প্রেমময় আসক্তি পর্ব ৩

প্রেমময় আসক্তি পর্ব ৩
নন্দিনী চৌধুরী

এক হাতে গরম শিক নিয়ে চেয়ারে বসে আছে আদ্রিয়ান।তার সামনে বসিয়ে রাখা হয়েছে দুইটা ছেলেকে।ছেলেদুটোকে মারতে মারতে অবস্থা খারাপ করে দেওয়া হয়েছে যে ঠিক মতো বসতেও পারছেনা ছেলেগুলো।আদ্রিয়ানের পুরো চোখ লাল হয়ে আছে।মনে হচ্ছে আগুনের লাভা বের হচ্ছে ওর চোখ থেকে।আদ্রিয়ান উঠে গরম শিকটা একটা ছেলের বুক বরাবর চেপে ধরলো।শিকটা চেপে ধরতেই ছেলেটা গগনফাটানো চিৎকার দিলো।ছেলেটার চিৎকার যেনো আদ্রিয়ানকে এক পৈশাচিক আনন্দ দিচ্ছে।আদ্রিয়ান চিৎকার করে বলে,

আদ্রিয়ান:তোদের সাহস কিভাবে হয় আমার রোদেলামইয়ের দিকে নজর দেওয়ার।তোরা জানিস ও আমার কলিজা।আমার দুনিয়া ও।তোদের এই চোখ দিয়ে তোরা আমার রোদেলামইয়ের দিকে তাকিয়েছিস।আমার রোদেলামইয়ের ওড়না ধরেছিস এই হাত দিয়ে।তোদের আমি ছাড়বোনা।জন!
জন:ইয়েস স্যার!
আদ্রিয়ান:টুইংকেল আর টাইগারের কাছে ওদের দিয়ে আসো।আজকে ওদের পেট ভোরে খেতে দেও।
জন:জ্বী স্যার।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আদ্রিয়ানের কথা মতো ছেলে দুটোকে উঠিয়ে নিয়া যাওয়া হলো একটা বড় সুইমিংপুলে সেখানে এনে ওদের ফেলে দেওয়া হলো বিশাল সুইমিংপুলে।ফেলে দেওয়ার সাথে সাথে দুটো বড় কুমির ছেলে দুটোকে ছিড়ে ছিড়ে খাওয়া শুরু করলো।ছেলেগুলোর চিৎকার আদ্রিয়ার ভেতর থেকে শুনতে পাচ্ছিলো।আদ্রিয়ান সিগারেট জ্বালিয়ে বাহিরে চলে আসলো।
এখন রাত ২টা বাজে।গতকালকে আদ্রিয়ান রাতে বাংলাদেশে এসে পৌছেচে।আদ্রিয়াম আগের থেকেই রোদেলা সব খবর রেখেছে।যে ঢাকায় সে কোথায় আছে কোন মেডিকেলে আছে।আদ্রিয়ান সকালে উঠে সোজা চলে এসেছে রোদেলার মেডিকেল কলেজে সেখানে এসে আদ্রিয়ান দেখতে পায় দুটো ছেলে রোদেলা আর একটা মেয়েকে বিরক্ত করছে।

আদ্রিয়ান গাড়িতে বসেই দেখছিলো সবটা।ছেলে দুটো মধ্য একজন রোদেলার ওড়নায় হাত দিয়েছিলো।আদ্রিয়ান আর বসে থাকতে না পেরে বেরিয়ে আসতে নিলে দেখতে পায় কয়েকজন লোক রোদেলার আর অন্য মেয়েটাকে সাহায্য করেছে।তবে আদ্রিয়ান কি বসে থাকার মতো ছেলে।তার রোদেলার দিকে কেউ হাত বারিয়েছে তাকে কি সে এমনি এমনি ছেড়ে দিতে পারে।আদ্রিয়ান তো তা পারেনা।ঠিকই ছেলেগুলোকে তুলে নিয়ে এসেছে।আর ইচ্ছামতো মার দিয়েছে।আর তারপর কি হলো তাতো দেখলেন সবাই।

আদ্রিয়ান ওর রুমে এসে রোদেলার একটা ছবি হাতে নিলো।ছবিটাতে রোদেলা একটা লাল সাদা শাড়ি পরা চুল গুলো খোলা হাতে লাল চুড়ি পরা।আদ্রিয়ান ছবিটায় একটা চুমু দিয়ে বলতে লাগলো,
“নেশামই তোমার নেশায় আমি সব সময় আসক্ত থাকি।এই নেশা জিনিশটা এতো ভয়ংকরী যে তোমাকে না দেখলে জানতাম না।মদের নেশা থেকেও বেশি নেশালো হচ্ছে প্রেম ভালোবাসার নেশা।সুদুর এই দুনিয়ায় ভালোবাসার নেশায় যেই পরেছে সেই আসক্ত হয়েগেছে নেশায়।নেশামই তুমি আমার ভালোবাসা তুমি আমার নেশা।তুমি আমার প্রেমের নেশা।নেশামই তুমি আমার ~প্রেমময়_আসক্তি।
আদ্রিয়ান রোদেলার ছবিটা বুকে নিয়ে রকিং চেয়ারে বসে ঝুলতে লাগলো।আর আসতে আসতে পারি দিলো ঘুমের শহরে।
সকালে,,,

