প্রেমময় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৯

প্রেমময় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৯
নন্দিনী চৌধুরী

আরিয়ানরা আজকে ফিরে এসেছে ঢাকা। এসে সবাই ক্লান্ত তাই ফ্রেশ হয়ে যে যার মতো রুমে চলে যায় খেয়ে। আরিয়ান রুমে এসে কল লাগায় একজনকে,,,
আরিয়ানঃহ্যা কি করছে? খেয়েছে রাতে? আর কোনো ব্যাথা উঠেনিতো?

আরিয়ানঃআচ্ছা ঢাকা আসছে কবে সবাই?
……………
আরিয়ানঃআচ্ছা খেয়াল রেখো।
আরিয়ান ফোন রেখে বারান্দায় এসে বসে। আজকের চাঁদটা অনেক সুন্দর উঠেছে। আরিয়ান চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলে,,
আরিয়ানঃ”তুমি চাঁদ সবার কাছে সুন্দর হলেও আমার কাছে তুমি তত সুন্দর না যতটা আমার পান্ডা আমার কাছে সুন্দর। এক আলাদা মাদকতা আছে তার মাঝে যা তোমার মাঝে নেই চাঁদ। ”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আরিয়ান বসে ছিলো তখন ওর রুমে মিস্টার হাসান আসেন। মিস্টার হাসান রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে নোক করলেন,,
মিস্টার হাসানঃআরিয়ান কি ঘুমিয়ে গেছো বেটা?
আরিয়ান বাবার কণ্ঠ শুনে বারান্দা থেকেই বললো,
আরিয়ানঃনা ড্যাড আমি বারান্দায় তুমি আসো।
মিস্টার হাসান রুমে ঢুকে বারান্দায় গেলেন। আরিয়ানের পাশের সোফায় বসে পরেন তিনি। আরিয়ান বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,

আরিয়ানঃবলো ড্যাড এতো রাতে তুমি। কোনো জরুলি দরকার?
মিস্টার হাসানঃহ্যা ব্যাপারটা অনেকটা জরুলিই তাই দেড়ি না করে এখন আসলাম।
আরিয়ানঃহ্যা বলো ড্যাড।
মিস্টার হাসানঃ দেখো আরিয়ান আমার বয়স হয়েছে তোমার মায়ের ও বয়স হয়েছে। সব বাবা মায়েরই ইচ্ছা থাকে তার সন্তানের বিয়ে দেখার। আমাদেরও তোমার বিয়ে দেখার ইচ্ছা আছে। তাই আমি চাচ্ছি তোমার আর রিয়ার বিয়েটা দ্রুত দিয়ে দিতে। রুহি তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড তুমি ওকে পছন্দ করো রুহিও তোমাকে পছন্দ করে। তাই আমি আর দেড়ি করতে চাচ্ছিনা।

মিস্টার হাসানের কথা শুনে আরিয়ান চমকে গেলো। মিস্টার হাসান যে এমন কিছু বলবে সেটা সে আশা করেনি। আরিয়ান বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,,
আরিয়ানঃড্যাড বিয়ে!
মিস্টার হাসানঃহ্যা বিয়ে।

আরিয়ানঃকিন্তু ড্যাড আমি রুহিকে পছন্দ করি এটা তোমাকে কে বললো। হ্যা রিয়া আমার ফ্রেন্ড গত কয়েক মাস ধরে। অস্ট্রেলিয়ায় থাকার কারনে আমি ওকে ফ্রেন্ড বানিয়ে ছিলাম কিন্তু ওকে আমি পছন্দ করি এমন কিছু নয়। ড্যাড তুমি আমাকে বিয়ে দিতে চাও আমি বুঝতে পেরেছি। কিন্তু আমি রিয়াকে বিয়ে করতে পারবোনা।
মিস্টার হাসানঃতাহলে কি তোমার কোনো পছন্দ আছে?

