প্রেমময় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৮

প্রেমময় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৮
নন্দিনী চৌধুরী

সকালের মিষ্টি রোদে ঘুম ভেংগে যায় রোদেলা। ভালোভাবে ঘুমের রেশটা কাটিয়ে আসতে করে উঠে বসে। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে ৬:৩০ বাজে। নামাজটা আজকে পড়া হলোনা তার। রোদেলা উঠে ফ্রেশ হয়ে আসে তারপর গায়ে একটা চাদর দিয়ে বের হয় বাহিরে। হাঁটতে ইচ্ছে করছে ওর। রাত ঘুমিয়ে আছে তাই ও একাই এসেছে। রোদেলা হেঁটে হেঁটে চারিপাশটা দেখছে। খুব কম লোক বের হয়েছে কেউ কেউ অনেক গরম কাপড় গায়ে জরিয়ে বেরিয়েছে, কেউ আবার কিছুই গায়ে নেয়নি রোদেলা সব চেয়ে চেয়ে দেখছে। হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা দূরে এসেছে রোদেলা। হঠাৎ পা মচকে পরে যেতে নেয় রোদেলা,তখনি কেউ ওকে ধরে ফেলে। কিন্তু পায়ে ব্যাথা পাওয়ায় রোদেলা চিৎকার দেয়,
রোদেলা:আহহ!

রোদেলা লোকটার কাধে ভর দিয়ে বসে পরে। রোদেলার চোখ বন্ধ করে রেখেছিলো আসতে করে চোখ খুলে দেখে আরিয়ান। আজকেও আরিয়ান কালো মাস্ক কালো হুডি পরা। আরিয়ান রক্তচক্ষু দিয়ে তাকিয়ে আছে রোদেলার দিকে রেগে বলে,,,
আরিয়ান: What The F***** এতো কেয়ারলেস কেন আপনি? সেদিনও পরে যেতে নিয়েছিলেন আজকেও। আইডিয়া আছে আপনার কোনো এই সময়টা কত রিস্কি হয়। তাও কত কেয়ারলেস আপনি। একা একা এখানে কি করছেন। আপনার সাথে আপনার কেয়ার করা মেয়েটা কই?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রোদেলা ভয়ে কোনো কথা বলতেপারছেনা। আরিয়ান সেটা বুঝে ওর হাতের পানির বোতলটা রোদেলার দিকে এগিয়ে দেয়। রোদেলা গটগট করে পানি খেয়ে নেয়। তারপর আসতে আসতে বলতে লাগে,
রোদেলা: আসলে আমার বাসায় একা ভালো লাগছিলোনা তাই একটু হাঁটতে বেরিয়েছিলাম। আসলে রাত ঘুমিয়ে আছে তাই ওকে ডাকিনি। বুঝতে পারিনি আমি যে এমন হবে। ধন্যবাদ আপনাকে আমাকে বাঁচানোর জন্য।
রোদেলা উঠে দাঁড়াতে গেলে পায়ের ব্যাথার কারনে আবার বসে পরে।

রোদেলা: আহ!
আরিয়ান: কি হলো?
রোদেলা: পা মচকে গেছে।
আরিয়ান হাঁটু গেড়ে বসে পা দেখে যে আসলেই মচকে গেছে।
রোদেলা: এবার কি করবো। আমিতো ফোনও আনিনি সাথে।
আরিয়ান কিছু না বলে রোদেলাকে কোলে তুলে নেয়। ঘটনা হঠাৎ হওয়ায় চমকে যায় রোদেলা।
রোদেলা: আরে আরে কি করছেন? নামান আমাকে।

আরিয়ান: মচকে যাওয়া পায়ে কি উড়ে উড়ে যাবেন বাসায়।
রোদেলা আর কিছু বলেনা। আরিয়ান ওকে নিয়ে হাঁটছে আর মনে মনে বলছে,
আরিয়ান: আগে ছিলো বিড়ালের বাচ্চা এখন হয়ে গেছে গোলগাল পান্ডা। আর এখন এই পান্ডার ভেতরেই দুইটা পান্ডার বাচ্চা আছে। গোলুমলু হয়ে গেছে একদম।
আরিয়ান রোদেলাকে নিয়ে ওদের বাসায় আসে। দরজায় বেল দিতেই মুন দরজা খুলে দেয়। রোদেলার আরিয়ানের কোলে দেখে অবাক হয়ে মুন বলে,

মুন: কি হয়েছে রোদেলার? ও আপনার কোলে কেন?
আরিয়ান: আগে ভেতরে আসি তারপর বলি?
মুন: হ্যাঁ, আসুন।
আরিয়ান রোদেলাকে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসিয়ে দেয়।
মুন এর মাঝে রাফসান আর বাকিদের ডাক দেয়।
রাফসান এসে রোদেলাকে আরিয়ানকে দেখে অবাক হয়ে বলে,
রাফসান: কি ব্যাপার? কি হয়েছে?

