প্রেমময় আসক্তি পর্ব ১৫

প্রেমময় আসক্তি পর্ব ১৫
নন্দিনী চৌধুরী

সময়ের প্রহর গুনতে গুনতে আর সবার দোয়ায় আল্লাহর রহমতে আদ্রিয়ানের জ্ঞান ফিরেছে। আদ্রিয়ানের জ্ঞান ফিরার পর রোদেলা আরাভ থেকে শুরু করে সবাই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেছে। আদ্রিয়ান জ্ঞান ফিরার পর চোখ খুলে সবার আগে রোদেলাকেই নিজের কাছে পায়। রোদেলাকে দেখে ওর ঠোঁটের কোণে মুচকি হাঁসির রেখা ফুঁটে উঠে। রোদেলা আদ্রিয়ানের পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,

রোদেলা:এখন কেমন লাগছে আপনার?
আদ্রিয়ান আস্তে করে বলে,
আদ্রিয়ান:আগে কেমন ছিলাম জানি না। তবে তোমাকে দেখার পর এখন একদম সুস্থ লাগছে।
রোদেলা:আপনার সাথে আমার হিসাব আছে অনেক। আগে সুস্থ হোন তারপর সব উসুল করবো।
আদ্রিয়ান:আচ্ছা তাহলে তো আমাকে তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে হবে।
ওদের কথার মাঝে আরাভ আর আদৃতা আসে কেবিনে। আদৃতা এসে আদ্রিয়ানকে চেকাপ করে নেয়।
আদৃতা:সব অল রাইট আছে। আর কোনো সমস্যা নেই।
আরাভ:হার্টে বা অন্য কোনো সাইটে কোনো সমস্যা হবে না তো?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আদৃতা:আই হোপ হবেনা ইনশাআল্লাহ।
আরাভ:আদ্রিয়ান ইনি হলো ডাক্তার আদৃতা খান শাম্মি। তোর অপারেশনটা উনিই করেছেন।
আদৃতা নামটা শুনে চমকে গেলো আদ্রিয়ান। তার পুঁচকি বোনটার নাম তো ছিলো আদৃতা। আদ্রিয়ানের নামের সাথে মিলিয়ে নাম রেখেছিলো সে তার বোনের। আদ্রিয়ান আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বলে,
আদ্রিয়ান:আমার বোনের নাম ও ছিলো আদৃতা। ধন্যবাদ ডাক্তার।
আদ্রিয়ানের কথা শুনে চমকালো আদৃতা।
আদৃতা:আপনার বোন কোথায় এখন?

আদ্রিয়ান:জানিনা হয়তো মারা গেছে ছোট বেলায় তাকে হারিয়ে ফেলেছি আমি।
আদৃতা:ওহ আচ্ছা। ঠিক আছে রেস্ট নিন। আর কোনো দরকার পরলে নার্সকে জানাবেন সে আমাকে জানাবে।
রোদেলা:আমরা উনাকে বাসায় নিতে পারবো কবে?
আদৃতা:আজকে ও নিয়ে যেতে পারো। যদি বাসায় ফুল কেয়ার করতে পারো তাহলে।
রোদেলা:হ্যাঁ পারবো আমি।

আদৃতা:আচ্ছা তাহলে হাসপাতালে কথা বলে নাও। আমি আসছি।
আদৃতা চলে আসে আর আরাভ সব ফর্মালিটিস পূরন করার জন্য রিসিপশানে যায়।
মুন আদ্রিয়ানের জন্য স্যুপ পাঠাইছিলো। রোদেলা আদ্রিয়ানে ধরে বসিয়ে ফ্রেশ করে স্যুপ টা খাইয়ে দিলো। আদ্রিয়ানের আজ নিজেকে খুব হ্যাপি মনে হচ্ছে। আজ রোদেলা তার এতো খেয়াল রাখছে।
আদ্রিয়ান:এতো খেয়াল রাখছো কি শুধুই দায়িত্ববোধের জন্য নাকি ভালোবেসে?
আদ্রিয়ানের কথা শুনে রোদেলা চমকে যায়। চমকে যাওয়া চোখে আদ্রিয়ানের দিকে তাকায় সে।

আদ্রিয়ান:আমি জানি আরাভ তোমাকে সব বলেছে। এখন সেগুলো শুনে অনুতাপে এমন করছো নাকি ভালোবেসে?
রোদেলা স্যুপের বাটিটা রেখে আদ্রিয়ানের বেডে বসলো। হুট করেই আদ্রিয়ানকে জড়িয়ে ধরে কান্না করা শুরু করে দিলো।
রোদেলা:আপনি অনেক খারাপ অনেক খারাপ। আপনি জেনে ইচ্ছা করে নিজেকে মৃত্যুর মুখে নিয়ে গিয়েছিলেন। আজকে আপনার কিছু হলে আমার কি হতো হ্যাঁ? আপনি না আমাকে ভালোবাসেন তাহলে আমাকে ফেলে চলে যাওয়ার ফন্দি করলেন কিভাবে? এই আপনার ভালোবাসা? জানেন আমি কতটা ভয় পেয়েছি যখন ডাক্তার বলছিলো যে আপনি……। আপনি একটুও ভালোনা।

