প্রেমানন্দোল পর্ব ১১

প্রেমানন্দোল পর্ব ১১
তাসনিম তামান্না

মৃধা শাড়ি ঠিক করতে করতে। হাটছিলো। ধাক্কা খেয়ে দু কদম পিছনে গেলো চোখ তুলে স্বচ্ছকে দেখে অবাক কন্ঠে বলল
” আপনি এখানে? ”
স্বচ্ছ ও অবাক না হয়ে পারলো না। যাকে বলে ডাবল অবাক একে তো মৃধাকে শাড়িতে প্রথম দেখছে তার ওপরে আবার মৃধাকে এখানে দেখে ডাবল সকর্টে বলল

” তুমি এখানে কি করছ? ”
মৃধা রেগে গেলো ” আবার তুমি? ”
” সরি সরি তুমি না আপনি এখানে? ”
” আমার ও তো একই প্রশ্ন আপনি এখানে? আমি প্রশ্নটা আগে করেছি মানে আপনার উত্তরটা আগে দেওয়া উচিত ”
স্বচ্ছের ভ্রু কুঁচকে গেলো। ভাবনায় পড়ে গেলো কি উত্তর দিবে? স্বচ্ছকে চুপ থাকতে দেখে মৃধা আবারও বলল
” এই যে হ্যালো আপনার কাছে একটা কথা জিজ্ঞেসা করছি ”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

স্বচ্ছ দিশেহারা হয়ে গেলো। তার পরিচয় কি? কে সে? এ বাড়ি কে হয় সে? মস্তিষ্কে তন্নতন্ন করে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে লাগলো। কিন্তু সবটা ফাঁকা লাগলো প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেলো না। কি উত্তর দিবে সে? এ বাড়ির আশ্রিতা?
কোথা থেকে স্বাধীন এসে বলল
” এ বাড়ির ছোট ছেলে। আমার ভাই। আপনারা কি দুজন দুজনকে চিনেন? ”
মৃধা সন্দিহন চোখে মুখে হাসি আনলো বলল

” না ভাইয়া আসলে তেমন নয়। ওনার বাইকের সাথে আমার রিকশার ধাক্কা লাগছি ”
” ওমাইগড কবে কখন? আপনাদের লাগে নি তো? ”
” না ভাইয়া ঠিক আছি। একটু চোট লাগছিল বাট ইট’স ওকে ”
” ওহ। থ্যাংক গড। ওতো বাসায় এসে কিছু-ই বলে না ”
স্বচ্ছ স্বাধীনের দিকে অদ্ভুত চোখে তাকালো। স্বাধীন হাসলো কানে কানে বলল
” বাইরের লোকের কাছে নিজেকে ছোট করা বা কনফিউজড হয়ে যাওয়ার আর পার্সোনাল প্রবলেম ও জানতে দেওয়ার কোনো মানে হয় না ”
স্বাধীন হেসে মৃধাকে বলল

” আপনারা কথা বলেন আমি ওদিক টায় যাচ্ছি কোনো প্রয়োজনে অবশ্যই বলবে ”
” জী অবশ্যই ভাইয়া ”
স্বাধীন চলে যেতে স্বচ্ছ মৃধাকে বলল
” কেমন আছেন ”
” ভালো না থাকলে কি এখানে আসতাম? ”

” সবসময় এমন ঝাঁজ মেশানো গলায় কথা বলেন কেনো? মনে হয় আমি আপনার শত্রু আমি তো জাস্ট নরমালি আপনাকে জিজ্ঞেসা করলাম আপনিও নরমালি এন্সার দিতেন তা না এমন ভাবে বলছেন যেনো হু-ম-কি দিচ্ছেন ”
মৃধা চোখ ছোট ছোট করে বলল
” আপনার মতো ছেলেদের আমার ভালো মতো চেনা আছে ভালো মুখ দিলেই গাছে উঠে বসবেন ”
” হোয়াট ডু ইউ মিন বাই আমার মতো ছেলে? ”
মৃধা জোর পূর্বক হেসে বলল

” আই মিন আপনার মতো এতো ভালো ছেলে কোথায় পাওয়া যায় বলুন তো? ”
” হোয়াট? আপনি কি আমাকে ইনসাল্ট করছেন? আর এমন ভাবেই বা কথা বলছেন কেনো আমি আপনার কি-ই বা ক্ষতি করলাম? ”
” জানেন না কি ক্ষতি করছে? ভুলে গেলেন? আপনি একটা খারাপ লোক ভালো লোকেরা কখনো সিগারেট খাই না স্মোক করে না বুঝলেন ”
স্বচ্ছ ভাবলেশহীন হয়ে জবাব দিলো

” বুঝলাম আর মানলাম তো আমি খারাপ ”
কথাটা বলে গটগট পায়ে চলে গেলো। মৃধা ও স্বচ্ছকে ভেংগিয়ে। শাড়ির কুঁচি ধরে স্বচ্ছকে বকতে বকতে দূরে দাঁড়িয়ে থাকে হালিমা, আঁখি, বিথির কাছে গেলো। তারা সন্দিহান চোখে মৃধার দিকে তাকিয়ে আছে। সেটা দেখে মৃধা বলল
” কি সমস্যা আমার কি রূপ বেয়ে বেয়ে পড়ছে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো? ”
হালিমা বলল