আরিয়ান: উনি বাহিরে একা একা গিয়েছেন।অসাবধানতায় চলতে গিয়ে পা মচকে পরে যেতে নিয়েছিলেন কিন্তু আমি ধরে ফেলেছিলাম। পায়ে ব্যাথা পাইছেন উনি।
রাফসান: সকালে উঠে তোকে না দেখেই বুজেছিলাম তুই বাহিরে গেছিস। রাততো যাচ্ছিলোই এখোনি। কেন এমন করিস বলতো! এই সময় সাবধানে থাকা লাগে জানিসনা?
মুন: তোকে কালকেই ডাক্তার বললো সাবধানে চলা ফেরা করতে। আর তুই আজকেই, আরে গেছিস রাতকে নিয়ে যাবিতো নাকি সাথে।

আরিয়ান: আচ্ছা এখন আগে ওনার পাটা ঠিক করেন। বাকি কথা পরেও বলতে পারবেন।
রাফসান: হ্যাঁ, দেখিতো দেখা আমাকে পায়ে কোথায় লেগেছে।
রাফসান রোদেলার পায়ে হাত দিতেই চিৎকার দেয় রোদেলা।
রোদেলা: অনেক ব্যাথা ভাইয়া।
রাফসান: মচকে গেছে তাই ব্যাথা। আমাকে দেখতে দে।
রোদেলা: না না আমার পা দেখাবোনা যাও সরো।

রোদেলা কিছুতেই পা দিচ্ছেনা দেখে আরিয়ান রোদেলার সামনে বসে তারপর ওকে বলে,
আরিয়ান: আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকুন একদম চোখ সরাবেননা।
রোদেলা আরিয়ানের চোখের দিকেই তাকিয়ে থাকে। একদম হারিয়ে যাচ্ছে চোখের গভীরতায়। আর এদিকে আরিয়ান রোদেলার মচকানো পা চাপ দিয়ে ঠিক করলো আর রোদেলা টেরও পেলোনা।
কাজ হয়ে গেলে আরিয়ান বলে,

আরিয়ান: হয়ে গেছে।
আরিয়ানের কথা শুনে হুস আসে রোদেলার।ইসস!এতোক্ষন ওনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম না জানি কি ভাবছেন উনি আমাকে। রোদেলা খেয়াল করলো ওর পায়ের ব্যাথাটা এখন নেই।
আরিয়ান উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
” এখন তাহলে আমি আসি। ”
রাফসান আরিয়ানকে বললো
” এখনি চলে যাচ্ছো করছো! আমাদের সাথে নাস্তা করে যাও।”
আরিয়ান: না আজকে না। অন্য আরেকদিন আসবো। আজকে আমার একটু দরকারি কাজ আছে। তাই আমাকে এখন যেতে হবে।
রাফসান: তাহলে ঠিক আছে। আরেকদিন কিন্তু আমাদের বাসায় আসবে আর খেয়েও যাবে সেদিন।
আরিয়ান: আচ্ছা ঠিক আছে।
তারপর আরিয়ান চলে গেলো। আরিয়ান যাওয়ার পর রাত মুন কে বললো রোদেলার জন্য নাস্তা আনতে। মুন নাস্তা আনতে গেলো। আর রাত রোদেলাকে নিয়ে গিয়ে ফ্রেশ করিয়ে দিলো। তারপর মুন রোদেলার জন্য নাস্তা নিয়ে এলো।আর রোদেলা নাস্তা করে নিলো।

রুহি নিজের রুমে বসে আছেম আজকে সকালের পুরো ঘটনাটা সে দেখেছে। আরিয়ানের পিছনে সেও বেরিয়েছিল হাঁটার জন্য। তখন সে খেয়াল করল কিছু পথ যাওয়ার পর আরিয়ান ওই সেদিনের মেয়েটাকে আজকে পরে যাওয়া থেকে বাঁচালো। তারপর সেই মেয়েটার জন্য আরিয়ান আজকেও কত কেয়ার দেখালো। সবশেষে মেয়েটাকে কোলে তুলে নিলো শুধুমাত্র মেয়েটা পায়ে ব্যথা পেয়েছিল বলে।
রুহি: আরিয়ানের ওই মেয়েটার জন্য এত কেয়ার কেন? কি হয় আরিয়ানের ওই মেয়েটা? যখোনই ওই মেয়েটা কোনো না কোনো বিপদে পড়ে তখনই আরিয়ান মেয়েটাকে বাঁচিয়ে নেয়। আচ্ছা মেয়েটার সাথে কি আরিয়ানের কোনো যোগাযোগ আছে।

