প্রেমময় আসক্তি পর্ব ১৮

প্রেমময় আসক্তি পর্ব ১৮
নন্দিনী চৌধুরী

সকালের মুখে পানির ছিটা আসায় ঘুম ভেংগে যায় আদ্রিয়ানের। পিটপিট করে চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে দেখে এক মোহমই নারী সদ্য তার গোসল করে আসা ভিজা চুল ঝারছে। চুল ঝারছে আর পানি ছিঁটে এসে আদ্রিয়ানের মুখে পরছে। আদ্রিয়ান তাকিয়ে আছে রোদেলার দিকে। রোদেলা চুলের পানি শুকাতে মন তাই আদ্রিয়ান যে তার দিকে তাকিয়ে আছে সেটা খেয়াল করছেনা। রোদেলা চুল ভিঁজা রেখেই আয়নার সামনে বসে চেহারায় হালকা একটু ফেস পাউডার দিলো, গালে হালকা পিংক ব্লাসন, চোখে গারো করে কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপ্সটিক দিলো। রোদেলা একটা গোলাপি রঙের শাড়ি পরেছে। গলায় চেইন, আর হাতে চিকন চুরি, কানে ছোট দুল আর নাক ফুলটা পরে একদম রেডি সে। রোদেলা উঠে সোজা বাহিরে চলে গেলো। যাওয়ার আগে যদি একটু পিছনে তাকাতো তবে দেখতো এক প্রেমিকপুরুষ তার দিকে কি নেশালো চোখে তাকিয়ে ছিলো। আদ্রিয়ান নিজ মনে মনে বলে উঠে,

“নারীকে কাজলে আর ভেঁজা চুলে যতটা রূপবতী লাগে! একজন প্রেমিকপুরুষকে ঘায়েল করার জন্য সেটাই যথেস্ট।”
আদ্রিয়ান উঠে নিজেও ওয়াশরুমে যায় ফ্রেশ হতে। রোদেলা নিচে কিচেনে এসে দেখে জুঁই রান্না ঘরে। জুঁই রোদেলাকে দেখে বলে,
জুঁই: শুভ সকাল ভাবি। তুমি এতো সকালে রান্না ঘরে আসলা কেন?
রোদেলা: শুভ সকাল। আমি আজকে রান্না করবো সবার জন্য তাই আসছি।
জুঁই: কি বলো! তুমি মাত্র কাল বিয়ে করে বাসায় আসছো। নতুন বউ তুমি আর তুমি আজকেই রান্না করবা? না না সেটা কেমন দেখায়!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রোদেলা: তাতে কি এটা আমার সংসার। আর নিজের সংসারে কাজ করতে নতুন পুরানো হতে হয়না। তুমি আর না করোনা।
জুঁই: আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু আমিও তোমাকে সাহায্য করবো।
রোদেলা: ঠিক আছে। তুমি ফ্রিজ থেকে মাংস বের করে ভিজাও আর মসলা বের করো আজকে কাচ্চি রান্না করবো। আমি ওনাকে গিয়ে কফি দিয়ে আসি।
জুঁই: আচ্ছা ঠিক আছে।
রোদেলা আদ্রিয়ানের জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে উপরে রুমে যায়। আদ্রিয়ান মাত্র ফ্রেশ হয়ে আসছে। গায়ে তোয়াল দেওয়া আর পরনে টাউজার। রোদেলা কফি নিয়ে রুমে এসে আদ্রিয়ানকে এভাবে দেখে লজ্জা পেয়ে অপর দিকে ঘুরে গিয়ে বলে,
রোদেলা: ইসসসস!!
আদ্রিয়ান রোদেলাকে এভাবে বলতে দেখে অবাক হয়ে বলে,
আদ্রিয়ান: ইসস মানে?।

