প্রেমময় আসক্তি পর্ব ৭

প্রেমময় আসক্তি পর্ব ৭
নন্দিনী চৌধুরী

আদ্রিয়ান আর আরাভ বসে আছে এয়ারপোর্ট আজকে আরাভের বোন আসছে লন্ডন থেকে।আরাভ আর আরাভের বোন লন্ডনেই থাকে।আরাভের মা বাবা ওরা ছোট থাকতে মারা গেছে।তারপর ওর চাচা ওদের তার লন্ডনে নিয়ে যায়।আরাভ ডাক্তারি পাশ করে ডাক্তার হয়ে দেশে চলে আসে।কিন্তু ওর বোন সেখানের স্কুলে থাকায় সে আসতে পারেনি।কিন্তু এখন তার স্কুল শেষ তাই সে চলে আসছে বাংলাদেশে।আজকে আসছে সে তাই আরাভ আদ্রিয়ান এসেছে তাকে নিতে।আরাভ আর আদ্রিয়ান ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করছে।প্লেন কিছুক্ষনের ভিতরে লেন্ড করবে।আধা ঘন্টার ভেতরে প্লেন লেন্ড করলো।আরাভ আদ্রিয়ান অপেক্ষা করছে কখন আরাভের বোন আসবে।কিছুক্ষনের মাঝে একটা ১৭ বছর বয়সি মেয়ে আসলো পরনে তার পিংক টপস হাতে লাকেজ।কাধে ব্যাগ।চোখে চশমা।আরাভ মেয়েটাকে দেখে বলে,

“জুঁই এদিকে”
মেয়েটা আরাভকে দেখে খুশি হয়ে তার কাছে জলদি করে এসেই আরাভকে জরিয়ে ধরে।আরাভ পরম মায়ায় বোনকে জরিয়ে ধরে।এতোদিন পর বোনকে পেয়েছে।জুঁই আরাভকে ছেড়ে এবার আদ্রিয়ানকে জরিয়ে ধরে।আদ্রিয়ানকেও সে তার ভাইয়ের মতো ভালোবাসে।আদ্রিয়ান ও জুঁইকে ছোট বোনের মতো ভালোবাসে।আদ্রিয়ান আরাভ জুঁইকে নিয়ে বেরিয়ে পরলো এয়ারপোর্ট থেকে বাড়ির দিকে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রাফসানরা এসেছে মেয়ে দেখতে আজকে।রাফসান চেয়েছিলো ঢাকা থেকে এসে বিয়ের ব্যাপারে জরাবে। কিন্তু ওর বাবার কথা বিয়ে নাহয় পরে করো কিন্তু মেয়ে দেখতেতো ক্ষতি নেই।তাই আজকে রাফসান,ওর বাবা মা এসেছে মেয়েকে দেখতে।মেয়ে রোদেলার বাবার পছন্দের।রোদেলার বাবার বন্ধুর মেয়ে।মেয়ের নাম রিয়া।রাফসানরা বসে আছে সোফায়।তাদের সামনে অনেক নাস্তা দেওয়া হয়েছে।রিয়ার মা বাবা কথা বলছে রাফসানের মা বাবার সাথে।কিছুক্ষনের মাঝে রিয়াকে নিয়ে আসলো ওর বোন রিফা।রিয়াকে রাফসানের সামনের চেয়ারে বসানো হলো।রাফসান তখনো মাথা নিচু করে আছে।বাবার ডাকে মাথা তুলে মেয়ের দিকে একবার তাকায়।রিয়াও মাথা নিচু করে আছে।ওদের আলাদা কথা বলার জন্য ছাঁদে পাঠানো হলো।বেশ কিছু সময় পর তারা নিচে আসলো।রাফসানের বাবা রাফসানকে জিজ্ঞেশ করলো,
রাফসানের বাবা:রাফসান তোমার কি রিয়াকে পছন্দ হয়েছে?

রাফসান:জ্বী বাবা হয়েছে।কিন্তু আমি বিয়ে এখন না আরো ৪মাস পর করবো।
রাফসানের বাবা:কেন তুমিতো বলেছিলে এক মাস পর এসেই করবে তাহলে এখন ৪মাস কেন?
রাফসান:বাবা রিয়ার সেমিস্টার পরিক্ষা ৪মাস পর সো পরিক্ষার পর বিয়েটা হক।
রাফসানের বাবা:আচ্ছা ঠিক আছে।তাহলে আংটি পরিয়ে যাই আমরা কি বলেন।
রাফসান:ঠিক আছে।
এরপর রিয়া আর রাফসানের আংটি পরানো হলো আর ৪মাস পর বিয়ের তারিখ ঠিক করা হলো।

