প্রেমের বর্ষন পর্ব ৬

প্রেমের বর্ষন পর্ব ৬
লেখনীতে – আয়ানা আরা (ছদ্মনাম)

আর কিছু দেখার আগেই লাফ দিয়ে উঠি আমি।
আমার মাথার পাশে বসে ফারিশ ভাইয়া ঝিমুচ্ছিলেন কিন্তু আমার এইভাবে লাফ দেওয়া দেখে উনি ব্যস্ত হয়ে বললেন,’কি হয়েছে অনামিকা?’
আমি উনার দিকে তাকিয়ে একটা স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেললাম। সবটাই স্বপ্ন। ভাইয়া আমার কপালে হাত দিয়ে বলেন,’জ্বর তো নেই।’

উনার কথায় চমকে উঠি আমি।পরেক্ষনেই মনে পড়ে যায় আমি আজ বেশ অনেকক্ষন শাওয়ার নিয়ে তার জন্যই মনে হয় এমনটা হয়েছে। এইসব এখন মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে আমি ফারিশ ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করি,’হঠাৎ এতো রাতে আপনি আমার রুমে যে?কিছু প্রয়োজন?’
ফারিশ ভাইয়া উঠে বলে,’প্রয়োজন হলেই কি আমি শুধু আসবো?’
‘না তা বলি নি।’
‘আচ্ছা ঠিকাছে ঘুমা। আমি যাই।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

এই বলে তিনি বড় বড় পা ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে যান। উনি বের হতেই আমি ধপ করে বিছানায় শুয়ে বিরবির করে বলতে লাগলাম,’হঠাৎ আমার কি হয়েছে?ফারিশ ভাইয়াকে নিয়ে কেউ কথা বললে কেনো হিংসা হচ্ছে আমার।’
এইসব ভাবতে ভাবতে যে কখন ঘুমিয়ে পড়লাম টেরই পেলাম না।
|১০|
চারদিকে নিস্তব্ধতা বিরাজমান।বাহিরে শা শা বাতাস বইছে। পাখির কিচিরমিচির শোনা যাচ্ছে। আমি নড়েচড়ে উঠলাম কিছুটা।

এর মাঝেই রুবা আপুর ডাক শোনা গেলো। আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলাম দেখলাম ভাইয়া খাচ্ছে আর খালামনি খাবার বেরে দিচ্ছে। আমি যেতেই খালামনি আমাকে প্লেট এগিয়ে দিয়ে বলে,’খেয়ে নে।’
এই বলে ফারিশ ভাইয়ার উদ্দেশ্যে বলে,’ফারিশ তোর সাথে একটা কথা আছে।’
ফারিশ ভাইয়া খেতে খেতে বলে,’হুম বলো আম্মু।’
খালামনি গম্ভির হয়ে বলেন,’তোর জন্য পাত্রী দেখেছি। মেয়েটা মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর।’
‘সো ওয়াট?আর আমি এখন বিয়ে করবো না।’

‘দেখ ফারিশ তোর বয়স ও কম না সাতাশে পা দিয়েছিস এখন বিয়ে না করলে কবে করবি?আমারো তো নাতি-নাতনির মুখ দেখার ইচ্ছা আছে।’
ফারিশ ভাইয়া ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,’অনাথ আশ্রমে অনেক বাচ্চা আছে প্রতিদিন ওদের দেখতে যেয়ো তাহলেই তো হয়!’
খালামনি একটু ঝাঁঝালো গলায় বলেন,’ফারিশ সবসময় হেয়ালি ভালো লাগে না!তোর পছন্দ থাকলে বল আমি তোর পছন্দের বিরুদ্ধে যাবো না।’
‘আমার কোনো পছন্দ নেই।’
‘তো আমার পছন্দের বিয়ে করতে সমস্যা কোথায়?’