রোদেলা: আপনি জীবনেও গায়ে কিছু পরে বের হননা কেন? এভাবে উদাম গায়ে আসেন কেন? লজ্জা লাগেনা!
আদ্রিয়াম: এহ! আমি ছেলে আমি মেয়েনা। যে খালি গায়ে বের হলে লজ্জা পেতে হবে। আর তুমি এভাবে বলছো যেনো আমি তোমার অচেনা তাই লজ্জা পাচ্ছো! নিজের স্বামীকে এভাবে দেখে লজ্জার কি আছে?
রোদেলা: এতো কিছু জানিনা। এভাবে আমার সামনে আসবেন না। আমার লজ্জা লাগে।
আদ্রিয়ান রোদেলার কথা শুনে বেস মজা পেলো। তাই গিয়ে দরজা আটকে রোদেলার কাছে গেলো। আদ্রিয়ানকে দরজা আটকাতে দেখে রোদেলা অবাক হলো। লোকটা এই সময় দরজা আটকালো কেন। আদ্রিয়ান গায়ের টাওয়ালটা বিছানায় ফেলে রোদেলার কোমর জরিয়ে ধরলো। রোদেলাতো জমে গেছে একদম। আদ্রিয়ান রোদেলার চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দিতে দিতে বললো,

আদ্রিয়ান: সো তোমার আমাকে এভাবে দেখলে লজ্জা লাগে তাইতো?
রোদেলা আদ্রিয়ানের কথা শুনে মাথা নাড়ালো।
আদ্রিয়ান: তাহলেতো তোমার এই লজ্জা ভাংগতে হবে কি বলো।
রোদেলা: ম.মানে?
আদ্রিয়ান: Wait
আদ্রিয়ান রোদেলার হাত থেকে কফিটা নিয়ে এক চুমুক দিলো। তারপর রোদেলাকে নিজের আরো কাছে নিয়ে এসে নিজের ঠোঁট দিয়ে রোদেলার ঠোঁটে রাখলো। আদ্রিয়ানের মুখে যে কফিটা ছিলো সেটা রোদেলার মুখে চলে গেলো। আদ্রিয়ান তার উষ্ণ ভালোবাসার ছোঁয়া দিচ্ছে রোদেলার ঠোঁটে। এই জায়গাটা আদ্রিয়ানের কাছে বেশ মাদকতাময়। বেশ আসক্ত করে এই ওষ্টযুগোল ওকে। বেশ কিছুটা সময় যাওয়ার পর রোদেলা আদ্রিয়ান ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।

রোদেলা: দূর! আপনি লোক ভালোনা। আমি আপনার জন্য ভালো মনে করে কফি নিয়ে আসলাম আর আপনি! দূর! দূর!
আদ্রিয়ান: আমার কি দোষ তোমার তো আমাকে এভাবে দেখলে লজ্জা লাগে। তাই ভাঙ্গালাম লজ্জা।
রোদেলা: দূর ছাই।
রোদেলা রাগ দেখিয়ে চলে আসে দরজা খুলে আর আদ্রিয়ান হাসতে থাকে।
রোদেলা রান্না ঘরে এসে জুঁইকে নিয়ে রান্না করলো। রান্না শেষে সবাইকে ডাক দিলো। আরাভ, আদ্রিয়ান, রোদেলা, জুঁই মিলে খাবার খেয়ে নিলো।
এদিকে,,,,,,

মুন আর রোদেলার আম্মু মিলে নাস্তা বানাচ্ছে। রাফসান আর ওর বাবা সোফায় বসে কথা বলছে। কাশফিয়া রুমে বসে কাউসারের সাথে ফোনে কথা বলছে। আর রুবা খাটে বসে আছে হাতে আরাভের দেওয়া খামটা। রুবা বুঝতে পারছেনা কি থাকতে পারে খামে।
রুবা খুব জরতা নিয়ে খামটা খুলে। খামের ভেতরে একটা চিঠি। রুবা চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করলো,
প্রিয় ভিতুর ডিম ওরফে মিস চেইন খুলা,,,

কি শুরুতেই ভাবছেন তো আপনাকে ভিতু কেন বললাম? কারন আপনি আসলে অনেক ভিতু। সেই যে প্রথম দেখায় আপনাকে আমি বাঁচিয়েছিলাম সেদিন ভয়ে আপনি আমাকে ধরে রেখেছিলেন। তারপর কলেজের সেই ইঞ্জেকশন দেওয়ার সময় কিভাবে আমার হাত ভয়ে ধরে রেখেছিলেন। যার দাগ এখনো আমার হাতে আছে। জানেনতো আপনার ওই ভিতু চেহারার প্রেমে আমি পরে গেছি! একটা বাচ্চা বাচ্চা ফেসের মেয়ের সেই ভিতু চেহারা আমাকে তার প্রেমে পরতে বাধ্য করেছে। আর রইলো চেইন খুলা ওটা কেন ডাকি তা আশা করি বলতে হবেনা। যাই হোক আপনার উত্তরের অপেক্ষায় থাকলাম। আদ্রিয়ানের বউভাতের অনুষ্ঠানে আশা করি উত্তর পাবো।

