প্রেমের বর্ষন শেষ পর্ব 

প্রেমের বর্ষন শেষ পর্ব 
লেখনীতে – আয়ানা আরা (ছদ্মনাম)

তখনই কোথাথেকে গুলি চালানোর আওয়াজ আসে। সাথে সাথেই সব গার্ডরা ভয়ে চুপসে যায়।
দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে ফারিশ ভাইয়া আর উনার কিছু গার্ড। ফারিশ ভাইয়া প্রথমে ভিতরে ঢুকেই লোকটাকে ধাক্কা দিয়ে আমার কাছে আসে। আমি ভয়ে ফারিশ ভাইয়াকে ঝাপ্টে ধরে কেঁদে দেই। ফারিশ ভাইয়া আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন,’কিছু হবে না অনি আমি এসেছি তো।’

আমি কাঁদতে কাঁদতে বলি,’লোকটা আমাকে তার নোংরা হাত দিয়ে স্পর্শ করেছে ফারিশ ভাইয়া।’
সাথে সাথেই ফারিশ ভাইয়ার মুখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করে সে আমাকে সরিয়ে লোকটার কাছে যায়। লোকটার কলার চেপে দাড় করিয়ে চিৎকার করে বলে,’তোর সাহস কি করে হয় অনিকে টাচ করার??’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ফারিশ ভাইয়ার চিৎকারে পুরা ঘর কেঁপে উঠে। ফারিশ ভাইয়া রাগে থরথর কাঁপছে সে এক টানে লোকটার মুখের মাস্ক খুলে ফেলে। আমি লোকটাকে দেখে অনেক অবাক হই কারণ লোকটা আর কেউ না আরুশ স্যার। যাকে কিনা অনেক সম্মান করতাম আজ সেই এতো নোংরা কাজ করতে যাচ্ছিলো আমার সাথে রাগে আমার শরীর রিরি করছে। ফারিশ ভাইয়া আরুশ স্যারকে গার্ড হাতে ধরিয়ে আমাকে এসে পাজকোলে তুলে বাহিরে নিয়ে যায়।

বাসায় এসে খালামনি আমার কাছে এসে বলে,’তুই ঠিক আছিস অনি?কিছু হয়নি তো তোর?’
খালামনির কথায় আমি মাথা দুলালাম অর্থাৎ না। খালামনি আমার উত্তর পেয়ে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বললেন,’আজকেই আমি তোর আর ফারিশের বিয়ে দেওয়াবো।’

খালামনির কথায় অনেক অবাক হই আমি। আমি একবার ফারিশ ভাইয়া আর খালামনির দিকে তাকাই কি হচ্ছে বুঝার জন্য তার আগেই খালামনি রুবা আপুকে উদ্দেশ্য করে বলেন,’রুবা অনিকে রেডি করিয়ে আনো আমি কাজী ফোন করেছি আসলেই বিয়ে পরিয়ে দিবে।’
অতঃপর রুবা আপু আমাকে নিয়ে গেলেন রেডি হওয়াতে রেডি করিয়ে আমাকে নিচে এনে ফারিশ ভাইয়ার পাশে বসানো হলো।

কাজী বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন আমায়াকে কবুল বলতে বললে আমি বলে দেই ফারিশ ভাইয়াকে বলতে বললে সেও সোজাসাপ্টা বলে দেন অতঃপর আমরা দুইজন এক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হলাম। পুরোটা সময়ই সব কিছু আমার মাথার উপর দিয়ে গেলো। কাজী চলে যেতেই ফারিশ ভাইয়া উঠে দাড়িয়ে বললেন,’আমার একটা কাজ আছে আমি আসছি।’
এই বলে তিনি আরেকমিনিট ও না দাঁড়িয়ে হনহন করে চলে গেলেন।

আধো মরা হয়ে পরে আছে আরুশ পাশেই ফারিশ বসে আছে রিভলবার নিয়ে তার সামনে সেই মহিলাটি নীরবে চোখের জল ফেলছেন আর বলছেন,’ফারিশ এতোটা নির্দয় হোস না আমার ছেলেটা..
ফারিশ উনাকে থামিয়ে বললেন,’কি নির্দয় হবো না চাচি!ও অনামিকাকে বাজে স্পর্শ করেছে!’
‘আমি সব বলবো তবুও তুই ওকে কিছুটি করিস না।’
ফারিশ বাকা হেসে বলেন,’তো শুরু করুন চাচি।’

‘আমরা যখন তোদের সাথে থাকতাম তখন তোর বয়স ১৫ কি ১৬ আর আরুশের বয়স ১৫ আর অনামিকার বয়স ৮ বছর ছিলো আরুশ ছোট বেলা থেকেই অনামিকার দিকে কুনজর দিতো এটা কেউ খেয়াল করুক না করুক আমি করেছি তাও মুখ বুজে ছিলাম।পরে তোরা বড় হতে লাগলি একবার তো অনামিকার বাবার চোখেও আরুশ পড়ে যায় তখন আরুশের বয়স ১৭। আরুশ বিভিন্ন ডার্ক সাইটে ছিলো। তো ও একবার এক জায়গায় অনামিকার বাবা কে নিয়ে উনাকে মেরে ফেলে কারণ উনি এটাও গিয়েছিলো যে ও ডার্ক সাইটে আছে!আর তুইও জানতি আরুশ অনামিকাকে পছন্দ করে ওর নেশা অনামিকা তাই তুই অনামিকাকে গুটি বানিয়ে আরুশের থেকে জানতে চাইছিস।’