ফারিশ ভাইয়া উত্তর না দিয়ে খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে দাড়ান যাওয়ার আগে আমাকে বলে যান,’অনামিকা জলদি রেডি হয়ে বাহিরে আয় আমার টাইম নেই।’
মা-ছেলের কথার মাঝে আমি এতোক্ষন চুপচাপ বসে নাস্তা করছিলাম।ফারিশ ভাইয়ার কথা শুনে আমি তার দিকে তাকিয়ে মাথা দুলালাম।

আমি নাস্তা শেষ করে টেবিল ছেড়এ চলে যেতেই খালামনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। রুবা আপু খালামনিকে বলেন,’ম্যাম আমার মনে হয় বড় স্যার ছোট ম্যাম কে পছন্দ করেন।’
খালামনি উনার দিকে ভ্রকুচকে তাকিয়ে বলে,’কিভাবে?ফারিশ তো সবসময় অনামিকাকে বকেই।’
‘কিন্তু এই বকার মাঝেই যে এক্সট্রা যত্ন নেয় ছোট ম্যামের সেটা খেয়াল করেছেন?আমি আমার ধারণা অনুযায়ী বললাম।’
‘ফারিশ যদি অনিকে ভালোবাসে তাহলে ও নিজেই আমাকে বলবে।’
‘হুম সেটাই।’

কলেজে যাওয়ার সময় সারা রাস্তায় আমরা দুইজনের একজনও কথা বলি নি। আমাকে কলেজ পৌছে দিয়ে ফারিশ ভাইয়া চলে যান।
প্রায় চার ঘন্টা পর পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে দেখি আজকে ফারিশ ভাইয়া আসে নি। তাই মনে মনে নিজেই একা যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে নিলাম।
কলেজ থেকে বেরিয়ে একটু আগে যেতেই একটা কালো গাড়ি এসে আমার সামনে দাড়ালো। আমি ভ্রকুচকে গাড়িটার দিকে তাকালাম। হঠাৎই পিছন থেকে কেউ আমার মুখ রুমাল দিয়ে চেপে ধরে। রুমালের ঘ্রাণ আমার নাকে পৌছাতেই আমি জ্ঞান হারালাম।

আমি নিজেকে একটা অন্ধকার রুমে আবিষ্কার করি। মাথাটা ঝিম ধরে গিয়েছে। নিজের অবস্থানটা বুঝতে আমার একটু সময় লাগে। আস্তে আস্তে প্রত্যেকটা ঘটনা মনে পরে যায় আমার।
আমি চিৎকার করে বললাম,’কেউ আছে এইখানে?আমাকে সাহায্য করুন আমি এইখানে আটকা পড়ে গিয়েছি।’
কিন্তু এটার প্রতিধ্বনি ছাড়া আমার কানে কিছুই আসছিলো না যার জন্য আমি হাল দেই।

কিছু ক্ষন পরেই দরজা খট করে খুলে গেলো। একটা লোক ভিতরে ঢুকলো লোকটা মুখে মাস্ক পড়েছে যার জন্য আমি লোকটার চেহারা স্পষ্ট দেখতে পারিনি। লোকটার পিছন পিছন কিছু গার্ডও ঢুকেছে। লোকটা আমার সামনে এসে আমার দিকে ঝুঁকে আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,’অনামিকা বেইবি এখন তুমি একান্তই আমার। শুধুই আমার। তোমার জীবনে এখন আমি ছাড়া আর কেউ থাকবে না নাহলে তোমাকে কেউ আমার থেকে কেড়ে নিতে চাইলে আমি তাকে মেরে ফেলবো’

এই বলে লোকটা অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। লোকটার কথায় আমি ভয়ে কেঁপে উঠলাম। লোকটার আমার থেকে দূরে সরে একটা প্লেট নিয়ে এসে আমার সামনে রেখে বলে,’এটা খেয়ে নেও।’
আমি চিল্লিয়ে বললাম,’না আমি খাবো না আমি ফারিশ ভাইয়ার কাছে যাবো।’

