চোখে পরেনা। শুধু চোখে পরে আমার দোষ। আরে আমি কি ইচ্ছা করে মাফিয়া হইছি। বল কেউ ইচ্ছা করে মাফিয়া হয়। মাফিয়া হয়েছি কোন কারণে তুই জানিস সেটা? তোর জন্য আমি এতো পাগল এতো পাগল সেটা তোর ভালোলাগে না। বল! কেন কেন আমাকে এতো কষ্ট দেস তুই?
আদ্রিয়ান কথা গুলো বলতে বলতে রোদেলার সামনে বসে পরে। রোদেলার চোখে পানি এসে গেছে।

সে আদ্রিয়ানকে পছন্দ করেনা ঠিক কিন্তু সে আদ্রিয়ানকে এভাবে কস্ট দিতে চায়নি। আদ্রিয়ান রোদেলার আরেকটু কাছে এগিয়ে ওর দুইগালে হাত দিয়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে ধরলো। দুইজনের নিশ্বাস দুইজনের মুখে পরছে।আদ্রিয়ান আসতে আসতে বলা শুরু করলো,

“তখন আমার ৫বছর বয়স। আমি আমার মা আর আমার ছোট বোন শাম্মি একসাথে থাকতাম। আমাদের বাবা আমাদের সাথে থাকতেন না। আমাদের বাবাকে আমি জন্মের পর ঠিক মতো কোনোদিন কাছে পাইনি। আর না আমার বোন। আমার মা আর বোনকে নিয়েই আমাদের একটা সুখি পরিবার ছিলো। আমরা শুরু থেকে বাংলাদেশে থাকতাম। আমার মা হাতের কাজ করে আমাদের মানুষ করতো। আমার বাবা কোনোদিন আমাদের খোঁজ নিতোনা। আমার বাবাকে যখন দেখতাম বাসায় আসতো। তখন মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করতো। কিন্তু আমার মা তার কোনো প্রতিবাদ করতোনা। এভাবেই যাচ্ছিলো আমাদের দিনকাল। আমার আদরের বোনটাকে আমি অনেক ভালোবাসতাম। অনেক সুন্দর ছিলো আমার বোনটা। কিন্তু একদিন সব শেষ হয়ে গেলো। সব পাল্টে গেলো।

একদিন আমি স্কুল থেকে বাসায় এসে দেখি আমাদের বাসার দরজা খোলা। আমি বাসায় ডুকে দেখি আমার মা মাটিতে পরে আছে রক্তাক্ত অবস্থায়। মাকে ওই অবস্থায় দেখে আমি একদম ভয় পেয়ে যাই। আমি তাড়াতাড়ি মায়ের কাছে গিয়ে মাকে ধাক্কা দিতে থাকি আর বলতে থাকি,
“মা! মা! কি হয়েছে তোমার? মা, তোমার গায়ে এতো রক্ত কেন? ওমা কথা বলো?”
কিন্তু আমার মা আমার সাথে কথা বলেনা। আমি তাড়াতাড়ি করে আমার রুমে গিয়ে আমার বোনকে খোঁজা শুরু করলাম। কিন্তু কোথাও খুঁজে পাইনি আমি আমার বোনকে।

মাকে কবর দিয়ে আমার চাচ্চু আমাকে নিয়ে সিডনি চলে আসে। এখানে একটা অরফেনে আমাকে রেখে দিয়ে আসে তিনি। সেই থেকে আমি ওখানে বড় হয়েছি। ওখানে থেকে পড়াশুনা করেছি। আর হয়েছি মাফিয়া।
বিশ্বাস করো কোনো নির্দোষকে আমি মারিনা। শুধু যারা অন্যায় করে তাদের মারি। আমি তোমার আশেপাশে কাউকে সয্য করতে পারিনা। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।

“প্রানোশী বিশ্বাস করো আমি তোমার নেশাতে এতোটা আসক্ত অন্য কোনো নেশা আমাকে সেইভাবে আমাকে আসক্ত করতে পারেনি। তোমার আসক্তিতে আমি এমন ভাবে আসক্ত যে তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে কল্পনা করতে পারিনা। তুমি আমাকে ভালোবাসোনা আমি জোর করবোনা। কিন্তু আমাকে দূরে করে দিওনা। তুমি ছাড়া যে আমার কেউ নেই। ”
“”তুমি তো অনেক সর্বনাশী মেয়ে। উঁহু,, শুধু আমার সর্বনাশী রানী? তোমার প্রেমেতে তাই তো মাতাল আমি।”

