প্রেমময় আসক্তি শেষ পর্ব

প্রেমময় আসক্তি শেষ পর্ব
নন্দিনী চৌধুরী

ঘরের ড্রইং রুমে বদে কাঁদছে রুবা,কাশু। ওদের সামনের সোফায় মাথা নিচু করে বসে আছে আরাভ রাফসান। আরাভের চোখ মুখ ফুলে গেছে। সবাই যখন বসে ছিলো তখন পুলিশ অফিসার হারুন আসলেন ওদের বাসায়।
হারুনকে দেখে উঠে দাঁড়ালো দুজনের। আরাভ সবার আগে জিজ্ঞেশ করলো,
আরাভ: কোনো খবর পেলেন স্যার?
হারুন : মিস্টার আরাভ আপনারা নিজের মানসিক ভাবে প্রস্তুত করেনিন।
আরাভ: মানে?

হারুন: মিস্টার আরাভ আমরা পুরো দুইদিন আমাদের সার্চ টিমকে দিয়ে পাহাড়ের নিচের আসে পাশের সব জায়গায় চেক করিয়েছি। আজকে ভোর সকালে আমাদের সার্চ টিম পাহাড়ের একদম শেষ চূড়ায় একটা লাশ পেয়েছে। লাশটার মুখ খুব বিশ্রি ভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। আর দুইদিন হওয়ায় পচন ধরাও শুরু করেছে। আপনাদের আমার সাথে থানায় যেতে হবে। লাশটাকে সনাক্ত করতে। আমার লাশের সাথে কিছু জিনিশ পেয়েছি। সেগুলো দেখে বলবেন এটা উনি কিনা?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ইন্সপেক্টরের কথা শুনে আরাভ রাফসান কি বলবে বুঝতে পারছেনা। তবুও তারা চললো থানায়। থানায় এসে লাশ যেখানে রাখা হয় সেখানে আসলো রাফসান আর আরাভ। হারুন ইশারা করতেই একজন স্টাফ লাশ রাখা একটা বক্স খুললো। লাশের মুখের উপর থেকে কাপড় সরাতেই রাফসান চোখ বন্ধ করে নিলো। কি ভয়ানক! হারুন একটা পালস্টিকের ব্যাগ হাতে দিলো আরাভের। আরাভ ব্যাগটা খুলে জিনিশ গুলো চেক করতে লাগলো।
সব চেক করে আরাভ ধপ করে মাটিতে বসে পরলো। আরাভকে এভাবে বসে পরতে দেখে রাফসান অবাক হয়। আরাভের পাশে বসে আরাভের কাঁধে হাত দিয়ে বলে,

রাফসান: কি হলো?
আরাভ: এ.এটা আদ.আদ্রিয়ান।
আরাভের একটা কোথায় সব থমকে গেলো। হারুন বুঝতে পারলো তাদের সন্দেহই ঠিক।
রাফসান: ক.কি?
আরাভ: হ্যাঁ এটা আদ্রিয়ান। এই দেখো আদ্রিয়ানের ঘড়ি, ওয়ালেট, চেইন সব আদ্রিয়ানের।
আরাভের কথা শুনে আর কিছু বলার নেই রাফসানের। সব নিয়ম কানুন মেনে লাশ নিয়ে বাসায় আসে ওরা। জুঁই আরাভের কাছে এসে জিজ্ঞেশ করলো,
জুঁই: ভাইয়া আদ্রু ভাইয়া কোথায়? আদ্রু ভাইয়াকে পেয়েছিস তাইনা। কই ভাইয়া হ্যাঁ?
মুন: কি হলো কিছু বলছোনা কেনো তোমরা দুজন?
রাফসান: আদ্রিয়ান আর কোনোদিন ফিরে আসবেনা।
মুন: মানে?