এদিকে,,,,
রোদেলারা ক্লাস করছে।ক্লাস শেষ করে রোদেলা আর মুন গেছে তাদের প্রেক্টিকাল জমা দিয়ে আসতে আর রুবা গেছে ওয়াশরুমে।কাশফিয়া মাঠে এসে দাঁড়িয়ে আছে তখন এক দল মেয়ে এসে ওকে ঘিরে ধরলো।কাশফিয়া প্রথমে ভয় পেয়ে যায়।মেয়েগুলো মধ্য থেকে একট সাদা শর্ট ড্রেস পরা মেয়ে এগিয়ে এসে কাশফিয়াকে বললো,
নিশি:এইযে মিস চাশমিস।
কাশফিয়া:জ.জ্বী।
নিশি:মিস চাশমিস নিউ তাইনা?
কাশফিয়া:জ্বী।

নিশি:সো নিউ চাশমিস তোমাকে ইদানিং দেখেছি আমার কাউসারের দিকে তাকিয়ে থাকো।লিসেন আমার কাউসারের দিকে যদি নেক্সট তাকাতে দেখি তাহলে খবর আছে তোমার।
কাশফিয়া:আপনার কাউসার মানে?
নিশি:বোকা মেয়ে কাউসার আর আমি বয়ফ্রেন্ড গার্ল্ফ্রেন্ড।আর তুমি আমার বফের দিকে তাকিয়ে থাকো।এটাই না করছি।
কাশফিয়া:জ্বি আপু ঠিক আছে।

নিশি আর বাকি মেয়েরা চলে গেলো।কাশফিয়ার চোখের কোণে পানি জমে গেছে।একদিন কেমন জানি অভ্যাস হয়েগেছিলো কাউসার তার।কিন্তু সেতো অন্য কারো।কাশফিয়া পানিটা মুছে একা একা চলে আসলো হোস্টেলে।
রান্না ঘরে রান্না করছে জুঁই।আজকে ভাইয়দের জন্য নিজ হাতে সব বানাবে সে।আরাভ আদ আদ্রিয়ান বসে আছে সোফায়।দুজনে কফি খাচ্ছে আর কথা বলছে।
আরাভ:তুই কি কিছু ভেবেছিস রোদেলাকে নিয়ে?
আদ্রিয়ান:হুম রোদেলাকে খুজ শিগ্রই আমি বিয়ে করে সিডনি নিয়ে যাবো।
আরাভ:কিন্তু ওর বাবা ভাই কি মানবে?

আদ্রিয়ান:তাদের মানা না মানা নিয়ে আমার কিছু যায় আসেনা।রোদেলাকে সেফ রাখাই আমার আসল কাজ।
আরাভ:আচ্ছা আদ্রিয়ান এগুলো ছেড়েতো দিতে পারিস তাইনা।দেখ আজ তুই একা কিন্তু সামনে রোদেলা তোর জীবনে আসবে।অন্তত ওর কথা ভেবে তো ছাড়তে পারিস।
আদ্রিয়ান:হ্যা ছেড়ে দেবো যেদিন আমি ওই লোকটাকে শেষ করবো।আমি আজ ও ভুলতে পারিনা সেই চিৎকার গুলো।
আরাভ:আমি জানি সব কিন্তু এভাবে কতদিন তুই বল।একবার রোদেলার উপর আক্রমণ হয়ে গেছে এরপর যদি বড় কিছু হয়ে যায়।আল্লাহ না করুক তোর কিছু হলে তখন কি হবে ভেবেছিস।
আদ্রিয়ান:আমি সব ব্যাবস্থা করে রেখেছি।তুই চিন্তা করিস না অহেতুক।
আরাভ আর কোনো কথা বলেনা আদ্রিয়ানকে।বেশকিছুক্ষন পর জুঁই ওদের খাবার খেতে ডাকলো।দুইজনে খাবার খেতে চলে গেলো।

রোদেলা,মুন,রুবা হোস্টেলে এসে দেখে কাশফিয়া শুয়ে আছে খাটে।রুবা এসে কাশফিয়াকে একটা বারি মারে ব্যাগ দিয়ে আর বলে,
রুবা:চুড়েল তুই আমাদের না বলে একা একা আসছস কেন জানস তোরে পুরা কলেজ চুষে বেরিয়েছি আমরা?।
মুন:কিরে তুই বলতো আমাদের জানিয়ে আসতেতো পারতি জানিস আমরা কত ভয় পাইছিলাম।
রোদেলা:আরে থাম তোরা দুইজনে এক সাথে শুরু করছিস কেন।
রোদেলা গিয়ে কাশফিয়ার মাথার কাছে বসলো কাশফিয়ার গায়ে হাত দিতেই দেখে ওর গায়ে জ্বর।
রোদেলা:আল্লাহ ওর গাঁ দেখি জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।

মুন:সেকি দাঁড়া আমি জল পট্টি দেওয়ার ব্যাবস্থা করছি।
মুন:ভালো মেয়েটার কলেজে গেলো এই জ্বর হঠ্যাৎ আসলো কেন।
মুন একটা বাটিতে করে পানি আর কাপড় নিয়ে আসলো।রোদেলা পানিতে কাপড় ভিজিয়ে ভালো মতো নিংড়িয়ে সেটা কাশফিয়ার কপালে রাখলো।
তারপর তিনজনে ফ্রেশ হয়ে নিলো।রুবা ফ্রেশ হয়ে কাশফিয়ার পাশে এসে বসলো আর ওকে একটু পর পর পট্টি ভিজিয়ে দিতে লাগলো।রোদেলা আর মুন মিলে রান্না করতে গেলো।