রোদেলা আর মুন নাস্তা বানাচ্ছে আর কাশফিয়া রুবা মিলে ঝগরা করছে তাও একটা জামা নিয়ে।
কাশফিয়া:ওই রুবা পুবা এইটা আমারে দে এইটা আমি পরমু।
রুবা:কাশফিয়া ঘাসফিয়া তুই এটা আমারে দে এটা আমি পরমু।
কাশফিয়া:না এইডা আমি পরমু তুই ওইডা পর।
রুবা:তুই ওইডা পর আমি এইডাই পরমু।
কাশফিয়া:পেত্নির ঘরের নাতনী এইডা আমি পরমু?।
রুবা:চামচিকার ঘরের বউ এইডা আমারে দে?।
ওদের দুজনের ঝগরা শুনে রোদেলা আর মুন রুমে আসলো।পুরো রুম দুজনে জামা কাপড় দিয়ে ভরে ফেলছে।মুন এই অবস্থা দেখে ওদের দুজোনকে বলে,

মুন:তোরা এগুলা কি করছিস রুমের অবস্থা।১০মিনিটের মধ্য রুম না গুছাইলে আজকে তোগো দুইটারে দিয়া সব কাজ করামু।তাড়াতাড়ি রুম ঘুছা।
মুনের কথা শুনে দুইজনে ঝগরা বাদ দিয়ে রুম গুছাতে লেগে পরলো।তারপর ৪জনে নাস্তা করে বেরিয়ে পরলো কলেজের জন্য।
কলেজে এসে দুইটো ক্লাস করে ক্যাম্পাসে হাটছে ওর ৪জন হাটতে হাটতে হঠ্যাৎ কাশফিয়ার চোখ গেলো কাউসারের দিকে।কাউসার ব্যাট হাতে ব্যাটিং করছে।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে যেটা ফাকে ফাকে শার্টের হাতায় কপাল মুছে নিচ্ছে।কাসফিয়া এক মনে কাউসারকে দেখছে।রোদেলা কাশফিয়াকে ওদিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে,
রোদেলা:কিরে ওদিকে তাকিয়ে আছিস কেন?
কাশিয়া:ওইযে কাউয়া।
রুবা:কাউয়া!

মুন:কই কাইয়া। মুন আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে এখানে কাউয়া কই?
কাশফিয়া মুনের মাথায় এক গাট্টা মেরে বলে,
কাশফিয়া;আরে এডা আসমানের কাউয়া না এডা জমিনের কাউয়া।অই যে দেখ মাঠে খেলতেছে।ওইটাই কাউয়া যে কাল আমার চিপস ফালিয়ে দিছিলো।
কাশফিয়ার কথা শুনে রোদেলা,রুবা,মুন সেদিকে তাকালো।রুবা ছেলেটাকে দেখে বলে,
রুবাঃতুই পোলাডারে কেম্নে কাউয়া বলিস বইন।ওয়ে কি কাউয়ার মতো কাকাকা করেনি।
কাশফিয়াঃকাকাকা না করলেও ও কাউয়া বুজছস।কালকা আমার চিপস গুলা ফালাইয়া দিলো।তার ক্ষতিপূরনো দিলোনা।কাউয়া কোনহানকার।
রোদেলাঃবইন থাম।আর এমন কইসনা। ১০টাকা দামের চিপসের জন্য তুই এক নিরীহকে কাউয়া বানাইয়া দিছস।
মুনঃযা বলছিস।চল তো চল।

তারপর ওরা বাকি ক্লাস করে বাসায় চলে আসে।রাতের দিকে রোদেলার ফোনে ওর ভাই রাফসান কল দেয়।ভিডিও কল।রোদেলা ফোন রিসিভ করে ভাইয়ের সাথে কথা বলতে থাকে।আর রোদেলার পাশে বসে মুন রাফসানকে দেখছে।রাফসান কথা বলার ফাকে ফাকে মুনকে নোটিস করছে কিন্তু কিছু বলছেনা।কথা শেষ করে রোদেলা কল কেটে দিলো।রোদেলা ফোন রেখে মুনকে বলে,
রোদেলাঃতুই যেমন করে ভাইয়াকে দেখছিলি মনে হচ্ছিলো খেয়েই ফেলবি।এভাবে দেখার কি আছে হুম।আর তুই ভাইয়াকে বলে দিস না কেন তোর মনের কথা।

মুনঃভয় হয়রে তোর ভাই যেই রাগী মনে নাই আমাদের স্কুলে থাকতে এক মেয়ে তাকে প্রপজ করছিলো।ভাইয়া তোকে আনতো নিতো সেই সময় ভাইয়াকে দেখছিলো মেয়েটা।ভাইয়া মেয়েটাকে কি থাপ্পড়টা না দিছিলো রে বাবা।আমার তো এখনো ভাবলেই ভয় লাগে।না বাবা আমি বলে অই রকম থাপ্পড় খেতে চাইনা।
রোদেলাঃতাহলে তুই বসে বসে মুড়ি খা।
পরেরদিন,,