প্রেমময় আসক্তি পর্ব ১৭

ইতি,,
আপনার ডাক্তার বাবু।
রুবা চিঠিটা পরে আপন মনেই হাসলো। কি ভাবে নিজের প্রেম নিবেদন করলো লোকটা।
নাস্তা বানানোর পর মুন সবাইকে খেতে আসতে বললো। সবাই খেয়ে এখন রেডি হবে সন্ধ্যায় অনুষ্টান আছে বউ ভাতের।
আদৃতা আজকে হাসপাতালে রোগী দেখে মাত্র বাসায় আসলো। এখন আর সে ওই লোকটার সাথে থাকেনা। আদৃতা রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসে। সে এখনো তার ভাইয়ের খোঁজ করে। তার মনে হয় তার ভাই আছে। হয়তো কোথাও না কোথাও আছে। সে ল্যাপ্টপে অনেক সাইডে আদ্রিয়ান নাম লেখে সার্চ দেয়। হতেও পারে তার ভাই কোনো সেলেব্রিটি সাইটে বা বড় কোনো বিজনেস সাইটে আছে। আদ্রিতা যত সাইটে আদ্রিয়ান লেখে সার্চ দিতো সেই সব সাইটে আদ্রিয়ান খান আমান নামটা আসতো। আদৃতার সন্দেহ হয় মাঝে মাঝে এই আদ্রিয়ান কি তার ভাইয়া। পরে ভাবে তার ভাই হলে তাকেতো নাম শুনেই চিনতো। এটা তার ভাই নয়।

আদৃতা আবার হতাশ হয়ে ল্যাপটপটা রেখে বিছানায় শরীর এলিয়ে দেয়। আসতে আসতে চলে যায় সে ঘুমের দেশে।
বিকালে,,,,
বউ ভাতের আয়োযন করা হচ্ছে। পার্লার থেকে মেয়েরা আসছে রোদেলাকে সাজাতে। রোদেলাকে একটা গোল্ডেন কালারের লং ড্রেস পড়ানো হয় অনেক হাই কাজ করা ড্রেসটায়। সাথে মেচিং ডায়মন্ডের হালকা কিছু জুয়েলারি। সাজানো শেষ হতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। সাজানো শেষ করে রোদেলাকে নিয়ে স্টেজে বসিয়ে দেওয়া হয়। একে একে সবাই এসে রোদেলাকে দেখছে আর গিফট দিচ্ছে। ক্যামেরামেন আদ্রিয়ান রোদেলার অনেক আলাদা আলাদা পোজের ছবি তুলে দিচ্ছে।

রোদেলার বাসার সবাই এসে রোদেলার কাছে যায়। রোদেলা মা বাবাকে পেয়ে অনেক খুশি হয়। মুন, রুবা, কাশু তিনজনে রোদেলা লজ্জা দেওয়ার জন্য ওকে লজ্জা মার্কা কথা বলছিলো। রুবা কিছুক্ষন কথা বলে এখন আরাভকে খুঁজতেছে। আরাভ সিড়ি দিয়ে নেমে দেখে রুবা দাঁড়ানো। আরাভ রুবাকে দেখে ওর কাছে এসে ওর সামনে তুড়ি বাজালো। রুবা আরাভকে দেখে ভয় পেয়ে যায়।

রুবা আরাভের হাতে তাড়াতাড়ি খাম ধরিয়ে দিয়ে বলে,
রুবাঃ এখানে আপনার কাঙ্ক্ষিত জিনিশটা আছে।
বলেই রুবা তাড়াতাড়ি চলে গেলো।
দেখতে দেখতে অনুষ্টান শেষ হলো। আদ্রিয়ান ও রোদেলা রোদেলাদের বাসায় গেলো। সাথে আরাভ ও জুঁই।

প্রেমময় আসক্তি পর্ব ১৯