প্রেমানন্দোল পর্ব ১৫

প্রেমানন্দোল পর্ব ১৫
তাসনিম তামান্না

দ্বিধা নিজের বাড়ি থেকে শশুড় বাড়িতে এসেছে কয়দিন হলো মাত্র। কলেজে যাওয়া হয় নি আর। ফেন্ডদের কাছে ফোন দিয়েও তাদের খোঁজ নেওয়া সময় বা মেজাজ কাজ করছিল না। বাসা থেকে এসে মন খারাপ হচ্ছিল স্বাধীন বললেছে কয়েকদিন পর আবার নিয়ে যাবে তাতেও দ্বিধার মন খারাপ কমে নি। সন্ধ্যায় নিচে এসে দেখলো স্বপ্না সোফায় বসে মুচকি মুচকি হাসছে। দ্বিধা বোকা বোকা চোখে স্বপ্নার পাশে গিয়ে বসলেও স্বপ্না তখনো নিজের দুনিয়ার রং নিয়ে ব্যস্ত। দ্বিধা মুখ টিপে হেসে বলল

” কি হয়েছে স্বপ্না? এভাবে ব্লাস করছ কেনো? কারোর প্রেমে পড়লে না-কি? ”
স্বপ্না এতোটাই চমকালো যে সোফা ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে ভয়ার্ত চোখে দ্বিধার দিকে তাকিয়ে রইলো দ্বিধা শব্দ করে হেসে লুটোপুটি খেতে লাগলো। স্বপ্না মুখটা স্বাভাবিক করার বৃথা চেষ্টা করে বলল
” কি বলো ভাবি এসব ”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” হুম হুম একটু একটু বুঝতে পারছি তা কাহিনী বলো শুনি কি ভাবে কি হলো ”
স্বপ্না লজ্জা পেলো আবার ভয়ও পেলো ভয়ার্ত কন্ঠে বলল
” আগে বললো ভাইয়া বা আম্মুকে কিছু বলবে না ”
দ্বিধা স্বপ্নাকে আশশ্বাস দিয়ে বলল
” চিন্তা করো না কাউকে কিছু বলবো না ”
স্বপ্না মনে জোর পেলো দ্বিধার গাল টিপে দিয়ে বলল
” এই তো আমার সুইট ভাবি ”

” আচ্ছা হয়েছে এবার বলো কাহিনী কি? ”
” কাহিনী তো প্রেম প্রেম। ”
” কিভাবে কি হলো? ছেলের ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছ তো? ছেলে ভালো? ”
” হ্যাঁ। পুলিশ নতুন জয়েন্ট হয়েছে। কিন্তু একটায় সমস্যা ”
” মানে ও না আমার থেকে একটু বেশিই বড় ৯ বছরের ”
” মাত্র ৯ বড় মানা যায় প্রবলেম হয় না ”
” আমি না ওকে খুব ভালোবাসি যদি কেউ না মানে? ”

” তো কি হয়েছে মানাবা চেষ্টা চালিয়ে যাবা আর আমি তো আছিই। আর এতো কিছুর পরও যদি না মানে তাহলে পালিয়ে যাবা ছোট ছোট পুচকু আনলে মেনে নিবে ”
দুজনে উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো। ফোনের শব্দে হাসির ব্যাঘাট ঘটলো। দ্বিধা ফোন নিয়ে ওপরে চলে গেলো। মৃধা ফোন দিয়েছে।

” কেমন আছিস? ”
” আছি। তুই? ”
” আছি মানে কি মৃধা? আছি মানে আমি কি বুঝবো কোথায় আছিস? ”
” বাসায় আছি ”
মৃধার এমন খাপছাড়া কথা শুনে দ্বিধার ভ্রু কুঁচকে গেলো বলল
” কি হয়েছে তোর? কথার মাঝে কোনো ফিলিংস নাই তোর কেমন নির্জীব লাগতেছে। মন খারাপ? ”
” ওসব বাদ দে। আগে আমার কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দে সত্যি করে বলবি ”
” কি প্রশ্ন বল ”

” তোকে যে জোর করে রিলেশন করতে বাধ্য করছিল মানে তোদের বাসা যে দখলে নিয়ে চাইছিলো সেই লোকটার নাম স্বচ্ছ আর তোর দেবরের নাম ও স্বচ্ছ। দুইটা মানুষ কি এক? ”
দ্বিধা অবাক হয়ে বলল
” তুই হঠাৎ এসব… ”
দ্বিধাকে মাঝ পথে থামিয়ে মৃধা বলল
” আগে আমি যেটা জানতে চাইছি সেটার এন্সার দে তারপর আমি আস্তে আস্তে সবটা বলছি ”
দ্বিধা চুপ থেকে বলল
” হ্যাঁ ওটাই স্বচ্ছ ”

মৃধার নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা গেলো। খট করে ফোন কেটে দিলো। দ্বিধা ফ্যাল ফ্যাল করে ফোনে দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মৃধার ফোনে আবার ফোন লাগালো। মৃধা ফোন ধরতেই দ্বিধা বলল
” কি হয়েছে এভাবে ফোন কেটে দিলি কেনো? ”
মৃধা জোরে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো দ্বিধা সন্দিহান কন্ঠে বলল
” সত্যি করে বলত কি হয়েছে তোকে তো আমার সুবিধার লাগছে না। আর ওসব ই বা কেনো শুনছিস? কি হয়েছে? ”
মৃধা সেদিন কলেজ থেকে ফেরা থেকে একটার পর একটা এক্সিডেন্টে সব বললো দ্বিধাকে। দ্বিধা সব শুনে অবাকের শীর্ষে চলে গেছে।