আরাভ: আদ্রিয়ান সারাজীবনের মতো আমাদের একা করে চলে গেছে ভাবি। সেই না ফেরার দেশে চলে গেছে।
আরাভের কথা শুনে মুন দাঁড়ানো থেকে বসে পরে। জুঁই ঠাই হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
জুঁই: এটা কি বলছো তোমরা? এটা হতে পারেনা। ভাইয়া রোদেলাকে ছেড়ে যেতে পারেনা। ভাইয়া আমাদের এভাবে একা রেখে যেতে পারেনা। কি সব আজেবাজে কথা বলছো তোমরা। আমরা কিভাবে এই কথা রোদেলাকে বলবো। ও যে শুনেই পাগল হয়ে যাবে।

তখন কিছু একটা পরার শব্দে সবাই দরজার দিকে তাকায়। রোদেলা দাঁড়ানো দরজায়। হাত পা শরীল সব ওর কাঁপছে। রোদেলা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেনা। ওর কানে বার বার এটাই বাজতেছে আদ্রিয়ান নেই। সে চলে গেছে না ফেরার দেশে। রোদেলা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনা। অজ্ঞান হয়ে পরে যায় মাটিতে।
রাফসান আর আরাভ গিয়ে ওকে ধরে। আরাভ ওকে কোলে করে রুমে নিয়ে এসে বিছানায় শুইয়ে দেয়। পেসার চেক করে দেখে পেসার একদম লো। আর টানা দুদিন না খাওয়ায় শরীল দূর্বল হয়ে গেছে। আরাভ জলদি রোদেলাকে সেলাইন আর ঘুমের মেডিসিন দেয়। তারপর কাশুকে রোদেলার কাছে বসিয়ে বাকিরা বাহিরে আসে।

আরাভ: জানাজা দিয়ে দিতে হবে।
রাফসান: হুম চলো।
আরাভ রাফসান গোসল করে পাঞ্জাবি পরে বের হয়ে মসজিদে গেলো। লাশ তারা আগেই মসজিদে রেখে আসছে।
মুন, রুবা, কাশু গোসল করে নামাজ পড়তে বসলো। নামাজে তারা আল্লাহর কাছে আদ্রিয়ানের আত্মার শান্তি চাইলো। আর রোদেলাকে যেনো তারা শক্ত রাখতে পারে সেই দোয়া করলো।
সন্ধ্যায় ফেরত আসলো আরাভ রাফসান।
রাফসান এসে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো। আরাভ সোফায় বসলো। আর দুইদিন আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা মনে করলো,
দুইদিন আগে,,

আরাভ সকালে বসে কেভিনে রোগি দেখছে তখন ওর ফোনে কল আসে একটা অচেনা নাম্বার থেকে। আরাভ কলটা রিসিভ করতেই একটা লোক জানায় আদ্রিয়ান পাহাড় থেকে পরে গেছে আর রোদেলা সেই জায়গায় অজ্ঞান হয়ে পরে আছে। খবর পাওয়া মাত্র আরাভ রাফসানকে জানায়। আরাভ, রাফসান, মুন সহ তারা তাড়াতাড়ি সেখানে পৌছায়। সেখানে গিয়েই সেখানে অফিসারদের খবর দেয় তারা। অফিসাররা এসে তাদের সার্চ টিম দিয়ে খোঁজ শুরু করে।
প্রায় বিকাল হয়ে আসে কিন্তু কোনো খোঁজ মেলেনা আদ্রিয়ানের। তাই তারা বাধ্য হয়ে রোদেলাকে নিয়ে ঢাকায় আসে। আর এখান থেকেও সার্চটিম পাঠায় ওখানে
আদ্রিয়ানকে খোঁজার জন্য। রোদেলা সেদিন জ্ঞান হারানোর পর পুরো দুইদিন অজ্ঞান ছিলো।
রাতে,,,,,