আমার কথায় লোকটার মুখ রক্তিম বর্ণ। লোকটা আমার গাল চেপে ধরে বলল,’চুপ থাক কি এতো ফারিশ ফারিশ ফারিশ করিস সারাদিন?তোর মুখে যদি আমি আরেকবার ফারিশ ডাক শুনি তাহলে মেরে এইখানেই পুতে দিবো।’
লোকটার কথা শুনে আমি ফুপিয়ে কেঁদে উঠি। লোকটা আমাকে ছেড়ে ঘনঘন নিঃশ্বাস নিয়ে বলে,’খেয়ে নাও।’
আমি কান্না না থামিয়ে বলতে থাকি,’আপনি খুব খারাপ লোক!ফারিশ ভাইয়া আমাকে বকুক আর যাই করুক না কেনো উনি অনেক ভালো।’

‘আর আমি যে তোমাকে ভালোবাসি?’
আমি নাক মুখ কুচকে বলি,’এটাকে ভালোবাসা বলেন?’
‘অনামিকা আর যাই বলো না কেনো আমার ভালোবাসাকে নিচু করবা না!!’
কথাগুলো হালকা চেঁচিয়ে বললেন লোকটা। আমি কিছু না বলে মুখ ঘুরিয়ে রইলাম। লোকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে খাবারটা গার্ডের হাতে ধরায় দিয়ে চলে যাওয়ার আগে বলে গেলেন,’ফারিশের আশায় বসে থাইকো না তোমাকে এমন জায়গায় রেখেছি যে তোমার লাভার ফারিশ কখনোই এর খোজ পাবে না।’

আমি তবুও কোনো কথা বলিনি কারণ আমি জানি দুনিয়া উল্টিয়ে গেলেও ফারিশ ভাইয়া আমাকে খুজে বের করবে। সব গার্ডরা চলে গেলো কিন্তু একটা গার্ডকে আমাকে পাহাড়া দেওয়ার জন্য রেখে দেওয়া হলো। সবাই যেতেই ওই গার্ডটা আস্তে করে যেয়ে সিসিটিভির প্লাগটা আলাদা করে দিলো সে এমন ভাব দেখাচ্ছে যে সে আমাকে পাহাড়া দিচ্ছে। তারপর লোকটা আমার কাছে আমার পিছনের দড়ি খুলে দিলো। আমি লোকটার এমন কান্ডে খানিকটা ঘাবড়িয়ে যাই তা দেখে লোকটা বলে,’চিন্তা করিয়েন না ম্যাম আমি আপনার কোনো ক্ষতি করব না।

প্রেমের বর্ষন পর্ব ৫

ফারিশ স্যার আমাকে আপনার জন্য পাঠিয়েছে আপনাকে এখান থেকে পালাতে আমিই সাহায্য করবো।’
কেনো জানি লোকটাকে বিশ্বাস করে নিলাম আমি। প্রথম প্রহরে আমরা বের হই। লোকটার কাছে দরজার চাবি থাকার কারণে খুব সহজেই বের হয়ে যাই। কিন্তু কিছু দূর যেতেই ব্যঘাত ঘটলো ওরা টের পেয়ে গেছে আমরা পালিয়ে গিয়েছি।

আমাকে বেঁধে রেখেছে এখন ওরা আর আমার সামনে রক্তাক্ত অবস্থায় সাহায্যকারী লোকটা পড়ে আছে। হ্যা ওরা লোকটাকে গুলি করেছে। আমার জন্য লোকটার জান গিয়েছে কেনো জানি নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হতে লাগলো। আমার জন্যই হয়তো লোকটার প্রাণ হারাতে হলো।
যে লোকটা আমাকে বন্দী করে রেখেছিলো সে আমার কাছে এসে আমার গাল চেপে বলে,’সমস্যা কি তোর আমার কাছে থাকতে তোর ফারিশ থেকেও বেশি ভালোবাসতে পারি আমি। তোর অনেক তেজ তাইতো আজ আমি তোকে দেখাবো এই আমি কি জিনিস…..

প্রেমের বর্ষন শেষ পর্ব