” তুই ঠিক আছিস তো? তোর কিছু হয় নি তো? ঔ শয়তানটা তোর কোনো ক্ষতি করে নি তো? ”
” হাইপার হোস না আমি একদম ঠিক আছি। ওনি যে ভাবে আমার সাথে বিহেভিয়ার করে আমি ওনাকে যথেষ্ট ভালো মানুষ মনে করে ছিলাম আর স্বাধীন ভাইয়ার ভাই ভেবে আমি মনে করেছি ওনিও স্বাধীন ভাইয়ার মতোই ভালো। স্বচ্ছ এমন কেনো? ”
” স্বাধীন স্বচ্ছ সৎ ভাই। ”
” হোয়াট? ”

” হ্যাঁ আমিও জানতাম না স্বাধীনের আম্মু বলছে। স্বাধীনের বাবা ওনি স্বাধীনের আম্মুকে লুকিয়ে বিয়ে করেন আর তারই সন্তান স্বচ্ছ। স্বাধীনের কয়েক মাসের ছোট স্বচ্ছ। স্বচ্ছকে জন্ম দেওয়ার সময়ই স্বচ্ছের মা মা’রা যায় আর স্বাধীনের বাবা স্বচ্ছকে এবাড়িতে আনলেও ওনি স্বচ্ছ দেখতে পারতেন না। স্বচ্ছ বড় হয় কাজের লোকের কাছে যত বড় হতে থাকে একাকিত্বে খারাপ হয়ে গেছে শাসন করার কেউ নেই কি না।

স্বাধীন বুঝতে শেখার পর থেকে বাবাকে এসব কারণে ঘৃণা করে স্বচ্ছে ভালো পথে আনার চেষ্টা করলেও স্বচ্ছ কখনো স্বাধীন কে পাত্তা দেয় নি উলটো ক্ষতি করে গেছে। আমাদের বিয়ে পর সংসারটাও ভাঙ্গার চেষ্টা করে উল্টো পাল্টা কথা বলছিল কিন্তু স্বাধীন আগে থেকে সবটা জানত ”
মৃধার চোখ দিয়ে পানি পড়লো। মানুষটার জন্য বড্ড মায়া হলো। ছোট থেকে কেউ ভালোবাসে নি কারোর ভালোবাসা পায় নি। মানুষ কষ্ট না পেলে খারাপ হয় না সাথে সঙ্গ দোষ তো আছেই। দ্বিধা মৃধার নাক টানার শব্দে বুঝলো মৃধা কাঁদছে। দ্বিধা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল

” একটা সত্যি কথা বলবি ”
” বল ”
” তুই কি স্বচ্ছকে ভালোবেসে ফেলেছিস? ”
মৃধা অবাক হয়ে কাঁদা বন্ধ হয়ে গেলো চমকানো গলায় বলল
“কি বলছিস এসব পাগল হয়ে গেছিস না কি? আমি কেনো ওনাকে ভালোবাসবো? ”
” ভালোই যখন বাসিস না তাহলে কাঁদছিস কেনো? ”
” কষ্ট হচ্ছে মায়া হচ্ছছিল ”
” আমার কথাগুলো ভেবে দেখিস। ”
” কোন কথা? ”

“ভালোলাগা বসন্ত বাতাসের মতো বয়ে আসে কখন কিভাবে হয়ে যায় বুঝতে পারবি না। মানছি স্বচ্ছ খারাপ কাজ করে ওর ও কিন্তু একটা ভালোবাসার মন আছে তুই চাইলেই স্বচ্ছকে ভালোবেসে স্বচ্ছের হৃদয়ের আঁধার ঘুচিয়ে আলো দেখাতে পারিস। ”
মৃধা চুপচাপ শুনলো প্রতিউত্তর করলো না। দ্বিধা থেমে আবার বলল
” আর তুই যে গুলো বললি স্বচ্ছ আমার জানা মতে স্বচ্ছ কখনো কারোর প্রতি এতো হেল্পফুল, কেয়ারিং নয় শুধু তোর প্রতি মানে ও তোকে ভালোবেসে ফেলেছে। না হলে ও তোকেই বা কেন ছেড়ে দিবে। আমার ওপরে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য হলেও তোকে আটকে রাখতে পারতো কিন্তু ও এটা করে নি ”

মৃধা কিছু বলল না দ্বিধা ফোন কেটে বিছানায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ল। কিছু ভালো লাগছে না ওর। কি ঘটতে চলছে বা কি ঘটছে এসব বুঝতে বেগ পেতে হচ্ছে খুব। স্বাধীন বাসায় এসে দ্বিধাকে শুয়ে থাকতে দেখে মাথায় হাত দিয়ে দেখলো জ্বর এসেছে কি-না দ্বিধা তখনি চোখ খুললো।
” এভাবে সন্ধ্যা বেলা শুয়ে আছেন কেনো? শরীর খারাপ নাকি? ”
” না এমনি শুয়েছি। আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো? ”
” করুন ”

প্রেমানন্দোল পর্ব ১৪

” আপনি আমাকে আপনি আপনি করেন কেনো? ”
” কেনো ভালো লাগে না? ”
” হুম না তেমন টা নয় তবে কেমন লাগে। নিজেকে অনেক বড় মনে হয় ”
স্বাধীন হেসে বলল
” আমি আপনাকে সম্মান করি। আর যে দিন থেকে আপনি আমাকে তুমি বলে ডাকবেন সে দিন থেকে আপনি চাইলে আমিও আপনাকে তুমি বলতে পারি ”
দ্বিধা লজ্জা পেলো।

প্রেমানন্দোল পর্ব ১৬