রোদেলার জ্ঞান ফিরে। আসতে আসতে করে চোখ মেলে তাকায় সে। আসে পাশে ভালো ভাবে চোখ বুলিয়ে বুঝতে পারে এটা তার বাসা। সব আসতে আসতে তার মনে আসে। রোদেলা উঠে দাঁড়ায়। তারপর গিয়ে রুমের দরজা লাগায়। দরজা লাগিয়ে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায় সে। রোদেলার নিজের দুইহাত সামনে এনে দেখতে লাগে আর বলতে লাগে,
রোদেলা: এই হাত দিয়েই আমি ওই খুনি বেঈমানকে মেরে ফেলেছি। হ্যাঁ, এই হাত দিয়ে আমি ওকে পাহাড় থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছি। আমি ঠিক কাজ করেছি। বেঈমান খুনি ও। আদ্রিয়ান খান আমান একজন খুনি। আর আজ সে মৃত। হ্যাঁ, আজ থেকে আমার জীবনে তার কোনো অস্তিত্ব নেই।
রোদেলা ডুব দিলো দুইদিন আগের সেই ভয়ংকর অতীতে,,,,,

রোদেলা আর আদ্রিয়ান চলে আসে পাহাড়ে। এতো সুন্দর পাহাড়ি এলাকা যে সেটা বলার মতোনা। রোদেলা আশেপাশে তাকিয়ে দেখছে। আদ্রিয়ান ফাঁকে ফাঁকে ওর কিছু ছবি তুলছে। রোদেলা পাহাড়ের এক কোণায় এসে দাঁড়ালো। পাহাড়ের গভীরতা অনেক। নিচে তাকালে যে কারো মাথা চক্কর মারবে। আদ্রিয়ান এসে রোদেলার পাশে দাঁড়ালো।
আদ্রিয়ান: দেখেছো কত সুন্দর জায়গাটা।
রোদেলা: হ্যাঁ অনেক সুন্দর। আচ্ছা আদ্রিয়ান শুনুন।
আদ্রিয়ান:হ্যাঁ, বলো।

রোদেলা: আমাকে একবার জরিয়ে ধরে ভালোবাসি বলুনতো।
আদ্রিয়ান রোদেলাকে জরিয়ে ধরে ওর কপালে ঠোঁটে চুমু দিয়ে বলে “ভালোবাসি রোদেলা”।
রোদেলা আদ্রিয়ানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। তারপর আদ্রিয়ানের পিছনে এসে দাঁড়ালো।
রোদেলা: আপনি আমাকে অনেক ভালোবাসেন তাইনা?
আদ্রিয়ান: হুম অনেক ভালোবাসি তোমাকে আমি।
রোদেলা:মিথ্যে!!!!

বলেই আদ্রিয়ানকে নিজের সব শক্তি দিয়ে ধাক্কা মারে রোদেলা। আদ্রিয়ান তাল না সামলাতে পেরে একদম পাহাড়ের নিচে পরে কিন্তু একটা পাথর ধরে ঝুলতে থাকে।আদ্রিয়ান চোখে অবাক ও কষ্ট দুটোই। আর রোদেলার চোখে ঘৃণা, রাগ স্পষ্ট।
আদ্রিয়ান ঝুলে থাকা অবস্থায় হেঁসে দিয়ে বললো,
আদ্রিয়ান: নেশামই!!
রোদেলা: চুপ একদম চুপ। এই নামে ডাকার কোনো অধিকার আপনার নেই। আপনার মতো একজন খুনি, বিশ্বাসঘাতককে আমি ভালোবেসেছিলাম এটা ভাবতেও ঘৃণা লাগে।
আদ্রিয়ান: আমি খুনি!বিশ্বাসঘাতক!

রোদেলা: হ্যাঁ! হ্যাঁ! আপনি খুনি। আপনি আমার মা-বাবার খুনি। আমার মা বাবাকে মেরে ফেলেছেন আপনি। আপনি কি ভেবেছিলেন আমি কোনোদিন জানতে পারবোনা যে আপনি খুন করেছেন ওদের।
আদ্রিয়ান: তুমি এটা কিভাবে বলতে পারলে আমি খুন করেছি বাবা-মাকে?