আদ্রিয়ানের বলা প্রতিটা কথা রোদেলার বুকে গিয়ে বারি খাচ্ছে। হৃদয়ে এক আলাদা প্রণয় সৃষ্টি করছে তার। রোদেলা একদম চুপ করে আছে। রোদেলার ঠোঁট জোরা খুব টানছে আদ্রিয়ানকে। আদ্রিয়ান আর নিজেকে ধরে রাখতে না রোদেলার ওষ্ঠদ্বয়ের মধ্য নিজের ওষ্ঠদ্বয় দিয়ে ঊষ্ণ ভালোবাসা দিতে লাগলো। রোদেলাও আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেললো। কেন জানি বাধা দিতে পারছেনা সে আদ্রিয়ানকে।

বেশকিছুটা সময় পর আদ্রিয়ান রোদেলাকে ছেড়ে দেয়। রোদেলা লজ্জায় এখনো চোখ বন্ধ করে আছে।
আদ্রিয়ান: লজ্জা পাওয়া শেষ হলে নিচে এসো। আমি গাড়িতে অপেক্ষা করছি।
বলে আদ্রিয়ান নিচে চলে গেলো। আদ্রিয়ান যাওয়ার কিছুটা সময় পর রোদেলা নিজেও নিচে গিয়ে গাড়িতে বসলো।

মুন বাসায় এসে দেখে রাফসান আর রিয়া সোফায় বসে কথা বলছে। রিয়াকে বাসায় দেখে আর রাফসানের সাথে দেখে মুনের মন আবার ছোট হয়ে গেলো। মুন নিজের রুমে এসে বসে রইলো। মুন চায়না ওদের একসাথে দেখে কস্ট পেতে।
কাশফিয়া আর রুবা এসেছে পাশে দোকানে। কিছু দরকারি জিনিশ কিনতে। রুবা টুকটাক কিছু কিনে পাশে সাইডে তাকিয়ে দেখে আরাভ কিছু কিনাকাটা করছে। আরাভকে দেখে রুবা ওখান থেকে সরে গেলো। সে চায়না আরাভের সামনে পরে আবার লজ্জায় পরতে। কাশফিয়ার ফোনে একটা কল আসলো। কাশফিয়া ফোন নিয়ে বাহিরে এসে কথা বলতে শুরু করলো। এমন সময় কাউসার সেখানে আসলো। কাউসার নিশিকে নিয়ে এসেছে দোকানে। কাউসার আর নিশিকে এক সাথে দেখে কাশফিয়া অনেক বড় ধাক্কা পেলো। কাশফিয়া তাও কিছু না বলে ওদের দেখতে লাগলো। কাউসার নিশিকে নিয়ে কাশফিয়ার সামনে দাঁড়ালো।

কাউসার: নিশি ওকে সত্যিটা বলো।
নিশি: কাশফিয়া আমি দুঃখিত। আসলে আমার আর কাউসারের কোনো রিলেশন নেই। আমি কাউসারকে পছন্দ করতাম তাই ওই মিথ্যাটা বলেছিলাম। প্লিজ আমাকে মাফ করে দেও।
নিশি কথাটুকু বলে ওখান থেকে চলে গেলো।
কাউসার কাশফিয়ার কাছে এসে ওকে বললো,

কাউসার: আশা করি নিশিকে নিয়ে যেই সন্দেহ তোমার মনেছিলো তা দূর হয়েছে।
আমি তোমাকে ভালোবাসি। সেই প্রথম দিন যেই চশমা পরা মেয়েটা। আমাকে চিপস নিয়ে কথা শুনাচ্ছিলো। সেই কথা শুনানো মেয়েটার প্রতি আমি ভালোলাগা অনুভব করেছিলাম।
আমি তোমাকে ভালোবাসি আর এটাই সত্যি। যদি তোমার মনে আমাকে নিয়ে কিছু থাকে তবে এসো আমার মনে ঘরে। আমার মনের অন্দরমহলে তোমাকে স্বাগতম।
কথাটুকু বলে কাউসার সেখান থেকে চলে যায়। রুবা বিল দিয়ে সব ব্যাগ নিয়ে বেরোতে নিলে পিছন থেকে কেউ বলে,,,
আরাভ: মিস চেইন খুলা!