” ঔ ছেলেটা না ঔ ছেলের সাথে তোর আবার এতো কি কথা? ”
” প্রেম করতে যায় নি ঔ ছেলে এখানে কেনো সেটা শুনছিলাম ”
আঁখি কৌতুহলী হয়ে বলল
” কি বলল? কি বা কে হয়? ”
” দ্বিধার দেবর ”
সবাই ফাটা চোখে তাকিয়ে এক সাথে বলল
” কিহ? ”
” জী ”
আঁখি বলল

” তাহলে আমার সাথে ওর সেটিংটা দ্বিধায় করে দিতে পারবে ”
মৃধা চোখ মুখ কুচকে নাক সিটকে বলল
” ছিঃ ঔ ছেলেকে তোর এতো পছন্দ হইছে ”
বিথি হেসে বলল
” আরে ওর তো সবাইকে ভালো লাগে। এখন যদি এখান থেকে একটা টাকলা ব্যাটা যায় তখনো আঁখি বলবে দোস্ত ক্রাস খাইছি তাই ওর ব্যাপারটা এতো সিরিয়াসলি নেওয়ার মতো কিছু হয় নি ”
বিথির কথায় বিথিসহ হালিমা, মৃধা হেঁসে উঠলো। আঁখি গোমড়া মুখ হয়ে বলল
” তোরা আমাকে এমন ভাবে বলতে পারলি? ”

বাবা-মা, ভাই, ফেন্ডগুলো চলে যাওয়ার সময় দ্বিধার বড্ড মন খারাপ হলো। মন চাইছে ছুটে চলে যেতে তাদের সাথে। কিন্তু তার হাত-পা তো অদৃশ্য সিকল দিয়ে বাঁধা চাইলেও যেতে পারবে না। স্বাধীন যেতে দিতে চাইলেও দ্বিধা গেলো না বিয়ের পর প্রথম নিজের বাড়ি যাবে তা-ও স্বামী ছাড়া? এটা চোখে লাগবে। এদিকে স্বাধীনেও সময় নেই সেজন্য আর যাওয়া হলো না তবে স্বাধীন কথা দিয়েছে সময় নিয়ে হুট করে একদিন গিয়ে সারপ্রাইজ দিবে। সকলে এমন ফ্রী মাইন্ডের মনের মতো জামাই পেয়ে খুশি।

অনুষ্ঠান শেষ হলো রাত ১১ টার দিকে। দ্বিধা ক্লান্ত শরীরে গা থেকে গহনা গুলো খুলে ড্রেসিংটেবিলের ওপরে রাখছে। শরীর আর চলছে না যেনো রাতে ঠিক মতো ঘুম হয় না নতুন জায়গায় এসে তার ওপরে আবার বিয়ের ধকল দ্বিধা আর নিতে পারছে না। স্বাধীন ও বড্ড ক্লান্ত। স্বাধীন রুমে এসে হাতের ঘড়ি খুলতে খুলতে বলল
” আপনি ওনাদের সাথে গেলেই পারতেন আমি না হয় কদিন পরে গিয়ে নিয়ে আসতাম ”

দ্বিধা কথা ঘুরিয়ে বলল
” খেয়েছেন আপনি? ”
” আপনার পাশে বসেই তো খেলাম মনে নাই ”
” ওহ হ্যাঁ আসলেে ভুলে গেছিলাম ”
” না বরং আপনি কথা ঘুড়াতে চাইছেন ”
“হ্যাঁ তাই সে ব্যপারে কথা না বেরানোই শ্রেয় ”

” কিন্তু আপনার কষ্ট হচ্ছে আমি জানি রাতে ঠিক মতো ঘুমাতে পারেন না এপাশ ওপাশ করেন ”
দ্বিধা চুপ থাকলো উত্তর দিলো না। পাশ কাটিয়ে থ্রি পিচ নিয়ে ওয়াসরুমে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
স্বাধীন দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। ফোনে ই-মেইল চেক করতে লাগলো।
দ্বিধা ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পড়লো। স্বাধীন ফ্রেশ হয়ে এসে দ্বিধা কে ডেকে বলল
” দ্বিধা শুনছেন? ঘুমিয়ে গেলেন না-কি? ”
” না বলুন ”

” কাল থেকে রেগুলার ইউনিভার্সিটিতে যাবেন। আপনার সামনে ফাইনাল এক্সাম খেয়াল আছে আপনার ”
দ্বিধা ছোট করে উত্তর দিলো
” হুম ”
” কাল থেকে যাবেন আর আপনার বইগুলো তো নেই এখানে কাল ক্লাস করে গেটের সামনে দাঁড়াবেন আমি আপনাকে নিয়ে ও বাড়িতে যাবো কাল থেকে পৌশু আসবো ”
দ্বিধা খুশিতে বাক-বাকুম হয়ে উঠে বসলো। ক্লান্তিগুলো যেনো নিমিষেই উদ্ধাও হয়ে গেলো। গলায় উচ্ছ্বাস ঢেলে আবেগি হয়ে বলল

প্রেমানন্দোল পর্ব ১০

” সত্যি ”
দ্বিধার আনন্দে চিকমিক করা চোখ মুখ দেখে হেসে বলল
” হ্যাঁ ”
” কিন্তু আপনার না কাল কাজ আছে ”
” ওটা ম্যানেজ হয়ে যাবে ”
” আচ্ছা। আম্মু আর স্বপ্নাকেও নিয়ে যাবেন? ”
” আম্মু যাবে না। স্বপ্না নাচতে নাচতে যাবে। খুশি? ”
দ্বিধা হেসে বলল
” আকাশ ছোঁয়া ”

প্রেমানন্দোল পর্ব ১২