রোদেলা: আমার কাছে প্রমান আছে। আমি প্রমান দেখেই তোবেই বলছি। আমার মা-বাবা যেদিন খুন হয়। তার আগেরদিন রাতে কোথায় ছিলেন আপনি। কি উত্তর নেই। আমি বলছি কোথায় ছিলেন। আপনি আমার মা-বাবার কাছে ছিলেন। তাদের মেরে পরেরদিন সকালে বাসায় এসেছিলেন। আর আমাকে নিয়ে ভাইয়ার কাছে গেছিলেন। কারন আপনি জানতেন কিছু সময়ের মাঝেই খবর আসবে আমার মা-বাবার মৃত্যুর। সব আপনার পরিকল্পনা ছিলো।

আদ্রিয়ান: বিশ্বাস করো নেশামই। তুমি যা ভাবছো তা সত্যি নয়। আমি ওনাদের মারিনি নেশামই।
রোদেলা: মিথ্যে সব মিথ্যে। আপনি আমার বিশ্বাস নিয়ে খেলেছেন। আমার ভালোবাসা নিয়ে খেলেছেন। আপনি লিজাকে ব্যাবহার করেছেন। তারপর তাকে ছুঁড়ে ফেলে আমাকে ধরেছেন।
আদ্রিয়ান অবাক চোখে বলে লিজা?

রোদেলা: হ্যাঁ, সেই লিজা যাকে আপনি নিজের বিছানার সাথি বানিয়ে তারপর তাকে ছুঁড়ে ফেলেছেন। আজ সে আপনার সন্তানের মা হতে চলেছে। কিন্তু আপনি তাকে আর তার সন্তানকে অস্বিকার করেছেন। আপনি আমাদের দুটো মেয়ের জীবন নিয়ে খেলেছেন। আপনার বেচেঁ থাকার কোনো অধিকার নেই আদ্রিয়ান। আপনাকে আমার হাতেই মৃত্যু দিলাম আমি। আপনি সব অন্যায়কারীকে মৃত্যু দেননা। আজ আমিও দিলাম আপনাকে মৃত্যু। ঘৃণা করি আপনাকে আমি।
আদ্রিয়ান হাঁসতে লাগলো আর বলতে লাগলো,

আদ্রিয়ান: “তোমার হাতে মৃত্যু আমার জন্য এক অমর মৃত্যুবান।” তোমার থেকে পাওয়া সব কিছু আমার কাছে ভালোবাসা। আমার ভালোবাসায় কমতি ছিলো তাইতো আজ তুমি আমাকে বিশ্বাস করোনি। তবে আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে বিশ্বাস করবে। আমি জানতাম আজ তুমি আমাকে মেরে ফেলবে। কিন্তু বিশ্বাস করো ভেবেছিলাম তুমি আমাকে ভালোবাসো বিশ্বাস করো। কিন্তু না আমি ভুল। তুমি আমাকে বিশ্বাস করোনি। সত্যিই আমি আজ হেরে গেছি। তোমার থেকে পাওয়া মৃত্যুবান আমাকে আজ বুঝিয়ে দিলো। আমার ভালোবাসা ত্রুটি ছিলো। তবে আমার মৃত্যু যদি তোমার সুখ বয়ে আনে তবে তাই হোক। আমি হাসি মুখে বরণ করলাম এই অমর মৃত্যুবান। ভালোথেকো নেশামই, কোনো বিপদ যেনো তোমাকে না ছুঁতে পারে।

ভালোবাসি নেশামই অনেক ভালোবাসি। আমার প্রেমময় আসক্তির সমাপ্তি এখানেই শেষ হলো নেশামই। বিদায়….।
বলেই আদ্রিয়ান ধরে থাকা পাথরটা ছেড়ে দিলো। আর সাথে সাথে হাওয়াত গতিতে পরে যাচ্ছে নিচে। আদ্রিয়ান ঠোঁটের কোণায় হাসি চোখের কোণায় জল। আদ্রিয়ান চোখ বন্ধ করে নিলো। চোখের সামনে শুধুই ফুঁটে উঠছে রোদেলা তার নেশামইয়ের মুখ। আহারে ভালোবাসা! আহারে বিশ্বাস!