আরিয়ানঃহ্যা আছে।
মিস্টার হাসানঃকে সে?
আরিয়ানঃসময় হক। আমি নিজেই বলবো।
মিস্টার হাসানঃকিন্তু……
আরিয়ানঃপ্লিজ ড্যাড।
মিস্টার হাসানঃওকে।
মিস্টার হাসান উঠে আসলেন বারান্দা থেকে তারপর চলে আসেন তার রুমে।
আরিয়ান বারান্দায় বসে ভাবছে সে কি করবে। এটা নিশ্চই রুহির কথায় বাবা বলতে এসেছে। আরিয়ান নিজের ফোন বের করে আবার কাউকে কল লাগায়,,,,
আরিয়ানঃহ্যা কাজ কত দূর?

আরিয়ানঃঠিক আছে আসছে ১৮ তারিখ মানে আজ ১০ তারিখ আর ৮দিন পর সব কাজ শেষ হবে Got It!
আরিয়ান ফোন রেখে বাঁকা হাঁসলো।
~এদিকে~

মুনকে তার বাবা জলদি বাসায় আসতে বলেছে কোনো বাহানা সে আএ শুনবেনা বলে দিয়েছে। তাই অজ্ঞাত মুনকে যেতেই হবে। মুন আজকে আবার ফেজবুকে এসেছে আরাভের আইডি লাইনে দেখে বুকের ভেতর ধক করে উঠলো। কাঙ্ক্ষিত মানুষটাকে লাইনে দেখলে খুব ইচ্ছা করে ম্যাসেজ দিতে কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য দেয়াল সেই ইচ্ছাকে চাপা দিয়ে দেয়। রুবাও পারছেনা আরাভকে ম্যাসেজ দিতে। আরাভের আইডিতে গিয়ে দেখলো অনেকে তার টাইমলাইনে পোস্ট করেছে অভিনন্দন দিপা ভাবি আর আপনাকে। রুবা বুঝতে পারলো আরাভের স্ত্রীর নাম দিপা। রুবা আর থাকতে পারলোনা আইডি অফ করে বিছানায় বালিশ চেপে কাঁদতে লাগলো।

এদিকে আরাভ রুবাকে লাইনে দেখে অবাক হয়েছে খুশিও হয়েছিলো কিন্তু ম্যাসেজ করতে যেয়েও করলোনা সে। আরাভ ফেজবুকে এসেছিলো দিপা আর ওর বন্ধ যাবেরকে উইস করতে। মজার ছলে মেরিড স্টাটাস সে দিয়েছে বলে অনেকে দিপাকে তার স্ত্রী ভাবছে। তাই সে স্টাটাস ডিলেট করে দিচ্ছে।
~সকালে~

আরিয়ান তার গানের স্টুডিওতে চলে গেছে নীলাদ্র অফিসে। নন্দিনী ভার্সিটি চলে গেছে। রুহি সকালে তার বাসায় চলে গেছে।
আরিয়ান গানের স্টুডিও থেকে গান রেকর্ড করে চলে গেলো নীলাদ্রের অফিসে। সেখানে গিয়ে নিলাদ্রকে নিয়ে বেরিয়ে পরে। আজকে ওরা দুজনে ঘুরবে।
~৪দিন পর~

রোদেলারা ফিরে এসেছে বাসায়। মুনকে রাফসান দিয়ে আসতে গেছে ওদের বাড়িতে। রোদেলা তো রুবাকে যেতে দিতে চাইনি কিন্তু কি করার আংকেল ডেকেছে যেতে হবে। রুবাকে বাড়িতে দিয়ে ফিরে আসে রাফসান।
এদিকে রুবা বাসায় আসার পর তার বাবা তাকে জানায় তার পছন্দের পাত্র তাকে আগামী শুক্রুবার দেখতে আসছে। পছন্দ হলে সেদিনেই ওদের বিয়ে করিয়ে দেবেন তিনি। রুবা শুধু পাথরের মতো শুনে গেছে কি বলার আছে ওর। না কিছু বলার নেই।