রুহি এসব ভাবা বাদ দিয়ে ওর আরিয়ানের বাবাকে কল দিলো। এক মাত্র এখন সেই পারবে আরিয়ানকে তার করতে। ওদের বিয়ে আরিয়ানের বাবা ছাড়া কেউ দিতে পারবেনা।
~এদিকে~
আরিয়ান রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নেয়। খুব রাগ লাগছে ওর। রোদেলা এতো বেখেয়াল যে কেন সেটাই ও বুঝেনা। আরিয়ান রেডি হচ্ছে বাহিরে যাওয়ার জন্য আবার। আজকে ওর খুব দরকারি একটা কাজ আছে। আর মাত্র ৩দিন ওরা এখানে থাকবে তারপর চলে যাবে।
রোদেলা আদ্রিয়ানের ছবি নিয়ে বসে আছে। এই আরিয়ান আর আদ্রিয়ানের চোখের কতটা মিল তাই দেখছে রোদেলা।
রোদেলা নিজের পেটে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর বলছে,
“তোদের বাবা কত হ্যান্ডু ছিলো?। তোরাও তোদের বাবার মতো হবি বুঝলি।”
রোদেলা আদ্রিয়ানের ছবিটা দেখছে আর বাবুদের এগুলা বলছে।

২দিন পর,,,,,
পরশু এখান থেকে চলে যাচ্ছে আরিয়ানরা। রাফসান যাবে আরো ৪দিন পর। এক মাস লাগার কথা ছিলো ওর কিন্তু কাজ তাড়াতাড়িই হয়ে গেছে। তাই ৪দিন পর ওরা চলে যাবে। রোদেলারা সবাই সোফার রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে তখন বাসায় কেউ বেল দেয়। রাত গিয়ে দরজা খুলে দেখে কুরিয়ার ম্যান দাঁড়ানো। রাতকে দেখে রোদেলার কথা জানতে চায় আর জানায় রোদেলার নামে পার্সেল আছে। রাত পার্সেল নিয়ে রুমে আসে। রাতের। হাতে এতো বড় বক্স দেখে সবাই তাকিয়ে আছে।

প্রেমময় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৭

রাত: রোদেলা আপু এটা তোমার জন্য আসছে?
রোদেলা: আমার জন্য! কে দিয়েছে?
রাত: জানিনা কুরিয়ারের লোকে তো বললো তোমার নামে।
রোদেলা বক্সটা ওপেন করলো। অনেক কালারের শাড়ি, গোল ঢিলাঢালা জামা, গাউন, অনেক জুয়েলারি, চকলেট, ফুল, গাজরা দিয়ে ভরা বক্স।
রুবা: এতো কিছু কে পাঠালো?
মুন: হ্যাঁ, তাইতো কে?
রোদেলা সাথে একটা চিরকুট পেলো।
চিরকুটটায় লেখা,,,

“এইযে বাবুদের আম্মু,,আপনিতো এখন পান্ডা হয়ে গেছেন। একদম পান্ডার মতো লাগে আপনাকে গোলগাল। শুনেন বাবুদের আম্মু এতো টাইফফিট জামা এখন আর পরা চলবেনা। ঢিলাঢালা জামা পরবেন তাহলে আরাম পাবেন। হাঁটাচলা করতেও সুবিধা হবে। মা হচ্ছেন এখন সচেতন হোন। আর বাচ্চাদের মতো কইরেন না। আপনার সন্তান আপনার সৌভাগ্য বয়ে আনুক দোয়া করি।”
রোদেলা চিরকুটটা পরে হা হয়েগেছে। কে পাঠালো এসব বুঝতে পারছেনা সে।
~এদিকে~

ক্যামেরায় রোদেলার এমন হা মুখ দেখে হাঁসছে একজন। তার পান্ডাটা ভালোই চিন্তায় পরেছে এসব পেয়ে।
“তুমি আমাকে যত দূরে ঠেলে দিয়েছোনা কেনো। আমি আছি সব সময় তোমার পাশে তোমার কাছে। ছায়া হয়ে হলেও তোমার পাশেই থাকবো। কারন আমি যে তোমাতেই সিমাবদ্ধ। তুমি যে আমার প্রেমের আসক্তি। ভয়ঙ্কর আসক্তি। তুমি আমার “প্রেমময় আসক্তি”।

প্রেমময় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৯