রোদেলা তাকিয়ে আছে পাহাড়ের দিকে চোখ থেকে বৃষ্টির মতো পানি পরছে। সব শেষ হয়ে গেলো। মেরে ফেললো সে আদ্রিয়ানকে। সারাজীবনের মতো আদ্রিয়ানকে সে হারিয়ে ফেললো। রোদেলা চিৎকার করে কান্না করতে করতে মাটিতে বসে পরলো। চিৎকার করে রোদেলা কাঁদছে আর বলছে,
“কেন এমন করলেন আদ্রিয়ান? কেন আমার বিশ্বাস ভালোবাসা নিয়ে খেললেন? আমি যে আপনাকে ছাড়া বাঁঁচবোনা। কেন আমার সাথে এমন করলেন। আমি যে বেঁচেও মরে গেলাম আদ্রিয়ান।”
রোদেলা আর ঠিক থাকতে পারলোনা। অজ্ঞান হয়ে পরে যায় মাটিতে।

বর্তমানে,,,,,
রোদেলা চোখজোড়া আবার ভিজে গেছে। সেদিন হোটেলে রোদেলা পার্সেলে একটা ভিডিও একটা ফাইল আর চিঠি পেয়েছিলো। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছিলো আদ্রিয়ান রোদেলার মা-বাবাকে কিছু একটা খাওয়াচ্ছে আর সেটা খাওয়ার পরেই রোদেলা মা-বাবা ছটফট করতে করতে মারা যায়। ভিডিওতে আদ্রিয়ানের পিছনের সাইড শুধু দেখা যাচ্ছিলো। রোদেলা এটা দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারেনা। তারপর সে ফাইলটা হাতে নেয় সেখানে দেখে প্রেগ্নেন্সির রিপোর্ট যার রেজাল্ট পজিটিভ। রিপোর্টে নাম লেখা লিজা। রোদেলা চমকে যায় বাবার নামের জায়গায় লেখা আদ্রিয়ান। এটা দেখে রোদেলা আরো একধাপ চমকে যায়। রোদেলা কাঁপাকাঁপা হাতে চিঠিটা খোলে আর পড়তে শুরু করে,
রোদেলা,

আমি জানি তুমি আমাকে চিনবেনা চেনার কথাও না। তবে আমি তোমাকে চিনি। জানো তোমার মতো আমিও খুব ভালোবাসতাম আদ্রিয়ানকে। তাইতো ভালোবেসে সব দিয়ে দিয়েছিলাম ওকে। কিন্তু বিনিময় কি পেলাম! অপমান আর লাঞ্চনা ছাড়া কিছুইনা। জানোতো ও যখন আমাকে ছেড়ে তোমার কাছে চলে গেলো নিজেকে খুব অসহায় লাগছিলো। বুঝতে পারছিলামনা কি করবো। জানো রোদেলা আমি নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলাম। তোমাকে কিডনাপ করেছিলাম। সব করেছিলাম আদ্রিয়ানের জন্য। জানো আমি ৪মাসের প্রেগন্যান্ট। আর আমার বাচ্চার বাবা তোমার স্বামী আদ্রিয়ান। আমি গেছিলাম বাচ্চার দাবী নিয়ে ওর কাছে কিন্তু বিনিময় ও বললো বাচ্চা মেরে ফেলতে। আমিতো মা! আমি কিভাবে পারবো আমার সন্তানকে মারতে বলো। তাইতো চলে এসেছি দূরে। আমি চাই তুমি তোমার মা-বাবার হত্যার বিচার আর আমার সাথে করা অন্যায়ের বিচার করো। শাস্তি দেও ওকে।