রোদেলা জোরে জোরে কান্না করতে করতে কথা গুলো বললো। আদ্রিয়ান রোদেলার পিঠে হাত আর একটা হাত মাথায় রেখে ওকে শান্ত করছে আর বলছে,
আদ্রিয়ান:নেশামই শান্ত হও প্লিজ। দেখো আমার তো কিছু হয়নি। দেখো আমিতো একদম ভালো আছি। আর তোমার সামনে আছি। প্লিজ এভাবে কান্না করো না। আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবোনা। আদ্রিয়ানকি তার নেশামইকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারে বলো?
আরে পাগলি সব কান্না এখন কাঁদলে নিজের বিয়ের টাইমে আর পানি পাবানা চোখে। তাই এখন আর কান্না করো না!
রোদেলার আদ্রিয়ানের কথা শুনে ধমক দিয়ে বলে,

রোদেলা:চুপ বেটা। চোখের পানি তখন না পেলে ধার করে এনে তারপর কান্না করমু। আপনার তা নিয়ে ভাবতে হবে না।
আদ্রিয়ানঃ না না ধার করা লাগবে না আমি বরং একটা বড় পানির টাংকি এনে আমাদের বিয়ের আসরে রাখবো। তুমি কান্না করার সময় পানি না পেলে পাইপ দিয়ে পানি তোমার চোখে দিবো আর তুমি কান্নার পানি পাবা। বলো বুদ্ধিটা ভালো না অনেক?
রোদেলা আদ্রিয়ানের কথা শুনে হেসে দেয়। আদ্রিয়ান রোদেলার কপালে একটা উষ্ণ ভালোবাসা একেঁ দিয়ে বললো,
আদ্রিয়ান:That”s Like My Queen. তোমার মুখে সবসময় এই হাসিটা দেখতে চাই বুঝলা? ভালোবাসি নেশামই।
রোদেলা:আমিও আপনাকে ভালোবাসি আদ্রিয়ান।

উহুম উহুম!!!
আচমকা কারো কাশির শব্দে আদ্রিয়ান রোদেলা চমকে গিয়ে দুজন দুজনকে ছেড়ে দিলো।
আরাভ:স্যরি স্যরি ভুল সময়ে চলে আসছি। কিন্তু তোর ডিস্টার্চ হয়ে গেছে। বাসায় যেতে পারবি তুই।
আদ্রিয়ান:আচ্ছা ঠিক আছে।
এরপর আরাভ রোদেলা আদ্রিয়ানকে নিয়ে বাসায় আসলো। সাথে একটা নার্স নিয়েছে ওরা আর রোদেলাতো আছেই আদ্রিয়ানের জন্য।
এদিকে,,,,
রিয়া আর রাফসান এসেছে একটা রেস্টুরেন্টে।
রিয়া রাফসান বসে ছিলো তখন তাদের সামনে একটা ছেলে আসলো। রিয়া তাকে দেখে উঠে দাঁড়ালো।
রিয়া:রাহুল!

রাহুল:বাহ্ বেশ ভালোই আছো। হবু বর কে সাথে নিয়ে আসছো নিজের প্রেমিক উফস স্যরি প্রাক্তন প্রেমিকের সাথে দেখা করতে। ভালোই আছো কিন্তু আমার সাথে কেন এমন করলা রিয়া? আমি কি তোমাকে কম ভালোবেসেছিলাম বলো? তাহলে কেন আমার সাথে এমন করলে?
রিয়া:রাহুল তুমি ভুল বুঝতেছো আমাকে। আমার কথাটা আগে শুনো।
রাহুল:ব্যাস আর মিথ্যা শুনতে চাইনা। আমি এতোদিন তোমাকে ভুল বুঝেছি। কিন্তু এখন আমি তোমাকে সঠিকটাই বুঝতেছি।

রাহুল রিয়ার কথা শুনতে নারাজ। তাই রাফসান উঠে গিয়ে রাহুলের কাছে এগিয়ে এসে বলে,
রাফসান:মিস্টার রাহুল আপনি হয়তো রিয়াকে ভুল বুঝে ওর কথাটা শুনতে চাইছেন না। কিন্ত আমার কথাটা তো শুনতে পারেন।
রাহুল:বলুন কি বলবেন?
রাফসান:এখানে বসুন। বসে কথা বলি।
রাহুল রাফসানের কথা মতো বসলো।
রাফসান রাহুলকে বলা শুরু করলো।