এদিকে মুনের শরীরটাও ভালোনা। বমি,মাথা ঘুরানো। আজকে রোদেলাকে ডাক্তার দেখিয়ে সেও ডাক্তার দেখাবে। রোদেলাকে ডাক্তার দেখিয়ে নিজেও ডাক্তার দেখিয়ে বাসায় আসে দুজনে। রোদেলার বেবিরা সুস্থ আর হেলদি আছে। টুইন বাচ্চা রোদেলার ডাক্তার একদম কনফার্ম করে বলেছে। রোদেলা অনেকদিন পর আজকে কাশুর সাথে কথা বললো। কাশু আসতেছে ঢাকা দুইদিন পর। আদৃতা এসে দেখা করে গেছে ওদের সাথে।
~শুক্রুবার~

আজকে রুবাকে দেখতে আসবে নিলয়। নিলয় রুবার বাবার বন্ধুর ছেলে। রুবাকে ওর চাচি সাজিয়ে দিচ্ছে। আর রুবা পুতুলের মতো বসে আছে। যেনো কোনো অনুভুতি কাজ করছেনা ওর। যথাসময় নিলয়রা আসলো রুবাকে দেখতে। রুবাকে নিলয়ের সামনে বসানো হলো। নিলয়ের মা বাবার রুবাকে দেখেই পছন্দ হয়ে গেলো। রুবা আর নিলয়কে আলাদা কথা বলতে দেওয়া হলো।
নিলয় রুবাকে বললো,,,
নিলয়:আপনি আরাভের ভালোবাসা রুবা তাইনা?
নিলয়ের কথা শুনে চমকে গেলো রুবা।
রুবা:আপনি?

প্রেমময় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৮

নিলয়:আরাভ আমার বন্ধু। আরাভের মুখে আপনার কথা শুনেছিলাম দেখেছিলাম। কিন্তু আমি জানতাম না আমার মা বাবা যেই মেয়েকে দেখতে এসেছে সে আপনি।
রুবা:এখন এসব বলে আরকি লাভ। সেতো বিয়ে করে নিয়েছে।
নিলয়:কে বললো আপনাকে?
রুবা:আমি ফেজবুকে দেখেছি।
নিলয়:অহ সেটাতো আপনার উপর রাগ করে দিয়েছিলো। দিপা যাবেরের বউ, আরাভের না।
রুবা:কি সত্যি?
নিলয়:হ্যা।
রুবা:কিন্তু আমি বাবাকে কিভাবে বুঝাবো?
নিলয়:সেসব নিয়ে আপনি চিন্তা করবেন না আমি দেখে নিচ্ছি।
রুবা নিলয় কথা শেষ করে নিচে চলে আসলো। তারপর নিলয়ের বাবা মা রুবার বাবা মার সাথে কথা বলে। খাওয়া দাওয়া করে চলে গেলো।

রোদেলা দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিয়ানের মুখামুখি। আদ্রিয়ানের চোখে রাগ আর রোদেলার চোখে পানি।
আদ্রিয়ান:আজ সব সত্যি জানার পর তোমার মনে হয়েছে তোমার ভুল হয়েছে। আর এতোদিন!এতোদিন যে আমি কষ্ট পেয়েছি আমি তিলে তিলে শেষ হয়েগেছি তার কি হবে বলো কি হবে। তোমাকে আমি মাফ করবোনা রোদেলা কোনোদিন মাফ করবোনা। আমার সন্তানদের কাছেও তোমার কারনে আমি থাকতে পারিনি। I haTe you Rodela. I hate You.

রোদেলা:প্লিজ এভাবে বলবেন না। একটা বার আমাকে সুযোগ দিন প্লিজ একটা বার। আমি আমার বাচ্চাদের থেকে দূরে থাকতে পারবোনা প্লিজ। আপনাকে ছাড়াও আমি বাঁচবোনা প্লিজ।
আদ্রিয়ান রোদেলার কথা না শুনে চলে যায় বাবুদের নিয়ে আর রোদেলা সেখানে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।

প্রেমময় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ১০