রোদেলা সেদিন ঠিক করে নেয় আদ্রিয়ানকে চরম শাস্তি দেবে সে আর সেই কাজ রোদেলা করে।
রোদেলা শাওয়ারের নিচে বসে আছে। আদ্রিয়ানকে মেরে সে নিজেও ভেতরে ভেতরে মরে গেছে। সে কাউকে না তা বলতে পারবে না কাউকে জানাতে পারবে।
পরেরদিন,,,,
রিয়া, রাহুল, তূর্য সবাই এসেছে রাফসানদের বাসায়। রিয়া রাহুলের বিয়ে ঠিক হয়েছে। কিন্তু এমন একটা সংবাদ পেয়ে তারাও মর্মাহত।
রাফসান: মুন। রোদু কি করছে?

মুন: সকালে তো দেখে আসলাম বারান্দায় বসে আছে একা একা। কত কিছু বললাম ডাকলাম কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। মুখ দিয়ে একটা শব্দ বের করছেনা।
রুবা: এভাবে চললে তো ও অসুস্থ হয়ে যাবে।
আরাভ: আমি একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলেছি সে বলেছে রোদেলা আদ্রিয়ানের এই নিউজটা মেনে নিতে পারেনি। তাই এভাবে চুপ হয়ে গেছে। আমাদের এখন ওকে যতটা পসিবল শান্ত রাখতে হবে।
জুঁই: সব বুঝলাম। এখন রোদেলাকে কিছু খাওয়ানোর প্রয়োজন।

মুন: হ্যাঁ, আমি খাবার নিয়ে যাচ্ছি।
মুন রোদেলার রুমে খাবার নিয়ে যায়। রোদেলা একদম চুপ হয়ে গেছে। মুন হাজারটা কথা বললেও রোদেলার কোনো রেস্পন্স নেই। একটু সময় পর রোদেলা মুনকে জরিয়ে ধরে চিৎকার করে কান্না করে। রোদেলার কান্না শুনে সবাই ওর রুমে আসে। রাফসান এসে রোদেলাকে জরিয়ে ধরে। রাফসানের চোখেও পানি। জীবনটা বোধয় এমনি চাইলেও সে পারবেনা তার বোনের কষ্ট দূর করতে।

আদৃতা অনেক খুশি সে তার চাচার থেকে জেনেছে তার ভাই বেঁচে আছে। কিন্তু বর্তমানে সে কোথায় আছে সেটা সে জানেনা। তাই আদৃতা সিডনিতে খোঁজ নিচ্ছে জানার জন্য তার ভাই বর্তমানে কোথায় আছে। খুব তাড়াতাড়ি তার ভাইয়ের সাথে তার দেখা হবে এই আশায় বুক বাঁধছে তার।
১ মাস পর,,,,,

আদ্রিয়ান চলে গেছে ১ মাস হয়েগেছে। এই ১ মাসে কোনো কিছু বদলায়নি। রোদেলা আগের মত আছে। একদম চুপ। কখোনো চিৎকার করে কান্না করে তো কখনো নিজে নিজে কিছু বিড়বিড় করে। রাফসানরা সবাই এটা দেখে নীরবে কষ্ট পাওয়া ছাড়া কিছুই করতে পারেনা।