আরাভের ডাক শুনে রুবা থমকে গেলো। এই লোকটা ওকে এভাবে লজ্জায় ফেলে কেন। রুবা আরাভের দিকে না তাকিয়ে জলদি দোকান থেকে বেরিয়ে যায়। আর আরাভ ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
আদ্রিয়ান রোদেলাকে বাসার নিচে দিয়ে যায়। রোদেলা যাওয়ার আগেও আদ্রিয়ান ওকে শুধু এটুকুই বলেছে।
আদ্রিয়ান: “নিজের ভালোবাসায় না রাখলেও ঘৃণায় রেখো আমাকে।”
আদ্রিয়ান এতুটুকু বলেই গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যায়।

প্রেমময় আসক্তি পর্ব ১১

রোদেলা রুমে এসে দেখে মুন ঘুম। রোদেলা ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরে যায়। সব খাবার ঢেকে রাখা। সার্ভেন্টসরা সব খাবার রান্না করে এখানে রেখে গেছে। রোদেলা খাবার টেবিলে নিয়ে রেখে নিজে কিছুটা খেয়ে। রুমে চলে আসলো।
দেখতে দেখতে ১সপ্তাহ চলে গেলো,,
রোদেলা আর আদ্রিয়ানের এখন প্রায় দেখা হয়। রাফসান বাসায় বলেছে আদ্রিয়ানের কথা। রোদেলার বাবা বলেছে কিছুদিনের মাঝে ঢাকা আসবে। তারপর বাকিটা দেখবে। রোদেলাকে রাফসান এখনো কিছু জানায়নি।
রোদেলা এখন মন না চাইলেও আদ্রিয়ানের সাথে কথা বলা চলাফেরা করতে হয়। কেন জানি তার মন সায় দেয়না আদ্রিয়ানের জন্য।

আজকেও আদ্রিয়ান রোদেলাকে কলেজ থেকে ড্রপ করে নিয়েছে। আদ্রিয়ান রোদেলাকে নিয়ে একটা পার্কে এসেছে। দুইজনেই পাশাপাশি হাঁটছে। আদ্রিয়ান আর রোদেলা একসাথে হাঁটছিলো তখন পার্কে দুইটা লোক আসলো। আর আদ্রিয়ানের বুক বরাবর দুইটা গুলি করলো। আর সাথে সাথে পালিয়ে গেলো। সব কিছু এতো তাড়াতাড়ি হয়ে গেলো। যে দুইজনে কিছু বুঝে উঠতে পারলোনা। আদ্রিয়ান লুটিয়ে পরলো মাটিতে। রোদেলার আদ্রিয়ানকে ধরে ফেলে। পিছন থেকে সায়মন ও জনি আসে। ওরা ওর পিছনেই ছিলো। ওরাও কিছু বুঝে উঠার আগে সব হয়ে গেলো। সায়মন তাড়াতাড়ি এম্বুলেন্সে কল দেয় কিছু সময়ের মাঝে এম্বুলেন্স আসলো। রোদেলা একদম পাথর হয়ে গেছে। রোদেলার সাদা জামা আদ্রিয়ানের রক্তে ইতিমধ্য লাল হয়ে গেছে অনেকটা। রোদেলা আর সায়মন দুজনে আদ্রিয়ানের সাথে এম্বুলেন্সে বসলো।

আদ্রিয়ানকে আরাভের হাসপাতালে আনা হয়েছে। আরাভ ইতিমধ্য অপারেশন থিয়েটার রেডি করে রাখছে। আদ্রিয়ানকে আনার সাথে সাথে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়েছে।
এখন শুধু অপেক্ষার প্রহর গুনছে সবাই।
এই অপেক্ষার প্রহরের শেষে কি হবে? ফিরবকে কি আদ্রিয়ান? মেনে নেবে কি রোদেলা আদ্রিয়ানকে? নাকি এখানেই শেষ আদ্রিয়ানের নেশামইয়ের প্রেমময় আসক্তি!

প্রেমময় আসক্তি পর্ব ১৩