‘আমার বাবা কে কে মেরেছে তাহলে?’
আরুশের মা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন,’তোর বাবাকে কেউই মারে নি!সে একজন গোয়েন্দা ছিলো উনি একবার এক গুন্ডার হাতে পরে মারা যান।’
‘আমার মায়ের সাথে আপনার কি শত্রুতা?’
‘শত্রুতা খালি এটাই তোর মা আমার সন্তান আমার থেকে কেড়ে নিয়েছে!!’
গর্জে বলে উঠলেন কথাগুলো আরুশের মা!
ফারিশ অবাক হয়ে বলেন,’মানে?’

আরুশের মা নিজের চোখের পানি মুছে বলেন,’তোর মা র বিয়ের প্রায় ১০ বছরেও একটা বাচ্চা হয়নি আর আমার জমজ বাচ্চা হয়েছিলো তাই তোর মা ডক্টর কে ঘুষ দিয়ে আমার একটা বাচ্চা নিয়ে যায়!পরে সবাইকে বলে ও ওই বাচ্চা দত্তক নিয়েছে। ওইদিন আমার মনে কি হচ্ছিলো কাকেই বা বুঝাবো আমি!’
‘ওই বাচ্চাটা কোথায়?’
‘ওই বাচ্চাটা তো তুই নিজেই ফারিশ!’
ফারিশ আর আরুশ অবাক হয়ে মিসেস আরিশার দিকে তাকায়। দুইজনই হতবাক!
দুইজনেই এক সাথে বলে উঠে,’মানে!’

মিসেস আরিশা বলেন,’মানে ফারিশ তোর নিজের ভাই আরুশ!’
‘কিভাবে এটা হতে পারে না!’
মিসেস আরিশা তাচ্ছিল্য হাসেন। ফারিশ বলেন,’আপনি কিভাবে বুঝেছেন যে আমিই আপনার সেই সন্তান?’
‘যেদিন ওই বাসা থেকে আরুশ কে নিয়ে বেরিয়েছিলাম সেইদিনই তো তোর মা আমাকে আলাদা রুমে নিয়ে বলেছিলো তুই আমার সন্তান।’

হল রুমে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে মিসেস ফাহিমা!তার সামনে মিসেস আরিশা বসে আছেন আর অনামিকা মাত্রই দর্শক! ফারিশ মিসেস ফাহিমার উদ্দেশ্যে বলল,’মা তুমি এইরকম কেনো করলে?’
মিসেস ফাহিমা ছলছল নয়নে ফারিশের দিকে তাকিয়ে বলেন,’কারণ সবসময় তোর দাদি আরিশার গুনগান গাইতো আমি তাকে খুশি করার জন্য তো নিজের বাপের বাড়ি যাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছিলাম তাও সে সবসময় গুনগান গাইতো আরিশার পরে জানতে পারি তোর বাবার সমস্যা আছে তাই সে কখনো বাবা হতে পারবে না তাও তোর দাদি আর আরিশা মিলে বানিয়েছে আমার সমস্যা আছে তাই আমি মা হতে পারবো না তাই আমি আরিশার বাচ্চা চুরি করার পরিকল্পনা করি!’
সব শুনে সবাই অবাক। অনামিকার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব

প্রেমের বর্ষন পর্ব ৬

ফারিশ ভাইয়ার কাঁধে মাথা রেখে বেলকনির দোলনায় বসে আছি সব শুনে খুব অবাক লাগছে যে খালামনি ফারিশ ভাইয়ার মা না। আমি ফারিশ ভাইয়াকে প্রশ্ন ছুড়ে মারি,’আচ্ছা ভাইয়া নীলাদ্র কে কে মেরেছে?’
ফারিশ ভাইয়া হেসে বলেন,’আরুশ।’
ফারিশ ভাইয়া উত্তর খুব অবাক হই তা প্রকাশ না করে আবার প্রশ্ন করি,’রাতের বেলা যে আসতো সে কে ছিলো?’
‘আমি ছিলাম সেটা।’

আমি ভ্রনাঁচিয়ে বলি,’কেনো তুমি কি আমাকে ভালোবাসো নাকি যে আসতে?’
ফারিশ ভাইয়া আমাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলেন,’ভালোবাসতাম বলেই তো আসতাম!’
‘কতবছর ধরে ভালোবাসো?’
‘দশ বছর ধরে ভালোবাসি। তুই?’
ফারিশ ভাইয়ার কথায় অবাক হয়ে বলি,’তুমি কিভাবে বুঝলা আমি তোমায় ভালোবাসি?’
‘ভালোবাসার মানুষের চোখ দেখলেই বুঝা যায় সে আমাকে ভালোবাসে নাকি না।’
‘ইদানিং ভালোবাসি।’
আমার উত্তরে ফারিশ ভাইয়া মুচকি হাসলো।

(লেখাঃ আয়ানা আরা ) এই লেখিকার আরও লেখা গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন এবং এই গল্পের সিজন ২ পড়তে চাইলেও এখানে ক্লিক করুন