আজকে রাফসান আর মুনের ঘরেই বিয়ে হচ্ছে। যদিও মুনের এখন ইচ্ছা ছিলোনা। কিন্তু আসে পাশের লোকজন তাকে আর রাফসানকে নিয়ে কথা রটাচ্ছে তাই বিয়েটা করতে হচ্ছে এখন। একদম সাধারন ভাবে কাজী ডেকে বিয়ে পড়ানো হলো ওদের আর রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করানো হলো ওদের।
রোদেলা দরজার পাশে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছিলো। রাফসান মুন কত ওদের কাছে আসতে বললো কিন্তু রোদেলা ওখানেই দাঁড়িয়ে ছিলো। কিছু সময়ের মাঝে রোদেলা সেন্সলেস হয়ে পরে যায়। সবাই সেটা দেখে ঘাবড়ে যায়। আরাভ রোদেলাকে সোফায় শুইয়ে দিয়ে ওকে চেক করতে লাগে। কিছুসময় পর আরাভ সবার দিকে তাকিয়ে বলে,

“She Is Pregnant!”
সবাই কথাটা শুনে থমকে যায়।
রাফসানঃ তুমি সিওর?
আরাভঃ হ্যাঁ, তাও কিছু টেস্ট করতে হবে। ভাবি আপনি রোদেলাকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন। আমি যাচ্ছি আগে।
মুনঃ আচ্ছা।
রোদেলার জ্ঞান ফিরলে মুন ওকে নিয়ে হাসপাতালে যায়। আরাভ কিছু টেস্ট করিয়ে নেয়। রিপোর্ট আসবে কালকে।

রোদেলার রিপোর্ট হাতে নিয়ে বসে আছে রাফসান। রোদেলা আসলেই ৩ মাসের প্রেগন্যান্ট। মানে আদ্রিয়ান মারা যাওয়ার আগে সে কনসিভ করছিলো।
রাফসান: এখন কি হবে? রোদু কি এই অবস্থায় এই বাচ্চা ক্যারি করতে পারবে?
আরাভ: ডাক্তারতো বললো পারবে। ওকে জাস্ট একটু খুশি রাখতে হবে। টেনশন ফ্রি রাখতে হবে।

প্রেমময় আসক্তি পর্ব ২০

মুন: হ্যাঁ, আমরা আছিতো আমরা ওর পুরো খেয়াল রাখবো।
কাশু: হ্যাঁ, এই বাচ্চাটা ও রোদেলা এখন আমাদের দায়িত্ব।
সবাই এই কথায় সহমত জানায়। আদ্রিয়ানের মারা যাওয়ার পর সায়মন এসে আদ্রিয়ানের রোদেলার জন্য যা যা রেখেগেছে সব ওকে বুঝিয়ে দিয়ে গেছে। সায়মন চলে যাচ্ছে সিডনি। যাওয়ার আগে দেখা করে গেছে রোদেলার সাথে।
রোদেলা নিজের রুমে বসে আছে। যাকে সে মেরে ফেললো আজ তার অসিত্বকেই নিজের মাঝে ধারন করেছে। হায় আফসোস তার বাচ্চাটা জন্মে তার বাবাকে দেখতে পারবেনা। রোদেলা নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।

এক হাতে ওয়াইনের গ্লাস আর আরেক হাতে সিগারেট নিয়ে বসে আছে লিজা আর মিস্টার আশরাফ। আজ তাদের মুখে বিজয়ের হাঁসি।
আশরাফ: ফাইনালি আমাদের পথের কাঁটা সরে গেছে।
লিজা: একদম। অনেক শান্তি লাগছে এখন। বেচারি বোকা রোদেলা।
আশরাফ: হ্যাঁ, আমাদের কথা শুনে বিশ্বাস করে মেরে দিলো আদ্রিয়ানকে।
লিজা: হ্যাঁ, বোকা একটা।
না জেনে রোদেলা যে শাস্তি আদ্রিয়ানকে দিলো তার পরিনাম কি হবে। রোদেলা কি কোনোদিন জানতে পারবে আসল সত্যিটা।

( লেখাঃ নন্দিনী চৌধুরী ) এই লেখিকার আরও লেখা গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন এই গল্পের সিজন ২ পড়তে চাইলেও এখানে ক্লিক করুন