রাফসান: আমার আর রিয়ার বিয়ে আমাদের পরিবার দিতে চায়। আমি যেদিন রিয়াদের বাসায় যাই ওকে দেখতে ও আমাকে জানায় ও আপনাকে ভালোবাসে। আপনারা দুজন দুজনকে ভালোবাসেন। কিন্তু রিয়ার বাবা আপনাদের সম্পর্ক মেনে নিচ্ছেনা। কারন আপনি বেকার বলে। রিয়া আমাকে বলেছে আপনি ৪ মাস সময় চেয়েছেন ওর কাছে। তাই আমি আমার ফ্যামিলিকে বলেছি আমি রিয়াকে বিয়ে করতে রাজী তবে সেটা ৪ মাস পর। কারন ৪ মাস পর আমি না বরং আপনি যেনো রিয়াকে বিয়ে করতে পারেন।

আর তাছাড়াও আমি একজনকে অনেক ভালোবাসি। আমিও তাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারব না। তাই এই ছোট নাটকটা করা। আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন?
রাহুল:হুম সব বুঝতে পারলাম। কিন্তু আপনি যাকে ভালোবাসেন সেকি জানে এসব?
রাফসান:না এখনো জানেনা। পাগলিটা ভাবছে আমি সত্যি রিয়াকে বিয়ে করবো। আসলে আমি তার মনের অনুভুতিটা জানতে চাচ্ছিলাম। যে আসলে সে ও কি আমাকে ভালোবাসে কিনা। আর আমি দেখলাম যে সে তো আমারো আগে থেকে আমাকে ভালোবাসে।

রিয়া:তোমার এভার মুনকে সব বলে দেওয়া উচিত। বেচারি শুধু শুধু কষ্ট পাচ্ছে।
রাফসান:হ্যাঁ বলবো। খুব তাড়াতাড়িই বলবো। আমিও ওকে আর কষ্ট দিতে চাচ্ছিনা। আচ্ছা আজকে আমি উঠি। তোমরা সময় কাটাও।
রিয়া:আচ্ছা।
রাহুল:ধন্যবাদ।
রাফসান হালকা হেসে বেরিয়ে আসে রেস্টুরেন্ট থেকে।

প্রেমময় আসক্তি পর্ব ১৪

কাশু আর রুবা কলেজে এসেছে। নেক্সট উইক থেকে ওদের এক্সাম। তাই নোটস কালেক্ট করবে ওরা। রুবা ক্লাসে বসে ক্লাস করছে। কাশু একটু ওয়াশরুমে এসেছে। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ক্লাসে যাবে তখন ওকে টেনে কেউ পাশে ফাঁকা ক্লাসে নিয়ে আসে। কাশফিয়া প্রথমে ভয় পেয়ে যায় এমন কাজে। পরে সামনে তাকিয়ে দেখে কাউসার দাঁড়ানো। কাউসারকে দেখে আরেক দফা অবাক হয় কাশফিয়া।
কাশফিয়া:আপনি?

কাউসার:হ্যাঁ,আমি। কেন অন্য কাউকে আশা করছিলে নাকি?
কাশফিয়া:এভাবে এখানে নিয়ে আসছেন কেন? কেউ দেখলে কি ভাববে?
কাউসার:আমার বউকে আমি নিয়ে এসেছি সেখানে কার কি বলার থাকবে?
কাশফিয়া:বউ কিসের বউ। দেখেন বাজে কথা রাখুন আর আমাকে যেতে দিন।
কাউসার:যেতে দিবো কিন্তু আমার উত্তর তো পেলাম না।

কাশফিয়া:উত্তর কিসের উত্তর?
কাউসার:ঐ যে ঐটার?
কাশফিয়া:আমার কাছে কোনো উত্তর নেই আমাকে যেতে দিন।
কাউসার:ওকে তাহলে আমিও যেতে দেবোনা।
কাশফিয়া কিভাবে এখান থেকে যাবে বুঝতে পারছেনা হঠ্যাৎ কাশফিয়া চিৎকার দিলো।
“স্যারর!!!”

স্যার ডাকটা শুনে কাউসার ভয় পেয়ে যায়। আর কাশফিয়াকে ছেড়ে দিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। কাউসার বুঝতে পারে কাশফিয়া মিথ্যা বলেছে। কাশফিয়া এই সুযোগে ভো দৌঁড়।
কাউসার:এর ফল আমি নিবো মিস চাশমিস।আমার উত্তর তো আমি নিয়েই ছাড়বো।
আদ্রিয়ানকে বাসায় আনার পর আরাভ বাসায় গেছে। রোদেলা রাফসানকে কল করে জানিয়েছে সে আদ্রিয়ানদের বাসায়। রোদেলা আদ্রিয়ানকে বাসায় এনে ফ্রেশ করিয়ে, খাবার খাইয়ে, মেডিসিন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। তারপর রোদেলা নিজে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে আদ্রিয়ানের পাশে বসে থাকে।

প্রেমময় আসক্তি পর্ব ১৬