আদ্রিয়ান নিজের অফিসের রুমে বসে আছে।আজকে দুটো ড্রাগ পাচার কারি গ্যাংদের ধরবে ওরা।আদ্রিয়ান মাফিয়া হলেও খারাপ কাজ করেনা।বরং খারাপ অন্যায়কারীদের শাস্তি দেয় নিজ হাতে।আদ্রিয়ান বসে ছিলো তখন ওর কেবিনে কেউ টোকা দিলো।আদ্রিয়ান কামিং বলে আবার ল্যাপটপে চোখ মন রাখলো।কেবিনে একজন প্রবেশ করেই ওর নাম নিলো।
“আদ্রিয়ান বেবি”

আদ্রিয়ান ডাকটা শুনে সামনে তাকালো।লিজা এসেছে ওর কেবিনে।লিজা মেয়েটা আদ্রিয়ানের অনেক আগের চেনা।লিজা পেশায় একজন ডেন্সার।আদ্রিয়ান যেই ক্লাব গুলায় সিডনিতে যেতো সেখানে লিজা ডান্স করতো।একটা সময় আদ্রিয়ানের সাথে ওর পরিচয় হয়।আদ্রিয়ান ওকে অনেক ব্যাপারে হেল্প করেছে।লিজা আদ্রিয়ানকে পছন্দ করে আসলে পছন্দ না ভালোবাসে।কিন্তু আদ্রিয়ান ওকে এসবে পাত্তা দেয়না।লিজা প্রায় ওর মনের কথা আদ্রিয়ানকে বলে কিন্তু আদ্রিয়ান সোজাসোজি না করে দেয়।লিজা মাসখানেক আগে বিডিতে এসেছে।সে গতকাল জানতে পেরেছে আদ্রিয়ান দেশে এসেছে।তাই সোজা চলে এসেছে ওর অফিসে।লিজা একটা পাতলা শাড়ি পরেছে সে ওর পেট কোমড় সব দেখা যাচ্ছে।আদ্রিয়ান লিজার বিরক্তনিয়ে একবার তাকিয়ে ল্যাপটপের দিকে আবার তাকালো।লিজার আদ্রিয়ানের এই ইগ্নোরেন্স সয্য করতে পারছেনা।তাই লিজা আদ্রিয়ানের কাছাকাছি গেলো।লিজা আদ্রিয়ানের কাছে এসে ওর ঘাড়ে হাত রাখতেই আদ্রিয়ান এক ঝটকায় হাত সরিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার দিয়ে বলে,

প্রেমময় আসক্তি পর্ব ২

আদ্রিয়ানঃWhat Happen Liza. আমি তোমাকে আগেও বলেছি আমার গায়ে এসে পরবেনা।আমার এসব পছন্দ না।কি চাই তোমার।কেন এসেছো এখানে।কি টাকা লাগবে।টাকা লাগলে কিছুক্ষনের মাঝে তোমার একাউন্টে টাকা চলে যাবে।তুমি এখন যাও এখান থেকে।
লিজা আদ্রিয়ানের কথা শুনে খুব লজ্জা আর অপমানিতো বোধ করলো।লিজার চোখে পানি এসেগেছে।লিজার আদ্রিয়ানকে বললো,

লিজাঃআদ্রিয়ান আমি এখানে টাকার জন্য না।আমি তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি।আর তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলছো কেন।আমি তোমাকে ভালোবাসি।এটা কেন তুমি বুজোনা।আই লাভ ইউ আদ্রিয়ান।
আদ্রিয়ানের কাছে লিজার এগুলো অসয্য লাগছে।আদ্রিয়ান লিজাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে বলে,
আদ্রিয়ানঃএখোনি তুমি এইখান থেকে বেরিয়ে যাও।আমি আগেও বলেছি আমি তোমাকে একজন ফ্রেন্ডের মতো দেখি।তোমাকে আমি ভালোবাসিনা।আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি।তাকে ছাড়া অন্য কাউকে আমি কল্পনা করতে পারিনা।সো প্লিজ তোমার এসব ফালতু কথা বলোনা।আর এখান থেকে যাও।
আদ্রিয়ানের কথা শুনে লিজা রাগে খোবে বেরিয়ে আসে।আর আদ্রিয়ান আবার গিয়ে নিজের সিটে বসে।
এদিকে,,,,

রুবা রাস্তায় এসেছে দোকান থেকে কিছু জিনিস কিনতে।রুবা দোকান থেকে জিনিস কিনে বেরিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে।রুবা রাস্তার পার করার সময় হঠ্যাৎ পা স্লিপ করে পরে যেতে নেয়। আর তখন কেউ ওকে ধরে ফেলে।রুবা ভয়ে চোখ মুখ কুচকে ফেলে ভয়।তখনই ওকে ধরে থাকা লোকটা বলে,
“রাস্তায় চলার সময় কি আকাশে চোখ রেখে হাটেন।”

প্রেমময় আসক্তি পর্ব ৪