লিজা আজকে আবার এসেছে আদ্রিয়ানের কাছে।আদ্রিয়ান বিকালে আরাভের বাসা থেকে অফিসে আসছে।এসে দেখে লিজা এখানে।লিজা আদ্রিয়ানকে দেখে ওর কাছে এগিয়ে এসে ওকে জরিয়ে ধরতে নিলে আদ্রিয়ান সরে যায়।লিজার এতে বেশ অপমানবোধ হয়।আদ্রিয়ান নিজের গায়ের কোর্ট খুলে চেয়ারে বসতে বসতে লিজাকে বলে,
আদ্রিয়ান:তুমি এখানে?
লিজা:হ্যা তোমার সাথে দেখা করতে আসলাম।
আদ্রিয়ান:হেয়ালি ছেড়ে বলো কেনো এসেছো?
লিজা:আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই আদ্রিয়ান।
আদ্রিয়ান বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায় আর বলে,
আদ্রিয়ান:What!!!Are You Made.

লিজা:হ্যা আদ্রিয়ান।প্লিজ তুমি আমাকে বিয়ে করো আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।কেন সেটা বুজোনা।প্লিজ আই লাভ ইউ।আই মেরি ইউ।
আদ্রিয়ান:আমি তোমাকে আগেও বলেছি আমি তোমাকে ভালোবাসিনা।আমি রোদেলাকে ভালোবাসি আর ওকে বিয়ে করবো।ফারদার তুমি যদি আর একদিন এখানে এসে এসব বলেছে সো ইউ নো আমার টুইংকেল টাইগারের পেটে যেতে ৫মিনিট লাগবেনা তোমার আর ভাবতেও ৫মিনিট লাগবেনা।সো নাউ লিভ।
লিজা আদ্রিয়ানের কথা শুনে ভয়ে রাগে বেরিয়ে আসলো।তবে যেটা জানার সে জেনে নিয়েছে।
রাতে,,,,,

কাশফিয়ার জ্বর কিছুটা কমেছে।ওকে কিছু খাইয়ে ঘুম পারিয়ে দিয়েছে রোদেলা।রোদেলা হাতের কিছু কাজ করছিলো।মুন কেক বানাচ্ছে ওর নাকি কেক খেতে মন চাচ্ছে তাই।রুবা বসে বসে চুল বাধঁছে।
রোদেলার কাজের মাঝে কল আসলো ওর ফোনে।
রাফসান কল দিয়েছে রোদেলাকে।রোদেলা হাতের কাজটা রেখে কল রিসিভ করলো।
রোদেলা:আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।
রাফসান:ওয়ালাইকুমুস সালাম।কেমন আছিস।
রোদেলা:হ্যা আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া তুমি কেমন আছো?

প্রেমময় আসক্তি পর্ব ৬

রাফসান:আমিও আলহামদুলিল্লাহ।
রোদেলা:আম্মু বাবা কেমন আছে?
রাফসান:হ্যা আলহামদুলিল্লাহ।কি করছিস?
রোদেলা:এইতো একটু কাজ করছিলাম।তুমি?
রাফসান:হ্যা আমি বসে।আমি আগামিকাল ঢাকা আসছি।
রোদেলা:সত্যি।ওয়াও তাহলেতো ভালোই হবে।
রাফসান:হ্যা।আমি ঢাকায় একটা ফ্লাট নিয়েছি।তোরা ওখানে থাকবি হোস্টেলে আর থাকতে হবেনা।
রোদেলা:ওহ আচ্ছা
রাফসান:আরেকটা কথা।
রোদেলা:কি?

রাফসান:বিয়ে ঠিক করছে বাবা আমার।আমিও অমত করিনি।রাজী হয়ে গেছি।কাল এসে তোকে মেয়ের ছবি দেখাবো।
রাফসানের এই কথাটা শুনে রোদেলা চমকে গেলো জোরে বললো,
রোদেলা:কিহ!!!তুমি বিয়েতে রাজী হয়েছো।
রাফসান:হ্যা।আচ্ছা আমি রাখি এখন একটু কাজ করবো।
রাফসান ফোন রাখতেই রোদেলা ধপ করে বসে পরে এভার সে মুনকে কি বলবে কিভাবে বলবে এই কথা।রুবা রোদেলা এভাবে দেখে ওর কাছে আসলো।

রুবা:কি হয়ছে রোদু?
রোদেলা:ভাইয়ার বিয়ে ঠিক করছে বাবা।আর ভাইয়াও বিয়েতে রাজী।
রুবা:কিহ!!!
ওদের কথার মাঝেই কিছু পরার আওয়াজ পেলো ওরা।সামনে তাকিয়ে দেখে মুন দাঁড়ানো ওর হাতের কেক মাটিতে পরে গেছে।ওর চোখে পানি।মুন বিড়বীড় করে বলছে,
“এটা হতে পারেনা।”

প্রেমময় আসক্তি পর্ব ৮